somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর বিতর্কিত সব ছবিরা……

১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পৃথিবীর বিতর্কিত সব ছবিরা……
[ ছবি যাদের দোলা দেয়, শুধু তাদের জন্যে ….. ]

প্রথম পর্ব
চিরটা কাল ছবি মানুষকে ভাবিত করে এসেছে, তা ফটোগ্রাফিই হোক কিম্বা হাতে আঁকা । আর এ সবই মানুষের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক উত্তরনে , দেশ-কাল ভেদে তার সংষ্কৃতিকে পরিমার্জনে কম ভূমিকা রাখেনি । শিল্পীরা বরাবরই প্রথাগত ধ্যান ধারনাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, জোর করেছেন সামাজিক কনভেনশানগুলোকে নতুন করে বিবেচনা করার । এমোন কি শিল্প সম্পর্কে ধারনাগুলোকেও পাল্টে দিতে চেয়েছেন বারবার ।
তাই কিছু কিছু ছবি আছে যারা তর্কের ঝড় তুলেছে , আমাদেরকে প্রাথমিক ভাবে আহত করেছে, হয়তো ক্ষুব্ধও করেছে কিন্তু সময়ের বিবর্তনে তারাই আবার সামাজিক ইতিহাস কিম্বা শিল্পের ইতিহাসকে মহিমান্বিতও করেছে । এমোন বিতর্কিত ছবিগুলির মধ্যে আবার যারা যারা কলঙ্কজনক ভাবে সম্ভ্রম হানিকর কিছু বক্তব্য তুলে ধরেছে , ছড়িয়েছে লজ্জাস্কর কিছু অনুভূতি তারা কিন্তু টিকে থাকেনি বেশীদিন । মাঠে নেমেই যেমন তারা প্রথম শ্যূটেই গোলটি দিয়ে ফেলেছে তেমনি খেলা শেষে হেরে গিয়ে স্কোরবোর্ড থেকে সরেও গিয়েছে । এরা একই সময়ে সফল যেমন, ব্যর্থ ও তেমন । কোনও ছবি সাড়া ফেললেই যে তার বক্তব্য তৎক্ষনাৎ মানুষকে ভাবিয়ে তুলবে বা মানুষ তা লুফে নেবে তা কিন্তু হয়না । সব বিখ্যাত “কন্ট্রোভার্সিয়াল” ছবির ভাগ্যেই কিন্তু এমোনটা ঘটেছে । এরা হয়তো নির্দিষ্ট কোনও গোষ্ঠীর কাছে পুরোটাই জঘন্য রকমের বিতর্কিত আর বাকী সকলের কাছে কম বেশী নিন্দিত কিছু । কারন এই সব বিতর্কিত ছবিগুলো আঁকা হয়েছে মূলত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী, ধর্মীয় আচার–অনাচার , শৈল্পিক ভাবাবেগ কিম্বা যৌনতা সম্পর্কিত বৈপরীত্য নিয়ে ।

এসব বিতর্কিত ছবিরা যে কেবল চলমান কালেরই তা নয়, অনাদিকাল থেকেই আছে এরা । পৃথিবীর বিভিন্ন গুহাচিত্রে এরকম ভূরিভূরি ছবি (চিত্র) র দেখা পাবেন আপনি । কিন্তু কথা হলো, “বিতর্কিত ছবি” এমোন ছাপটি আপনি কাকে দেবেন ? যেমন “অশ্লীল” বা “বিতর্কিত” শব্দ দু’টি কাকে বোঝায় তার কোনও ধরাবাঁধা সঙ্গা নেই ।
ভারতের খাজুরাহোর গুহাচিত্রগুলোকে কি হিন্দু ধর্মাবলম্বী সবাই-ই কি বিতর্কিত বা অশ্লীল বলবেন ? কিম্বা ভিঞ্চির “লাষ্ট সাপার” ছবিটিকে গোড়া ক্রিশ্চিয়ান কেউ বিতর্কিত বলবেন কী ? উলঙ্গ ডেভিড ( দাউদ ) এর বিশ্বখ্যাত অনবদ্য মূর্তিটিকেই বা কে কি ভাবে নেবেন ?
এটি একান্ত ভাবেই ছবিটি বা শিল্প মাধ্যমটি যিনি দেখছেন তার দৃষ্টিভঙ্গী । ছবি দেখতে গিয়ে শিল্পীর র‍্যাডিকল দৃষ্টিভঙ্গীকেও অনেকে বিবেচনায় আনেন । তাই এই জাতীয় ছবিগুলোকে দেখা হয়, হয় সম্ভ্রমের সাথে নতুবা তাচ্ছিল্য সহকারে । আমরা যে যা ই বলিনা কেন, এ জাতীয় মহান বা বিখ্যাত ছবিগুলো যে আসলেই সমাজের উপর একটা প্রভাব ফেলে যায় তা অস্বীকার করিই বা কী করে ! শিল্পকে ভালোবাসেন বা ছবিতে শিল্প যারা খোঁজেন তাদের কল্পনাকে, ভাবনাকে যুগেযুগে সব ছবিরাই সবসময় টেনেছে জোরেশোরেই । শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছেন এমোন শিল্পীরাও তাই মাঝেমাঝেই সমালোচিত হয়েছেন, বঞ্চিত হয়েছেন তার প্রাপ্য মর্যাদাটুকু থেকেও । তবুও অবিনশ্বর ছবিরা কালকে অতিক্রম করে গেছে বারেবার ।
এমোন কিছু ছবিকে নিয়েই বসেছি আমি । যারা ধিকৃত হয়েছে, লাঞ্ছিত হয়েছে বক্তব্যে -

