ডেভিলস অল্টারনেটিভ
আমি মহাবেকুব, ডাষ্টবিনে টোকাইদের ঘাঁটা ঘাঁটি করার মতোই বেহুদা ঘেঁটেঘুঁটে একটি চটকদার খবর পেয়েছি, খবরটি হলো এই-
সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে বিশ্বব্যাপী একটি ভার্চুয়াল সন্মেলন হয়ে গেছে। উদ্দেশ্য মিয়ানমারের ভেতরে এবং বাইরে বসবাস করা সব বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে সহায়তা করার জন্য তহবিল সংগ্রহ । আয়োজক জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। এর দোসররা ছিলেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।২০২০ সালের জন্য ১০০ কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হলেও, তার অর্ধেক অর্থও না পাওয়ায় নাকি এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মাত্র ৬০ কোটি ডলারের তহবিল জোগাড় করা গেছে কষ্টেসৃষ্টে । টাকা নিয়েই মূলত এতো এতো আলোচনা হয়েছে কিন্তু সে টাকার কতো ভাগ বাংলাদেশের কপালে জুটবে সে কথা পরে। অথচ রোহিঙ্গাদের মূল যে মানবাধিকার - “নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন” সে কথাই তেমন করে আলোচিত হয়নি।।শুধু ভার্চুয়াল সন্মেলনে যোগ দেয়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে ফিরতে ইচ্ছুক হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত আন্তরিকভাবে তাদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরিতে কাজ করা।
এটুকুই, জোরালো গলার কিছু নয়, নমনীয়। এতে কেমন সাড়া মিলেছে জানতে পারিনি। তবে যৌথ সমাপনী ঘোষণায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সহায়তা বজায় রাখার বিষয়ে দাতা সম্মেলনের সহ-আয়োজকরা দায়সাড়া ভাবে জানিয়েছেন ‘রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের জন্য মিয়ানমার সরকারকে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুততার মূল কারণগুলো খুঁজে বের করে তা মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের পরিবশে তৈরি করতে হবে।’
ভাবখানা এমন যে, এতোদিনেও সে কারনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি! কেন যে রোহিঙ্গারা নিজ ভিটেমাটি ছেড়ে বাংলাদেশে নাফ নদীর বানের লাহান ভেসে এসেছে সেটা যেন তাদের আদৌ জানা নেই! খেয়াল করুন , আবার তাদেরকে “স্বেচ্ছায়” ফিরে যেতেও মামু বাড়ীর আবদার করা হয়েছে।
ঐদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, “এই অর্থ সহায়তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মানবিক সংকটে সাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে জোরালো অবস্থানের প্রতিফলন ঘটিয়েছে৷”
সন্মেলনের আগে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ভয়াবহ বর্বরতার শিকার হয়েছে, অকল্পনীয় বাজে পরিস্থিতির মধ্যে তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।”
অথচ এই সন্মেলনেও কেউই বলেনি, “যে অকল্পনীয় বাজে পরিস্থিতির মধ্যে তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে তাদের ফিরিয়ে নিতে মায়ানমারের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রেও জোরালো অবস্থানের প্রতিফলন ঘটাতে চাই।
