রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাসায় বড় বড কবি দের আড্ডা হচ্ছে।রবীন্দ্রনাথের চাকর বনমালী সেখানে সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে গেছে, বনমালীর বানানো চা খেয়ে.... প্রথমে কবিগুরু গেয়ে উঠলেন....
"আমারো পরাণো যাহা চায়, তার কিছু নাই,
কিছুই নাহি এই চা’য় গো"---
সবে চায়ে দু চুমুক দেয়া বিদ্রোহী কবি নজরুল এটা শুনে লাফ দিয়ে উঠে বললেন....
" বিদ্রোহী রণক্লান্ত,
আমি সেইদিন হব শান্ত,
যদি ভালো করে কেউ
চা বানিয়ে আনতো"
নজরুলের কথা শুনে উদাস মুখে জীবনানন্দ দাস বললেন....
"আর আসিবনা ফিরে রবি ঠাকুরের নীড়ে,
গরম চায়ে মুখ দিয়ে ঠোঁট গিয়েছে পুড়ে"
-খানিক পরেই কবি সুকান্ত বললেন....
"কবিতা তোমাকে দিলাম বিদায়,
এককাপ চা যেনো ঝলসানো ছাই"
-হেলাল হাফিজ তখন গুমরে বললেন....
"নষ্ট পাতির সস্তা চায়ে মুখ হয়েছে তিতা,
কষ্ট চেপে নষ্ট চায়ে মুখ দিয়েছে কিতা"
:
-রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ নরম কন্ঠে বললেন....
"ভাল আছি, ভাল থেকো,
চায়েতে চিনি বেশি মেখো"
:
-তা শুনে কবি নির্মলেন্দু গুন বললেন....
"আমি হয়তো মানুষ না, মানুষ গুলো
অন্যরকম, মানুষ হলে এমন চায়ে চুমুক
দিতাম না"
-পরিশেষে রবীন্দ্রনাথ অসহায় চোখে বনমালীর পানে তাকিয়ে বললেন....
"ওরে অধম,ওরে আমার কাঁচা,
ভালো করে চা বানিয়ে তুই আমাকে বাঁচা ।
বাংলা সাহিত্যের কয়েকজন কবি ও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এটা একটা বানানো কৌতুক। এটা বানানো কৌতুক হলেও বাস্তবে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন কৌতুকপ্রিয় মানুষ। তিনি নিজেই বলেছেন-
‘কোনদিন এত বুড়ো হবো নাকো আমি।
হাসি তামাসারে যবে কবো ছ্যাবলামি।’
হাসি তামাসারে ছ্যাবলামি না কওয়া এই মানুষটার আজ জন্মদিন। এ উপলক্ষে কবির কিছু রঙ্গ রসিকতা,হাসি তামাশা নিয়ে এই পোস্ট।
১/রবীন্দ্রনাথের নাটক নিয়ে তখন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি মেতে উঠেছে। নিয়মিত রিহার্সাল চলছে। একদিন একটি বড় হলঘরে ‘বিসর্জন’ নাটকের মহড়া চলছে। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং উপস্থিত সেই মহড়ায়, আর থাকবে না-ই বা কেন, নাটকে তিনি নিজে অভিনয় করছেন জয়সিংহের চরিত্রে। দীনু ঠাকুর বা দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর অভিনয় করছিলেন রঘুপতির ভূমিকায়। দীনু ঠাকুর ছিলেন লম্বা, চওড়া সুপুরুষ। নাটকের শেষ দৃশ্যে রবীন্দ্রনাথ অভিনীত জয়সিংহ চরিত্রটির মৃত্যু হবে এবং দীনু ঠাকুর অভিনীত রঘুপতি চরিত্রটি শোকাহত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে মৃতদেহের ওপর। প্রথম সব কয়টি দৃশ্যের মহড়া শেষ। এবার শেষ দৃশ্যের মহড়া।
