গেল বৃহষ্পতিবার বেরিয়েছিলুম ব্যক্তিগত কাজে দিলকুশার দিকে।
আমার মতো বেকুব যদি কেউ না থাকেন তবে এই শহরে এখন তিনি আর নিজে ড্রাইভ করে গাড়ী চালাবেন না। ঢাকার যানজটের যে অবস্থা তাতে নিজের গাড়ী নিজে চালিয়ে কোথাও যেতে হলে বেকুব হতেই হবে! মাথার ঠিক থাকবেনা, মেজাজের চৌরাশি অবস্থা হবেই। এসি না থাকলে দরদর করে ঘামতে হবে। থাকলে ঘন্টার পর ঘন্টা এক ফুটও না পেরিয়ে বসে থাকলে গাড়ীর জ্বালানি খরচ সহ সব খরচ বাড়বে শনৈঃ শনৈঃ। দাঁত কিরমির, মাথার চুল ছিড়তে করতে ইচ্ছা করবে তখন। ১ কিলোমিটার যেতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লাগবে বেশিও লাগতে পারে। বেকুব না হলে কেউ এমন আহাম্মকী কাজটি করবেন না। আর কারো যদি ড্রাইভার থাকে তবে আলাদা কথা। কমপক্ষে চড়নদারের মাথাটা ঠান্ডা থাকলেও থাকতে পারে। যতো ঝামেলা ড্রাইভারের উপর দিয়েই যাবে! আপনি গা এলিয়ে চোখ মুদে সীটে বসে থাকবেন আর তেলের পয়সা গুনতে থাকবেন। কর্মঘন্টা ক্ষতির কথা না হয় বাদই দিলুম।
চাই কি গাড়ীতে বসে বসে ব্লগে দু’একটা পোস্টও লিখে ফেলতে পারেন । যেমনটা লিখে ফেলেছেন সহব্লগার - জুল ভার্ন “ সুবচন নির্বাসনে….” নামে। ।
আর গাড়ীবিহীন যারা রাস্তায় বের হন জীবিকার তাগিদে, তাদের অসহায়ত্বের জন্যে সমবেদনার সীমা-পরিসীমা থাকার কথা নয় কোনও সুস্থ মানুষের। এ হলো ঢাকা শহরের চলমান চিত্র যাতে জমকালো রংয়ের পোঁচ লাগছে প্রতিদিনই। প্রতিদিনই এ নিয়ে খবর বেরুচ্ছে, নানান মতামত দেয়া হচ্ছে। যানজটের ডজন ডজন কারন খুঁজে বের করা হচ্ছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেই ফেলেছেন, রাজধানীর যানজট এবং জনজট নিরসনে সাবওয়ে নির্মাণের কোন বিকল্প নেই।
এই মহা বেকুব ভেবে পায়না, তা-ই যদি হয় তবে এই যে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে, একযুগের বেশি সময় ধরে ঢাকাবাসীকে চরম ভোগান্তিতে নাস্তানাবুদ করে রেখে মেট্রোরেল কিম্বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মান করা হচ্ছে কেন ? তার দরকারটা কি ছিলো ?
আরও অবাক কান্ড, কেউ কেউ বিজ্ঞজনের মতো সুপারিশ করছেন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়-অফিসের সময়সূচি পরিবর্তনের। ডিএনসিসির মেয়র তো আবার জোড়-বিজোড় সংখ্যার গাড়ী চলাচলের ফতোয়া দিয়েছেন।কেউ কেউ নদনদী–খাল দখলমুক্ত করে ওয়াটারওয়েজ চালুর কথা বলছেন । যানজটের জন্যে আবার কেউ কেউ দোষ দিচ্ছেন পুলিশের হস্তচালিত সিগন্যালিং ব্যবস্থার। কেউ বলছেন - গণপরিবহনে সমন্বিত ব্যবস্থার অভাবই যানজটের মূল কারন। আবার একদল বলছেন- রাস্তা-ঘাটের সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির কথা। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে ট্রাকস্ট্যান্ড ও আন্তজেলা বাস টার্মিনালও যুক্ত এই ভয়াবহ যানজটে। চারদিক থেকে বানের লাহান মানুষের ছুটে আসাকেও দুষছেন কেউ কেউ।
এসব দুর করলেই নাকি ঢাকা যানজট মুক্ত হয়ে সাফ-সুতেরো নগরী হয়ে উঠবে।
এইসব “কথা-কান্ড” শুনে শুনে মহা বেকুব জাতক অনেক মাথা খাটিয়ে রবি ঠাকুরের “ জুতা আবিষ্কার” কবিতার সারমর্ম হৃদয়ঙ্গম করে ফেললো। তাইতো, পৃথিবীর ধূলো যাতে পায়ে না লাগে সেজন্যে পৃথিবীকে চর্মময় করা কেন ? শুধু পদযুগলকে চর্মবন্দি করলেই তো কেল্লা ফতে।
তাই একটি শহরের/নগরের জনসংখ্যা, রাস্তার পরিমান আনুপাতিক কতোটুকু থাকা উচিৎ, ফুটপাথ আছে কি নেই, সেখানে হকারদের দখলদারীতে কতো অংশ, কতোটুকু খাল-বিল দখলমুক্ত করলে কি হতে পারতো, যানজটে দৈনিক কতো টাকার ক্ষতি, কতো পার্সেন্ট ক্ষতি জিডিপিতে, কর্মঘন্টা কতোখানি নষ্ট এসব পরিসংখ্যান কপচিয়ে কোনও লাভ নেই। এই বেকুবের চেয়ে এসব পরিসংখ্যান অনেক বেশিই জানেন আপনার সবাই-ই!
মহা বেকুব শুধু জানে এবং বোঝে - ঢাকাকে ডি-সেন্ট্রালাইজড করতে পারলেই কেল্লা ফতে।
সকল সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ঢাকা থেকে সরিয়ে দিন অন্য শহরগুলোতে। সচিবালয় সহ একেকটা মন্ত্রনালয় সরিয়ে দিন বিভাগীয় শহরগুলোতে।
ব্যাস…… আর কিছু করতে হবেনা, যানজট কমে যাবে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ।
মহা-বেকুবীয় ভাবনা কি ???????
ছবির কৃতজ্ঞতা - অন্তর্জাল । বাংলানিউজ২৪ডটকম ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:৩৪