
বাংলাদেশে শীতকাল হলো মাহফিল ব্যবসার অন্যতম প্রধান মৌসুম। মাহফিলকে আমি ব্যবসা বলি এই জন্য যে, এই অনুষ্ঠান এখন আর মানুষের ঈমান উন্নয়ন কল্পে করা হয় না। আয়োজনটা থাকে মূলত: মসজিদ, মাদ্রাসা কিংবা কোন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কল্পে। পোস্টারে উল্লেখ করা হয় উমুক মাদ্রাসা কিংবা উমুক মসজিদের উন্নয়ন কল্পে ওয়াজ মাহফিল। মাহফিল শেষে মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়ন ঠিকই তবে অপরিবর্তিত থাকে শুধু মানুষের ঈমান-আমল।
আমাদের এলাকায় নভেম্বর থেকে শুরু করে একদম ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত প্রায় প্রতি রাতেই এই জলসা বসে। শেষ হয় গভীর রাত্রী পর্যন্ত। মাহফিলগুলোতে যদিও নামাজ-রোজা আর ইসলামের হুকুম আহকাম বিষয়ে আলোচনা করা হয় কিন্তু এখানে উপস্থিত অধিকাংশই ফজর পর্যন্তও আদায় করেন না।
আমি যে প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি (দাখিল) পড়েছি সেখানেও প্রতিবছর ওয়াজ মাহফিল হয়। মাহফিল শেষে সকাল বেলা খাতা-কলম নিয়ে হিসেব করা হয় আয়-ব্যয় কত হলো সে সব নিয়ে। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সে সময় চাল কালেকশন করতাম মাহফিলের জন্য। রাস্তায় ফিতা ধরে গাড়ি থামিয়েও কালেকশন করতাম। এখনো চলে এসব। মাহফিল শেষে লাভ দেখতাম ৫০/৬০ হাজার। কখনো বা এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
সভার প্রধান বক্তার উপর থাকে কালেক্শনের ওয়াজ করার দায়িত্ব। ফলে তিনি দান-খয়রাত কেন্দ্রিক আলোচনায় বেশি করেন। যে বেশি টাকা দেয় তার নামে "মারহাবা মারহাবা" বলে আওয়াজ দেন বক্তা। একজন দিনমজুর যে ১০০ টাকা দান করলেন তার টাকার এনাউন্সমেন্ট আর হয় না।
মাহফিলের মধ্যে আর একটি ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে এক আলেম আরেক আলেমকে দেখতে পারে না। একেকজন একেক ভাবে মানুষকে ইসলামের কথা শোনায় ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। কেউ বলেন এইটা ঠিক, এইটা মানলে নিশ্চিত জান্নাতি। আবার কেউবা আগের বক্তাকে তু্চছ তাচ্ছিল্য করতে কম ছাড়ে না। অন্যদিকে মাহফিলে অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি, গানের ব্যঙ্গ উপস্থাপনা হাস্য কৌতুক তো আছেই। কোন কোন বক্তা মাত্রা অতিক্রম করে ফেলে। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌছে। ইউটিউব খুললেই বছরের সেরা হাসির ওয়াজ, নতুন হাসির ওয়াজ, ওয়াজ শুনলে হাসতে হাসতে লুঙ্গি খুলে যাবে টাইপ টাইটেলে ওয়াজের অভাব নাই।
এখন চলছে এইচএসসি পরীক্ষা। তথাপি গভীর রাত অবদি মাইক লাগিয়ে মাহফিল চালানো হবে। এলাকায় অসুস্থ মানুষ থাকতে পারে কিন্তু তাদের কোন কিছুতেই যায় আসে না। এসব বিষয়ে বাঁধা দিলে কিংবা মাইক ছাড়া মাহফিল পরিচালনা করতে বললে হতে হবে ইসলাম বিরোধী। মাহফিলের পোস্টারে দেয়াল ছেয়ে ফেলা হবে, দেয়াল নষ্ট হবে কিন্তু কিছু বলা যাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


