বিচিত্র এই প্রকৃতি, বিচিত্র এর খেয়াল।
খুঁজে পেতে কিছু মানুষ প্রকৃতির কতোই না অদ্ভুত সব খেয়ালকে তুলে আনেন লোক চক্ষুর সামনে! অন্তর্জালে এসব দেখে আমরা অনেকেই ভেবে বসি যে, এ সবই ফটোগ্রাফির বা ফটোশপের কারসাজি। কিন্তু আসলেই কি ?
সামনা সামনি দেখার সুযোগ হয়না বলেই ছবির জিনিষগুলিকে আমরা অনেকসময়ই অবিশ্বাস করে ফেলি।
তেমনি অবিশ্বাস্য হলেও প্রকৃতির কিছু দুর্লভ এবং অদ্ভুত ফুলের ছবি আপনাকে অবাক করে দিতে পারে বলেই এ ছবি ব্লগের অবতারণা ----
১) তা...তা ...থেই....থেই... তাথেই....তাথেই......
দেখতে ঠিক একজন নর্তকী । আপনার ধারে কাছে এমন নৃত্যরত একটি ফুলকে আপনি খুঁজে পাবেন না কখন্ও। যেতে হবে সুদূর অষ্ট্রেলিয়ায়। যেখানে তাকে ডাকা হয় – “ব্যালেরিনা অর্কিড” নামে। বোটানিক্যাল নাম Caladenia melanema.
দেখতে অবিকল এক ক্ষুদে ব্যালেরিনা। সাদা-গোলাপীলাল পোষাকে সজ্জিতা । পাপড়ি নয় মূলত গোলাপীলাল আর কালো রঙয়ের বৃতি দিয়েই তার এই নৃত্যের ভঙ্গী। পাপড়ি দিয়ে তৈরী হয়েছে কেবল ব্যালেরিনাদের ফুলে থাকা সাদা পোষাকের অংশটুকু ।
প্রকৃতিতে অতি দূর্লভ এই ব্যালেরিনা অর্কিডটি। অষ্ট্রেলিয়ার ম্যালে বায়োজি্ওগ্রাফিক অঞ্চলের লেক এ্যালথাম এলাকাতেই শুধু আপনি তাকে খুঁজে পাবেন।
২) মোরা হংসমিথুন ......
যেন উড়ন্ত হংসযুগল। প্রকৃতির এমন খেয়ালে অবাক না হয়ে উপায় নেই। এরাও অষ্ট্রেলিয়ান । দ্বীপ মহাদেশ বলেই কি প্রকৃতি এখানে দ্বীপের নিরিবিলিতে তার শিল্পকর্ম করে গেছে!!!! হয়তো!
আশ্চর্য্যজনক আর অপরূপ বলেই ১৯৯৬ সালে অষ্ট্রেলিয়ান পোষ্টেজ ষ্ট্যাম্পে এর ঠাঁই মিলেছে।
পূর্ব এবং দক্ষিন অষ্ট্রেলিয়ায় এদের বাস। “ডাক অর্কিড” নামেই এর পরিচয়। বোটানিক্যাল নাম - Caleana_major ক’জনেই বা জানে!
৩) নাচনেওয়ালী ......
পূর্ব আফ্রিকার রেইন ফরেষ্টের অধিবাসী হলেও এদের রং কিন্তু সাদা আর হালকা গোলাপী। জঙ্গলের নিভৃতে নাচের নেশায় যেন বিভোর। নাচের ভঙ্গীমার আকৃতির কারনেই এরা নামটি পেয়েছে “ ড্যান্সিং গার্লস” এর। এর পাপড়িগুলিই স্কার্ট পরিহিতি বাচ্চামেয়ের আদলে গড়ে তুলেছে তাকে। প্রসারিত হাতের আকৃতিও দিয়েছে তার পাপড়িগুলিই।
৪) গ্রহান্তরের আগন্তুক ......
গ্রহান্তরের আগন্তুক এলিয়েনের মতো দেখতে বলেই কি এরা দীর্ঘজীবি উদ্ভিদের বুকে জন্ম নিয়েছে ? কে জানে!
চীর সবুজ গাছে হলুদ,সাদা আর বাদামী লালে রঞ্জিত দেহাবরণ নিয়ে ফুটে থাকা ফুলটিকে মনে হয়, এরা যেন আমাদের সাঁই-ফাঁই মুভির “এলিয়েন”।
দক্ষিন আমেরিকার “টিয়েরা দেল ফুয়েগো” দ্বীপপুঞ্জে প্রথমে একে খুঁজে পান স্বয়ং চার্লস ডারউইন ১৮৩১ থেকে ১৮৩৬ সালের মধ্যে। তখন থেকেই এর নাম হয়ে যায় – “ ডারউইন’স স্লিপার”। দেখতে এলিয়েনের মতো কিম্ভুতকিমাকার হলেও রঙের জৌলুসে নয়, এদের বিচ্ছুরিত সৌগন্ধ পাখিদের ডেকে আনে পরাগায়নের জন্যে।
প্রকৃতির বিচিত্র খেয়াল কি ?