সমাজতন্ত্রের ছাতার নীচে একটি জাতি / জন ম্যাকনটন
One nation under socialism – OBAMA / Jon McNaughton



জন ম্যাকনটনের (Jon McNaughton) এর আঁকা ছবি যেমনটা তিনি একেছেন আরো আরো, তার একটি । বর্তমানের জনপ্রিয় সংস্কৃতির গরম গরম পেইন্টিঙের তালিকার শীর্ষে আছে ছবিটি । বর্তমান সময়ের বিশ্বের সবচে’ ক্ষমতাধর ব্যক্তিটিকে নিয়ে জন নটনের এটি নতুন কোনও ব্যঙ্গ নয় ।
এমোনটা তিনি করেছেন আরো অনেক । করেছেন আরো অনেককে নিয়ে । এই করে করে নিখুত , সুক্ষ ফিগারেটিভ শিল্পী হিসেবে ইতিমধ্যে তিনি নিজের নামটি জাহির করতে পেরেছেন । শিল্প রসিকেরা তার নাম দিয়েছেন “ আমেরিকা’স দ্য ভিঞ্চি” । হতেই পারে, কারন ম্যাকনটন যখোন বলেন – “ আমি পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছি । আমি যাকে যাকে মডেল হিসেবে নিয়েছি তাদের একেছি নিজের মনের চোখে তাদেরকে যেমন দেখেছি তেমন করে । ”
ভিঞ্চি ষ্টাইল ?
গেলো বছরের মার্চের মাঝামাঝি “ ওয়ান নেশন আন্ডার সোশ্যালিজম” এই দাউদাউ বক্তব্য নিয়ে ছবিটি প্রকাশিত হবার সাথে সাথেই বিশ্বময় ইন্টারনেটে ঝড় ওঠে । ভাইরাসের মতো তা ছড়িয়ে যায় সবখানে । ম্যাকনটনের ফেসবুক সয়লাব হয়ে যায় মন্তব্যে মন্তব্যে ।
ছবিটিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে তিনি উপস্থাপন করেছেন নেগেটিভ ভঙ্গীতে । ওবামা তার নিজ দেশের সংবিধানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন এমোনটাই ছবির বক্তব্য । তার একটি হাত সংবিধানটি ধরে আছে আর তার অপর হাতটি আগুনের লেলিহান শিখার দিকে আপনার দৃষ্টিকে টেনে যেন বলছে, “ দ্যাখো...দ্যাখো ...” ।
আমেরিকান অঙ্গরাজ্য উটাহ থেকে আসা কনজারভেটিভ মনোভাবের ম্যাকনটনের কাছে এমোনটা মনে হতেই পারে । ২০১২ সালের নভেম্বরে ৫৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশানের আগে আঁকা ছবিটি । রাজনৈতিক ছবি নিঃসন্দেহে, কনজারভেটিভদের পক্ষেই গেছে হয়তো ! শিল্পীর ধারনা, গেলো ১০০ বছর ধরে ডেমোক্রাটস’রা আমেরিকাকে সমাজতন্ত্রের দিকেই ঠেলে দিচ্ছেন আর ওবামা এখোন সংবিধানটি পুড়িয়ে রাস্তাটি পরিষ্কার করার কাজে লেগে গেছেন । মার্কিন দর্শকদের এখানটাতেই ঘোরতর আপত্তি । ছবিটি দেখার পরে আপনি কী আশা করেন মার্কিন জনগণ এই বক্তব্য মেনে নেবে ? নেয়নি । তাইতো ছবিটি জোড়ালো ভাবে বিতর্কিত । মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকলেও হাযারো অভিযোগ আর ক্ষোভ নিয়ে সাধারন মানুষ কিন্তু মতামত দিয়েছেন এর বিপক্ষে । বলেছেন – ছবি এবং তার শিরোনামটি সামঞ্জস্যহীন ।
লসএঞ্জেলস টাইমস পত্রিকার শিল্প সমালোচক ক্রিষ্টোফার নাইট তো সরাসরি বলেই ফেল্লেন- এটি একটি জাংক ছবি । ছবির নামটি তার অর্থের বাস্তবতা বোঝাতে মোটেই সফল নয় । এটা এমোন একটি বাজে ধরনের ছবি যা শিল্পী যেটা বোঝাতে চেয়েছেন তা বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারেননি ।
অন্যান্য সমালোচকরাও ছবিটির “ মেরিট” নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । কেউ কেউ মনে করতেই পারেন , গ্রহনযোগ্য নৈতিকতা কিম্বা শৈল্পিক প্রথাকে চ্যালেঞ্জ না করে ম্যাকনটন বরং সোজাসুজি ভাবেই মানুষকে বজ্রাহত করার ইচ্ছেতেই এটি করেছেন ।
হয়তো !
আর ফাঁকতালে হয়তো একটা ফায়দাও লুটতে চেয়েছেন । জুটেছেও তা । ছবিটির দাম উঠেছে তিন মিলিয়ন ডলার । মন্দ কী ?
অথচ শিল্পী বলছেন, তার অভিজ্ঞতা আর বিশ্বাস থেকেই তিনি ছবি আঁকেন । তাই ধর্মীয় আর দেশপ্রেম বিষয়ক বিশদ ব্যাখ্যা নিয়ে তার ছবিরা হাজির হয় ।
এরকম একটা ছবি আপনারও দরকার ? পাবেন । লিথোপ্রিন্ট পাবেন ছোটটি ৩৬ ডলারে আর বড়টি ৭৯ ডলারে । ক্যানভাসের চাইলে ছোটটিতে ৫৩ ডলার আর এর চারগুন বড়টিতে ২৩০ ডলার গুনতে হবে আপনাকে ।


