চলছে ওয়াজের মওসুম। চারপাশে ওয়াজ মাহফিলের ছড়াছড়ি। অমুক হুজুর, তমুক হুজুর, ফেসবুক হুজুর, আন্তর্জাতিক হুজুরদের দৌরাত্মে টেকা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন কাজের পর রাতে শান্তিতে ঘুমানোর উপায় নেই। চারপাশে উচ্চশব্দের ঠেলায় কান ঝালাপালা। কি করবেন বলুন। কার কাছে নালিশ জানাবেন? ওয়াজ মাহফিলের বিরুদ্ধে কিছু বললে তো আবার আমি নাস্তিক উপাধি পাবো। আমার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়বে। কেন ভাই, আপনি ওয়াজ মাহফিল করবেন ভালো কথা মাইক ছাড়া করা যায় না? যারা মাহফিল শোনার তারা তো সেই মাহফিল স্থলে গিয়েই শুনতে পারবে। দুই-তিন কিলোমিটার পর্যন্ত লোকের ঘুম নষ্ট করার কি কোন দরকার আছে? শুধু কি মানুষের ঘুমের সমস্যা! এখন চলছে এইচএসসি পরীক্ষা, থাকতে পারে কোন মুমূর্ষূ রোগী অথবা শিশু। তাছাড়া এমন কোন বিধান কি আছে যে, মাইক দিয়ে কিংবা অন্যের কষ্টের কারন হয় এমন ভাবে ইসলাম প্রচার করার?
এখনকার মাহফিলগুলোতে কি হয় আমরা সবাই জানি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাহফিলের উদ্দেশ্য থাকে মসজিদ-মাদ্রাসা কিংবা গোরস্থানের উন্নয়ন কল্পে। আসল উদ্দেশ্য থাকে তহবিল বাড়ানো। মানুষের হেদায়াত করার কোন উদ্দেশ্য থাকে কিনা আমার জানা নেই। তাই যদি থাকতো তাহলে বক্তা একটা কথা বলে শ্রুতাদেরকেই উদ্দেশ্য করে বলতেন না যে, ঠিক কিনা বলেন! আরো জোড়ে বলেন ঠিক কিনা!
মাহফিল করবেন ভালো কথা করুন। এ উপলক্ষে চাঁদা কেন তুলতে হবে? রাস্তার গাড়ি থামিয়ে টাকা তুলে সেই টাকা দিয়ে বক্তা দাওয়াত করে ইসলাম প্রচারের এমন আজগুবি নিয়ম এই দেশে কবে থেকে চালু হলো আমার জানা নেই। তবে এই নিয়মের আমি তীব্র বিরোধী। যেখানে ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে অন্যের কাছে হাত না পাতার শিক্ষা, সেখানে চাঁদা উত্তোলন করা এবং সেই টাকায় মাহফিলের আয়োজন করা কিভাবে ইসলাম সম্মত হতে পারে তা আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।
মাহফিলের আরেক অত্যাচারের নাম দান করা। মাহফিল শেষে মাইকে ঘোষণা আসে অমুকে ১০ হাজার বলুন মারহাবা। অমুকে ২০ হাজার .... বলুন মারহাবা। চেয়ারম্যান সাব ১ লাখ জোরে জোরে বলুন মারহাবা! এমপি সাব ২ লাখ দিলে তো তাকে বক্তা সাহেব একেবারে জান্নাতের দরজাতেই রেখে আসে পারলে। আচ্ছা বলুন তো একজন চেয়ারম্যানের বেতন কত! একজন এমপি বা চেয়ারম্যান যে টাকা দিলো সে কিভাবে দিলো? কার টাকা মেরে মাহফিলে কিংবা মসজিদে দান করলো? এমপি সাহেব-মন্ত্রি সাহেব যে টাকা দান করলেন সেই টাকা সাধারন জনগনের জন্য বানানো রাস্তার কিংবা কোন প্রকল্পের মেরে দেয়া টাকা কি নয়? এই সব টাকা খেয়ে হুজুর সাহেবরা যদি দুর্নীতির বয়ান করে তা কতটুকু ফলপ্রসু হবে?
যে ব্যক্তি দান করলো ১০/২০ হাজার টাকা তাকে আপনি মারহাবা দিলেন অথচ ১০০/২০০ টাকা দানকরা গরীব রিকশাওয়ালার টাকার দিকে ফিরেও তাকালেন না। ছোট দান বলে মাইকে ঘোষনাও করলেন না। বাহ বাহ বাহ। কি দারুণ আপনাদের ইসলাম প্রচারের নমুনা!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৩৪