somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চড়া দামে কেনা পৃথিবীর সব ছবিরা

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
চড়া দামে কেনা পৃথিবীর সব ছবিরা
--- মানি হ্যাজ নাথিং টু ডু উইথ আর্ট !



[ শেষ পর্ব ]

......একটুকরো ক্যানভাসের জমিনে ফুটে ওঠা ছবি দেখে স্বপ্নের রাজ্যে চলে যাওয়া বা মুগ্ধতার ঘোরে হারিয়ে যাওয়া নয়, কেবল ভিরমি খেতে হলে আসুন - যে ছবিগুলোতে “মানি হ্যাজ নাথিং টু ডু...” এমোন একটা ব্যাপার জড়িয়ে আছে, তাদের একনজর দেখে আসি .....
প্রথম Click This Link
আর দ্বিতীয় পর্বটাও Click This Link
দেখে আসুন এখানে .......

হোয়াইট সেন্টার / মার্ক রথকো
White Center / Mark Rothko


"শকুনিরা উড়ছে চারদিকে । এরা আগে আসতো ঝাঁকে ঝাঁকে স্বশরীরে । এখোন সে বালাই নেই । এদের হাতের কাছে আছে কম্পিয়্যুটার আর তাতে আছে পৃথিবীর ডজন ডজন সেরা ছবি সংগ্রাহকদের নাম, ঠিকানা, বয়স । কবে মরবেন তারা আর তাদের উত্তরাধিকারীরা কে কোনটার উত্তরাধিকার পাবেন এসব ঠিকুজি তাদের মুখস্ত । এরাই আপনাকে সুস্থে থাকতে দেবেনা । খোঁচাতে থাকবে সারাক্ষন । "
ভিক্টর আর তার স্ত্রী শ্যালী গ্যানজ এর কথা মনে আছে আপনাদের ? সেই যে পিকাসোর " লী রীভ " ( দ্বিতীয় পর্বে দেখেছেন ) ছবিখানা যারা কিনেছিলেন মাত্র ৭ হাযার ডলারে আর পরে যেটা বিক্রি হয়েছিলো ১৫৫ মিলিয়ন ডলারে ? তাদেরই মেয়ে কেট গ্যানজ ছবি ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে ছবির ডিলারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তার ক্ষোভের কথা বলেছেন এভাবেই ।
আর ছবি ক্রেতাদের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, "এরা লাক্সারী ব্রান্ড খোঁজে যেমোন ভ্যান গ্যঁ, পিকাসো । এই পাগলগুলো অবিশ্বাস্য রকমের মাল্টিমিলিয়নিয়ার আর এরা চায় এমোন একটি ছবি যা তাদের ফায়ারপ্লেসের উপরে ঝুলবে আর তা থেকে বেরুবে তাদের রুচি ও টাকার জৌলুস । "
কেট গ্যানজের মতো আপনার ও মনে হবে,আসলেই এই পৃথিবীটা বড় অদ্ভুত ! নইলে হোয়াইট সেন্টার নামের এই ছবিটি কেন বিক্রি হয় ৭২.৮ মিলিয়ন ডলারে ? এই মাল্টিমিলিয়ন ডলারের ছবিটি দেখতে এসে আপনার মুখ ফসকে ""ধ্যাত্তেরি ছাই.... "" শব্দটি বেরিয়ে যেতেই পারে । ছবিটির শিল্পী রথকোর স্টেট দেখভাল করেন যিনি, সেই আর্নে গ্লিমচার কিন্তু বলেছেন আপনার উল্টো কথাটি । " হোয়াইট সেন্টার " নাকি অপূর্ব সুন্দর একটি ছবি । এর দুস্প্রাপ্যতা আর উৎপত্তির আভিজাত্যই এর গলায় মাল্টিমিলিয়ন ডলারের ট্যাগ ঝুলিয়ে দিয়েছে ।
১৯৫০ সালে ২০৫.৮ বাই ১৪১ সেন্টিমিটারের ক্যানভাসে তেল রংয়ে আঁকা মার্ক রথকোর এই ছবিটি মিথোলোজি , রাশিয়ান ইহুদিবাদ আর নীৎসের ভাবাদর্শ নিয়ে উপর থেকে নীচে একটা আনুভূমিক আয়তকার হলুদ রং , কালো রংয়ের আনুভূমিক একটি ফালি, একটি সরু আয়তাকার শ্বেতরংয়ের চিলতে আর শেষে ল্যাভেন্ডার রং নিয়ে মাথা ঘুরিয়ে দেবে আপনার । কেন ? আর্ট ক্রিটিকরা রথকোকে দেখছেন এভাবে - রথকোর ছবি দৃষ্ট-স্বাচ্ছন্দ আর চিন্তার খোরাক নিয়ে টৈ-টুম্বুর । নিজেকে জানার জন্যে এ ছবিতে আছে তীব্র আবেগ । রথকো নিজেও বলেছেন, তার ছবি মোটেও বিমূর্ত নয় । তিনি নাকি মানুষের জীবনের বেদনা, উচ্ছাস আর নিয়তি নামের মূল আবেগগুলো ধরে রেখেছেন তার ছবিতে ।
হয়তো তাই ! ভালো করে গভীর মনোনিবেশ সহকারে ছবিটি দেখলে আপনারও মনে হতে পারে, আসলেই বিষাদের সংঘাতময় অনুভূতির সাথে গভীর স্বাচ্ছন্দবোধ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এখানে । ছবির নরম আর স্বচ্ছ আয়তাকার আকৃতিগুলো আর সাদা রংয়ের কেন্দ্র থেকে যেন বিচ্ছুরিত হচ্ছে অনুভবের গাঢ় এক রক্তিমাভা । আপনার মনে হবে, আপনার ভেতরে কোনও কারন ছাড়াই একটি সুখের আমেজ ধীরে ধীরে দ্রবীভুত হয়ে যাচ্ছে গভীর দুঃখের সাথে । এ ও এক জীবন দর্শন ? ফ্রেডারিক নীৎসে ষ্টাইল ?


