somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম বৈদেশ যাত্রা এবং সহযাত্রী গ্রেনেড .....

২৫ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম বৈদেশ যাত্রা এবং সহযাত্রী গ্রেনেড .....
(ভ্রমন কাহিনী)
মফস্বলের ছেলে যাচ্ছি বৈদেশে । জীবনের প্রথম । তা ও আবার উড়ালজাহাজে চেপে । স্বভাবতঃই দুরুদুরু বুক । লঞ্চ সোজা ঢাকার সদরঘাটে নামিয়ে দিলো । গাট্টি বোঁচকা নিয়ে সেখান থেকে একসময় বিমান বন্দরে । ডিপার্চার লাউঞ্জে বসে আছি একা একা । আমার দৌড় লঞ্চ পর্য্যন্ত । খুঁজছি, কাউকে যদি পাওয়া যায় যে আমাকে এই পুল-সিরাত পার করে নিয়ে যাবে । বিশাল কাঁচের দেয়ালের ওপারে এরোপ্লেন দেখা যাচ্ছে । এই এত্তোবড় জিনিষ ? আকাশে এই এত্তোটুকুন দেখায় কেন ? এরোপ্লেনের চাক্কা আছে ছবিতে দেখেছি । দেখলাম সত্যি সত্যিই সামনে পেছনে চাক্কা । সেই চাক্কা নিয়ে আকাশে কি করে এরোপ্লেন চলবে যেখানে রাস্তা নাই, তা নিয়ে ভাবছি ভয়ে ভয়ে । আকাশ থেকে যদি পড়ে যাই সেই ভয় ! সাতার জানি, তাই ভরসা আছে পানিতে পড়লে মরবোনা । কিন্তু রাস্তার উপরে যদি পড়ি ? সুখে থাকতে কেন যে ভুতে আমাকে কিলালো ! এখোন ঘরবাড়ী ছেড়ে বিদেশ-বিভূঁয়ের রাস্তায় লা-ওয়ারিশ লাশ হয়ে মরে পড়ে থাকি আর কি ! জীবনে আর কোনওদিন টাউনহলে, প্রেসক্লাবে আড্ডা মারা হবেনা এই দুঃখে ভেতরে ভেতরে কান্না এলো । বোকা-সোকা মানুষকে আল্লাহ মারেনা সহজে, দয়া করে । হলোও তাই ।
- “হাই ওস্তাদ, আম্নহে এহানে করেন কি ? ”
ঘাড় ঘুরিয়ে শব্দের উৎসে তাকাই । হরেক কিসিমের মুখের ভীড়ে অনেক ছোটভাইয়ের একভাই, শিষ্য ডাঃ লিটুর মুখটা চোখে পড়ে । চশমার কাঁচের ভেতরে তার চোখে ঝা-চকচকে খুশি । দাঁত কেলানো ।
-“ কি রে হারামজাদা, তুই আইলি কোতা দিয়া ? ” পিঠ চাপড়ে দিই খুশিতে । সঙ্গী পাওয়া গেল একজন ।
“ ব্যাডা, বরিশাইল্লাগো দ্যাহা অইবে হয় সদরঘাডের লঞ্চে না অইলে গুলিস্তানের মোড়ে । আইলাম কোন দুরে এক নিরিবিলি এরোপ্লেনের ঘাডে হেয়ানেও দেহি তোগো ছাড়াইতে পারলাম না । হালার মরার আগেও তোরা তো ছাড়বিনা...... বুচ্ছি ! ” বিগলিত হই আনন্দে ।
এগুলো খুশির ডায়ালগ । জানা গেল লিটু যাবে ইরান । ওখানে ওর স্বাস্থ্য বিভাগে চাকুরী হয়েছে । আমার সাথে একই ফ্লাইটে দুবাই গিয়ে ও আলাদা ফ্লাইটে ইরান যাবে । কথা হচ্ছে, আবারো লিটুর দেয়া ডায়ালগের মতো আরো এক অবাক কন্ঠ ভেসে এলো –
“ আরে ওস্তাদ আম্নহেরা দুইজনে এহানে !”
আর এক শিষ্য ডাঃ নাসিম ( প্রয়াত সাংসদ, বিএনপি )।
“ কি রে ফাজিল তুই আবার গজাইলি কোনহান দিয়া ? ” এক অকল্পনীয় জায়গাতে একসাথে দু’দুজন পরিচিত মানুষের দেখা পেয়ে অকৃত্রিম সোহাগ ঝরতে থাকে আমার গলা দিয়ে খাজুইররা রসের মতো । কেন যে ওরা আমাকে ওস্তাদ বলে ওরাই জানে ! হয়তো ভালোবাসে খুব ! তো, নাসিমও যাবে দুবাই । শুনলাম ওর ও চাকুরী হয়েছ লিবিয়ার বেনগাজী শহরে । আপাততঃ ওর দৌড়ও দুবাই পর্য্যন্ত সেখান থেকে কদিন পরে সৌদি আরব না যেন ইরান হয়ে লিবিয়া ।
বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট । ঢাকা-দুবাই-ত্রিপোলী । সঙ্গী দু’জন আধপথে নেমে যাবে । আমাকে যেতে হবে আরো অনেক পথ । ওদের সাথে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে খেয়াল রাখছি স্মার্ট এক ছেলের দিকে । আগেই জেনে নিয়েছি সে যাবে ত্রিপোলী, আমিও যেখানে যাবো । কোমরে তার ঝোলানো ওয়াকম্যান । হেডফোন আছে যথাস্থানে । সে সময়কার ষ্ট্যাটাস সিম্বল । এতো স্মার্টলি সে চলাফেরা করছিলো লাউঞ্জে, যে মনে হলো কোথাও ঘাপলা আছে । ধীর-স্থির নয় এক জায়গাতেও । ত্রিপোলীতে কি এতো স্মার্ট লোক যাওয়ার কথা ? মফস্বলের লোক আমি, এত্তো স্মার্ট কাউকে দেখিনি বলেই হয়তো আমার ঘাপলার কথা মনে হলো । মফস্বলী সেন্টিমেন্ট । তবুও এই আকাশের বৈতরনী পার হতে এই ছেলেটিকেই আমার নায়ের মাঝি ঠিক করে ফেললাম মনে মনে । ছেলেটি খুব ব্যস্ত । আমাকে আশ্বস্ত করে বলে গেল, ডাক্তার সাইব প্লেনে কথা হইবে ।