বাংলাদেশের মাথার উপরের এই অমানবিক বোঝা নামাও।“
মহাবেকুবের মাথা চুলকানি হচ্ছে এই দেখে যে, এই হলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মানবিক সংকটে সাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে জোরালো অবস্থানের নমুনা। টাকার মুলোটা নাকের সামনে ঝুলিয়ে দিয়ে, মানবিক সংকটে সাড়া দেয়ার কথাটাই জোরেসোরে বলে ল্যাঠা চুকিয়ে তারা আসল বোঝাটা বাংলাদেশের কাধে নয়, মাথায় উপরেই রেখে গেছে। মানবিক ভাবে অর্থ সাহায্য নিয়ে অনেক সন্মেলন হয়েছে কিন্তু কেউই মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্যে এ পর্যন্ত কোনও সন্মেলন ডাকেনি। অন্তত এই মহাবেকুবের কাছে এমন খবর নেই।
মানবিক সংকটের কথা বলে শুধুমাত্র আর্থিক সাহায্যের জন্যে তো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠির এমন জোরালো অবস্থানের দরকার নেই বাংলাদেশের। বাংলাদেশের দরকার, রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফিরিয়ে নিতে মায়ানমার সরকারের উপর সর্বাত্মক চাপ সৃষ্টির জন্যে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠির জোরালো অবস্থান।
এ সংবাদটি ছাড়াও পত্রপত্রিকায় রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে এযাবত যেসব নিবন্ধ বা খবর প্রকাশিত হয়েছে তাতে উদ্বেগ বাড়ে বই কমেনা। যে কেউ অনলাইনে সার্চ দিলেই ভয়াবহ আশংকার ইঙ্গিত নিয়ে অসংখ্য খবর/প্রবন্ধ/নিবদ্ধ এসবের দেখা পাবেন।
আমি মহাবেকুব, ডাষ্টবিনে টোকাইদের ঘাঁটা ঘাঁটি করার মতোই ঘেঁটেঘুঁটে এসব কুড়াই।
সবকিছু দেখে এটাই মনে হয়েছে, মানবতার ঠিকাদারী কি আমরা বাংলাদেশীরা একারাই নিয়েছি ? পৃথিবীর আর কারো যেন মানবতার দায় নেই। সে দায় যেন একলা আমাদেরই! কেন ?
এই ঠিকাদারীর কাজটা আমাদেরই আহাম্মকীর অর্জন। কারন -রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ যে চুক্তি করেছে, তার মধ্যেই রয়েছে দুর্বলতা । এই চুক্তিতে কোনো সময়সীমা নেই । আন্তর্জাতিক কোনো পক্ষের সংশ্লিষ্টতা নেই ৷ কাকে ফেরত নেবে, কাকে নেবেনা সেই সিদ্ধান্ত মিয়ানমারই এককভাবে গ্রহণ করবে। তৃতীয় পক্ষের কথা বলার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি এই চুক্তিতে ৷
চুক্তির এই দুর্বলতার সুযোগ এখন মিয়ানমার তো নেবেই পুরো মাত্রায় ৷সোজা কথায়, এই চুক্তিতে মিয়ানমারের ওপর “চাপ” প্রয়োগ করার কোনো কৌশলও অবলম্বন করা হয়নি।
না কি যায়নি ?
ভাবতেই আনন্দ হচ্ছে , আমাদের পররাষ্ট্র বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের মধ্যে আমার মতো বেকুবও তাহলে আছে !!!!
আমার মাথাটা ঘুরে যাচ্ছে, তাহলে শেষতক হবেটা কি ভেবে ভেবে। সারা জীবনটা কি এদের গলায় ঝুলিয়েই বাংলাদেশীদের কাটবে ? মহাবেকুবের মতোই ভাবি, এটা কি বুদ্ধিমান বাংলাদেশিরা বুঝতেও পারছেননা কি অনিশ্চিত বিপদ ঝুলে আছে সামনে, না কি অলৌকিক কিছুর ভরসায় বসে আছেন তারা? কেনই বা আমরা সরকারের এতো এতো মানবদরদী সাজার প্রতিবাদ করছিনা সোচ্চার গলায় ?