Jon McNaughton

দ্য গ্রস ক্লিনিক / থমাস ইয়াকিনস
The Gross Clinic - Thomas Eakins



মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে এই ছবিতেও লাগানো হয়েছে “বিতর্কিত” ছাপটি । ছবিটির দিকে তাকিয়ে আপনার তেমনটি কিছু মনে হবেনা । আজকাল সার্জারীর ফটোগ্রাফ/ছবি বা কাটাকাটি চাক্ষুস দেখা অতি সাধারন ঘটনা ।
কিন্তু যে সময়ে ছবিটি আঁকা সে সময়ে এ ধরনের রক্তাক্ত দৃশ্য দর্শকদের কাছে ছিলো ভয়ঙ্করতার, আতংকের, শিহরনমূলক, বর্বরোচিত । সে সময়কালের মূল্যবোধ ছবিটিকে সমর্থন করেনি, তাই অস্পৃশ্য । ১৮৭৫ সালে আঁকা এই ছবিটির প্রথম প্রদর্শনীতেই তার গায়ে ছাপ পড়েছে - “.... bloody and very blunt depiction of surgery and no doubt, shocking...” ।
ফিলাডেলফিয়ার জেফারসন মেডিকেল কলেজে ডাঃ স্যামূয়েল ডি, গ্রস যখোন তার ছাত্রদের অপারেশনাল প্রসিডিওর শেখাচ্ছিলেন, নিজের চোখে দেখে তারই একটি রিয়েলিষ্টিক চিত্র এঁকেছেন শিল্পী । তেল রংয়ে আট ফুট বাই সাড়ে ছয় ফুট ক্যানভাসে ফুটে আছে রক্তাক্ত হাত আর ছুরি নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষানবিশ কয়েকজন, কাটাকুটিতে রক্তাক্ত নিম্নাঙ্গ নিয়ে শোয়নো রোগী আর একদল প্রত্যক্ষদর্শী । দর্শকদের সারিতে ( ব্লগের এই ছবিটিতে ততোটা স্পষ্ট নয়, আলো-আঁধারির কারনে । ) আছেন শিল্পী স্বয়ং, লিখছেন বা কিছু আঁকছেন । উনিশের শতকে শল্যবিদ্যা ( সার্জারী) বলতে মানুষ যখোন বুঝতো , শরীরের কোন অঙ্গ কেটে বাদ দেয়া; ঠিক সে সময়ে সত্তর বছরের ডাঃ গ্রস ছুরিতে কেটে রক্ত দিয়ে মেডিসিনের ইতিহাসে লিখছেন আর এক নবযুগের কাহিনী । শিল্পী এই ঐতিহাসিক ক্ষনটিকেই অমর করে রাখতে চেয়েছেন । শিল্পী চাক্ষুষ করছেন , অঙ্গ কেটে বাদ দিয়ে রোগীকে সুস্থ্য করা নয় বরং অঙ্গ থেকে রোগটিকে কেটে ফেলে রোগীকে সারিয়ে তোলার যুগান্তকরী অপারেশনাল প্রসিডিওরটাকে । জেফারসন মেডিক্যাল কলেজের অপারেশান থিয়েটারে ডাঃ গ্রস, উরুর অস্থিতে (ফিমার) অষ্টিওমাইলাইটিস রোগে আক্রান্ত এক অল্প বয়েসী রোগীর উপর যে চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন ছবিতে তাকেই ধরতে চেয়েছেন থমাস ইয়াকিনস । উপস্থিত করেছেন সত্য যা , তাই-ই । হীতে বিপরীত হয়েছে । তীব্র রোষানলে পড়েছেন শিল্প সমালোচকদের ।
ছবিটি বড় বেশী বাস্তব । এটাতো যে কাউকে আতঙ্কগ্রস্থ আর অসুস্থ্য করে তুলতে যথেষ্ট । মানুষের স্নায়ু ছবিটির রিয়েলিষ্টিকতাকে সইতে পারবেনা । সমালোচকরা বলেছেন -
“ দ্য র, ব্লাডি ভায়োলেন্স অব দ্য এ্যাক্ট অব সার্জারী । ১৮৭৫ সালের মন মনসিকতায় দর্শকদের কাছে ছবিটি ছিলো অসহনীয়, অনাকাঙ্খিত, দৃষ্টিকটু । কী ভয়ানক - একটি মানুষকে কাটাচেরা করা হচ্ছে !
পাশাপাশি যদিও তারা ছবিটির শক্তি আর আবেদনটুকুর প্রশংসা করেছেন । বলেছেন কঠিন এক বাস্তবের ছবি এটি । কিন্তু এ সব ছাপিয়ে গেছে এর অমানবিকতা, বর্বরতা ।

