আমার প্রাইমারী স্কুলের বন্ধু সুরেশ। গুজব আর কুসংস্কারে তার বিশ্বাস সীমাহীন।
এলাকার ধনঞ্জয় কাকুর মেয়ে সবিতার প্রতি সে ছিল অতিশয় দুর্বল। এক বাইদানিকে ধরে তিন কেজি চাল দিয়ে সে একবারএক বশিকরন তাবিজ হাতিয়েছিল। অমাবস্যার রাতে তাবিজটা সবিতাদের ঘরের উপরের সিড়িতে পুততে হবে। এক অমাবস্যার রাতে অপারেশনে বেরিয়ে গর্ত খুড়তে গিয়ে সে হাতে নাতে ধরা! অবস্থাপন্ন পরিবারের ছেলে সিধ কাটতে গিয়ে সিধের মুখে ধরা পড়েছে এই নিয়ে বিচার বসেছিল এবং বিষয়টি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।
সেদিন হাতে বিড়ি নিয়ে আগুনের সন্ধানে পাড়ার গলিতে পায়চারি করছে। অনেকক্ষন পরে এক মুরুব্বিকে আসতে দেখে আগ বাড়িয়ে বলে উঠলো — বুড়া মিয়ার কাছে আগুন আছে?
করোনা ইস্যুতে মুখে মাস্ক থাকায় সুরেশ চিনতে পারেনি এই বুড়া মিয়া ছিল স্বয়ং তার শশুর।
অনেক দিন হোমকোরেন্টাইনে আছি। সুরেশের কি খবর জানতে ফোন দিলাম।
— কি খবর কেমন আছিস?
ওপাশ থেকে উত্তর এল- আর বলিস না দোস্ত টেস্টিক্যালের ব্যথায় অস্থির।
বললাম - সেখানে আবার কি সমস্যা, তোর একশিরা নাকি?
জানালো- সে রকম কিছু না। কাল রাতে একজন মেসেজ দিয়ে জানালো- এক সাধুবাবা বলেছেন অন্ডকোষএ তিন টোকা দিলে নাকি করোনা থেকে মুক্তি মিলবে। সাথে সাথে কাজে নেমে পড়লাম। শুরুতেই খেলাম ধাক্কা। আরে সেখানে জিনিস হইল দুইটা এখন তিন টোকা কেমনে দেই? দুটোতে তিন টোকা না একটাতে তিন টোকা করে? তাছাড়া উপরে না নিচে, ডানে না বায়ে এই ভেবে ভেবে মোট ত্রিশের মত টোকা দিয়েছি। এখন ফুলে ঢোল,নাপা এক্সট্রা দুইটা করে চালাচ্ছি।
হাসবো না কাদবো বুঝতে না পেরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম - সাধু বাবা যদি ওখানে হাতুড়ি দিয়ে বাডি দিতে বলতেন তুই কি তাই করতি?
আসলে শুধু সুরেশের দোষ দিয়ে লাভ কি? হুজুগের এই দেশে যে গুজব ছড়ায় সেটাই দেখি হিট!
তথ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে গুজব ডাল পালা মেলে। অসহায় মানুষ এসব গুজবে বিশ্বাস করে নিজেদের অসুহায়ত্ব ঢাকে।
মানুষ গুজবে বিশ্বাস করে, এই মন্দের ভিতরেও আমি আশার আলো দেখি!
যদি গুজব রটে কোয়ারেন্টাইনের ১৪ দিন আগে যারা ঘর থেকে বের হচ্ছে, কোহকাফ নগরের জীন বাবাজীরা আছাড় মেরে তাদের কোমর ভেজ্ঞে ফেলছে। এতে আমি খুশীই হতাম!
বিঃদ্রঃ গুজব কখনো গুডজব নয়,এতে কান দিবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪৮