somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঐতিহাসিক মাথিন কূপ (এক বিচ্ছেদের সাক্ষী)

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাথিন কূপ। টেকনাফ গেলে ঘুরে আসতে পারেন এই স্থানটি। খুব ভালো ভাবেই সংরক্ষণ করা আছে কূপটি।



বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের ঘটনা। কলকাতার সুদর্শন পুলিশ কর্মকর্তা বীরাজ ভট্টাচায্য অতি ভয়ংকর ও দূর্গম এলাকা টেকনাফ থানায় বদলি হয়ে আসেন। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা টেকনাফ থানা - অদূরে সমুদ্রের নীল জলরাশি। থানায় তার তেমন কোন কাজ কর্ম ছিলোনা। অনেকটা এখানে সেখানে ঘুরে ফিরে সময় কাটাতেন। থাকতেন থানার আধাপাকা ঘরের একটি কক্ষে। একদিন ভোরে একাধিক নারী কন্ঠের অস্পষ্ট মৃদু গুঞ্জনে ধীরাজের ঘুম ভেঙ্গে যায়। থানার ছোট বারান্দায় এসে দেখলেন রঙ-বেরঙ্গের ফতুয়া (থামি- ব্লাউস) পরিহিতা ৫০/৬০ জন মগী রাখাইন তরুনী পাত কূয়ার চারদিকে জড়ো হয়ে হাসি গল্পে মশগুল। তাদের সুউচ্চ কলহাস্যে থানার প্রঙ্গণ মুখরিত। এটাই ছিলো সমগ্র টেকনাফে একটি মাত্র কূয়া। প্রতিদিন তরুনীরা পাত কূয়ায় জল নিতে আসতেন। আর ধীরাজ থানার বারান্দায় চেয়ারে বসে তরুনীদের জল তোলার দৃশ্য দেখতেন। একদিন ধিরাজের নজরে পড়ে সম্পূর্ণ নতুন সাজে সজ্জিত আরেক তরুনীকে, সুন্দরী এই তরুনীর নাক-চোখ, মুখ বাঙ্গালির মেয়েদের মত। নাম তার মাথিন। টেকনাফের জমিদার ওয়ান থিনের একমাত্র মেয়ে। প্রথম দর্শণেই মেয়েটিকে তার ভালো লেগে যায়। প্রতিদিন ভোর হওয়ার আগেই ধীরাজ ভট্টাচায্য থানার বারান্দায় চেয়ারে গিয়ে বসতেন এবং মাথিনের আগমনের প্রতীক্ষা করতেন। মাথিন যখন কলসি কাঁখে তার সুউচ্চ গ্রীবা দুলিয়ে থানা প্রাঙ্গন দিয়ে হেঁটে আসতেন ধীরাজ তন্ময় হয়ে সে দৃশ্য উপভোগ করতেন। অন্যান্য তরুনীরা আসার আগেই মাথিন পাতকূয়ায় আসতেন এবং জল নিয়ে ফিরতেন। ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশে তারা একে অপরের সাথে গভীর প্রেম ও মোহবেশে আচ্ছন্ন হয়ে থাকতেন। পরস্পর পরস্পরের দিকে চেয়ে সম্ভব অসম্ভোব নানা কল্পনার রঙ্গিন জাল বুনতেন। দেখা-দেখি, হাসা-হাসি এভাবেই তাদের প্রেম ঘনীভূত হয়। দিন গড়াতে থাকে। একদিন দু'দিন এভাবে। ইতি মধ্যে দুজনের প্রেমের কথা সবাই জেনে যায়। নানা বাধা সত্ত্বেও দুজনের মধ্যে বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়। এরই মাঝে কলকাতা থেকে বাবার চিঠি আসে ধীরাজের কাছে। ধীরাজকে কলকাতা যেতে হবে এক মাসের ছুটি নিয়ে। ছুটি না মিললে চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে হলেও যেতে হবে। ধীরাজ সিদ্ধান্ত নেন কলকাতা যাবেন। সিদ্ধান্তের কথা মাথিনকে জানানো হলো। মাথিন রাজি হলেন না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে ধীরাজ এক সন্ধায় টেকনাফ ছাড়ে পালিয়ে গেলেন। ধীরাজের এভাবে চলে যাওয়াকে প্রেমিকা মাথিন সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেন নি। মাথিনের মনে হলো বাবার অসুখের কারণ দেখিয়ে ধীরাজ বরং বিয়ে করার ভয়েই পালিয়েছে। প্রাণ পুরুষ ধীরাজকে হারিয়ে মাথিন অন্নজল ত্যাগ করে হন শয্যাশায়ী। জমিদার বাবা ওয়ান থিন সহ পরিবারের সদস্যরা শত চেষ্টা করেও মাথিনকে অন্নজল ছোঁয়াতে পারেন নি। তার এক কথা ধীরাজকে চাই। প্রেমের এই বিচ্ছেদ এবং অতি কষ্টে একদিন মাথিন মারা যান। এ কারনে প্রেমের সাক্ষী মাথিনের কূপ দেখে এখনো হাজারো প্রেমিক প্রেমিকা তাদের ঐতিহাসিক প্রেমের কথা স্মরণ করে আবেগ আপ্লুত হয়।

সাহিত্যিক ধীরাজ ভট্টাচার্য্যের লিখিত যখন পুলিশ ছিলাম গ্রন্থ অবলম্বনে।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×