somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ-রম্যঃ কত ফেরকা কত মত!

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ওয়াজ মাহফিলের মজমা। সুরা ফাতিহার পরে কারা "দোয়াল্লিন" পড়ে আর কারা "যোয়াল্লিন" পড়ে এই নিয়ে দুদল তৌহিদী জনতার মাঝে শুরু হয়েছে ধুশ মারফিট। একজনকে কিছুদূর দৌড়ানোর পরে ধরা হল। আক্রমণকারীদের হাতে লাঠি, ছাতা ইত্যাদি। জিগ্যেস করা হল - এই ব্যাটা তুই দোয়াল্লিন না যোয়াল্লিন? আক্রান্ত ব্যাক্তি ভাবলো এরা কোন পার্টি আল্লা মালুম,কি বলে কোন বিপদে পড়ি। তাই সেকেন্ড খানিক ভেবে সে জবাব দিল- "ভাই আমারে মাফ করেন আমি নামাজই পড়িনা।"

আমাদের দেশের তথাকথিত তৌহিদী জনতা আবার বিরাট খতরনাক জিনিস।এই তো সেদিন তৌহিদী জনতা(?) কবর থেকে তুলে নুরাল পাগলার মৃতদেহ পুড়িয়ে দিল। পাগলা নাকি নিজেরে ঈমাম মেহেদী দাবী করছে।আরে ব্যাটা সেতো পাগল। পাগল নিজেরে জজ,ব্যারিস্টার, নবী,খোদা সব দাবী করতে পারে। মৃতদেহের অপমান সকল ধর্মে গর্হিত অপরাধ এমন কি জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী মৃতদেহের অবমাননা যুদ্ধাপরাধ।

আমি বোধহয় অন্য লাইনে চলে যাচ্ছি। যা বলতে চাচ্ছি তা হল, আমাদের দেশের মুসলমান এত এত দল উপদলে বিভক্ত যে এখানে এমন কোন দল নেই যারা অন্য কোন না কোন দলের দৃষ্টিতে কাফের নয়।
আপনি সুন্নি হইলে শিয়াদের কাছে আপনি বাতিল। আপনি শিয়া হইলে সুন্নিদের চোখে রীতিমতো অমুসলিম আর কাদিয়ানী হইলে তো কথাই নাই।

আপনি মাজার বিরোধী হইলে তরিকতপন্থিরা বলবে আপনি অলি আউলিয়ার দুশমন তথা কাফের।

আপনি চার মাজহাবের কোন এক মাজহাব মানেন। আহলে হাদিস গ্রুপের চোখে আপনি কাফের।
মাজহাবিদের চোখে আহলে হাদিস গ্রুপ ভন্ড।

আপনি অলি আউলিয়া ভক্ত,অলির উছিলায় আল্লার সন্ধানে মাজারে মাজারে পড়ে থাকেন । মারেফতের দিক্ষা নিছেন। গেরুয়া লুংগি পরে ঘুরেন। বাকিরা বলবে আপনি গাঞ্জাখোর।

এক মুফতি ওয়াজ করতেছে নবীজি (সাঃ) নূরের তৈরি তো আরেক প্যান্ডেলে আরেক মুফতি বলতেছে নবীজি (সাঃ) মাটির তৈরি।

এক ছোট গ্রুপ আছে আহলে কোরান। তারা তো কোরানের বাইরে কিছুই মানে না। তাদের দাবী কোরানের ব্যাখ্যা কোরান নিজেই। সেই কোরানের আয়াতের নিজেদের মতো অর্থ আর ব্যাখ্যা করে বুঝাই দিছে আমরা যে হজ্ব কোরবানি করি তা হারাম। আমরা যেই নামাজ পড়ি এইটা নাকি কোরানে বলা নামাজই না।

আরেক গ্রুপ হাদিস মানে না। কারণ, নবীজি (সঃ) এর মৃত্যুর ২০০ বছর পর হেথায় সেথায় ঘুরে সংগ্রহ করা হাদিসকে তারা হাদিস বলে মনে করে না। অমুক শুনছে তমুকের থেকে, তমুক সমুকের থেকে, সমুক শুনছে জমুকের থেকে...এই ভাবে যাইতে যাইতে পাওয়া গেল যে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত- নবী করিম (সঃ) বলেছেন......
এই ফর্মূলায় সংগ্রহ করা হাদিস নিয়া সংশয় তাদের।

কী মুসিবত!!! যাইবেন কই???
সব ছেড়ে ছুড়ে গেলেন তাবলীগে। গিয়ে দেখেন বাশ দিয়া মাথা ফাটাফাটি চলতেছে সাদপন্থী আর জুবায়ের পন্থী। আপনি কোন পন্থি বুঝে উঠার আগেই দেখলেন কারা জানি মাইরা আপনারে হোতাই ফালাইছে!