হোয়াইট সেন্টার , জীবন দর্শন ?

ছবিটি কিভাবে রাখতে হবে , কোন এ্যাঙ্গেলে বা কি পরিবেশে রাখলে এর ভাবটুকু বোঝা যাবে তা নিয়েও শিল্পী রথকোর খুতখুতিও কম নয় । তার ধারনা, ছবি রাখার পরিবেশটি যদি ছবির মেজাজের সাথে খাপ না খায় তবে সে ছবি তার মূল আবেদনটি হারিয়ে ফেলে । একদম যে খারাপ কিছু বলেছেন তা কিন্তু নয় ! তাই শেষ বিক্রি হবার আগে ছবিটি যেখানে রাখা হয়েছিলো তার সামনে একটি আরামদায়ক বেঞ্চ পেতে দেয়া হয়েছিলো । এটা বোঝাতে যে, দর্শক এখানে বসবেন দুদন্ড । তারপরে দেখবেন ছবিটিকে, অনুভব করবেন এর রূপ - রঙ - মাধুর্য্য । সম্পূর্ণ রিল্যাক্সড মুডে । তবেই না ছবিটির চেহারা খোলতাই হবে !

অথচ এমোন ছবিটি প্রথমে বিক্রি হয়ে যায় মাত্র দশ হাযার ডলারে । আমেরিকার ধনকুবের ঘরানার প্রথম সারিতে থাকা ডেভিড রকফেলার ১৯৬০ সালে কিনে নেন ছবিটি । রকফেলার সেন্টারের ৫৬ তালায় নিজের অফিস রুমে ছবিটি ঝুলে ছিলো প্রায় আধা-শতাব্দী কাল । পৃথিবীখ্যাত এমোন একজন লোকের চোখের সামনে ছবিটির এই ঝুলে থাকার কারনেই এর নাম হয়ে গিয়েছিলো “রকফেলার রথকো” । ২০০৭ সালে যখোন ছবিটি বিক্রির জন্যে নিলামে ওঠে তখোন রকফেলারের আভিজাত্যই সেটে ছিলো তার গায়ে । তেল ব্যবসায়ী আর এক বিলিওনিয়র তাই এই আভিজাত্যকেই কিনেছেন চড়া দামে । আর্নে গ্লিমচার এই রকফেলার কানেকশানকে উড়িয়ে দিয়েছেন ফু দিয়ে । ছবিটির গায়ে রকফেলারের গন্ধ আছে বলে নয় স্রেফ মাটির নীচের বিনে পয়সায় পাওয়া তেল বেচার টাকার গরম দেখাতেই এতো চড়া দামে ছবিটি কেনা হয়েছে , এমোনটা ভাবনা তার ।
শুরুতেই যে বলা হয়েছিলো , "....এদের হাতের কাছে আছে কম্পিয়্যুটার আর তাতে আছে পৃথিবীর ডজন ডজন সেরা ছবি সংগ্রাহকদের নাম, ঠিকানা, বয়স । .............এরাই আপনাকে সুস্থে থাকতে দেবেনা । খোঁচাতে থাকবে সারাক্ষন ।” হয়েছিলো ও তাই । ছবিটির মূল নিলামঘর " সোথবী " তার চীরশত্রু আর প্রতিদ্বন্ধি নিলামঘর " ক্রিস্টি'জ " যাতে ছবিটির দিকে মোটেও হাত বাড়াতে না পারে সেজন্যে ছবিটি আগেভাগেই সম্ভাব্য ক্রেতাদের তালিকা ধরে তাদের বাড়ী বাড়ী ছবিটিকে পাঠিয়েছিলো । সম্ভবত ছবিটির হট পিঙ্ক রংয়ের সাথে ক্রেতার বেডরুম ফার্ণিচারের মিল কতোখানি তা দেখাতে । সাথে ছিলো ক্রেতাকে ৪৬ মিলিয়ন ডলারের শর্ট লোন পাইয়ে দেবার গ্যারান্টিযুক্ত টোপ । দাম আকাশ ছুঁয়েছে সে কারনেই আর সাথে রকফেলার নামের জৌলুস তো আছেই । ক্রিস্টি'জ ছিনিয়ে নিতে পারেনি ছবিটি ।


