হোসেন ভাই! এই হোসেন ভাই!!
একটা শাল দিয়ে মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত জড়িয়ে ফুটপাতে এক কোন ঘেষে হাটছিল হোসেন। শীতটা জাকিয়ে বসেছে। প্রতি শীতে এই শাল ই ভরসা। খেয়াল করছিল অনেকক্ষন ধরেই পেছনে একটা রিকশা অনুসরণ করছে। নাম ধরে ডাক শুনে ঘুরে তাকাল, আর কেউ না, মনা মিয়া।
- আরে মনা মিয়া যে, কেমন আছ?
- রাখেন আপনার কেমন থাকা, আপনে কই উধাও হইসিলেন? প্রত্যক রাত্রেই আপনারে খুজসি, কোত্থাও পাইনা
- আমি তো নিজেকেই খুজে বেড়াচ্ছি, তুমি আর আমাকে কি খুজে পাবে?
- আপনার এই কথার ধরন মিয়া কিন্তু বদলাই নাই একদম। লন উঠেন, চা খাওয়ামু।
মনা মিয়া সাথে চুক্তি আছে, যে মনা মিয়া রিকশায় উঠতে বললে না করা যাবে না, অগত্যা উঠতেই হোলো
- মনা মিয়া, এখানে একজন বৃদ্ধা মহিলা বসত না, কোথায় উনি
- আছেন, এখানে বসেন না এখন আর।
- কোথায় বসেন
- খুইজ্জা নিবেন, জগতে সব কিছু প্রশ্নের উত্তরে হয় না মিয়া ভাই
-হুম
- এই যে আপনে, মেলা দিন উধাও, আপনেরে ঠিক ই কিন্তু চিনসি, বলেন কেমনে?
- কেমন করে?চেহারা দেখে?
- হায়রে ভাই! চেহারা তো চাদর দিয়া ঢাইক্কাই থুইসেন
- তাহলে কিভাবে
- আপনার হাটার ধরন, আপনার অভ্যাস, আচরন এইগুলি দেইখ্যা
- এসব দেখে মানুষ চেনা যায়?
- দুইচোখ মানেই যে চোখ দিয়াই যে চেনা যাইব, ব্যাপারডা কিন্তু এমন না ভাইজান, চোখ আপ্নের বাইরের যা দেখাইব তাই দেখব, তাই ই চিনব, যা চিনাইবেন ওইডাই চিনব, এর বেশি না। অন্তর দিয়া চিনা লাগব, অন্তর কেবল অই হাসি কান্না ভালবাসার জন্য না, এইডার আরো কাজ আসে
- কি কাজ
- মনের চোখ হিসাবে কাম করার। আমরা ঘুম পাড়ায় রাখি এই চোখডারে, তাই অনেক কিসুই এড়ায় যায়।
- সবার কি মনের চোখ খুলতে পারে মনা মিয়া
- না ভাইজান, এইডা সবাই পারে না। অন্য আবেগ দিয়া বন্ধ কইরা রাখে।
- হুম। তবে তো মানুষ বোঝা অনেক কঠিন
- হ ভাই, সবাই বাইরের চেহারা দিয়াই সব বিচার করে, অন্তর পর্যন্ত পৌছানোর সময় কই।
হোসেন চুপ করে শোনে সব কথা। মনা মিয়া ভুল কিছু বলে নি। সময় কোথায় মানুষের। এক পাল্লায় সব মাপার মত, দুচোখের বিচারে যা আসে তা দিয়েই নির্ধারণ করে ফেলে সব। মনে অনেক প্রশ্ন।
উত্তর কি মেলে সব কিছুর? এক জীবনে সব উত্তর কি আদৌ খুব দরকার?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৪০