যথাসময়ে রবীন্দ্রনাথ অভিনীত জয়সিংহের মৃত্যু হলো, শোকাহতের অভিনয় করে কাঁদতে কাঁদতে রঘুপতি দীনু ঠাকুর ঝাঁড়িয়ে পড়লেন রবীন্দ্রনাথের ওপর। ঝাঁকুনি সহ্য করতে না পেরে রবীন্দ্রনাথ তখন চেঁচিয়ে দীনু ঠাকুরকে বলে উঠলেন, ‘ও দীনু, তুই ভুলে যাসনি, আমি কিন্তু সত্যি সত্যি মরিনি, বেঁচেই আছি।’
এ কথা শুনে মহড়ায় হাসির রোল উঠল।
২/সাহিত্যিক বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়, যাঁর ছদ্মনাম বনফুল, এক সভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তাঁর বক্তৃতা শেষ হলে সবাই তাঁর বলার প্রশংসা করলেন। সভায় উপস্থিত রবীন্দ্রনাথও তাঁর বক্তৃতার প্রশংসা করে বললেন, ‘একটা কথা আপনারা সবাই ভুলে যাচ্ছেন কেন—বলাই তো ভালোই বক্তৃতা দেবে, ওর নামই যে বলাই। বলাই তো ওর কাজ।’
৩/একবার রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজি একসঙ্গে বসে সকালের নাশতা করছিলেন। গান্ধীজি লুচি পছন্দ করতেন না, তাই তাঁকে ওটসের পরিজ খেতে দেওয়া হয়েছিল; আর কবিগুরু খাচ্ছিলেন গরম গরম লুচি।
গান্ধীজি তাই দেখে বলে উঠলেন, ‘গুরুদেব, তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছ।’ উত্তরে কবিগুরু বললেন, ‘বিষই হবে; তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে। কারণ, আমি বিগত ষাট বছর যাবৎ এই বিষ খাচ্ছি।’
৪/একবার এক দোলপূর্ণিমার দিনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাক্ষাৎ ঘটে। পরস্পর নমস্কার বিনিময়ের পর হঠাৎ দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর জামার পকেট থেকে আবির বের করে রবীন্দ্রনাথকে বেশ রঞ্জিত করে দিলেন।
আবিরে রঞ্জিত রবীন্দ্রনাথ রাগ না করে বরং সহাস্যে বলে উঠলেন, ‘এত দিন জানতাম দ্বিজেন বাবু হাসির গান ও নাটক লিখে সকলের মনোরঞ্জন করে থাকেন। আজ দেখছি শুধু মনোরঞ্জন নয়, দেহরঞ্জনেও তিনি একজন ওস্তাদ।’
৫/সাহিত্যিক ‘বনফুল’ তথা শ্রী বলাইচাঁদের এক ছোট ভাই বিশ্বভারতীতে অধ্যয়নের জন্য শান্তিনিকেতনে পৌঁছেই কার কাছ থেকে যেন জানলেন, রবীন্দ্রনাথ কানে একটু কম শোনেন। অতএব রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি যখন বললেন, 'কী হে, তুমি কি বলাইয়ের ভাই কানাই নাকি?', তখন বলাইবাবুর ভাই চেঁচিয়ে জবাব দিলেন, ‘আজ্ঞে না, আমি অরবিন্দ।’
রবীন্দ্রনাথ তখন হেসে উঠে বললেন, ‘না কানাই নয়, এ যে দেখছি একেবারে সানাই!’