এতো কিছু সত্বেও ছবিটি একটি ঐতিহাসিক দলিল । জটিল রোগ সারিয়ে তুলতে মেডিসিনের জগতে শৈল্য চিকিৎসার অবদানকে স্বাগত জানিয়েছে ছবিটির বক্তব্য । দেখানো হয়েছে একটি সার্জিক্যাল থিয়েটার কেমন হতে পারে । সার্জিক্যাল থিয়েটারে সে সময়কালে কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মত শৈল্য পরিবেশ (asepsis) এর কোন সঠিক ধারনা ছিলোনা । তারপরেও তারা কতোটুকু সজাগ ছিলেন পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিতে , ছবিতে ফ্রক কোট পরিহিত সার্জনরা তা বুঝিয়েছেন । আজ আমাদের পরিচিত “সার্জিক্যাল গাউন” এর পূর্বসুরী ছিলো এই “ফ্রক কোট” ।
(পনের বছর পরে ১৮৮৯ সালে শিল্পীর আঁকা “ দ্য এ্যাগনিউ ক্লিনিক” এ পেশাজীবি এক নার্স সহ আরো পরিষ্কার, আলোকিত একটি সার্জিক্যাল থিয়েটার দেখানো হয়েছে । এর অর্থ, ১৫ বছরে সংক্রমন প্রতিরোধে মানুষ এগিয়েছে বেশ কিছু ধাপ ।)
জেফারসন মেডিক্যাল কলেজের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে মাত্র ২০০ ডলারে কেনা এই ছবিটি তখোন কলেজ ভবনেই রাখা হয় । পরে ১৯৮০ সালে ছবিটি স্থানান্তরিত হয় জেফারসন এ্যাল্যুমনাই হলে । ২০০৬ সালের নভেম্বরে জেফারসন য়্যুনিভার্সিটি বোর্ড ৬৮ মিলিয়ন ডলারে ছবিটিকে ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল গ্যালারী অব আর্ট এর কাছে বিক্রি করে দেবার সিদ্ধান্ত নেন । ভাবুন, ২০০ ডলারের ছবির দাম উঠেছে মিলিয়নস ডলার ! ফিলাডেলফিয়াবাসীরা এটা হতে দেননি । ঐতিহাসিক বস্তু বলে শহরের “ইতিহাস সংরক্ষন” কোডের আওতায় ফিলাডেলফিয়াবাসীরা ছবিটির বিক্রিতে বাধা দেন এবং নিজেরাই অর্থ সংগ্রহে নেমে পড়েন । কয়েক সপ্তাহের ভেতরেই ৩০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে ফেলেন তারা । ওয়াকহোভিয়া ব্যাংক বাকীটা তাদের ঋন দিতে সম্মত হলে ছবিটি শহরেই থেকে যায় ফিলাডেলফিয়া মিউজিয়ম অব আর্ট এ ।
“বিতর্কিত” একটি ছবির জন্যে শুধু নয়, একটি ইতিহাসকে ধরে রাখতে ফিলাডেলফিয়াবাসীদের এভাবে চাঁদা তুলে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার পানিতে ঢালাকে কি নির্বোধের কাজ বলবেন ?
অথচ আমরা ....... ? ইতিহাসকে ধংশ করে দিতে যেন বদ্ধপরিকর......

