ছবি - কৃতজ্ঞতা ও সৌজন্যতায় “প্রথম আলো”
বেকুব হয়ে যা্ওয়ার মতোই কথা বটে! উত্তরা দুর্ঘটনায় হত্যাকান্ড নিয়ে সড়ক মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র কেউ একজন বলেছেন - ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে মন্ত্রনালয় নাকি জিম্মি। কেমনে কি !!!!!!!! মহাবেকুব বলেই হয়তো বুঝিনে, সরকারের সাথে করা আন্তর্জাতিক একটা চুক্তিতে ঠিকাদার কি করে দায়ভার ছাড়াই আপারহ্যান্ডে থাকে! কেউ বুঝিয়ে দেবেন ?
ওদিকে আবার সড়ক সচিব বলেছেন - নিয়মানুযায়ী কাজ করতে হলে আগের দিন তারা একটি ওয়ার্ক প্ল্যান দেবে, তাদের কতজন লোক থাকবে, কতগুলো ক্রেন লাগানো হবে, পুলিশকে জানাবে। গতকাল ঠিকাদার এগুলো না করেই কাজটা করেছে। কোনো অবস্থাতেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে এ ধরনের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি তো বলেই খালাস।
বাস্তবে মহাবেকুব তাহলে শুধু এয়ারপোর্ট থেকে আবদুল্লাহপুর পর্য্যন্ত ( বাকী কিলোমিটারের পর কিলোমিটারের কথা না হয় বাদই দিলুম) গত দশ বছর ধরে কি দেখছে চর্মচক্ষে ? কোন শুক্রবার কিম্বা ছুটির দিনগুলোতে কি কাজ কখনও বন্ধ ছিলো ? ছিলো কি তেমন কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ? আপনারাও কি ওসবের কোনো আলামত দেখেছেন ?
ছবি - কৃতজ্ঞতা ও সৌজন্যতায় “প্রথম আলো”
মহাবেকুব বলেই হয়তো অতোশত হিসেব রাখতে পারিনি! হিসেব রাখার কথা তো কাজের তদারকিতে নিয়োজিত সরকারী বেতনভূক কর্মচারীদের! কিন্তু তারা নিজেরাই এখন একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে ব্যস্ত। বিআরটি কর্তৃপক্ষ এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রশি টানাটানি করছেন দুর্ঘটনার জন্য দায় কার তা নিয়ে । দায়ী করছেন পরস্পরকে ।
এদিকে আবার সড়ক পরিবহন ও মহা সড়ক বিভাগের সচিব তদন্ত করে ৪ টি কারন পেয়েছেন। দুর্ঘটনার জন্যে ১০০ ভাগ দায়ী নাকি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটিকে নাকি ব্লাক লিষ্টেড করা হবে, শাস্তিও দেয়া হবে। এখন বেকুবী যে ভাবনাটা মাথায় আসে সেটা হলো – তবে সেই প্রতিষ্ঠানকে কাজের অনুমতি দেয়া সরকারকেও তাহলে কালো তালিকায় ফেলতে হয় , শাস্তি দিতে হয়! কারন সরকার তো এখানে হুকুমের আসামী! এইসব তুঘলকি কান্ড দেখে এমন বেকুবী ভাবনা হয়তো আপনারও হবে । শুধু বলেন না এই ভয়ে যে, তাতে আপনার গায়ে উন্নয়ন বিরোধী ট্যাগ মারা হবে।
এক টক-শো’তে দেখলুম, হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ এর সভাপতি এ্যাডভোকেট মনজিল মোর্শেদ এমন কথাই বলেছেন।
অবাক করা ব্যাপারটা হলো, এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বলেছেন - কোনো ভাবেই নাকি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটিকে কথা শোনানো যায়নি। লাইনে আনা যায়নি। তাই কাজটি যাতে তাড়াতাড়ি শেষ হয় সে জন্যে তিনি নাকি গা-ছাড়া দিয়েছেন, কিছু বলেন নি, বলছেনও না।
ভালো ....... ভালো ! মহাবেকুব গালে হাত দিয়ে ভাবতেই পারে, এই না হলে পরিচালক! তিনি তো বেকুবীতে এই মহাবেকুব জাতককেও পেছনে ফেলে দিয়েছেন!!!!
