আমি যখন ৮ম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমাদের ক্লাশে ৪ জন হেফজ পড়ুয়া ছাত্র ভর্তি হয়। ক্লাস ওয়ান থেকে সেভেন পর্যন্ত কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাদের ছিলনা। ফলাফল, কোন মতে এসএসসি পাশ করে তারা। সেই চারজন তাদের হেফজ মাদরাসার জীবন নিয়ে নানান গল্প করতো আমাদের সাথে। সেই গল্প-কথার একটা কমন বিষয় থাকতো কে কি পরিমান পিটুনি খেয়েছে তা নিয়ে। তাদের ভাষ্যমতে, চুন থেকে পান খসলেই মাদরাসার হুজুররা পেটাতো। পড়া না শিখলে তো পিটুনি মাস্ট। শারিরিক নির্যাতন করতে করতে লাঠি ভেঙে ফেলারও নজির আছে। আর মানসিক নির্যাতন তো আছেই!
একজন ছাত্রকে হেফজ মাদরাসায় দেয়া হয় ৫/৬ বছরে। যে বয়সে আল্লাহ নামাজই ফরজ করেননি সেই বয়সে তাদেরকে রাত ৪ টায় উঠে পড়তে বসতে হয়। একজন বাচ্চার মানসিক বিকাশের কোন সুযোগই থাকে না অধিকাংশ হেফজ মাদরাসায়। যে বয়সে একজন বাচ্চা তার মায়ের আদরে থাকার কথা, যে বয়সে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কথা সেই বয়সে হাফেজ হবার জন্য বোর্ডিং-এ পাঠানো অমানবিক বলে আমি মনে করি।
অনেক মা-বাবা ছেলে হবার আগেই মানত করে রাখে সন্তানকে হাফেজ বানাবে। এমন মানসিকতা তৈরীর পেছনে আবার মাহফিলে হুজুরদের মুখরোচক সওয়াবের বয়ান অনেকাংশেই দায়ী। পিতা-মাতা মনে করে ছেলে হাফেজ বানালে জান্নাত কনফার্ম।
এইসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত তরুণ বড় হয়ে এমন প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক হন। তাদের না থাকে কোন প্রশিক্ষণ না থাকে সুস্থ মানসিকতা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মত করে এই সব মাদ্রাসার শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা জরুরী। কারিগরী শিক্ষাবিহীন একটা বড় অংশ বেড়ে উঠছে আমাদের আশেপাশে। যারা কেবল মসজিদের ইমাম আর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করা ছাড়া অন্য কোন স্বপ্ন দেখেন না।
একটা দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে এই যে বিরাট একটা প্রজন্ম নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেড়ে উঠছে এদের কে যথাযথ ভাবে কাজে লাগানো প্রয়োজন। দরকার সময়োপযুগী প্রশিক্ষণ। ধর্মের কাজ করতে গিয়ে যদি হাত পাততে হয় অসাধু লোকদের কাজে, ঘুষখোর-সুদখোরদের দান নিয়েই যদি প্রতিষ্ঠান চালাতে হয়, তাহলে আমি বলবো এই সব প্রতিষ্ঠানের হুজুররা মুনাফেক! তারা মুখে ধর্মের কথা ঠিকই বলে কিন্তু কাজে তার বাস্তবায়ন নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৪:১২