অলিম্পিয়া / এদ্যুয়ার মানে'
Olympia / Edouard Manet


Olympia, 1863, Edouard Manet, oil on canvas
অবাক বিস্ময়ে প্যারিসবাসীরা দেখলো, নগ্ন এক বারবনিতার ছবি এঁকেছেন এক শিল্পী । ছিঃ ছিঃ রব উঠলো চারদিকে । কার এতো সাহস ? গতানুগতিক ছবি আঁকিয়ের বাইরের এক শিল্পী । প্রচলিত নিয়ম রীতিকে ভেঙ্গে ফেলে যে ইম্প্রেশনিষ্ট আন্দোলন ততোদিনে দানা বেঁধে উঠেছে প্যারিসে, তারই একজন হোতা ; এদ্যুয়ার মানে' । ছবিটি একটি “ভালগার” আর জন্ম দেবে অনৈতিকতার, এমোন আওয়াজ উঠলো সমাজে । ছবিটি লালসা মাখানো আর যৌনতার খোলামেলা এক প্রদর্শনী যেন । ধিক্কার তো উঠবেই !
১৮৬৩ সালে শেষ হওয়া ছবিটি যখোন “ অলিম্পিয়া ” নামে দু’বছর পরে প্যারিসের চিত্রশিল্পীদের মেলায় প্রদর্শিত হলো , গেলো .. গেলো রব উঠলো দর্শনার্থীদের মাঝে । শিল্প সমালোচকেরা হতভম্ব হয়ে রইলেন । খবরের কাগজগুলো নিন্দার ঝড় বইয়ে দিলো । পুলিশ প্রহরা বসাতে হলো জনতার রোষানল থেকে ছবিটিকে বাঁচাতে । তাতেও কাজ হলোনা । ছবিটিকে ঝোলাতে হলো অনেক উঁচুতে, সকলের নাগালের বাইরে ।
নগ্নিকাদের ছবি তো আরো অনেকেই এঁকেছেন । সর্বকালের সেরা ছবি “ভেনাস” ও তো নগ্নিকা একজন । “প্রেমের দেবী” বলে পার পেয়ে যাবেন ? ঠিক এরকম একটি নগ্নিকার ছবি তো এঁকেছেন ইটালীর সেরা ওস্তাদ আঁকিয়ে টিসিয়ান “ভেনাস অব উরবিনো” নামে ১৫৩৮ সালে ।


ছবি - “ভেনাস অব উরবিনো” ।। টিসিয়ান ।। ১৫৩৮ ।। উফিজি গ্যালারী ।। ফ্লোরেন্স
তবে ?
তবে… আর কিছু নয়, ছবিটির উপস্থাপনাটিই যতো গন্ডোগোলের মূল ।
গন্ডোগোলটা অলিম্পিয়া নামের এই ছবিটিতে নগ্নতা নিয়ে নয়, এমোন কি তার পায়ের কাছে থাকা পরিপূর্ণ পোষাকের পরিচারকটিও নয় । এখানে নগ্নিকা দর্শকদের দিকে তাকিয়ে আছেন সরাসরি আমন্ত্রন জানানোর ভঙ্গীতে । যা টিসিয়ানের ছবিতে নেই । টিসিয়ান যেখানে তার নগ্নিকার লজ্জাস্থান ঢেকেছেন আলতো করে ফেলে রাখা একখানা হাত দিয়ে , সেখানে এদ্যুয়ার মানে' র নগ্নিকাটি তা করেছেন দর্শকদের উপহাস ভরে । যেন দেখাবোনা…দেখাবোনা এরকম একটি ঠাট্টা করেছেন তাদের সাথে । এ্যাবসোলিয়্যুটলি ভালগার, লিউড এ্যান্ড ডার্টি …… তার উপর তার গলায় রয়েছে কালো রিবন ( ঠিক যেন প্লে-বয় ক্লাবের বানী [Bunny] দের মতো ), চুলে গুঁজে রাখা অর্কিড, পায়ের কাছে কালো বেড়াল । আর পায়ে তার অবহেলা ভরে ধরে রাখা স্যান্ডাল একটা ইন্দ্রিয়সুখের আবহাওয়া তৈরী করে রেখেছে । এ সবই যৌনতার প্রতীক । তার কানের মুক্তোর দুল, হাতের ব্রেশলেট, অরিয়েন্টাল শাল যার উপরে সে শায়িতা সব যেন তার ধনাঢ্যতা আর ভোগবাসনার কথাই বলছে । তার উপরে কালো রংয়ের পরিচারকটি কোনও এক অতিথির পাঠানো ফুল নিয়ে দাঁড়ানো তার পাশে । সব মিলিয়ে এদ্যুয়ার মানে' র নগ্নিকাটি যে একজন বারবিলাসিনী তা স্পষ্ট ।
তুলির অনিয়মিত ছোট ছোট টানে আঁকা ছবিটি । কাছ থেকে দেখলে আপনি এর সুন্দরতা খুঁজে পাবেন না । দূর থেকে মনে হবে জ্যান্ত কিছু । ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পীরা এভাবেই আঁকতেন ছবি , প্রচলিত নিয়মের বাইরে । নগ্নিকার নগ্নতাকে এখানে হালকা রংয়ে ঝকঝকে করে উপস্থাপন করা হয়েছে । হালকা রং অথচ উজ্জল । তুলির ছোট ছোট টান থাকার কারনেই নগ্নিকার চেহারায় নমনীয়তার বদলে কর্কশ একটা ভাব এসেছে ।