ফাইন ।

এরই মাঝে আমার সঙ্গী জুটে গেছে । প্রথম ভ্রমনের ‘বউনি’ একদম খারাপ হয়নি ।
প্লেন উড়াল দিলো । সবুজে ছাওয়া মাটি ধীরে ধীরে যেন আমার কাছ থেকে দুরে সরে যাচ্ছে মনে হলো । এই মাটি, যেখানে কেটেছে আমার শৈশব, কৈশোর আর এই যৌবন । সে মাটি এখোন সরে সরে যাচ্ছে আমার থেকে দ্রুত । কতোদিন এই মাটিতে পায়ের চিহ্ন পড়বেনা আমার, ভাবতেই বুকের কোথাও যেন টান ধরলো একটু । যে মাটি ছিলো একান্ত আপন আমার সেই মাটির মায়া ছেড়ে আমি প্রবাসী হতে চলেছি । আজ বুঝলাম সৈয়দ মুজতবা আলি কেন বলেছিলেন “ ইনহাস্ত ওয়াতানাম” ! জানালার কাঁচের ফাঁক দিয়ে দেখি সব ঝাপসা হয়ে আসছে ক্রমাগত । বৃষ্টি হচ্ছে কি কোথাও ?

খানিক পরে সীমাহীন নীলের রাজ্যে প্লেনটা ঢুকে গেলে সীট ছেড়ে আমি সঙ্গী দুজনার পাশে গিয়ে বসলাম । তারপর দুনিয়ার গপ্পো । ফাঁকে ফাঁকে জানালা দিয়ে পেঁজা তুলোর মতো মেঘেদের ভেসে যাওয়া দেখছি । কবি কবি হয়ে উঠতে ইচ্ছে করলেও গপ্পের তোড়ে ভেসে গেল সব । গপ্পে গপ্পে আকাশের রাস্তা শেষ ।
গোত্তা খেয়ে “আকাশে শান্তির নীড়” নামলো দুবাই এয়ারপোর্টে । ওরা দু’জন টা-টা বাই বাই করে নেমে গেল । রি-ফুয়েলিং হবে এখানে । নামতে হবে আমাদেরও । স্মার্টগাই এসে বললো, “ডাক্তার সাইব নামেন । একসাথে যাই ।“
সন্দেহ হলো একসাথে যেতে বলছে কেন ! ভ্রমন পথে নিরাপরাধ কাউকে যে কতো কৌশলে অপরাধী বানানো হয় এমোন কাহিনী জানা আছে । বিশেষ করে স্মাগলাররা এরকমটা ঘটিয়ে থাকে ধরা পড়ার ভয় থাকলে । অথচ স্মার্টিকে নিয়েই আমাকে ভবনদী পার হতে হবে কারন আমি লিবিয়ার যে শহরে যাবো স্মার্টি ও সেই শহর থেকে এসেছে । ওর সাথে গেলে আমি নির্ঝঞ্ঝাটে আমার গন্তব্যে যেতে পারবো । এড়াবো কি করে ? ঠিক হবেনা ।
নামলাম । “আকাশে শান্তির নীড়” এ শান্তি পাইনি । জীবনের প্রথম বিমান ভ্রমনটি প্রথম প্রেমের মতো রোমাঞ্চকর হবে এমোন ধারনা ছিলো । তেমনটা লাগলো না বরং একঘেয়ে মনে হলো । দুবাই ডিউটি ফ্রি শপিং মলে এসে খিনিকটা শান্তি মিললো যেন । স্বর্গের মতো রোশনাই তার । স্মার্টগাই এর পেছনে পেছনে ঘুরছি । সে এটা কিনছে ওঠা কিনছে । একগাদা সিগারেট কেনা শেষ হলে আমার হাতে সব ধরিয়ে দিল –