আপনি নামাজে হাত বান্ধেন নাভির উপ্রে তো আরেকজন কয় আপ্নের সিস্টেম ভুল। হাত বানতে হইবো বুকের উপ্রে।

আইসিস নামের এক ক্রাইসিস গ্রুপের চোখে তারা বাদে বাকি সব কাফের।

আপ্নে দাড়ি রাখেন না, ক্লিন শেভড। আপনার পাশে আছে হিজবুত তাওহীদ ও তাদের এমাম সেলিম মিয়া। আপনারে কারাতে স্টাইলে নামাজ পড়া শিখাইবে সে।কিন্তু বাকি সবাই কইবো আপনে ইসলামের দুশমন।

শান্ত সৌম্য সুফিবাদে যাইতে চান!? দেখবেন সেই সূফিদের আওলাদেরা কোটি কোটি টাকা হাদিয়া নিয়া বিশাল ধনী পীর হইয়া পূর্ণ ননীযুক্ত শরীর নিয়া গদিনে আসিন। তাদের চোখে দেওয়ানবাগী আবার ভন্ড।

গান বাজনা হারাম বলে হুংকার দিয়ে বড় এক আলেম ওয়াজ করে চলে গেছেন। সেই ময়দানেই দুই দিন পর ইসলামি জলশা নাম দিয়া বাবা মাইজভান্ডারি বা কেল্লা বাবা বা ল্যাংটা সোলেমানের আশেকানরা বয়াতি ভাড়া করে বিকট শব্দের ঢোল করতাল বাজিয়ে মাইকে সারা রাইত গান গাইতেছে। ভক্ত আশেকানরা অশেষ নেকি হাসিল করতেছে।

আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পাশ করা আলেম আর কওমি মাদ্রাসার আলেম আবার এক জিনিস না।
মিজানুর রহমান আজহারি বলতেছে- "বিশ্ব নবী বলেন-......."
এদিকে আরেক হুজুর ফতোয়া দিচ্ছে- "যারা রাসূল (সঃ) কে বিশ্বনবী বলবে তারা কাফের!"

আপনি চাঁদপুরে ঈদ করে ঢাকায় এসে শুনেন পরেরদিন আবার ইদ!!!

খোলাফায়ে রাশেদিন অর্থাৎ চার খলিফার তিন খলিফাকেই ঘাতকেরা হত্যা করেছিল। হত্যাকারীরা কিন্তু মুসলিম ছিল এবং এইসব হত্যাকান্ডের পক্ষে তাদের যুক্তি ছিল যে ওই খলিফাগণ সহিহ মুসলিম ছিলেন না। বরং তারাই (হত্যাকারীরা) আদি ও আসল মুসলিম।

তিন খলিফার হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়া ক্যাচাল করে দুই গ্রুপ সাহাবী পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করে একে অপরকে হত্যা করেছিল। প্রত্যেকেই তাদের নিজেদেরই সহিহ মুসলিম দাবি করতেন।

আপনি কোন বিষয়ে সঠিক মাসআলা জানার জন্য গেলেন মুফতি গিয়াসউদ্দিন তাহেরির কাছে। সে আপনাকে কোরান হাদিস মোতাবেক মাসআলা দিয়ে দিল। পরে গেলেন শায়খ আহমদুল্লাহ হুজুরের কাছে। তিনিও কোরান হাদিসের আলোকে সমাধান দিলেন। কিন্তু দেখলেন দুইজনের মাসআলা পুরাই বিপরীত।

কই যাইবেন?
গেলেন আব্বাসী হুজুরের কাছে। হুজুর আবার পিএইচডি করা। তিনি সব শুনে বললেন- "ওরা তো কাফের!"

এত এত বিভ্রান্তিতে পড়ে এক বন্ধুকে (কোরান হাদিস,ধর্ম কর্ম নিয়া সে সব সময় পোস্ট দেয়) জিজ্ঞেস করলাম- "এত এত তরিকা, এত এত পদ্ধতি, একেকজনের হাত বাধা, দাঁড়ানো রুকু সিজদায় পার্থক্য তো ক্যাম্নে নামাজ পড়বো? নবিজী (সঃ) ক্যাম্নে নামাজ পড়তেন?"

তার জবাব- "আমরা যেই প্রচলিত নামাজ পড়ি নবিজী (সঃ) এম্নে নামাজই পড়তেন না।"

যেটুকু ভাল ছিলাম এইবার পুরা আউলাইয়া গেলাম।৷

আল্লাহ সকল মুসলিমকে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে চলার তৌফিক দিন।
©শিপুভাই,সম্পাদিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৪
২১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×