৫১ বাই ৭৪.৮ ইঞ্চির ছবিটিতে তেল রংয়ে আঁকা এই “অলিম্পিয়া” কে ? ১৮৬০ থেকে প্যারিসের অভিজাত মহলে “অলিম্পিয়া” নামটি একজন বারবনিতার নামেই উচ্চারিত । আদতে চিত্রকর আলফ্রেড ষ্টিভেনস এর মনের মানুষটি – ভিক্টোরাইন ম্যওরেন । তার অপরিনত অথচ আবেগ পূর্ণ আধুনিকা শরীরটাকে যে আলো ছায়ার তীব্র বৈসাদৃশ্যের মধ্যে শায়িতা করে রেখেছেন শিল্পী তা যতোখানি হতবাক করেছে দর্শকদের ততোখানিই অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে ছবিটিতে টিসিয়ানের “ভেনাস অব উরবিনো”র ঢংটি আরোপিত করায় ।
সমালোচক আর দর্শকেরা যেখানে ছবিটিকে প্রত্যাখান করেছেন সেখানে অলিম্পিয়া নামের এই ছবিটি ধংশ করে ফেলাই উচিৎ ছিলো অথচ কতৃপক্ষ কেন যে তা করলেন না , এরকমের খেদও ঝরেছে সাংবাদিক এ্যান্টোনিন প্রোষ্ট এর মুখে । এমোন কি বিশ্বখ্যাত লেখক এমিল জোলা পর্য্যন্ত ছবিটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছু না বলে কুটিলতার পর্যায়ে নেমে গিয়ে বলেছেন – “ আপনি একটি ন্যাংটো কিছু চাইছেন তো আপনার জন্যে রয়েছে অলিম্পিয়া ।” যদিও জোলা আবার এদ্যুয়ার মানে'র প্রশংশা করেছেন এই ভাবে, “ যখোন আমাদের শিল্পীরা আমাদের জন্যে ভেনাসের ছবি এঁকে বলেন – তারা প্রকৃতিকে সুন্দর করেছেন, তখোন তারা মিথ্যে কথাই বলেন । আর এদ্যুয়ার মানে' নিজেকে শুধিয়েছেন – মিথ্যে কেন ? সত্য কেন নয় ? তাই তিনি আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন অলিম্পিয়ার সাথে যাকে দেখবেন আপনি রাস্তার পাশের গলিতে ।”
আবার অন্যদিকে –
“খুব ভালোবেসেছিলেন ছবিটিকে এদ্যুয়ার মানে' । দু দু’টো বছর ধরে আঁকা ছবিটি মৃত্যুর আগ পর্য্যন্ত তার ষ্টুডিওতেই ছিলো । দর্শকদের কাছে অলিম্পিয়ার প্রত্যাখান শিল্পীকে খুব কষ্ট দিয়েছে । সন্দেহ নেই এদ্যুয়ার মানে' মহান এক শিল্পী, থাকবেন ও তাই । কিন্তু বড় বেশী ভঙ্গুর । এ ঘটনায় শিল্পী নিজেকে প্রত্যাখাত ভেবেছেন আর স্তম্ভিত হয়েছেন অভিঘাতে । আমার কাছে মজা লাগছে এটা দেখে যে , তাকে পরাজিত ভেবে সকল গর্দভেরা খুশিতে বাগবাগ হয়ে আছে ।” – বলেছেন শিল্পীর বন্ধু কিম্বদন্তী লেখক, কবি ব্যোদলেয়ার ।
যে যাই বলুক, ইম্প্রেশনিষ্ট আন্দোলনের প্রান পুরুষ শিল্পী ক্লদ মনে কিন্তু তাকে পরিত্যাগ করেননি । এদ্যুয়ার মানে'র মৃত্যুর পরে ক্লদ মনে (ক্লদ মনে’র ছবি ওয়াটার লিলিজ সম্পর্কে জানতে এখানে দেখুন.. Click This Link )
স্বপ্রনোদিত হয়ে চাঁদা সংগ্রহে নামেন আর এই বিতর্কিত ছবিটি কিনে ফ্রেঞ্চ সরকারকে দান করেন । ফরাসি জাতি ১৮৯০ সালে এর মালিক বনে গেলে এটির স্থান হয় প্যারিসের “ম্যুজি দ্য’ওরসে” গ্যালারীতে যেখানে উনিশ শতকের এই অমূল্য মাষ্টারপীস ছবিখানি আপনি দেখতে পাবেন ।

