প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের ক্যাম্পাস থেকে শোভাযাত্রা বের হয়।সেখানে লাল, নীল প্লাকার্ডে লেখা থাকে "একুশ অমর হোক,বাংলা ভাষা বেঁচে থাকুক হৃদয়ে।"
গত বছরের শোভাযাত্রায় আমিও যোগ দিয়েছিলাম।পুরো রংপুর শহরকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি কে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শোভাযাত্রা বের করেছি।
.
তো শোভাযাত্রা শেষে আমার বিভাগের এক বড় ভাই সকলের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি বললেন, "বাংলা ভাষা আমাদের প্রাণের ভাষা,হৃদয়ের ভাষা।কিন্তু সেই ভাষাকে ইংরেজি ভাষা দখল করে নিচ্ছে।মানুষ আজকাল কথায় কথায় বাংলার ভিতরে দু'একটা করে ইংরেজি word ঢুকিয়ে দেয়।যা আমাদের ভাষা কে বিকৃত করে ফেলছে।তাই আসুন আমরা promise করি,আজ থেকে আমরা alltime বাংলায় কথা বলব।"
.
তার বক্তৃতা শুনে সেদিন উপস্থিত সকলে হেসে ফেলেছিল।তিনি শুদ্ধ বাংলায় কথা বলার আহ্বান জানাচ্ছেন। অথচ নিজেই বাংলার ভিতর ইংরেজি ঢুকিয়ে দিচ্ছেন।
.
বাংলা আসলেই আমাদের প্রাণের ভাষা,হৃদয়ের ভাষা।কিন্তু সেটা শুধু হৃদয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।আমরা প্রায় কথার ভিতরে দু'একটা ইংরেজি শব্দ ঢুকিয়ে দেই।এটা নাকি যুগের চাহিদা।আধুনিক রুচিবান লোকেরা তাই বলে।
.
আমিও তাদের সাথে একমত।তবে একটু ভিন্নভাবে।আমরা বাংলার ভিতরে ইংরেজি না ঢুকিয়ে যদি পুরো বাক্যটা শুদ্ধ বাংলায় বা ইংরেজিতে বলি তাতেও কিন্তু আমাদের স্মার্টনেস বা আধুনিক রুচির বিষয়টা বজায় থাকে।
এবং খুব ভালভাবেই বজায় থাকে।
ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা।এই ভাষা আমাদেরকে অবশ্যই শিখতে হবে।তবে বাংলার সাথে মিশ্রভাবে নয়।এককভাবেই শিখতে হবে।
.
বাঙ্গালী সংকর জাতি।আর বাংলাও সংকর ভাষা।বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণ আছে এই ভাষায়।এবং কিছু কিছু বিদেশী শব্দ বাংলায় এমনভাবে ঢুকে গেছে যা বাংলার শব্দ বলেই মনে হয়।সে শব্দগুলোকে আমরা আপন করেও নিয়েছি।আমাদের সংস্কৃতিতে সাহিত্যে প্রতিনিয়তই সে শব্দগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে।
মানুষ যেমন বদলাতে থাকে ভাষাও তেমনি বদলাতে থাকে।ভাষা পরিবর্তনশীল।এবং এই বাংলা ভাষার পরিবর্তন হতে হতে এমন এক সময় আসবে যখন বাংলা ভাষাকে আর চেনা যাবে না।অর্থ্যাৎ সেই সময়ের লোকেরা অতীতের বাংলা ভাষাকে চিনতে পারবে না।
.
আমার এক বন্ধু আছে। সে জানেনা আলু মাটির নিচে হয়, না কি উপরে হয়।ছোটবেলায় আমিও জানতাম না বাদাম মাটির নিচে হয়,না কি উপরে হয়।
ঠিক সেরকম কিছুদিন পর মানুষ ভুলেই যাবে যে, বাংলা ভাষায় ঢেঁকি,কুলা নামে কিছু শব্দ ছিল। এসব ঢেঁকি,কুলা সংরক্ষিত থাকবে জাদুঘরে।