পাকিস্তান নিয়ে আমাদের দেশের অনেকেরই চুলকানি আছে অথচ পাকিস্তানের নতুন সরকার তার দেশের জনগণের জন্য কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন তা শুনলে হয়তো আমাদের দেশের যাদের চুলকানি ছিলো এবং বর্তমানেও আছে তাদের কিছুটা হলে ও উপশম হবে বলে মনে করি। আমরা মনে করি, গণতন্ত্র মানেই হলো জনগণের উন্নয়ন তথা দেশের অন্তিক ও বাহ্যিক অবকাঠামোর উন্নয়ন। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি আমাদের দেশের সরকার কর্তৃক তেমন কিছু আজঅব্দি দেখতে পেয়েছি না কখনোই পাবো বলে মনে করি?! শুধুই উন্নয়নের ঢেঁকুর তুলে জনগণের পকেট কাটা হয়েছে বৈ আর কিছুই হয়নি।
আমি মনে করি, এমন উন্নয়ন যে কোনো সরকারই দেশের প্রয়োজন বোধে করে থাকবেন। তার মানে এই নয় যে, ১০ টাকা খরচের যায়গায় ৫০ টাকা খরচ দেখিয়ে উন্নয়ন করতে হবে?! তবুও অনেকে বলে থাকেন বেশি খরচ হলেও উন্নয়ন হচ্ছে তো?! যেটা আমাদের দেশেই হয়ে আসছে। বলা যায়, এই কুখ্যাতি শুধুই বাংলাদেশ বলেই সম্ভব হয়েছে। অন্য কোনো দেশে এমন নজির আর দ্বিতীয়টা খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার নিজ খরচ সংকুচিত করে দেশ ও দেশের জনগণের উন্নয়ন সাধনে চেষ্টা করছেন, সেখানে আমাদের দেশের সরকার তার ব্যয়ভার বছরের পর বছর শুধুই বাড়িয়েই চলেছেন। সরকারী চাকুরীদের বেতন ভাতা ১২৫% পর্যন্ত বাড়িয়ে সাধারণ জনগণের নিঃর্শ্বাসের নাভিশ্বাস তুলেছেন! অবাক হচ্ছি এসব দেখেও যাদের বিএনপি ও পাকিস্তানকে নিয়ে চুলকানি ছিলো এবং আছে তারা দেশের জনগণের হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে এমন অস্বাভাবিক ব্যয় নীতির প্রতি কখনোই প্রতিবাদ করতে দেখিনি!
মালোয়েশিয়ার নতুন সরকার মসনদে বসেই সরকারের ব্যায় খাত কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন। অফিসিয়াল খরচ কিভাবে কমানো যায় সেসব ব্যপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। প্রশাসনের তথা সরকারের কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি কমিয়েছেন। বিলাস বহুল জীবন যাপনে অভ্যস্থ থাকলে তা পরিহার করার জন্য মন্ত্রীসভাকে নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি জনাব ডঃ মাহাতির মোহাম্মদ।
মজার ব্যাপার হলো, ইমরান খানের নেতৃত্বে প্রথম মন্ত্রী সভার বৈঠকে নাস্তা ছিল চা ও বিস্কুট। সেখানে উপস্থিতিদের মাঝে বলা হলো, কোন মন্ত্রী সরকারী খরচে বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেনা। বৈঠকে ইমরান খান নতুন মন্ত্রীদেরকে অনুরোধ করেছেন যেন তারা তাদের এবং নিজেদের কার্যালয়ের দৈনন্দিন খরচ কমিয়ে আনেন। এছাড়া দৈনিক ১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হবে বলেও জানান তিনি। নিজের ব্যপারে বলেন, আমি প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা কাজ করবো। এছাড়া ইমরান খান আরো বলেন, ঈদ না হলে কারো জন্যই কোনো ছুটি মঞ্জুর করা হতো না। ‘পরিবারের কথা ভুলে যেতে হবে’ বলেও মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন ক্রিকেট দলের অধিনায়ক থেকে সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেয়া ইমরান।
এদিকে পাকিস্তানের নয়া প্রধানমন্ত্রী জনাব ইমরান খান সাহবে ও শপথ গ্রহণ করেই ১০০ দিনের কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। দেখে নিবো ঘোষণাগুলো..