সোথবীর নিলাম ঘরে....

২০০৭ সালের মে মাসে ক্রিস্টি'জ এর আঙিনা দিয়ে সোথবীর হাত ধরে ছবিটি চলে গেছে তার " আনবাড়ী " কাতারের রাজ পরিবারের শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানি আর তার স্ত্রী শেইখা মোজাহ বিনতে নাসের আল- মিসিন্দ এর ঘরে ।

আর ছবিটির শিল্পী রথকো ?
মানুষের জীবনের বেদনা, উচ্ছাস আর নিয়তি নামের মূল আবেগগুলো ধরে রেখেছেন যিনি তার ছবিতে গাঢ় রংয়ে, তিনি নিজেই খন্ডাতে পারেননি নিজের নিয়তিকে, ধরে রাখতে পারেননি মদ আর নেশার ঔষধের ঘোরের বিধ্বংশী আবেগ কে । ১৯৭০ সালে হাতের শিরা কেটে গাঢ় লাল রংয়ে তাই মাখিয়ে গেছেন নিজেরই ছবি আঁকার ষ্টুডিওর মেঝেটিকে ।
আমরা কি রথকোর নিজ রক্তে ভেজা বাস্তবের সেই ছবিটির নাম দেবো ......." রেড সেন্টার " ?


যোশেফ রাউলিন / ভিনসেন্ট ভ্যান গ্যঁ
Joseph Roulin. / Vincent van Gogh



ভাগ্যাহত এক শিল্পীর ছবি " যোশফ রাউলিন "। জীবদ্দশাতে যে শিল্পীর একটিমাত্র ছবিই বিক্রি হয়েছে । তাও শুধু ৪০০ ফ্রাঙ্কে ।
কি করে হবে ? চালচুলোহীন , মাতাল , মৃগী রোগী, যৌন রোগাক্রান্ত, মেন্টাল এ্যাসাইলামের পেসেন্ট, এমোন এক লোকের আঁকা ছবি যে ! যেখানে বসে এঁকেছেন এই ছবিটি, প্যারিস থেকে ট্রেনে পনের ঘন্টা দুরের সেই শহর " আর্ল " এর ১১৩ বছরের বৃদ্ধা এক প্রতিবেশী, তার ১৩ বছর বয়েসে দেখা শিল্পীর ছবি এঁকেছেন এভাবেই - " ডার্টি, ব্যাডলি ড্রেসড এ্যান্ড ডিজএ্যাগ্রিয়েবল .........ভেরী আগলি, আনগ্রেসাস, ইমপোলাইট এ্যান্ড সীক ...."
নিজের ছবি সম্পর্কেও যার ধারনা শুধু এটুকুই -- "একদিন হয়তো আমার ছবি তেল রংয়ের খরচ আর ক্যানভাসের দাম পুষিয়ে দিতে পারবে।"
তার কথা মিলে গেছে তার মৃত্যুর পরে, রবীন্দ্রনাথের কবিতার মতো -
আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতুহলভরে,
আজি হতে শতবর্ষ পরে !