অথচ পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ খাসিরা “মেঘালয়ের সব বাঙালিদের বাংলাদেশি” বলে প্রচার চালিয়ে উৎখাতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে এই অতিসম্প্রতি। ভারতের এই মেঘালয়ের বাঙালিদের বিরুদ্ধেও পুলিশ, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, ছাত্র সংগঠন, জঙ্গি-সকলেই একজোট হয়েছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে জাতীয় নাগরিক তালিকার চূড়ান্ত খসড়া থেকে ৪০ লক্ষ লোকের নাম বাদ দেয়ার পেছনের আসল উদ্দ্যেশ কি, তা এতোদিনে আপনাদের সবারই জানা। নতুন নাগরিক তালিকার (এনআরসি) নামে আসামের “বাঙালি তাড়াও” তালিকার পর ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোও “বাঙাল তাড়াও” দাবিতে যে সোচ্চার হয়েছিলো তাও আপনাদের অজানা নয়। এমনকি সেসময় এনআরসি তৈরির দাবিতে সরব হতে আহ্বান জানিয়েছিলো সেখানকার গদিনশীন সরকারী দল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায়, মাঠে-ঘাটে অতন্দ্রপ্রহরীর ভূমিকা নিতেও বলা হয়েছে।
আমরাও একযোগে “রোহিঙ্গা খেদাও” কোনও আন্দোলনে নামতে পারছিনা কেন ?
বিজেপির এক বিধায়ক রাজ সিং তো আরো একধাপ এগিয়ে বলতে পেরেছিলেন- “অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা যদি সম্মানের সঙ্গে ফিরে যেতে না চায় তাহলে এদের গুলি করা মারা উচিত। একমাত্র এভাবেই দেশ নিরাপদে থাকবে।”
এনিয়ে প্রতিবাদে মুখরও হয়েছেন আপনারা জোরেশোরেই। অথচ এই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আপনারা নিশ্চুপ কেন ? ভারতের সরকারী দল বিজেপির মতো আমাদের সরকারী দল আওয়ামী লীগ এই অবৈধ অভিবাসীদের ঠেকাতে কঠোর হতেও বা পারছেননা কেন ? আমাদের দেশটাকে নিরাপদ রাখতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরাই বা কেন তেজস্বী কন্ঠে তেমন কিছু বলে বিশ্বের টনক নড়াতে চাইছেন না ?
এটাকে কি বলা যাবে ? দেশপ্রেম না দলপ্রেম? নাকি নির্বুদ্ধিতা ?
অথচ এই নিস্পৃহতা কতো ভয়ঙ্কর অবস্থায় ফেলে দেবে আমাদের, তা আমরা কেউই ভেবে দেখছি কি ? সামাজিক অস্থিরতার কথা না হয় বাদই দিলাম, অর্থনৈতিক দিকটা একটু দেখি - রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য গত ৩ বছরে বাংলাদেশের অর্থের চাহিদা ছিল ২৩০ কোটি ডলার৷ কিন্তু দাতারা দিয়েছে ৭০ শতাংশ, যার পরিমান মাত্র ১৬০ কোটি ডলার ৷ ফলে রোহিঙ্গাদের পেছনে বাংলাদেশ সরকারকে নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করতে হয়েছে দুই হাজার ৩০৮ কোটি টাকা ৷ওদিকে ভাসানচরে আবাসন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে বাড়তি তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা৷ আবার দাতারা যে অর্থ দেন শতকরা ৩৩ ভাগ পরিচালন ব্যয়েই চলে যাচ্ছে৷
মহাবেকুবের ভয়টা এখানেই-এখন এই মেহমানদের পেছনেই যদি এতো এতো টাকা ফালতু জামাই আদরে খরচ হয়েই যায় যা প্রতি বছর বাড়তেই থাকবে তবে দেশের কোষাগারে অবশ্যই টান পড়ার কথা। সেই টানটা ভরা হবে কোত্থেকে এটা কি কেউ ভেবে দেখেছেন ? এই ঘাটতি পোষাতে আপনার আমার পকেটে হাত দেবেই সরকার। নানা উছিলায় ট্যাক্সের পরিধি বাড়াবে, না হয় বিদ্যমান ট্যাক্সের পরিমান বাড়িয়ে দেবে। তখন আঙুল চোষা ছাড়া আর করার কিছুই থাকবেনা।