“শ্রী গনেশ এর মাথার উপরে নগ্ন দেবী লক্ষ্মী” /
মকবুল ফিদা হুসেইন
Goddess Lakshmi Naked on Shri Ganesh’s Head / Maqbool Fida Hussain



দূরের নয় , পাশের বাড়ীর ছবি । আর দেবী লক্ষ্মীকে না চেনেন কে ? দেবী বলে কথা , পূঁজনীয় । তার ছবি বিতর্কিত হয় কি করে, অশ্লীল হয় কি ভাবে ? কার এতো সাহস ? ছবিকেই নয় নিজেকেও বিতর্কিত করতে যে একজনই আছেন এ অঞ্চলে - মকবুল ফিদা হুসেইন । অনন্যসাধারণ এক চিত্রকর যিনি ভারতীয় চিত্রশিল্পকে দিয়েছেন নতুন মাত্রা । ছবির সংখ্যার প্রাচুর্য্যে ফোর্বস ম্যাগাজিন আবার যাকে নাম দিয়েছে “ভারতের পিকাসো” ।

“শ্রী গনেশ এর মাথার উপরে নগ্ন দেবী লক্ষ্মী” নামের এই ছবিটি ১৯৭০ সালে আঁকা হোলেও ভারতবাসীর কোঁপানলে পরে ১৯৯৬ সালে যখোন ছবিটি “বিচার মীমাংশা” নামের একটি হিন্দু মাসিক পত্রিকায় ছাপা হয় তখোন । ছবির বিষয়বস্তু ধর্মপ্রান হিন্দুদের সৌভাগ্য আর সম্পদের দেবী লক্ষ্নীকে হেনস্থা করেছে এই অপরাধই শুধু নয়, একটি মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠা একজন, যে কিনা নিজেকে আবার ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবী করেন তেমন একজন লোক কিনা দেবীকে নগ্ন করে দিয়েছেন, ক্ষমার অযোগ্য এই অপরাধেও অপরাধী শিল্পী ।

দু’মুঠো ভাতের জন্যে ফিল্মসিটি বলিউডের সস্তা হিন্দি ছবির পোষ্টার হাতে এঁকে মকবুল ফিদার শিল্পী জীবনের শুরু । মনে করা হয় , ১৯৩৫ সালে কিম্বদন্তী অভিনেতা কে,এল, সায়গল অভিনীত “দেবদাস” ছবিটির বিলবোর্ড মকবুল ফিদার নিজের করা । স্বাধীনতা উত্তর ভারতের বোম্বের প্রগতিশীল শিল্পীসংঘে যোগদানের পরে পরেই তার হাত খুলতে থাকে । ধীরে ধীরে পোষ্টার আঁকিয়ে এক শিল্পী হয়ে ওঠেন আলোচনার মধ্যবিন্দু । প্রায় সব ছবিই তার হয়ে ওঠে বিতর্কিত । বিষয়বস্তু আর আঁকার ষ্টাইলে । ছবির মধ্যে আক্রমন করেছেন অনেককে । বিশেষ করে হিন্দু দেব-দেবীদের নগ্ন ছবি তাকে বিতর্কিত করেছে বেশী । আর তা করতে গিয়েই ধর্মপ্রান হিন্দুদের ক্রোধের লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত করেছেন তিনি নিজেকে । বিতর্কিত “ ভারত-মাতা” ছবিটি আঁকার পরেও তিনি অর্জন করেছেন ভারতের জাতীয় পুরষ্কার “পদ্ম-ভূষন” আর “পদ্ম-বিভূষন” এই দু-দু’টি মহার্ঘ্য খেতাব । রাজ্যসভার সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন ।
ক্যানভাসে রংয়ের লালিত্য বিহীন ছবিটি । তেল রংয়ে আঁকা । লাইন ড্রয়িং । দু’টো আলাদা প্রানীকে সংযুক্ত রেখার মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা । শিল্প সমালোচকরা বলছেন , সিনেমার বিলবোর্ড আঁকতে অভ্যস্ত ফিদা এখানেও তার ছাপ রেখেছেন । চ্যাপ্টা স্ট্রোক ব্যবহার করেছেন তিনি এখানে । কেবল রেখাগুলো জোড়ালো রংয়ের, এই যা । বক্তব্য প্রধান ছবি ।
শ্রী গনেশ এর মাথার উপরের রেখাটি দিয়েই দেবী লক্ষ্মীর জঙ্ঘাদেশ বোঝানো হয়েছে । শ্রী গনেশের মাথার তিলক আর দেবীর স্ত্রী-অঙ্গ ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে একটি বক্র রেখাতেই । শ্রী গনেশ সিদ্ধিদাতা- সাফল্যের প্রতীক । দেবী লক্ষ্মী সম্পদ-সমৃদ্ধি আর সুন্দরতার প্রতীক । সন্দেহ নেই উভয়ই সমার্থক । তাই কি শিল্পী দু’জনাকে একীভূত করতে চেয়েছেন ? উত্তর জানা নেই ।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার, দেবীর হাত তিনটি । বেজোড় সংখ্যা কেন ? দু’টো বা চারটে নয় কেন ? কেনই বা অন্য কোনও জোড় সংখ্যা নয় ?
সমালোচকরা নয় , ভারতীয় ব্লগার শ্রীমতি সুলেখা দেবী তার নিজস্ব ব্লগে কৌতুক করে এর সুন্দর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন - “ তিনটি হাত দিয়ে ক্রিশ্চিয়ানদের “হলি ট্রিনিটি” কে বোঝাতে ক্রিশ্চিয়ানদেরই কোনও চক্রান্ত এটা ।”
অন্তর্জালে এ নিয়ে বাক-বিতন্ডার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো সরেস করে জানতে চেয়েছেন ; "অন্তর্জালের এই জোকারগুনো কেন এই অভিযোগ তুলছেনা যে, ক্রিশ্চিয়ান চার্চগুনো খুব সহজেই হুসেনকে ঘুষ খাইয়ে তাকে দিয়ে হিন্দু দেবীর ছবির মধ্যে সন্তর্পনে তিন সংখ্যার ইঙ্গিত ঢুকিয়ে, ক্রিশ্চিয়ানিটি যে হিন্দুত্ববাদের চেয়ে মহত্তর সেই প্রচারটিই চালাচ্ছে ?"