“ ডাক্তার সাইব আপনে তো কিছু কিনতাছেন না, আপনি এইগুলান ধরেন, আমি আইতাছি ।” বলেই সে হাওয়া । তার প্রতি সন্দেহটা বাড়লো । দু’মিনিট গেল, পাঁচ মিনিট গেল পাত্তা নেই তার । আমার হাতে জিনিষপত্র । কিন্তু আমারতো এগুলো দরকার নেই , কিনবোনা । যদি না ই কিনি তবে এগুলো হাতে নিলাম কেন , এরকম একটা প্রশ্ন উঠতেই পারে । শপ লিফটিং কেস এ পড়বোনা তো ! দাঁড়িয়ে আছি তো আছি । কি করি ! এলোমেলো হাটতে শুরু করি । মিনিট পনের পরে দেখি আসছে সে । হাতে একটা স্যুটকেস । স্যুটকেস ? এটা দিয়ে কি করবে সে এখোন ? তবুও হাপ ছাড়লাম । এসেছে যে সেই ই ঢের । শপ লিফটিং এ ধরা খেতে হবেনা ।
-“চলেন চলেন ডাক্তার সাইব, হাতে সময় নাই বেশী ।“ পাশাপাশি হাটতে হাটতে কথা হয় ।
জিজ্ঞেস করি, স্যুটকেস দিয়ে করবে কি সে ।
“ কাজ আছে । আপনি বোজবেন না ।”
আমার বোঝার দরকার নেই । সহি সালামতে এই লোকের সাথে আমার গন্তব্য মিশুরাতা শহরে পৌঁছুতে পারলেই ঢের । ত্রিপোলী এয়ারপোর্টে একে হারিয়ে না ফেলি । আমার সীটের পাশে এসে বসলো সে । আলাপ হলো, আমি মিশুরাতা শহরে কাউকে চিনি কি না । মিশুরাতা শহরেই এক বাঙালী কোম্পানীতে সে কাজ করে জানা গেল । প্রায় সাতশত বাঙালী আছে সেখানে । তাকে নিতে গাড়ী আসবে । আমিও ঐ গাড়ীতেই তার সাথে যেতে পারবো । তাদের থাকার ক্যাম্প শহরের ঠিক বাইরে । শহরে থাকা ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়র সাহেবেরা বলতে গেলে রোজই আসেন বিভিন্ন কাজে তাদের ক্যাম্পে । ওদের কারো একজনের সাথে আমাকে ভিড়িয়ে দেয়া যাবে । আমি যেন কোনও চিন্তা না করি । একনাগাড়ে বলে গেল সে ।
আমার জন্যে, মেঘ না চাইতেই জল । কিন্তু শুরু থেকে যে সন্দেহ আমার ভেতরে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলো তা যাই যাই করেও যাচ্ছেনা । এই লোকটিকে কি সবটা বিশ্বাস করা ঠিক হবে আমার ! সাবধানে থাকতে হবে । একটু গায়ে পড়া ভাব মনে হচ্ছে ।
ধুর খামোকা ভাবছি আমি ! ছেলেটাকে বেশ মিশুকই মনে হচ্ছে । ছটফটানি বেশি এই যা । যা থাকে কপালে, পড়েছি তাফালে ! দেখা যাক কি হয় !

