somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রঙ্গ ভরা অঙ্গনে মোর-২

২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শুরুতেই একটা কৌতুক- একলোক কুড়িয়ে একটা চেরাগ পেল। ধুলাবালি মুছতে গিয়ে দেখে চেরাগ থেকে ধোঁয়ার কুন্ডুলি বেরুচ্ছে,সেই কুন্ডুলি থেকে বেরিয়ে এল এক বিশাল দৈত্য। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে দৈত্যটি বলল-
-হুকুম করুন মালিক। আলাদীনের চেরাগের গল্প লোকটির জানা ছিল। সে ছিল ক্ষুধার্ত। দৈত্যকে বলল-
- আমি চায়নিজ খেতে চাই।
দৈত্যটি অনেক সময় পর ঘাড়ে করে একজনকে নিয়ে হাজির। লোকটি রেগে আগুন!
- এত দেরী হল কেন? তাছাড়া তুই এ কাকে ধরে এনেছিস?
দৈত্য জবাব দিল, আপনি চায়নিজ খেতে চাইলেন না? এ ব্যাটাকে পিকিং এর রাস্তা থেকে ধরে এনেছি, অরিজিনাল মাল। তাই একটু দেরী হয়েছে!

চায়নিজ নিয়ে এ নিছক কৌতুক এবার আসি বাস্তবের মিশেলে- একবার এক মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী ও গবেষক দিন কয়েকের সফরে চীনে গেলেন। সেখান থেকে ফেরার পর নিউইয়র্কের গবেষণাগারে ঢোকার পথে সিকিউরিটির বাধার মুখে পড়লেন সেই বিজ্ঞানী।
—কী ব্যাপার?
—আপনার শরীরের বায়ো-মেকানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
—মানে কী! আমার পরীক্ষা কেন করতে হবে?
—আলবৎ করতে হবে কারন আপনি চীন থেকে এসেছেন। ওরা আপনাকেই পাঠিয়েছে, নাকি আপনার একটা কপি পাঠিয়ে দিয়েছে; সেটা যাচাই করতে হবে !

হ্যাঁ, এই সন্দেহ অমূলক না। চীনা প্রকৌশলীরা মিসাইল থেকে শুরু করে মোবাইল, জাহাজ থেকে শুরু করে মশার কয়েল যে ‘কপি’ করে ফেলছে; তাতে সন্দেহ নেই। এক মোবাইলের কথাই ধরুন। মোবাইলের বাজারে একচেটিয়া বাণিজ্য করছিল ফিনল্যান্ডের নকিয়া,কোরিয়ার স্যামসাং জার্মানির সিমেন্স।
চায়না মোবাইল মার্কেটে ঢুকে নকল মোবাইল তৈরির মাধ্যমে। হেন কোন মোবাইল নাই যা তারা নকল করেনি। সে সময় মোবাইল ক্রেতাদের কাছে একটা আতংকের নাম ছিল ‘চায়না’। সবাই কেনার আগে শিওর হতে চাইতো-‘মালটা চায়নার নাতো?”

সে সময় একটা কৌতুক প্রচলিত ছিল, কিভাবে শিওর হবেন, আপনার সেলফোনটি made in China: কিনা?
লক্ষণ ১: পাঁচ মিনিটেই চার্জ ফুল দেখাবে।ছয় মিনিটে চার্জ এম্পটি।
লক্ষণ ২: ফোনে টিভি দেখা, রেডিও শোনা থেকে শুরু করে নেইলকাটার, গ্যাসলাইটার,কান খোচানী,পিঠ চুলকানী সবকিছুর সুবিধা আছে।
লক্ষণ ৩: টুটপিক,কটনবাড দিয়েও মেসেজ লেখা যাবে।
লক্ষণ ৪: কিছু সেপ্লিং মিস্টেক থাকবেই। যেমনঃ NokLa, blackderry, i-porn, samswag etc.
লক্ষণ ৫: একটা প্লেন উড়ে গেলে, মোবাইল শো করবেঃ "one missed call."
লক্ষণ ৬: রাস্তা দিয়ে ট্রাক গেলে, মোবাইল শো করবেঃ "charger connected."
লক্ষণ ৭: আপনার পাশ দিয়ে যদি কোন চাইনিজ হেঁটে যায়, মোবাইল শোকরবেঃ "one Bluetooth device found!"

