‘শর্ত প্রযোজ্য’
দোকানের বাইরে বিশাল ব্যানারে লিখা-‘১২৫ সিসি মোটর সাইকেল মাত্র ১০হাজার টাকা।‘
একজন সম্ভাব্য ক্রেতা দোকানে ঢুকে সেলসম্যানকে বললেন, আমি ১০ হাজার টাকায় একটি মোটর সাইকেল কিনতে চাই।
সেলসম্যান জিজ্ঞাস করলো-আপনি কি চাক্কা সহ নিবেন? মানে চাক্কা সহ নিলে দাম পড়বে ৩০ হাজার টাকা,ইঞ্জিন সহ নিলে- এক লাখ বিশ হাজার, মিটার সাইলেন্সার সহ নিলে---
ক্রেতা রেগে বললেন, বাইরে বিজ্ঞাপনেতো এত কথা লিখেন নি! এখন এসব বলছেন কেন?
সেলসম্যান বলল-সব লিখা আছে, আপনার কাছে অতসীকাঁচ থাকলে ঠিকই দেখতেন- বিজ্ঞাপনের নিচে লিখা আছে ‘শর্ত প্রযোজ্য’।
এদেশে ‘শর্ত প্রযোজ্য’ বাক্যটা প্রথম চালু করে মোবাইল কোম্পানীগুলি।
অধিকাংশ সিম কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন হয়ে থাকে এমন_ আজকে রাত ১০টার মধ্যে ১ টাকা রিচার্জ করলেই আপনি পাবেন এভারেস্টের চূড়ায় ভ্রমণ করার সুযোগ। কিন্তু 'শর্ত প্রযোজ্য'-এর মাধ্যমে যে শর্তটি দেওয়া থাকে তা হলো, আপনাকে খালি গায়ে এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে হবে এবং ওঠার সময় হাত-পা ব্যবহার করা যাবে না।
প্রেমের ক্ষেত্রেও আজকাল 'শর্ত প্রযোজ্য' নীতি মেনে চলছে প্রেমিকা সম্প্রদায়। প্রেমের প্রথমাবস্থায় তারা মুখে মধু মেখে মিষ্টি করে বলে, 'আমার কিছুই চাই না, শুধু তোমাকে হলেই হবে।' কিন্তু মনে মনে তারা ঠিকই বলে নেয় 'শর্ত প্রযোজ্য'। তাই প্রেমিকা সম্প্রদায় প্রেমের সময় কিছু না চাইলেও সেই প্রেম যখন বিয়ে অব্দি গড়ায়, তখন শর্তের ব্যবহার সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে শুরু হয়ে যায়। তখন তারা অতিরিক্ত সময় চায়, মাত্র একটি ফ্ল্যাট চায়, হালকা পেঁয়াজ রঙের গাড়ি চায়, আরও চায় শুক্রবারে বরের হাতে বাসার কাপড়গুলো ধুয়ে নিতে।
নির্বাচনের আগে নেতারা জনগণের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে মাথার চুল পাকিয়ে ফেলেন। উন্নয়নের জোয়ারে জনগণকে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ও তিনি একটি ছোট্ট শর্ত জুড়ে দেন। আর তা হলো তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী করতে হবে এবং তারপর দেখবেন উন্নয়ন কাকে বলে! এবং বলাবাহুল্য সেটা নিজের উন্নয়ন।
এই শর্ত প্রযোজ্যের গ্যাঁড়াকলে পড়েছিল আমাদের দাউদ। পাড়ার ছেলেরা যাকে দাউদ একজিমা বলে ক্ষেপাতো। একত্রিশ’শ টাকায় বত্রিশ ইঞ্চি টিভি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখে সে বউয়ের কানফুল বন্ধক দিয়ে, নগদ ৩২০০ টাকা সাথে নিয়ে শো-রুমে গিয়ে হাজির। সেখানে গিয়ে শুনে টিভির দাম ৩৭ হাজার ২০০ টাকা। চেয়ারম্যানের সনদ,মেম্বারের লিখিত,৪জন জামিনদার,জমিনের কাগজ,৩০০ টাকার স্ট্যাম্প, ১২ মাসের ১২টা ব্যাংক চেক,আইডি কার্ডের ফটোকপি, ৪কপি ছবি, ৩ কপি বিদ্যুৎ বিল আরো কি সব মিলিয়ে মোট ২৬ প্রকারের কাগজ জমা দিলে তবেই ৩৭ হাজার ২০০ টাকার টিভি ৩১৬৬ টাকার কিস্তিতে তারা দিচ্ছে। সবই ছিল তার বিজ্ঞাপনে নজরে না আসা ‘শর্ত প্রযোজ্যের’ কারিশমা।
প্রতিবাদী যুবক দাউদ এই জোচ্চুরি মেনে নিতে পারেনা। হাত পা ছুড়ে সে হই হল্লা আর চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। এক পর্যায়ে তার হাতের ইষ্টক সদৃশ্য নোকিয়া ৩৩১০ গিয়ে পড়ে শোকেসের গ্লাসে, দুটা গ্লাস ফর্দাফাই।কর্মচারিরা তাকে চেয়ারের সাথে পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে। অবশেষে গয়না বন্ধকের ৩২০০ টাকা জরিমানা দিয়ে কোন মতে ছাড়া পায় দাউদ।
দাউদ কোন মতে ছাড়া পেলেও আমরা চাইনা নুসরাতকে পুড়িয়ে মারা ও খুনিদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া কোন আসামী ছাড়া পাক। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, নুসরাতের হত্যার সাথে জড়িত সকল আসামিকে গ্রেফতার করা হবে। ন্যাক্কার জনক এই হত্যাকাণ্ডের অনেক আসামী গ্রেফতার হলেও তিন জনের ব্যাপারে কোন টু শব্দ শোনা যাচ্ছেনা। এরা হচ্ছে স্থানীয় থানার তখনকার ওসি,স্থানীয় এডিসি ও পুলিশ সুপার। খুনিদের আশ্রয়,প্রশ্রয় ও খুনকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে এ তিনজনের ভূমিকা বিভিন্ন মিডিয়ায় উঠে এসেছে।
এই তিন জনকে গ্রেফতার না করায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তবে কি প্রধান মন্ত্রীর ঘোষণায়ও শর্ত ‘প্রযোজ্য ছিল।‘ আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাটি এমন ছিলনা-‘নুসরাতের হত্যার সাথে জড়িত সকল আসামিকে গ্রেফতার করা হবে। (শর্ত প্রযোজ্য- ওসি, এডিসি ও পুলিশ সুপার ছাড়া।)
(সামুতে আট বছর পুর্তি পোস্ট। সকলের জন্য শুভ কামনা)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:১৬