# এক কোটি বেকারের কর্মসংস্থান
# ৫০ লক্ষ স্বল্প আয়ের পরিবারকে গৃহ নির্মানে সহায়তা
# বিদ্যুৎ ব্যাবস্থার উন্নয়ন এবং
# মাল্টি বিলিয়ন ডলারের চাইনা-পাকিস্তান বিজনিস করিডোর বাস্তবায়ন..
শুধু তাই নয়, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশটির আমূল সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দেয়া ভাষণে ইমরান খান একটি ইসলামি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা বারবার উল্লেখ করেন। এই ছাড়া ও তিনি শিশু যৌন হয়রানি বন্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো এমন কতগুলো বিষয় তুলে ধরেন যেসব প্রসঙ্গে দেশটির আগের প্রধানমন্ত্রীরা খুব কমই বলেছেন। সব থেকে বড় যে প্রাপ্যটা তা হচ্ছে, পাকিস্তানে শিক্ষা সিলেবাসে কুরআন শরীফ বাধ্যতামূলক এই মর্মে আইন পাশ করারও অঙ্গীকার করেন। পাকিস্তানের সাবেক এ ক্রিকেটার আরো বলেন, ‘আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবো। এতে হয় দেশ বাঁচবে, না হয় দুর্নীতিগ্রস্ত লোকেরা বাঁচবে’।
প্রশংসা পাওয়ার মতো তিনি রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, দলীয় নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রথম শ্রেণির বিমানের ব্যয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বিমান বন্দরগুলিতে কোনো ভআইপি পাস থাকবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। সরকারী শীর্ষ কর্মকর্তারা পর্যন্ত সেখানে কোনো বিশেষ প্রটোকল পাবেন না। বিমান বন্দরে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সমান মর্যাদা দেওয়া হবে বলে ও নির্দেশ দিয়েছেন। দেশটির নয়া প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। দেশটির তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, পাকিস্তানের বিমান বন্দরগুলোতে সবার প্রতি সমান আচরণ করা হবে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ইমরান খান সরকারের বিশেষ ব্যক্তি হয়ে ও সব বিমান বন্দরে ভিআইপি প্রটোকল থেকে দূরে থাকবেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অথবা দেশের ভেতরে সফরের জন্যও বিশেষ বিমান ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সদ্য ক্ষমতা গ্রহণ করা প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান। বিজনেস ক্লাসেই তিনি সব সফর সম্পন্ন করবেন বলে জানিয়েছেন।
এমনকি সেনাপ্রধানের ও বিমানের প্রথম শ্রেণিতে ভ্রমণের অনুমতি নেই এবং তিনি সবসময় বিজনেস ক্লাসেই ভ্রমণ করবেন। তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিমানে ভ্রমণের জন্য সরকারি তহবিলের এই ব্যয় বন্ধের সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ মাত্র এক বছরে বিমান ভ্রমণে সরকারি তহবিল থেকে ৫১ বিলিয়ন রূপি ব্যয় করেছিলেন! শুনলে আশ্চর্য হবেন, নওয়াজ শরীফের শপথানুষ্ঠানে করা খরচের ২০০ ভাগের এক ভাগ খরচ করে শপথ অনুষ্ঠান শেষ করেছেন ইমরান খান। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের শপথানুষ্ঠানে ব্যয় হয়েছিল ৯২ লাখ রুপি, ২০০৮ সালে জারদারির অনুষ্ঠানের ব্যয় ছিল ৭৬ লাখ রুপি। সেখানে নয়া প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এর শপথানুষ্ঠান খরচ হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার রুপি! কি অবাক হচ্ছেন?!
গত ২৫ জুলাইয়ের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ইমরান খান প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রাসাদসম প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ব্যবহার করবেন না বলে ঘোষণা দেন। তবে ওই বাসভবনে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিবের জন্য ছোট একটি অংশ রয়েছে; যেখানে তিনি থাকবেন বলে জানান। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য বিশাল ইউনিট কমিয়ে আনার ঘোষণাও দিয়েছেন সাবেক এই ক্রিকেট তারকা। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি মাত্র দুটি গাড়ি ব্যবহার করবেন এবং দু’জন গৃহকর্মী রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর বাসবভনে থাকা ৮০টি গাড়ির মধ্যে দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি রেখে বাকি ৩৬টি বুলেটপ্রুফ গাড়িসহ সবগুলো নিলামে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। যেখানে তার ব্যবহারের জন্য এতগুলো বুলেটপ্রুফ গাড়ী ও ৫২৪ জন সেবক ছিলো সেখানে মাত্র হাতে গোনা ২ টি গাড়ী আর দু’জন গৃহকর্মী! এত বড় বিশাল একটা দেশে মাত্র ২১ সদস্যের মন্ত্রসভা গঠন করেই দেশটির জনগণের পক্ষে এতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছেন মুসলিমদের বীর সেনাপতি জনাব ইমরাম খান। বাংলাদেশের কোনো সরকার প্রধানের কি রয়েছে এমন হিম্মত? তবুও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীদের চুলকানি কমে না!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৩