‘‘রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার জন্যে সেখানে কয়েক হাযার কোটি টাকা খরচ করে যে “ফাইভ ষ্টার গ্রাম” বানানো হয়েছে, সে টাকা কার পকেটের ? সেই টাকা দিয়ে বেকার পড়ে থাকা হতদরিদ্র-ছিন্নমূল বাংলাদেশীদের জন্যে কি কর্মসংস্থানের কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেয়া যেতোনা ? এতে তো সরকারের ভোটব্যাংকও ফুলে ফেপে উঠতে পারতো। রোহিঙ্গাদের দিয়ে তো সে কম্মটি হবেনা। এমন টোটকা বুদ্ধির যোগানদাতা কি সরকারী দলে নেই ? এই বুদ্ধির যোগান না হয় থাক কিন্তু এটুকু বোঝার বুদ্ধিটুকুও কি তাদের ঘটে নেই যে , ভাসানচর যেভাবে বা যে কায়দায় তৈরী করা হয়েছে এবং সরকার যেখানে বারবার উচ্চস্বরে বলছে "স্থায়ী নিবাস" বা আশ্রয়স্থল,তখন মায়ানমারতো গলা তুলে বলতেই পারে -“ রোহিঙ্গারা সব বাংলাদেশেরই নাগরিক নাহলে সে দেশের সরকার তাদের স্থায়ী নিবাস সহ কর্মসংস্থানের সকল সুযোগ কেন করে দিচ্ছে ? শরনার্থীদের জন্যে এমন মমতা কে দেখায় ?”
এখানেও ভুল। এসব নিয়ে দেশের ভেতরে তেমন একটা আলোচনা-বিতর্ক হয়েছে কি ? আমাদের মহাজ্ঞানী সমাজ কি বলেন ?
আমি মহাবেকুবী বুদ্ধিতেও তো এটুকু বুঝি যে, এটা তো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে আরো ঝুলিয়ে দেবে । কারন এতে মায়ানমার চমৎকার একটা সুবিধা পেয়ে যাবে। বিশ্ব দরবারে বলতে পারবে , রোহিঙ্গারা বাংলাদেশেরই নাগরিক। কারন অতিথির জন্য স্থায়ী ঘরবাড়ি বানিয়ে চাষবাসের ব্যবস্থা আমরা কখনোই করি না। কোনো রাষ্ট্রও তা করে না। ভাসানচরে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য যেসব স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে, তার ফলে মায়ানমার সহ বিশ্ব মোড়লদের এমন ধারণা তৈরি হতেই পারে, টেকসই আবাসনের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে গ্রহণ করে নিয়েছে। (নেটে দেখে নিতে পারেন কি কি নাই ভাসানচরে)
মহাবেকুব জাতকের বুদ্ধিতে কুলোয় না -ক্যাম্প বাদ দিয়ে কি কারনে তাদের জন্যে এমন স্থায়ী আবাসন তৈরী করেছে সরকার ? এটা কি আমাদের কূটনীতির ব্যর্থতার খেসারত নাকি কোনও পুরষ্কার পাওয়ার আশায় দেশকে বর্গা রাখা ? এই শরনার্থীদের আর কখনোই ফেরত পাঠানো যাবেনা এটা জেনেই কি সরকারের এই পথে পা বাড়ানো ? আর যদি রোহিঙ্গাদের সেখানের স্থায়ী আবাসনে নেয়াই হয় তবে বিশ্ব মোড়লেরাও তো রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনের জন্যে আর মাথাই ঘামাবেনা। এমন ধারণা তৈরি হলে ও স্থায়িত্ব পেলে উদ্বাস্তু সমস্যাটি আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাথা ঘামানোর বিষয় থাকবে না। এমনিতেই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মানবিক সহায়তার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্লান্তি বা একঘেয়েমি বেশ পরিষ্কার। সাহায্য ও কূটনৈতিক অগ্রাধিকারও কমছে দিনে দিনে। এই ভাসানচর সেটাকে আরো উসকে দেবে।
তাই বেকুবের মতোই বলি -একটা "ডেভিলস অল্টারনেটিভ" খুঁজে বের করা ছাড়া এই সমস্যার হাত থেকে আমাদের রেহাই নেই।