এসব কেচ্ছা কাহিনী নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে দেখছি গত ক’দিন ধরে লাগাতার প্রশ্ন আর অবাক হওয়ার মতো কথাবার্তা বলাবলি হচ্ছে। এই লেখার শুরু থেকে ব্লগে পোস্ট দেয়ার সময়ের মধ্যে হয়তো কথাবার্তার জল আরও অনেক দূর গড়াবে। যুদ্ধ যা এখানেই। ওদিকে খালি মাঠে যারা গোল দেয়ার তারা তা দিয়ে যাচ্ছে কোনো যুদ্ধ ছাড়াই। মহাবেকুবীয় শাস্ত্রে এটাই বাস্তবের অসহায় সংস্কৃতি।
একটি টক-শো’তে দেখলুম তদন্ত রিপোর্টের ব্যাপারে বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট এর সভাপতি, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন তার পর্য্যবেক্ষনে অনেকটা এমন বলেছেন –
সরকারী আমলাদের চরিত্র প্রকাশিত হয়ে যাবার ভয় আছে বলেই কখনও তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়না। প্রতি নিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে আর “তদন্ত” শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে। সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারলেও ক্ষতিপূরণ আদায়ের বদলে সময় আর অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা কি বরাদ্দ বৃদ্ধি করার জন্যেই সময় বাড়িয়ে দেয়ার খেলা ? চুক্তিবদ্ধ কাজের সময়সীমা পেরিয়ে গেলে যেখানে ঠিকাদারের উপর ক্ষতিপূরণ ধার্য্য হয়, সবাইকে তাজ্জব করে সেখানে তাকে পুরষ্কৃত করা হয়েছে দ্বিগুন বরাদ্দ দিয়ে। এই বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্যে ঠিকাদার নিয়মিত চাঁদা দিয়েছে , ঘুষ দিয়েছে। চাঁদা বা ঘুষ প্রদানকারীদের জাবদা খাতায় হয়তো দিন তারিখ, পরিমান সহ সব হিসেবই আছে। আছে বলেই সবার চেহারাটা ধরা পড়ার ভয়েই তদন্ত রিপোর্টগুলো কখনই আলোর মুখ দেখেনা।
কথাগুলো একেবারেই ফেলনা কি ?
যা-ই হোক, সচিব মহোদয় তদন্ত করে যে ৪ টি কারন পেয়েছেন তাতে সুরক্ষা আর নজরদারীতে যারা ছিলেন তাদেরও দায়ী করেছেন। বিআরটিএর পিডি তো পাবলিকলি বলেছেন, তারা এর দায় এড়াতে পারেন না । দায় মেনে নিলে তাদের গ্রেফতার করা হলোনা কেন ? কেন নজরদারীর দায়িত্বে থাকা রাঘব বোয়ালদের ছেড়ে নেহাৎ চুনোপুটিদের কোরবানী করা হলো ? কেনো বানানো হলো বলির পাঠা ? তাদের রাজনৈতিক প্রটেকশন নেই বলে ? টাকা এবং পেশীর জোর নেই বলে ? না কি হতভাগ্যরা নেহাৎ গরীব বলে ?
এব্যাপারে এই মহাবেকুবকে কেউ একটু জ্ঞান দান করবেন কি ?
টক-শোগুলো থেকে যা জানতে পেরেছি -
ইন্টারন্যাশনাল বিডিং বা কন্ট্রাক্টগুলো কঠিন হয়। সকল বিষয়ে বিশেষ করে নিরাপত্তার বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ লেখা থাকে।
আলোচিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে করা এগ্রিমেন্টের – আর্টিকেল ২৭ এ বলা আছে – সেফটি সিকিউরিটি এ্যান্ড প্রটেকশন অব এনভায়রনমেন্ট ক্লজ অনুযায়ী ঠিকাদার ফার্ম কর্মে নিযুক্ত সকলের এবং কাজটির সাথে সংশ্লিষ্টদের এবং কর্মক্ষেত্র এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। এবং তা নিজের খরচে। গার্ড, ফেনন্সিং, ওয়ার্নিং লাইট সহ নিরাপত্তার সকল ধরনের ব্যবস্থা করবেন। নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকতে হবে কাজের এলাকা জুড়ে। এজন্যে কনসালট্যান্ট নিয়োগও করা হয়। সেফটি মেজার নেয়ার কম্পনেন্টের ভেতরই এসবের মূল্য নির্দ্ধারণ করে কোটেশন দিয়েই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছেন। এক্ষেত্রে উদার হয়ে সরকারও নাকি নিরাপত্তা খাতে প্রতি কিলোমিটারের জন্যে ১ লাখ করে টাকা দিয়েছেন।
কেন ??
সে নিরাপত্তা কারা হযম করেছেন ? বেকুব কেবল এই জাতকই নন, হযমকারীরা সব আম-পাবলিককেই দৃশ্যত বেকুব বানিয়েছেন!