আমাকে আর দেখতে হলো না ।এয়ারপোর্ট সিকিউরিটিই তা দেখিয়ে দিলো ।
উড়াল জাহাজ ত্রিপোলীর মাটি ছুঁতেই স্বস্তির সাথে সাথে একটা ভয় ও ঢুকলো মনে । এই বান্দার সাথে যেতে হবে । কোথায় নিয়ে যাবে কে জানে ! নামতে নামতে স্মার্টি বললো, ডাক্তার সাইব আপনি তো আরবী জানেন না আমার পিছে পিছে আয়েন কাউন্টারে । অবাক হয়ে বললাম, কেন ওরা ইংরেজী জানেনা ? উত্তর এলো, জানলেও ওরা বলবেনা ।
তথাস্তু ।

স্মার্টি ঝটিতি এদিক সেদিক তাকিয়ে দ্রুত রওয়ানা দিলো সবচেয়ে কোনের ইমিগ্রেশান কাউন্টারটির দিকে । বললো - এইখানে নিরিবিলি, আয়েন । আসলাম । সামনে সে পিছনে আমি । আর কেউ নেই আমাদের লাইনে । তার জিজ্ঞাসাবাদ চলছে । কথা হচ্ছে আরবীতে । বকলম আমি , বুঝতে পারছিনে কিছুই । স্ক্যানিং এর পরে তার স্যুটকেস খুলতে আদেশ হলো । স্যুটকেস এর ভেতরে আর একটি স্যুটকেস । তার ভেতরে আর একটি । আমার কাছে স্যুটকেস রহস্য আরো জট পাকালো । আর তার ভেতর থেকে বেরুলো অসংখ্য পোটলা । কোনোটা কাগজের, কোনোটা কাপড়ের । কোনোটা সুতলি দিয়ে মোড়া, কোনোটা রঙিন ফিতে দিয়ে । খাইছে, এগুলো কি নিয়ে এসেছে সে ! ভাবতে যতোটুকু সময় লাগলো আমার তার চেয়ে দ্রুততম সময়ে খটাখট খটাখট শব্দ উঠলো আমাদের কে ঘিরে । দেখি আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে আর্মি এবং পোর্ট সিকিউরিটির লোকেরা । “উদ্যত সঙ্গীন” এর মতো উদ্যত ষ্টেনগান আর রাইফেল এর নল আমাদের দিকে তাক করা । আতংক পেয়ে বসলেও মাথা ঠান্ডা রাখলাম । সারাটা পথ যা ভেবেছি তাই ! গালি দিলাম নিজেকে বোকামীর জন্যে – বেওয়াকুফ , বলেছিলাম না কোথাও ঘাপলা একটা আছে ? শেষ পর্য্যন্ত এই মফস্বলীর সন্দেহটাই তো সত্য হলো ? স্মাগলারের সঙ্গী হয়েছি !
বেড়িয়ে যাবো উপায় নেই । কর্ডনড অবস্থায় আছি । মুখটা যথাসম্ভব নির্বিকার রাখতে চেষ্টা চরিত্র চালিয়ে গেলাম আর মনে মনে বিপদের কান্ডারী আল্লাহর নাম । স্মার্টিও নির্বিকার ভাবে হাসিমুখে সিকিউরিটির লোকজনদের কি যেন বোঝাচ্ছে হাত পা নাড়িয়ে । পোটলা পাটলির ভেতরে একটা বিশেষ লক্ষ্যবস্তুর দিকে আঙ্গুল দিয়ে কি যেন বোঝাচ্ছে সে । যতোবারই সে হাত তুলছে ততোবারই সিকিউরিটির লোকজন আক্রামনাত্মক হয়ে যাচ্ছে । দেখতে পাচ্ছি তাদের আঙ্গুল ট্রিগারে চেপে বসছে । ওদিকে দেখিয়ে সে দু’হাত দিয়ে কিছু একটা ফাঁটানোর আর তার পরে মুখ হা করে কিছু খাওয়ার ভঙ্গী করছে । তাতেই ক্ষেপে উঠছে আর্মি আর সিকিউরিটির লোকজন । আরবীর মধ্যেও শেষ শব্দটি বুঝতে পারলাম “হল্ট” । যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছে তারা । স্মার্টির প্রতিটি নড়াচড়াতেই চীৎকার করে “হল্ট” । আর ষ্টেনগান নাচিয়ে নাচিয়ে গুলি করার ভঙ্গী । কিসের জন্যে এসব হচ্ছে ঠিক বুঝতে না পারলেও খুব মারাত্মক কিছু যে হচ্ছে তা বুঝতে পারছি । এটা স্মাগলিং সংক্রান্ত বিষয় নয় আরো ভয়ঙ্কর কিছু ব্যাপার নিশ্চয়ই । স্মার্টি কিন্তু হাসি মুখ করেই আছে ।