তেমন একটা "ডেভিলস অল্টারনেটিভ"র দেখা পেয়েছি মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের এশিয়া প্রশান্ত-মহাসাগরীয় উপ-কমিটির চেয়ারম্যান ব্রাড শেরম্যান এর কথায়। ২০১৯ এর জুনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চমকে যাওয়ার মতো একটা সমাধানসূত্র দিয়েছেন শেরম্যান। তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারের মানচিত্রটাই বদলে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে দেশটি থেকে আলাদা করে দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার সম্ভাবনার কথা বিবেচনার জন্য পররাষ্ট্র দফতরের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। ১৩ জুন, ২০১৯এ অনুষ্ঠিত মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়ার বাজেট বিষয়ক এক শুনানিতে সূচনা বক্তব্যে ব্রাড শেরম্যান বলেন, সুদান থেকে দক্ষিণ সুদানকে আলাদা করে একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে যুক্তরাষ্ট্র যদি সমর্থন করতে পারে,তবে এটাও সমর্থন করা উচিৎ।
এখন কি শেরম্যানকে “ সাবাস” বলবো ?
সাথে বিকল্প এমন আর একটি রাস্তায় হাটা যেতে পারে -
আমরা “রোহিঙ্গা” , “রোহিঙ্গা” করে চেচাচ্ছি কেন ? এরা তো মায়ানমারের নাগরিক ! তাদের “মায়ানমারের নাগরিক” না বলে তাদের আলাদা জাতিগোষ্ঠির নামে ডাকছি কেন ? এতে তো তাদের মায়ানমারী নাগরিকত্বকে হালকা করে দেয়া হচ্ছে। তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে ভুল মেসেজ চলে যাচ্ছে বহির্বিশ্বের কাছে। এখন থেকে এইসব বহিরাগতদের বেলায় “রোহিঙ্গা” শব্দটি বাদ দিয়ে “মায়ানমারের নাগরিক” বলে সোস্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সকল মিডিয়াতে প্রচার করা যায়না ?
(মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় এবং ডকুমেন্টে কোথাও রোহিঙ্গা শব্দটি কিন্তু নেই।)
আমাদের সবজান্তা জনগণের এইসব নিস্পৃহতা আর সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের আহাম্মকীর কারনেই মায়ানমারের এইসব নাগরিকদের প্রত্যাবর্তন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক মূল্যবোধের কোনো মূল্যায়ন হবে না কোনো পক্ষের কাছে এমনকি তা কোনও সফলতার মুখও দেখবে কিনা সন্দেহ।
এনিয়ে মহাবেকুবীয় ভাবনাটা বলি - জনগণ যদি শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর এই মানবিকতার জয়গান না গেয়ে এদের বিতাড়নের জন্যে সোচ্চার হতেন সর্বস্তরে, প্রতিদিন মিছিল মিটিং করতেন এবং কূটনীতিকরা যদি “মায়ানমারের নাগরিক খেদাও এখনি ”, এমনতরো কূটনীতির প্যাঁচ কষতে পারতেন তবে শান্তিতে প্রধানমন্ত্রীর নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনাটি ফস্কে যেতোনা। তখন বিশ্বে এটিই বিবেচিত হতো - দেশের জনগণের সর্বাত্মক চাপের মুখেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মানবিকতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন নি। মানবতার পক্ষেই তিনি ছিলেন অবিচল ।
কেবলমাত্র দেশের স্বার্থেই এর বাইরে আরও কোনও “অল্টারনেটিভ” আছে কিনা, ভেবে দেখতে বলি ।
সূত্র ও কৃতজ্ঞতাঃ ডয়েচে ভেল, প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন, আলোকিত বাংলাদেশ, বিডি নিউজ ২৪ সহ বিভিন্ন পত্রিকা, ZEE ২৪ ঘন্টা অনলাইন পত্রিকা ও নেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ২:৩৬