গত মাস খানেক ধরে সপ্তাহান্তের অবকাশ আর সারা সপ্তাহের কাজের চাপ থেকে নিজেকে মুক্তির যাবতীয় সুযোগ ও ইচ্ছা জলাঞ্জলি দিয়ে MCSE'র Exam 246 আর 247 যাতে আমাকে গলদঘর্ম না করতে পারে তার যথাসম্ভব প্রস্তুতি নিচ্ছি। রবিবারের ক্লাসের পড়া ঠিকঠাক করে যখন ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো তখন রাত পৌনে তিনটা। সাহ্রির জন্য মোবাইলে এলার্ম সেট ছিল ৩:১৫ তে। আধাঘন্টা ঘুমিয়ে আবার ঠিক সময়ে উঠতে পারবো এই আশা দুরাশা মেনে নিয়ে জেগে থাকাই স্থির করলাম। কিন্তু অস্থির হবার মুহূর্ত এলো যখন টুইটার ফিডে চোখ বোলালাম। অরল্যান্ডো'র পালস নাইট ক্লাবের বিভীষিকা ততক্ষনে টুইটারে #Orlando #PulseShooting #PulseNightClub সহ আরও নতুন হ্যাশের জন্ম দিচ্ছে। ঘটনার ভয়াবহতা আমাকে খানিকের জন্য হলেও হতবিহ্বল করল। আবার ইসলামের নামে সহিংসতা! ওমার সেদ্দিকি মাতিন নামের আমেরিকায় জন্ম নেয়া আফঘানি মুসলিম যুবক AR-15 অ্যাসল্ট রাইফেল দিয়ে রক্তের নহর বইয়ে দিলো নাইট ক্লাবটিতে। পঞ্চাশ জনকে হত্যার পাশাপাশি আহত করলো আরও অর্ধশতাধিক।
কোনোমতে নাকে মুখে কিছু খাবার চালান দিয়ে সাহ্রি সারলাম। ফাজরের নামায শেষে ঘন্টা তিনেক ঘুমানো বাধ্যতামুলক মেনে নিয়ে বিছানায় আত্মসমর্পন করলাম। সকাল ১০টায় মিড-ম্যানহাট্ন লাইব্রেরি পৌছতে হবে এই ভেবে সাবওয়েতে চাপলাম। গ্র্যান্ড সেন্ট্রালে নেমে পুয়ের্তো রিকান প্যারেডের আয়োজন দেখে মন থেকে অরল্যান্ডোর ঘটনা খানিক আড়াল হল। লাঞ্চ ব্রেকে 'উত্তাল পুয়ের্টো রিকান প্যারেড আর অধমের ম্যাড়ম্যাড়ে রবিবার' [link|http://www.somewhereinblog.net/blog/GuardedTablet/30139372] লিখতে গিয়ে ফিরে আসলো অরল্যান্ডো। একজন মুসলমান হিসেবে এই নৃশংসতার কোনো ব্যাখ্যা আমার জানা নেই। বাসায় যখন ফিরলাম ততক্ষনে সোশাম মিডিয়ায় বন্ধুবান্ধব আর পরিচিতজনদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনটা অন্যরকম খারাপ হলো। গেলো বছর শার্লি এবদো'র ঘটনার পর্যায়ক্রমিক ধারাবাহিকতার আশংকা আমার মন খারাপের কারন। তখন আমার প্রতিক্রিয়া লিখেছিলাম প্রেক্ষিত: "Je suis Charlie", আমি এবং আমরা - ক্লান্ত মনের অসতর্ক মতামত [link|http://www.somewhereinblog.net/blog/GuardedTablet/30005886] পোস্টে। কিন্তু আমাদের তথাকথিত আধুনিক মানসিকতার চরম প্রকাশের পুনরাবৃত্তি দেখব তা কখনও চাইনি। এর মাঝে সামাজিক যোগাযোগের কোনো এক প্রান্তীয় সম্পর্ক যখন তার প্রফাইল পিকচারে গে দের সাত রঙা পতাকা সন্নিবেশনের মাধ্যমে অরল্যান্ডো'র ঘটনার প্রতিবাদে তার সহানুভুতি ও একাত্নতা জানান দিলো তখন নিজেকে খানিকের জন্য হলেও এমন আধুনিকতার বিরুদ্ধবাদী করে তুললো। আমার ঐ সামাজিক মাধ্যমিক বন্ধুজনের মতো যাদের আবেগের ডায়রিয়া ক্রনিক হতে যাচ্ছে তাদের জন্য এবং অন্য যারা তাদের মতো হয়ে খ্যাতি লাভ করতে চান তাদের জন্য আমার অল্প বুদ্ধির পরামর্শ :
>> যত শীঘ্র সম্ভব নিজেদের প্রফাইলে গে সম্পর্কীয় ছবি ও স্ট্যাটাস দিন।
>> অরল্যান্ডো'র ঘটনার রেফারেন্স দিয়ে ইসলাম ধর্মের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করুন।
>> যারা ব্লগে লিখেন বা ঘোরাঘুরি করেন তারা সমকামিতার প্রাকৃতিক স্বরূপ বিশ্লেষন করে কিছু হিট পোষ্ট প্রসব করে ব্লগ সয়লাব করে দিন।
>> যারা শার্লি এবদো'র ঘটনার মতো তাদের প্রতিবাদ শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান তারা ফ্রেঞ্চে লিখুন 'Je suis Gai' ('Je suis Charlie'র মতো) যার মানে দাড়াবে 'আমিই সমকামি'।
চিন্তা করে দেখুন রমজানের এই কঠিন সিয়াম সাধনায় আপনার এই সময়োপযোগী প্রতিবাদ কত মনে উত্তরাধুনিক প্রশান্তি এনে দেবে। এমন রহমতের সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারাবেন না। এমন সুযোগ বার বার আসে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:০০