কি মনে হতে ক্ষান্ত দিলো তারা । দু’জন স্মার্টিকে গার্ড দিয়ে রাখলো । দু’জন রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে খোঁচাতে লাগলো পোটলা পাটলি । ফাটা পোটলাগুলো থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো আচারের বোতল, শুকনা মরিচের প্যাকেট, তিব্বত কদুর তৈল, গামছা আর গেঞ্জীর বোঁচকা, শুটকি মাছের দুর্গন্ধ, তেজপাতা, সুপারী, সর্ষের তেল, নারকেলের বরফি – নাড়ু, তিলের খাজা, তেলে ভাজা পিঠা, রাবারের স্যান্ডাল, শান্তিপুরী জর্দার কৌট্টা , পান, পাজামা -পাঞ্জাবী ইত্যাদি হরেক মালামাল । সুযোগ বুঝে ফিসফিস করে স্মার্টিকে জিজ্ঞেস করলাম, “কিরে ভাই এগুলান কি ? পাইছেন কই ?”
“ আর কইয়েন না ডাক্তার সাইব, কত্তো মানুষে যে দেছে । আমাদের ক্যাম্পে যারা থাকে হেগো আত্মীয়স্বজনরা পাঠাইছে” ।
এবার বোধগম্য হলো আমার , না একদম খারাপ না স্মার্টি । যা ভেবেছিলাম তা নয় । বেচারার জন্যে কষ্ট হলো । ছড়ানো ছত্রাকার জিনিষগুলোর প্রাপকদের কার কোনটা, কি করে বুঝবে সে এর পর !
এর মধ্যে আমাকে সরিয়ে দিলো সিকিউরিটির লোক । উঁকি ঝুঁকি দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি ঘটনাটা কি । ঘটনা যে কতো মারাত্মক বোঝা গেলো এবার ।
গ্রেনেড । চার চারখানা গ্রেনেড ।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছেড়া পোটলা পাটলির ভেতরে উঁকি দিচ্ছে পলিথিনের ব্যাগে খবরের কাগজে জড়ানো সবুজ রঙের গ্রেনেড । পলিথিনের ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে তাদের মসৃন পিঠের কিয়দংশ । এবারে বুঝলাম স্মার্টির কিছু ফাঁটানোর (মানে ভাঙ্গার) অঙ্গভঙ্গী করে দেখানোতে বিমান বন্দরটি যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠলো কেন । উঠবেই তো , গ্রেনেড বলে কথা । তা ও একখানা নয় চার চারখানা । সেই গ্রেনেড ফাটিয়ে দেখাতে চায় স্মার্টি । ভাগ্যিস ব্রাস ফায়ার করে বসেনি ।

আপনারা কিছু বুঝলেন ?

কদবেল । কে যেন তার প্রিয় কাউকে পাঠিয়েছে চারখানা কদবেল ।

[ এটুকু আমার বিদেশযাত্রার প্রথম অংশ “টাচ ডাউন” এর ভয়ংকরং সমাপয়েৎ ।
ভাববেন না যে এরপর দ্বিতীয় অংশটি লিখতে যাচ্ছি । নো পসেব্লিটি !
]
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৫১
৩১টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×