ছবি - কৃতজ্ঞতা ও সৌজন্যতায় দৈনিক “ইনকিলাব”
এরকম এগ্রিমেন্ট যদি না থাকে তবে মহাবেকুবের এমন ভাবনা কি অপরাধ হবে যে, সরকার নিজেই সকল দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী? কারন সে ঠিকাদারকে এমন একটি কাজ দিয়েছে যেখানে ঠিকাদারের কোন দায়িত্ব নেই। সরকার অর্থ দেয় সব কিছু দেখভাল করার জন্যে্। কাজের মান, চুক্তি অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা দেখার জন্য হাইলি এক্সপার্টদের নিয়োগ দেয়া আছে । চব্বিশ ঘন্টা যানবাহন আর মানুষের ভীড়ে জমজমাট একটা মহা সড়কে এরকম একটি হুলুস্থুলু কাজের পরিদর্শন কি তারা নিয়ম মাফিক করেছেন ? চুক্তির টার্মস এ্যান্ড কন্ডিশনগুলো প্রতিদিন মেনে চলা হচ্ছে কিনা সেসব তদারক করেছেন ?
করেননি বলেই বেশ কয়েকটি দূর্ঘটনা ( ? ) ঘটে গেছে প্রকল্প এলাকায়। একমাস আগেও গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় উড়ালসড়কের লঞ্চিং গার্ডার পড়ে এক নিরাপত্তাকর্মী নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন । আর কর্তৃপক্ষ প্রতিবারই চর্বিত চর্বন করে বলে গেছেন- “ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে আমরা তেমন ব্যবস্থা নেব।”
মহাবেকুব ভেবে পায়না, চার বছরে শেষ হবার চুক্তি থাকলেও কেন বছরের পর বছর ধরে বাস র্যা পিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পটির কাজ চলছে ! বিভিন্ন অজুজাতে প্রকল্পের ডিপিপি এ পর্যন্ত চার দফা সংশোধন করা হলেও কাজ এখনও চলছে । শুধু সময় আর ব্যয় বাড়ছেই দিন দিন। ভোগান্তিও শেষ হচ্ছে না বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত চলাচলকারী যানবাহন ও সাধারণ মানুষের। চার বছর সময়ের জায়গায় সময় বেড়ে দশ বছর হয়েছে তবু শেষের দেখা নেই।
কেন?
কারন ২০১২ সালে ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়ার পরে তা সময় মতো শেষ হয়ে গেলে দফায় দফায় সময় আর প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৪হাজার ২৬৮কোটি টাকায় আর কিভাবে নিয়ে যাওয়া যেত? প্রকল্পের লোকজন চতুর আর বুদ্ধিমান বটে!
এখন প্রশ্ন হলো ; ক্রেনের ক্ষমতা কতো, ক্রেন কে চালাচ্ছিল, কার লাইসেন্স আছে কি নেই, কয়জনের কাজ করার কথা আর করেছেই বা কয়জনে এসব বকাওয়াস কপচানো হচ্ছে কেন ? ঠিকাদার তো চাইবেই ফাঁকি আর গোঁজামিল দিয়ে তার পকেট বোঝাই করতে। মর্মান্তিক ঘটনাটা ঘটার অনেক আগেইতো এসবের তদারকি করার কথা ছিলো ।
তা হলে এই নেগলিজেন্স কিলিং এর দায়ভার কার ?
মহাবেকুব বলেই বলতে হয় – এর দায়ভার হুকুমের আসামী সকলের। প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে জড়িত সড়ক পরিবহন ও জনপথ অধিদপ্তরের, , বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের, বিআরটি কর্তৃপক্ষের, ঠিকাদারের আর সর্বোপরি সরকারেরও।
সরকার তাহলে কি নিজের বিচার করবেন ? না। সরকার যা পারেন তা হলো, নিরিহ, খেটে খাওয়া মানুষগুলিকে বলির পাঠা না বানিয়ে দায়ী সকল রাঘব বোয়ালদের অবহেলা বা গাফিলতির কারণে মৃত্যুর বিচারের আওতায় এনে আইন অনুযায়ী কোরবানী দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সে কথাই বলেছেন সম্প্রতি।
আশায় আছি, দীর্ঘসূত্রিতা না করে এবার তিনি যেন তা তড়িৎ করে উঠতে পারেন!
ছবির কৃতজ্ঞতা ও সূত্র – প্রথম আলো, দৈনিক ইনকিলাব, ৭১ টিভি, ডিবিসি টিভি,
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:২৮