somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুদ্ধতম পরকীয়া (উপন্যাসিকা)

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পূর্ব প্রকাশনার পর )
পঞ্চম অধ্যায় / (প্রথম অংশ)

“… আমি একদিনও না দেখিলাম তারে
আমার বাড়ীর পাশে আরশী নগর
এক পড়শী বসত করে ।”

ঘুম ভাঙতেই দেখি আকাশটা ঝিম মেরে আছে । কাল রাতের আকাশের ছিচকাঁদুনে ভাবের রেশটুকু কাটেনি এখোনো । একটু যেন শীত শীত লাগছে । জানালার বাইরে মরা রোদের আভাস একটু পাওয়া যায় কি যায়না ! যেন ঢুকবে কি ঢুকবে না এমোনটা ভাবছে । এরই মাঝে একটা চড়ুই এসে বসেছে জানালার সামনের কামিনী ফুলগাছটার ভেতরের একটি ডালে । ভিজে গেছে, ডানা ঝাপটে জল ঝড়াতে গিয়ে রোমগুলো খাড়া খাড়া হয়ে আছে । পাখিটার ঝড়ো অবস্থা দেখে মায়া হলো । ওর জোড়টা কই ! এক শালিক দেখলে নাকি দুঃখ আসে । একটি চড়ুই দেখলে কি হয় !
পাশ ফিরে সামিয়ার দিকে তাকালাম, দেখি অকাতরে ঘুমুচ্ছে । আহা বেচারা । বাবার আদর মেলেনা সব সময় । বাবা কাছে থাকেনা সপ্তাহের বেশী দিন । শোয়েব কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়র । ভালো মাইনের চাকুরে । হপ্তা শেষের ছুটিতে যখোন আসে তখোন যেটুকু আদর পায় মেয়েটি সেটুকুই তার জমার খাতায় তলানীতে পড়ে থাকে । বাকীটুকু পোষাতে হয় আমাকেই । মেয়েটি আমাদের দু’জনারই চেহারা পেয়েছে । আমাদের প্রথম সন্তান । গোড়ার দিকে আমাদের দু’জনার ভাব ভালোবাসা ছিলো বলেই হয়তো । সে ভালোবাসা এখোন দুরত্বের কারনে কতোটা মজবুত আছে মাঝেমাঝে ভাবি ।

শিক্ষিত, সুপুরুষ শোয়েবের ঘর করতে এসে প্রথম প্রথম পাখির মতো উড়ে উড়ে গেছি । শ্বাশুড়ী আর দুই ননদ দেবরের সংসার । ছেলে কাছে থেকেও যেন প্রবাসী । আর দশটা সংসারের নিয়ম মতো তাই সংসার চালানোর দায়িত্বটা এসে পড়েছে । নিজের মতো করে সাজিয়েছি সব । ব্যবধানটা বেড়েছে সেখান থেকেই । আমার শিক্ষা সেটাকে একটা সীমার মধ্যে আটকে দিয়েছে । তবু তাই ই খানিকটা ডালপালা ছড়িয়ে পৌছে যায় যেন হাযার মাইল পেরিয়ে । শোয়েবের সাথে এ নিয়ে আমার তেমন কথা হয়না । তবু বুঝতে পারি সুরের তাল যেন খানিকটা ঢীমে হয়েছে । একা একা এ ভার বয়ে চলা মাঝে মাঝে বড় কঠিন মনে হয় ।

বিছানা ছেড়ে বাথরুমের দিকে যেতে যেতে হিসেব করলাম, শোয়েবের আসতে আরো দু’দিন বাকী । বেশ কিছু কাজের কথা আছে ওর সাথে । শ্বাশুড়ী ডায়াবেটিসের রোগী । ননদ যূথী আর দেবর পলাশের কলেজ, লেখাপড়া নিয়ে কথা বলতে হবে । কথা বলতে হবে শোয়েবের হাজী লেনের এই পৈত্রিক বাড়ীটি নিয়েও । যতো ঝামেলার কাজ । সবাইকে সামলে, এতো দিক দেখেশুনে রাখতে মাঝে মাঝে একাকী হয়ে পড়ি । একা একা মনে হয় নিজেকে । নভেরা ছিলো বলে বাঁচোয়া । আমি যখোন আইবিএ থেকে মাষ্টার্স করে একটি বিদেশী টেলিকমিয়্যুনিকেশান প্রতিষ্ঠানে চাকরী করি তখোনই নভেরার বাবা আমার সাথে শোয়েবের বিয়ের প্রস্তাবটি আনেন । নভেরাদের বাসার কাছেই বাসা । সেই সুবাদেই আজো নভেরা আমার প্রতিবেশী । আমার বাবা বেঁচে নেই । কেবল আমার মা বড় ভাইয়ের সাথে রাজশাহীতে আছেন এখোন । আত্মীয়রা যে যার মতোন, ধারে কাছে নেই । তাই এই শহরে আমি বড় একা । স্বামী নামের লোকটি অনেকটা থেকেও নেই যেন । শুরুর দিকের জোয়ারের কলধ্বনী এখোন মনে হয় দুরাগত । নদীতে একবার স্রোত থেমে গেলে নদী মরে যেতে চায় কান্নায় । ক্ষীন হয়ে আসে তার ধারা । মজা নদীতে ধীরে ধীরে জন্ম নেয় শৈবালের দল । পাঁক ধরে, যেন ছানি পড়ে গেছে জলে ।
দরজায় খটখট শব্দ । কেউ ডাকছে হয়তো । শ্বাশুড়ী ! ননদ যুথী ! কে ? মরুক গে । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে চিরূনী ছোঁয়াতে গিয়ে হঠাৎ চোখ গেল আয়নার চোখে । বেশ ফোলা ফোলা মনে হলো । রাতে কি ঘুম ভালো হয়নি ! নাকি খুব বেশী ঘুমিয়েছি ! ঘুমের কোনও সমস্যার কথা এ মূহুর্তে মনে পড়লোনা । তাহলে কি কোনও স্বপ্নের ভেতর কেঁদেছি !
না, স্বপ্নের ভেতর নয় আর একজনের কান্না শুনেছি কাল সন্ধ্যের আগে আগে । কাল রাতের বৃষ্টির মতো শব্দ ছিলো তার ।

