কয়েক দিন আগের ঘটনা, আমার এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বন্ধুর কণ্ঠে গাওয়া একটি গান নাকি দেশবরেণ্য কোন শিল্পীর অ্যালবামে যু্ক্ত হতে যাচ্ছে। তো সে এসেছে ঢাকায় আমার কাছে তার গানের অডিশন দেয়ার জন্য। সে আসলে তার সাথে আড্ডা দিলাম, ক্যাম্পাস ঘুরলাম, ঢাকা শহর ঘুরলাম। এরপর যেদিন তার অডিশনের দিন ধার্য হল সেদিন তার সাথে গেলাম সেই বিশাল জমকালো স্টুডিওতে। বসে আছি তো বসে আছি সোফায় বসে আছি দুজন। এর মাঝে কথাবার্তাও টুকটাক হচ্ছে আমাদের মধ্যে। কথায় কথায় চলে আসে অ্যালবামে তার নাম কি দেওয়া হবে। কারণ সারা দেশ সুদ্ধ মানুষ তার এই গান শুনবে। নাম নিয়ে তার ভাষ্য শুনে তো আমার মনে হল, এ আমি কাকে সঙ্গ দিচ্ছি! এ তো যে কোন সময় আমাকে নাস্তিক জ্ঞান করে আল্লাহু আকবর বলে এক মহান কার্য সমাধা করে ফেলতে পারে। মাথাটা একটু পাকিয়ে নিয়ে তার কথা মন দিয়ে শুনলাম। যা শুনলাম তা বিস্তারিত, তার নামটা নাকি মুহম্মদের নামের সাথে মিলে যাচ্ছে তাই তার নামটা পরিবর্তন করে দিতে হবে। শুনলাম সে আরও বলে গেল, গান তো ইসলামে হারাম, সেই হারাম কাজে তো মুহম্মদের নাম ব্যবহার করা ঠিক হবে না। এসব শুনে আমি তার কথা নির্দ্বিধায় সমর্থন করে গেলাম। মনের উসখুসানি দমিয়ে মনে মনে ভাবলাম, এটাই হয়তো ধর্মান্ধতার বীজরূপে কাজ করে। ধীরে ধীরে সেটা তথাকথিত জিহাদের রূপ পরিগ্রহ করে। এখানে বলা প্রয়োজন যে, বন্ধুর যে নামটি সে অ্যালবামে দিয়েছিল সে নামটি তার পূর্বের নামের চেয়ে মুহম্মদ নামের আরও নিকটবর্তী। বন্ধুর বিচার্য যে তার নামটি সেই মুহম্মদের বিশ্বস্ততার (?) জন্য পাড়ার লোকেরা তাকে সম্বোধন করত। কেমন বিশ্বস্ততার নজির তিনি স্থাপন করে গেলেন যে চৌদ্দশত বছর পেরিয়ে সেই নজির চরম বিকৃত ও বরং উল্টো কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আবার সমাজে এমন অনেক লোক আছে যারা জীবন ধারণের জন্য খারাপ পথে পা বাড়ায়। কিন্তু তারা তাদের সন্তানদের সেই অর্থের দ্বারা ভরণ পোষণ করেন না। তারা এই বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে থাকেন যে, যা ইসলামে হারাম, তা আমার সন্তানদের স্পর্শে যেতে দেব না, তাদের অমঙ্গল হবে এই আশঙ্কায়। আমি মনে করি এই মুর্খতার কোন মানে হয় না। এই মুর্খতার দরুন তারা হয়তো সন্তান বড় করার জন্য এক সিন্দুক পবিত্র অর্থ সঞ্চয় করবেন আর বাকি সবার জন্য অপবিত্র ও খারাপ থেকে অর্জিত অর্থ আরেক সিন্দুকে ভরবেন।
প্রথম প্যারাতে আমার বন্ধু এবং দ্বিতীয় প্যারায় যে ধরনের মানসিকতার মানুষের বর্ণনা দিলাম সে ধরণের মানুষকে যদি বলা হয় তোমার হুজুর তোমাকে বলেছেন, তোমার পাপের প্রায়শ্চিত্য করতে মহল্লার সবচেয়ে গভীর পুকুরে ঠিক রাত বারটায় তোমার গলায় পাঁচটি ইট বেঁধে মরতে হবে। তো নিঃসন্দেহে সে বলবে, হুজুর অত ঠাণ্ডায় আমি মরে যাব!!!!!!!!!
এটার কারণ নির্দেশে বলতে হয়, মুসলমান তার জীবনকে একটি স্বতন্ত্র রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দ্বিতীয়ত কেশবচন্দ্র সেনের মত ' আমি পাপী আমি পাপী মানসিক তাড়না ' তাদের মধ্যে এক বিন্দুও কাজ করে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১২