somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামী লীগের শত্রু স্রেফ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আওয়ামী লীগ করতে চাইলে প্রথমেই বুঝতে হবে আওয়ামী লীগের মূল যুদ্ধ বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টি বা বামদের সাথে না, আওয়ামী লীগের মূল প্রতিপক্ষ হইল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, এইটা বুঝতে না পারলে আওয়ামী লীগ করা মানে খালি লুঙ্গি গায়ে কোট পরা, ভিতরে কিছু নাই, বাহিরে চাকচিক্য। এখন তো দেখি অনেক আওয়ামীলীগার নামধারী মানুষ সাঈদিরে ভালোবাসে, আজহারিরে শুনে, জাকির নায়েকরে ফলো দেয়, আমির হামজার ওয়াজে মুগ্ধ হয়, আবার আবু ত্বোহা আদনানরে হিরো বানায়—এইটা কি আওয়ামী লীগ? আওয়ামী লীগ মানে শেখ মুজিব, আওয়ামী লীগ মানে বাঙালার মুক্তি সংগ্রাম, আওয়ামী লীগ মানে ধর্মের ব্যবসার বিরুদ্ধে দ্রোহ, আওয়ামী লীগ মানে ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার বানানোকে চিরতরে না বলা। আওয়ামী লীগের রাজনীতি আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দুইটা নদী, এই দুই নদী কখনো একসাথে মিশতে পারে না, বরং যতই কাছাকাছি আসবে ততই বিষাক্ত হবে। আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায়, যদি আবার বাঙলার মানুষের প্রাণে প্রাণে জায়গা নিতে চায়, যদি আবার মুক্তির শক্তি হয়ে দাঁড়াতে চায়, তবে আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতি থাকা যাবে না। যেই আওয়ামীলীগার ধর্মভিত্তিক রাজনীতির মানুষের প্রতি দুর্বলতা রাখে, সে আসলে আওয়ামী লীগের জন্য খতরা, কারণ শত্রু তো বাইরেই আছে, কিন্তু ভেতরের এই ঘুণপোকাগুলোই একদিন ভেঙে ফেলবে পুরো দেয়াল।

শেখ মুজিব ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পর রেসকোর্স ময়দানে বলেছিলেন—
“ধর্মকে যারা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে, তারা ইসলামেরও শত্রু, মানুষেরও শত্রু, এদেশের স্বাধীনতারও শত্রু।”
আবার ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি টেলিভিশন ভাষণে তিনি ঘোষণা দেন—
“আমরা পাকিস্তান চাইনি। পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটাকে ধর্মের নামে আমাদের উপর চাপানো হয়েছিল। আমি স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি, ধর্মকে আর কোনোদিন রাজনীতির হাতিয়ার করতে দেওয়া হবে না।”

এই জায়গায় সৈয়দ আশরাফ, আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক, ২০১০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় শোকসভায় পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেন—
“আওয়ামী লীগের শত্রু বিএনপি না, আওয়ামী লীগের শত্রু জামাত। জামাত মানেই রাজাকার, জামাত মানেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি।”

আরেকটা ইতিহাস কেউ ভুলতে পারবে না। বাঙলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, যিনি নিজে একজন কোরানে হাফেজ ছিলেন, তিনি শেখ মুজিবকে জোর দিয়ে বলেছিলেন ১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মভিত্তিক সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে। ১৯৭২ সালের সংবিধান রচনার সময় তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন—
“যে মুহূর্তে ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে মেশানো হবে, সেই মুহূর্তে পাকিস্তানি চেতনা আবার ঢুকে পড়বে। এদেশ মুক্তি পায়নি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংস্করণ হওয়ার জন্য।”
তাজউদ্দিনের সেই অবস্থানের ভিত্তিতেই ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৩৮ ধারা লিখা হয়—
“কোনো ব্যক্তি ধর্মের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সংগঠন বা দল গঠন করিতে পারিবে না।”

এই অবস্থান শুধু রাজনীতিবিদ না, বাঙলার কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীরাও বারবার উচ্চারণ করেছেন।
আহমদ ছফা বলেছিলেন—
“ধর্ম দিয়ে রাজনীতি করার মানে হলো মানুষকে পশু বানানো।”
আহমদ শরীফ লিখেছিলেন—
“ধর্মের সাথে রাজনীতি জুড়ে দিলে সেটা ধর্মও থাকে না, রাজনীতিও থাকে না—থাকে কেবল প্রতারণা।”
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন—
“ধর্মভিত্তিক রাজনীতি মানে মানুষকে বিভক্ত করার রাজনীতি। স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা হলো মানুষের ঐক্যের চেতনা।”

কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ঘোষণা করেছিলেন—
“যে ধর্ম মানুষে মানুষে দেয়াল তোলে, সে ধর্ম মানুষের ধর্ম না, সে ধর্ম হইল শত্রুর ধর্ম।”
হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন—
“ধর্ম যখন রাজনীতির সঙ্গে মেশে, তখন সে হয়ে ওঠে ফ্যাসিবাদ।”
আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বহু আগেই গর্জে উঠেছিলেন—
“মসজিদ-উপাসনালয় আলাদা কর, ধর্ম মানুষের অন্তরে থাকুক, রাজনীতি মানুষের মুক্তিতে থাকুক।”

তাই আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে, আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মাঠ থেকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে দিতে হবে, একেবারে শেকড়ে কেটে ফেলতে হবে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বামদের সাথে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক লড়াই কেবল ক্ষমতার পালাবদল, কিন্তু ধর্মভিত্তিক রাজনীতি হইল আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। যারা আজকে মিশে মিশে ধর্মভিত্তিক বক্তাদেরে ফলো করে, যারা মনে মনে সাঈদি, আজহারি, জাকির নায়েকদেরে জায়গা দিচ্ছে, তারা আওয়ামী লীগের ভেতরে বসে আওয়ামী লীগের কবর খুঁড়তেছে। আওয়ামী লীগ হইতে চাইলে শর্ত একটাই, ধর্মভিত্তিক সকল রাজনীতিকে মনে প্রাণে ঈমান আকিদায় ঘৃণা করতে হবে, অন্যথায় তুমি আওয়ামী লীগ না, তুমি আওয়ামী লীগের ছদ্মবেশে আওয়ামী লীগের শত্রু। তাই সময় এসেছে আওয়ামী লীগের প্রতিটা কর্মীকে নিজেদের ভেতরকার অবস্থান স্পষ্ট করার, আওয়ামী লীগের ভিতরে দাঁড়িয়ে যারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেয়, তাদের চিহ্নিত করার, কারণ আওয়ামী লীগের মূল প্রতিপক্ষ আজীবন একটাই—ধর্মভিত্তিক রাজনীতি। জয় বাঙলা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৪
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×