আলোচিত ছবিটি ভারতবাসী হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের এতোটাই ক্ষুব্ধ করেছে যে তারা ১৯৯০ সাল থেকে ফিদা হুসেইনকে ২০১১ সাল অর্থাৎ তার মৃত্যুর আগ পর্য্যন্ত তাড়িয়ে ফিরেছেন । বিক্ষোভ করেছেন । একটি দু’টি নয়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের আট আটটি অপরাধমূলক ( ক্রিমিনাল এ্যাক্ট ) অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তার বিরূদ্ধে । ১৯৯৮ সালে কট্টর হিন্দুদের “বজরং দল” তাকে শারিরীক ভাবে হেনস্থা করতেও ছাড়েনি । তার ছবিগুলো তছনছ করা হয়েছে । ধর্মীয় রাজনৈতিক দল “শিবসেনা” নেতারা ঘি ঢেলেছেন সেই আগুনে । দেশত্যাগ করতে হয়েছে তাকে । দেশের মাটিতে তার মরদেহ সমাহিত হয়নি ।
অবশ্য ২০০৪ সালে আদালত তার বিরূদ্ধে আনা সব অভিযোগ খারিজ করে দেন । ২০০৬ সালে আবারো নগ্ন দেব-দেবীর ছবি এঁকে নিজের মাথায় টেনে আনেন “সাধারণ মানুষের অনুভুতিতে আঘাত” এই অভিযোগ । লন্ডনে চলতে থাকা তার প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়া হয় ।

স্বভাব যায় না ম’লে ।
এই প্রবাদটিকে সত্য প্রমান করে ২০১০ সালে আবার আঁকলেন "The Nude Dude" । এক আরব শেখ এর নগ্ন ছবি । সমালোচকরা বললেন –“ ফিদা হলেন সেই জন, নগ্নতাকে ঘিরে হাযারো বিতর্ক সৃষ্টিতে যিনি আসলেই নেশাগ্রস্থ ।” আপনাদের যদি স্মরনে থাকে তবে, ফিদার প্রযোজিত “গজ গামিনী” ছবিতে মাধুরী দীক্ষিতকে কি ভাবে তিনি উপস্থাপন করেছেন ভাবুন । তাহলেই তার সমালোচকেরা যে একদম মিথ্যে বলেননি তা বোঝা যাবে ।

এতো বিরোধিতা আর সমালোচকদের গৃহীত আইনি পদক্ষেপের পরেও সকল প্রজন্মের ভারতীয় শিল্পীসমাজকে নাড়া দিতে পারার কৃতিত্ব কিন্তু ফিদা হুসেইনেরই । তাই হয়তো তিনি ভারতীয় চিত্রশিল্পে “মাষ্টার অব দ্য মাষ্টার্স” ।


( তিন পর্বে সমাপ্ত )
দ্বিতীয় পর্ব Click This Link

তৃতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব

সূত্র / সাহায্য : বিভিন্ন ইন্টারনেট সাইট ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:১০
৩২টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×