আজ শত বছর পরে শিল্পী ভ্যান গ্যঁ এর ছবি নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই । তার নিজের ভাঙাচোরা, আগলি চেহারার পোর্ট্রেটই বিক্রি হচ্ছে ১০১ মিলিয়ন ডলারে ।


১০১ মিলিয়ন ডলারের সেল্ফ পোর্ট্রেট

ক্যানভাস আর রংয়ের খরচ শুধু পুষিয়ে গেছেই নয় মাত্র একটি ছবির এই পরিমান টাকা (প্রায় ৮০০ কোটি ) দিয়ে আপনি শিল্পীর মতো ভাগ্যাহত শিশুদের জন্যে নতুন ক্যানভাসে উজ্জল রংয়ের হাযার খানেক স্কুল বানিয়ে দিতে পারতেন ।
" যোশফ রাউলিন " ছবিটি বিক্রি হয়ে গেছে ১১০ মিলিয়ন ডলারে । ছবিটি এমোনই একজন শিল্পীর যার কদর বাড়ছে দিনদিন তার মৃত্যুর শতবর্ষ পরে । ভ্যান গ্যঁ এখোন বিলিনীয়রদের ঘরের “ষ্ট্যাটাস সিম্বল” । ছবি আঁকার ঝোঁক থাকলেও যে লোকটি জীবনে চিত্রকর হতে চাননি , চেয়েছিলেন গীর্জার প্যাস্টর হতে, ১৮৭৯ সাল থেকে মিশনারী হিসেবে কাজও শুরু করেছিলেন, সেই তিনিই হয়ে উঠেছেন ছবির জগতের ক্রেজ । অপঘাতে মৃত্যুর দশ বছর পরে, শিল্পী হিসেবে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা ভ্যান গ্যঁ যেন ফিরে এসেছেন পুনঃরুত্থিত হয়ে । ১৯০১ সালের ১৭ই মার্চ প্যারিসের বার্ণহেইম গ্যালারীতে তার ৭১ টি ছবি প্রদর্শিত হলে ছবির জগতে সাড়া পড়ে যায় ছবির বিষয়বস্তু আর মোটা দাগে টানা রংয়ের বর্ণচ্ছটার অভিনবত্বে ।

" যোশফ রাউলিন " ও অভিনব তার বিষয়বস্তু আর রংয়ের ঔজ্জল্যে । প্যারিসের ডাকবিভাগে চাকুরীরত এক সাদামাটা পোষ্টম্যানের মুখশ্রী । তেল রংয়ে ৬৪.৪ বাই ৫৫.২ সেন্টিমিটারের ক্যানভাসে আঁকা । ফ্রান্সের আর্ল শহরে থাকাকালীন ১৮৮৮ থেকে ১৮৮৯ সালের ভেতরে রাউলিন পরিবারের অনেক ছবি এঁকেছেন ভ্যান গ্যঁ । ছবিটি সেই সিরিজেরই একটি । একটু স্বস্থির খোঁজে এসে আর্ল শহরেই দেখা মেলে যোশফ রাউলিন পরিবারের । মিশে যান পরিবারেরর একজন হয়ে । লোকে বলে, পরিবারের যে স্বপ্ন লালন করে গেছেন শিল্পী আজীবন অথচ যার দেখা পান নি, তেমোন একটা স্বাদ তিনি হয়তো খুঁজে পেয়েছিলেন রাউলিন পরিবারে । আবার কেউ বলেন, রাউলিনের চেহারায় সক্রেটিসের ছাপ আছে বলেই শিল্পী তাকে এতো পছন্দ করতেন ।
প্রিয় ভ্রাতা " থিও " যাকে মনের সব কথা খুলে বলতেন শিল্পী তার চিঠিতে , তেমনি এক চিঠিতে ভ্যান গ্যঁ লিখেছেন রাউলিনের ছবি সম্পর্কে । একটি বিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে জ্ঞানী , বিশ্বাসভাজন আর অনুভূতিতে পূর্ণ একজন মানুষের ছবি নয় একটি চরিত্র এঁকেছি আমি । আমার সামনে বসা শরীরী রাউলিনকে নয় আমি এঁকেছি তাকে তেমন করে যেমোনটা আমি দেখছি তার অন্তরে । একজন সাধু পুরুষ ।
হবে হয়তো ! কোনও কোনও গবেষকরা বলছেন তেমোনটা ই । কারন মিয়্যুজিয়ম অব মডার্ণ আর্ট এ রাখা এই ছবিটি ১৮৮৯ সালের আঁকা, যে সময়টিতে ভালো চাকুরী পেয়ে রাউলিন পরিবার আর্ল নামের শহরটি ছেড়ে মার্সেইলিস এ চলে গেছেন । তাদের ধারনা, জীবন্ত রাউলিনকে নয় শিল্পী তার স্মৃতির ভেতরে থাকা রাউলিনকেই এঁকে থাকতে পারেন ।