৬/একদিন সকালবেলায় রবীন্দ্রনাথ জলখাবার খেতে বসেছেন। প্রমথনাথ এসে তার পাশে বসলেন। উদ্দেশ্য, গুরুদেবের খাবারে ভাগ বসানো। ফল, লুচি, মিষ্টি সবকিছুরই ভাগ পেলেন তিনি। কিন্তু তার নজর একগ্লাস সোনালি রংয়ের শরবতের দিকে যেটা তাকে দেওয়া হয়নি। গুরুদেব তার ভাব লক্ষ করে বললেন, 'কী হে এই শরবত চলবে নাকি?' প্রমথ তাতে খুব রাজি। অমনি গুরুদেব বড় এক গ্লাসে সেই সরবত প্রমথকে দেওয়ার আদেশ দিলেন। বড় গ্লাস ভর্তি হয়ে সেই সোনালি শরবত এল। প্রমথনাথ এক চুমুক খেয়েই বুঝলেন, সেটা চিরতার শরবত!
৭/রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের ছাত্রদের বকাঝকার পক্ষপাতি ছিলেন না। তিনি কাউকে কখনও আঘাত দিতে চাইতেন না। একবার প্রমথনাথ বিশী সম্পর্কে একটা নালিশ এল। এমন অবস্থা যে, তাকে না বকলেই নয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও গুরুদেব প্রমথকে অনেকক্ষণ ধরে বকলেন। তিনি একটু থামলে প্রমথ বললেন, 'কিন্তু ঘটনা হল আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।'
রবীন্দ্রনাথ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। বললেন, 'বাঁচালি। তোকে বকাও হল আবার তুই কষ্টও পেলি না।'
৮/রবীন্দ্রনাথ তার ভক্ত ও ছাত্রছাত্রীদের সামনে গান গাইছেন, 'হে মাধবী, দ্বিধা কেন?'
তখন ভৃত্য বনমালী আইসক্রিমের প্লেট নিয়ে তার ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বনমালী ভাবছে ঘরে ঢুকবে কি ঢুকবে না। কারণ রবীন্দ্রনাথ গান গাইছেন, এ সময় বিরক্ত হবেন কিনা কে জানে।
গুরুদেব বনমালীর দিকে তাকিয়ে গাইলেন 'হে মাধবী, দ্বিধা কেন?'
বনমালী আইসক্রিমের প্লেট গুরুদেবের সামনে রেখে লজ্জায় ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
রবীন্দ্রনাথ বললেন, 'বনমালীকে যদিও মাধবী বলা চলে না। তবে তার দ্বিধা মাধবীর মতোই ছিল। আর আইসক্রিমের প্লেট নিয়ে দ্বিধা করা মোটেই ভালো নয়।'
৯/একবার এক ভদ্রলোক রবীন্দ্রনাথের কাছে কলম ধার চাইলেন। তিনি কলম চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি এই কবিতার দ্বিতীয় লাইনটা জানেন? প্রথম লাইনটা হচ্ছে ‘সকল পক্ষী মৎস্য ভক্ষী, মৎস্যরাঙ্গী কলঙ্কিনী'।
রবীন্দ্রনাথ কলমটা দিয়ে বললেন, 'নিশ্চয়ই জানি। লাইন দুটো দাঁড়াল এ রকম : সকল পক্ষী মৎস্য ভক্ষী, মৎস্যরাঙ্গী কলঙ্কিনী। সবাই কলম ধার চেয়ে নেয়, আমিই শুধু কলম কিনি!'
১০/মংপুতে মৈত্রেয়ী দেবী কবিগুরুকে বেশ কয়েকদিন ধরে নিরামিষ খাওয়াচ্ছিলেন । তো একদিন মৈত্রেয়ী দেবী কিছু খাবার নিয়ে এসে বললেন -"এটা একটু খাবেন ?রোজ রোজ আপনাকে কি নিরামিষ খাওয়াবো ভেবে পাইনা ।"
কবিগুরু বললেন -"ও পদার্থটা কি?"
মৈত্রেয়ী দেবীর উত্তর-ব্রেইন ।
তখন কবিগুরু বললেন-"এই দেখ কান্ড , এ তো প্রায় অপমানের শামিল । কি করে ধরে নিলে যে, ঐ পদার্থটার আমার প্রয়োজন আছে? আজকাল কি আর আমি ভাল লিখতে পারছিনে ?"
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৮