যাকে তাড়াতে চাইছি কেন যে বারে বারে সে ই সবকিছু ঠেলেঠুলে মনের দরজা খুলে উঁকি মারে ! এ খেলাটি নিষিদ্ধ বলেই কি ! নিষিদ্ধতার একটা আলাদা রোমাঞ্চ আছে হয়তো । কিন্তু আমার তো সে রকম লাগছেনা , কেমন যেন কষ্টের মতো একটা সুখী ঝরনা তিরতির করে বয়ে গেছে, যাচ্ছে আমার শিরায় শিরায় । কান পাতলেই তার কুলুকুলু কুহকী ধ্বনি শুনতে পাবো বোধহয় । অনেক তীব্র ভালোলাগার চোরকাটাগুলি আমারই অজান্তে একটি একটি করে আমার শাড়ীর আঁচলে ফুটে গেছে যেন । তা বাছতে গেলেই কোথায় যেন স্মৃতির তারে ঘা লাগছে । প্রথম ভালোবাসা হারিয়ে যাওয়ার মতো । মনে পড়ে যাচ্ছে, পৃথিবীর কোনও এক নিভৃত কোনে শুধু একজোড়া চোখ আমার প্রতীক্ষাতেই জেগে আছে । যে আমার কেউ নয় অথচ আমার ভালোমন্দ সকলি ভেবে ভেবে যার সারাদিনমান কাটছে । উৎকন্ঠার সে চোখ যেন আমাকে ঘিরে আছে অনুক্ষন । যে চোখ তৈরী করেছি আমি নিজে ।
কুসুম কোমল লজ্জার একটা অস্বস্তি জড়িয়ে ধরতে চাইলেও আমার যে ভালো লাগেনা, একথা কি করে বলি ! নিজেকে এই একটিমাত্র ক্ষেত্রেই সৌভাগ্যবতী মনে হয় ।
উপায় ছিলোনা । সে দু’চোখেই আমি কাল জল ঝড়িয়েছি । কাল দুপুরে “ হোয়্যার আর য়্যু ?” তার এরকম একটা মেসেজ পেয়ে মনে হলো ঘাতক তীরটি ছোঁড়ার এই ই সময় । দেরী করে ফেললে আমার নিজেকেই কষ্ট দেয়া হবে । সময় লম্বা হলে আমার কষ্টই বাড়বে শুধু । আমি এই খেলার তীব্র পাঁকে আরো গভীর ভাবে গেঁথে যাবো । বাঁশের ঝাড় বাড়তে দিতে নেই । বাড়তে দিলে তাতে অনেক বাঁশী হয়তেো বাজবে কিন্তু অন্ধকার করে দেবে চারদিক ।
মেসেজ করলাম, “ আমাকে এতো ভালো বেসোনা । আমি এখানে দু’দিনের অতিথি।”
পরক্ষনেই তার মেসেজ, ‘ঠিক করে বলো তো কি বলতে চাচ্ছো তুমি ?’ উত্তর দেয়ার আগেই আমার মোবাইল বেজে উঠলো । দেখি সে ।
এই প্রথম নিয়ম ভাঙ্গলো তার, কন্ঠে উৎকন্ঠা, বললো – “আমি একটা মিটিঙয়ে ছিলাম মধ্য থেকে উঠে এসেছি । তুমি জানো কি কথা তুমি বলেছো ? তোমার কথার মানে কি ?” ।
গলা তার কাঁপছে স্পষ্ট বুঝতে পারছি
বললাম, মনটাকে শক্ত করো । আমি মেইল করে জানাচ্ছি সব ।
মেইল করলাম “….. তুমি আমাকে এতো ভালো বেসোনা । আমি এখানে দু’দিনের অতিথি । তুমি মনটাকে শক্ত করো, আমি “সিএমএল” এর রোগী । ইন্টারনেটে দেখে নিও এ রোগটি কি । বেঁচে থাকবো কতোদিন জানিনা । সবাইকে ছেড়ে চলে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র । আমাকে ভুলে যেতে চেষ্টা করো ।”
এতোবড়ো এক মিথ্যে লিখতে আমার হাত কাঁপলোনা একটুও । মানুষ বলে – স্ত্রী চরিত্রম দেবঃ ন জানন্তিঃ” । ভুল বলে কি খুব ! আমি তাকে দেখছিনে কিন্তু দিব্যচোখে দেখতে পাচ্ছি সে ‘থ’ হয়ে তার স্ক্রীনটির দিকে তাকিয়ে আছে । চোখমুখে তার আঁধার ঘনিয়ে আসছে একটু একটু করে । গলার কাছে কি যেন একটা উঠছে নামছে । কান্না ! জবাই করা পশুর মতো শব্দহীন এক ছটফটে কান্না ।
যাকগে, আমার কি !

(চলবে..... অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন)

শুদ্ধতম পরকীয়া
চতুর্থ অধ্যায়
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৫১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×