যোশেফ রাউলিন । প্রথম পোর্ট্রেট । আগষ্ট, ১৮৮৮

কি আছে তেমন, ১১০ মিলিয়ন ডলারের ছবিটিতে ? দড়ির মতো পাকানো দাড়িগোঁফের মাঝে একখানা মুখ । থ্যাবড়ানো নাক যা মুখের আদলটিতে সক্রেটিসের মুখখানি মনে করিয়ে দেয় । দৃষ্টি যেন ঠিক সরাসরি সামনের দিকে নয় , অন্যত্র কোথাও; যে দৃষ্টিতে বিষাদ মাখা । শিল্পীর স্বভাব সুলভ মোটা দৃঢ় রেখাতে আঁকা পোষ্টম্যানের কোট আর টুপি । পেছনে পাখির পালকের তুলিতে টানা ইন্টারসেক্টিং একটি প্যাটার্ণ যা ছবির মুখখানাকে আরো শক্তিশালী করেছে । আর তা যেন চোখের দৃষ্টিকে করে তুলেছে অস্থির । মোটা দাগে টানা শক্তিশালী রেখার ছাপ ছবিটি জুড়ে । রংয়ের উজ্বলতা চোখ টানবেই ।
থিওকে লেখা আর এক চিঠিতে ভ্যান গ্যঁ ছবি সম্পর্কে যা বলেছেন তার সার কথা হলো এই -- রং চাই রং । ভাষ্কর্য্যের মতো নয়, ছবিকে হতে হবে সঙ্গীতের মতো । সঙ্গীত যেমন দোলা দিয়ে যায় মনে তেমনি রংয়ের খেলাও দোলা দিতে পারে মনে, মেটাতে পারে চোখের তৃপ্তি ।
সব মিলিয়ে " যোশেফ রাউলিন " কি সঙ্গীতের মূর্চ্ছনার মতো তরঙ্গায়িত ? নইলে এতো চড়া দাম কেন তার ? মিয়্যুজিয়ম অব মডার্ণ আর্ট ছবিটিকে ১১০ মিলিয়ন ডলারের মতো এতো চড়া দামে কিনবেই বা কেন ?
শিল্পীর ছবি - আইরেসিস , ষ্টারী নাইট, ভাস উইথ ফিফটিন সানফ্লাওয়ার, এ হুইটফিল্ড উইথ সাইপ্রেস, পেজান্ট ওম্যান, পোর্ট্রেট অব ডাঃ গ্যাচার ইত্যাদি তো মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়ে গেছে । তাই কি ভ্যান গ্যঁ এর ছবির আকাল পড়েছে ? ভ্যান গ্যঁ এর এই দুষ্প্রাপ্যতা-ই কি এতো চড়া দামের কারন ?
না কি ছবির চেয়ে ছবির শিল্পীর ঐতিহাসিক মূল্যটাই দিতে হচ্ছে ক্রেতাকে ? ঘটনাবহুল, অবিমৃষ্যকারীতায় ভরা জীবন ছিলো তার । নিজের কান পর্য্যন্ত কেটে ফেলেছেন বন্ধুবর শিল্পী গ্যগুইন এর উপর রাগ করে । আবার কাটা কানটিকে উপহারও দিয়েছেন এক দেহপসারিনী কে । আর এতেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন তিনি । আর্ল শহরের মেন্টাল এ্যাসাইলামে থাকতে হয়েছে তাকে । সেখানে বসেই ১১০ মিলিয়ন ডলারের এই " যোশেফ রাউলিন " ছবিটি এঁকেছেন । এর একবছরের মাথাতেই আবার পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করে যবনিকা টেনেছেন হতাশা ভরা জীবনের ।


কাটা কানে ব্যান্ডেজ বাঁধা সেল্ফ পোর্ট্রেট

মৃত্যুর শতবর্ষ পরে শিল্পীর এমোন খামখেয়ালীতে ভরা জীবনেতিহাস-ই কি চড়া করে দিয়ে গেছে তার ছবিগুলোকে ? হবে হয়তো , নইলে বিশ্বের " এক্সপেন্সিভ " ছবির তালিকার অনেকগুলিই ছবিই ভিনসেন্ট ভ্যান গ্যঁ এর কেন ?

ছবি ও তথ্য ইন্টারনেট থেকে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩০
২৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×