একদিন দল বেঁধে আমরা সবাই ....
৫) আমাদের গুষ্টিজ্ঞাতি ......
আশ্চর্য্য হলেনতো আমাদের গুষ্টিজ্ঞাতি মানে পূর্বপুরুষকে ফুল হয়ে ফুটতে দেখে ? ভুরুজোড়া কি কোঁচকালো একটু ? একেই বলে, বিধাতার লীলা বোঝা বড় ভার!
এদের লম্বা মুখখানা বিধাতা গড়েছেন লম্বা লম্বা অনেকগুলি পাপড়ি দিয়ে। আর ফুলের মাঝখানে আপনার পূর্বপুরুষের যে মুখখানা তা গড়া হয়েছে পাপড়িগুলির রঙ বিন্যাস করে করে। রঙ বিন্যাসেই মুখ, চোখ, নাক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রকৃতির তুলিতে। তারপরে তাতে গন্ধ মাখানো হয়েছে। বান্দর বলে যে তার গায়ে পঁচা গন্ধ মাখানো হয়েছে এমনটা ভাববেন না। পূর্ন প্রষ্ফুটিত একটি ফুলের গন্ধ ঠিক যেন পাকা কমলার মতো।
বাঁদর বলে কথা! তাই দক্ষিনপূর্ব ইকুয়েডরের গ্রীষ্মমন্ডলীয় জঙ্গলেই এদের ঠা্ঁই। পূর্বপুরুষদের স্মৃতি রক্ষার্থে এরকম একখানা ফুলগাছ আপনার চাই ? হবেনা। ফুল ফুটতেই সাত সাতটি বছরের বেশী সময় লেগে যাবে। এমন বাঁদরামী আপনি করতে যাবেন বলে মনে হয়না!
৬) ও তোতা পাখিরে / শেকল খুলে উড়িয়ে দেবো......
ছবি দেখে আর ক্যাপশানটি পড়ে আপনার হৃদয়ের একূল ওকূল দুকূলই গেলো মনে হয়! যাবেই তো, এমন গৃহস্তি তোতা পাখিকে শেকল খুলে উড়িয়ে দিতে মন চাইবে কি ? মন চাইলেও পারবেন না, ছিঁড়ে ফেলতে পারবেন কেবল! এতো আপনার খাঁচার পাখি নয়, এ যে বনের পাখি। আর তা আপনার আমার ঘরের কাছেরই বনের। দক্ষিনপূর্ব এশিয়ার। একমাত্র উত্তর থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই এলাকাতেই এই পাখিটির ঘর। ভারতের মনিপুর আর বার্মাতে কিছু কিছু আছে বটে! এ পাখি আকাশে ওড়েনা, থাকে জঙ্গলে জঙ্গলে। লোকেরা নাম দিয়েছে “প্যারট ফুল”। সামনা সামনি না দেখে একে দেখতে হবে পাশ থেকে।
ফুলের পাপড়ির বেশীটার রঙই পার্পল এবং ক্যারামাইন লাল । এর প্রান্তীয় পাপড়িগুলি মোচার মতো বৃত্তাকার এবং হালকা সবুজ রঙের। সর্ব নীচের পাপড়িটি ফোলানো এবং ক্রমাগত সরু হয়ে আংটার আকৃতি নিয়েছে ঠিক যেন তোতা পাখির গলা আর ঠোট ।
খাঁচায় তোতা পাখি না পুষে এমন তোতা বাগানে পুষবেন এমন ভাবনা চিন্তা আপনার থাকলে বাদ দিন। আপনার বাগানে এই ফুলের গাছটি লাগাতে পারবেন না। প্রথম কারন- থাইল্যান্ড সরকার “প্যারট ফুল” গাছটিকে সংরক্ষিত ঘোষনা দিয়ে এর গাছ-ফুল –বীজ দেশের বাইরে নিয়ে যা্ওয়া “ ব্যান” করেছে। পৃথিবীর আর কোথা্ও একে ফুটতে দেখবেন না।
দ্বিতীয় কারন – এই ফুলের পরাগায়নের জন্যে দায়ী কে তাকে চিহ্নিত করতে পারা যায়নি আজ্ও। ধরে নেয়া হয়, ফুলটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে এমন লম্বা ঠোট্ওয়ালা পাখি বা বিশেষ প্রজাতির বাদুর হতে হবে তাকে। এমন কিছু কি আপনার বাগানের ধারে কাছে আছে ?
৭) হা...হা... হা... পায় যে হাসি.....
