লাল-সবুজের পতাকার ছোট্ট এই দেশে সমস্যার অন্ত নেই। চোখ বন্ধ করে হাজারটা সমস্যা বলে দেয়া যায়। তবে গুরুতর সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বর্জ্য অবস্থাপনা তথা পরিবেশ দূষণ। আইসিডিডিআরবি'র একটি গবেষণায় দেখা গেছে দেশে ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশুর শরীরে উচ্চমাত্রার সীসার উপস্থিতি রয়েছে ( ১০ মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটার)। যদিও যক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান সিডিসি'র তথ্য মতে সীসার সর্বোচ্চ গ্রহনযোগ্য মাত্রা ৩.৫ মাইক্রোগ্রাম। সীসাদূষণ কবলিত জেলাগুলোর মধ্যে টাঙ্গাইল, খুলনা, সিলেট, পটুয়াখালী জেলার শিশুদের সীসা দ্বারা দূষণের হার সবচেয়ে বেশি। ব্যাটারী চালিত অটো রিকশার আধিক্য এবং মেয়াদ শেষে ফেলে দেয়া ব্যাটারী অপরিকল্পতিভাবে রিসাইক্লিং করার ফলে পরিবেশে সীসা ছড়িয়ে পরে। সীসা একটি মারাত্মক নিউরোটক্সিন যা শিশুদের ব্রেইন ডেভেলপমেন্টে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
এ তো গেলো সীসা দূষণের কথা। আমরা চারপাশে তাকালে দেখতে পাই ময়লার ভাগার। কোন সন্দেহ নেই যে এই বর্জ্য আমরাই তৈরী করছি। কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের প্রচারণা নেই বললেই চলে। ছোট বড় সব শহরের বর্জ্য খোলা ফেলে রাখা হয় মহাসড়কের আশেপাশে। খোদ রাজধানীর কিছু এলাকার বর্জ্য সেকেন্ডারী ট্র্যান্সফার প্লান্ট যেন আরো দূষিত করছে চারপাশের এলাকাকে। দেশের সব শিল্পকারখানার বর্জ্য ইটিপির মাধ্যমে পরিশোধন করে পরিবেশে ছাড়ার কথা থাকলেও বাস্তবে সেটা করা হয় না। এসব কারখান তদারকির দায়িত্বে থাকা পরিবেশ অধিদপ্তর একটি নামকাওয়াস্ত সংস্থা। যারা তথাকথিত দুই চারটা মামলা আর জরিমানা আদায় করেই তাদের কর্বত্য পালন শেষ করে। ফলাফল দেশের সব নদীর পানি কালো কুচকুচে। ফসলী জমিগুলো ময়লা পানিতে তলিয়ে ফসল ফলানোর অনুপযোগী। সব দেখেও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো চোখে কালো চশমা পড়ে হাটে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুস্ঠুভাবে করতে হলে একদম গোড়া থেকে সমাধান করতে হবে। পচনশীল এবং অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করতে হবে। অপচনশীল বর্জ্য রিসাইক্লিং করতে হবে। পচনশীল বর্জ্য থেকে ব্যবহার উপযোগী জৈবসার উৎপাদন করার প্রকল্প হাতে নিতে হবে। তরল বর্জ্য অবশ্যই ইটিপির মাধ্যমে পরিশোধন করে বাইরে ফেলতে হবে। ছোট বড় সব শহরে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে অতি সম্ভাবনাময় চামড়াশিল্প মরতে বসেছে। অদূর ভবিষ্যতে আরএমজি শিল্পও গলারকাটা হয়ে দেখা দিবে।
নদী বাঁচাও আন্দোলন না করে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন আন্দোলন করা বেশি জরুরী। একটু বৃষ্টিতেই ময়লাপানিতে রাস্তায় হাটার উপায় থাকেনা। সড়কে চলতে গেলে নাক ধরে হাঁটতে হয়। প্লীজ কিছু একটা করুন। উন্নয়নের ফাঁকাবুলি নয় আমাদের স্বস্তি দিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১০:৪০