চীনের সেই দিন আর নাই। এখন বিশ্বের বাঘা বাঘা ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস প্রস্তুতকারকদের সকল পণ্য তৈরি হচ্ছে চিনে। আলপিন থেকে ফোর্থ জেনারেশন জঙ্গিবিমান সব বানাচ্ছে চীন।
মাও-সে-তুং (চীনারা বলে মাও-জে-দং) এর আমলে চীনে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। মাও টেলিগ্রাম পাঠালেন রাশিয়ার ক্রুশ্চেভকে : চীনে দুর্ভিক্ষ। দয়া করে খাদ্যদ্রব্য পাঠান।
ক্রুশ্চেভ উত্তর দিলেন : আমাদের নিজেদের অবস্থাও রীতিমতো সংকটজনক। তাই কোন খাদ্যদ্রব্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। পেটে পাথর বাঁধুন ।
মাও এর ফিরতি টেলিগ্রাম : জরুরি ভিত্তিতে পাথর পাঠান!

দুর্ভিক্ষে পেটে পাথর বাঁধার জন্য এক সময় যে চীনের পাথরও ছিল না সেই চীন এখন কয়েক দশকের ব্যবধানে গ্রেট ওয়ালের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেট ওয়ালেটেরও মালিক। আমেরিকার ডিজনি স্টোর থেকে শুরু করে আমাদের অজো-পাড়াগাঁয়ের হেঞ্জু মিয়ার মুদির দোকান সব জায়গায় চীনের তৈরি পণ্যে ঠাসা।

চীনের শিল্পে উন্নতির ঘটনা বেশিদিন আগের নয়।প্রথম দিকে নকলসামগ্রী উৎপাদনকারী চীনের শিল্প নগরী তাঞ্জিন আর আমাদের জিঞ্জিরার উত্থান প্রায় একই সময়ে। ৮০ দশকে বাজারে প্রচুর জাপানি নকল ন্যাশনাল প্যানাসনিক,সনি টেপরেকর্ডার, ক্যামেরা,চার্জ লাইট,চার্জার ফ্যান আর রেডিও পাওয়া যেত যা ছিল জিঞ্জিরার তৈরী।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তাঞ্জিনের শিল্প বিপ্লবের সুফল পৌঁছে গেছে চীনের ঘরে ঘরে। চীনা পণ্য 'মেড ইন চায়না' অথবা 'মেড বাই চায়না' সিলে গোটা পৃথিবী দাপড়িয়ে বেড়াচ্ছে।পাবলিকের নাক সিটকানো স্বভাব আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ আমাদের জিঞ্জিরার সেই ঐতিহ্য আর অস্তিত্বই বিলীন।

চীনের সাফল্য আর আমাদের ব্যর্থতার ইতিহাস, গল্প বলতে গেলে এই পোস্ট কখনো শেষ হবেনা।লিখাটার রাশ টেনে ধরার সার্থে চীনের একটি চমৎকার আইনি তথ্য দিয়ে লিখাটা শেষ করছি।
চীনে ধর্ষণের শাস্তি ফায়ারিং স্কোয়াড়ে মৃত্যুদণ্ড। অভিযোগ দাখিল থেকে সাজা পর্যন্ত সময় লাগে তিন দিন।কোন ট্রায়াল নেই,আর্গুমেন্ট নেই, সাক্ষীমুক্ষি নেই।
ভিক্টিমের দেহে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেলে সেই আলামতের (সিমেন্স) সাথে ধর্ষকের ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হয়, মিলে গেলেই- ধ্রিম ধ্রিম ফায়ার।

আর আমাদের দেশে?
প্রথমে জনে জনে ধর্না, প্রতিবাদ,মানব বন্ধন,মামলা, আসামী গ্রেফতার, তদন্ত,সমজোতার চেষ্টা, ঘুষ, ধমক,চমক,সংবাদ মাধ্যমে আলোচনা,আসামি রাজনিতীকরন, মেয়েটার চরিত্র নিয়ে গবেষণা,বোরকা পড়া ছিল না বোরকা ছাড়া,আসামীর জামিন, জামিনপ্রাপ্ত আসামী কতৃক ভীক্টিমকে ধর্ষণের পর হত্যা।

ধর্ষণের সংবাদে বাংলাদেশী মিডিয়া সয়লাব, চীনা পণ্যে সয়লাব বাংলাদেশী বাজার, হেন কোন পণ্য নেই যা চীন থেকে আমদানী হয়না। আচ্ছা, চীন থেকে আমদানী এত এত পণ্যের সাথে আমরা কি চীনে প্রচলিত ধর্ষণের সাজাটিও আমদানী করতে পারিনা?

কৃতজ্ঞতা- আবু হেনা আশরাফুল ইসলাম ভাই।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩২
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×