মৌমাছি মৌমাছি কোথা যা্ও নাচি নাচি? মৌমাছি আর যাবে কোথা ? আমি নিজেই যে মৌমাছি হয়ে ফুটে আছি! হাসি পাচ্ছে ? হাসিতে আমার মুখখানা্ও যে হা হয়ে আছে।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে পর্তুগাল থেকে ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জ, তুরষ্ক হয়ে লেবাননের মাটিতে দেখা মিলবে এমন ফুলের। মুখে হাসি নিয়ে মৌমাছির মতো দেখতে বলেই এর নাম হয়েছে – “ লাফিং বাম্বল বী”। এটা একটা অর্কিড। বোটানিক্যাল নাম Ophrys bbomyblifora.
৮) ভয়ঙ্কর.....মাথার খুলি ?
নরমুন্ডের খুলি ? ষ্টার ওয়র মুভি সিরিজের “ দ্য এম্পায়ার স্ট্রাইকস ব্যাক” ছবিটি যারা দেখেছেন তারা এমন মুখোশটির সাথে পরিচিত। ছবির খল চরিত্র Darth Vader এর মুখের আদলে গা ছমছম রূপ নিয়ে আৎকে ওঠার মতোই এই দূর্লভ ফুলটি। তাই ফুলটির নামটি দেয়া হয়েছে সার্থক ভাবেই – “ দ্য ডার্থ ভ্যাডার” ।
Darth Vader এর ছবি
এরা ব্রাজিলের আর্দ্র তৃণভূমি এবং স্যাঁতসেঁতে সমভূমির ফুল। আকার আকৃতিতে ষ্টার ওয়র মুভির মতোই ঘৃনা, প্রতারণা, লোভের প্রতীক “সীথ লর্ড” এর ফুল হয়ে পূণর্জন্ম যেন। ফুলটির দিকে তাকালে একটি খুলির হীমশীতল চাহনীর শিরশিরে অনুভূতি আপনার গা বেয়ে উঠবেই। রাতের বেলা আপনি এই ফুলের সামনা সামনি হতেই চাইবেন না, এটা নিশ্চিত।
৯) দোলে দোদুল দোলে ঝুলনা................
অপরূপ একটি অর্কিড। যেন কাঁথামোড়া দেবশিশু। দুলছে Anguloa Uniflora গাছের দোলনায়! কলম্বিয়ান আন্দেজ এলাকায় আপনি এদের দেখা পাবেন।
একটি জটিল ফুল। পাপড়ি মেলার পরিক্রমায় নির্দিষ্ট একটি সময়ে ফুলটিকে মনে হবে অবিকল কাঁথায় মোড়ানো সদ্যপ্রসূত একটি শিশু। তাই নামটি দেয়া হয়েছে “Swaddled Babies” । এর আরেকটি নাম আছে অবশ্য – টিউলিপ অর্কিড।
প্রকৃতি যে কতো রঙ্গরস জানে !!!!!
১০) যা্ও পাখি বলো তারে ..........
উড়ন্ত পাখির ঢংয়ে ফোটা একটি অর্কিড। শ্বেতশুভ্র। মূলত দক্ষিনপূর্ব এশিয়ার আদিবাসী হলে্ও সম্ভ্রান্ত রূপ আর সৌন্দর্য্যের জন্যে উত্তর আমেরিকা, ফিজি, দক্ষিন প্রশান্ত মহাসাগরের ওসেনীয়া অঞ্চলেও এদের নিয়ে যা্ওয়া হয়েছে। বাদ যায়নি জাপান, কোরিয়া আর চীনও ।
শ্বেতশুভ্র রঙের জন্যে একে ডাকা হয় “হোয়াইট এগ্রেট অর্কিড” নামে। সহজেই আপনার বাগানে বা বাড়ীতে আপনি এই অর্কিডটির জন্ম দিতে পারেন।
ছবি ও সূত্র
https://news.cgtn.com/news/2019-07-18/Hooker-s-lips-A-tropical-plant-with-enchanting-red-bracts-IqmlfxUD2U/index.html
Click This Link
https://en.wikipedia.org/wiki/Caleana_major
https://steemit.com/flower/@ahsankhanjadoon/dancing-girls-impatiens-bequaertii-flower
https://gardenofeaden.blogspot.com/2014/07/the-happy-alien-plant-calceolaria.html
https://www.marthastewart.com/1530509/monkey-face-orchids
https://en.wikipedia.org/wiki/Ophrys_bombyliflora
https://www.gardeningknowhow.com/ornamental/vines/dutchmans-pipe/aristolochia-pipevine-plants.htm
https://gardenofeaden.blogspot.com/2020/03/the-swaddled-babies-orchid-anguloa.html
https://www.sidegardening.com/white-egret-orchids