somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেহেরজান একজন বীরাঙ্গনা

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-হ সাব এইডাই মেহেরজানগো বাড়ি, বহুত খুব সুরুত লাড়কি।
বাসার ভিতরে মেহেরজানের খুব ভয় হলো, তাদের বাসার দরজায় লাথির আওয়াজ, হঠাৎ দরজা খুলে কয়েকজন লুঙ্গি পরা মানুষ! ক্ষীণ দেহে মেহেরজান চেষ্টা করলো বাধা দিতে না সে পারলো না, খাকি কাপড় পরিধান করা কিছু দানব আকৃতির মানুষ তাকে চুলের মুঠি ধরে নিয়ে যাচ্ছে,।
মেহেরজানের সামনে ব্রাশফায়ার করা হলো তার মাকে । আর্তনাধ করতেই মেহেরজানকে বলা হলো 'চোপ খানকি '।
হঠাৎ এই কথায় মেহেরজান নিজের মনের ধাক্কায় বললো, "আমি তো ভদ্রঘরের মেয়ে, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। ঐ সম্বোধন করলো কি করে?

এক হাত থেকে অন্য হাত এবং অন্যে জায়গা মাংশপিন্ড হয়ে ঘুরতে থাকে নরপশু পাকিদের ক্যান্টনমেন্টে। মেহেরজান মনে ভাবতো, কে তার বাবা, কে তার ভাই কিংবা সেই বা কে! মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পরা এক বাচ্চা মেয়ে এক সময় নিজেকে অশরীরি কঙ্কাল মনে করা শুরু করলো।
কিন্তু এই দেহের অব্যহতি নেই, খেলার পুতুল ছাড়া সে আর কিছু না সে। নিজ প্রয়োজনে পাকিরা ২-৩ মাস পর গোসল করার জন্য তাকে হুকুম দিতো। কিন্তু না শাড়ি কিংবা সেলোয়ার কামিজ তাদের দিতো না । গোসল করতে হবে দরজা খোলে। শাড়ি পরতে দেওয়া যাবে না, কারণ ইতিমধ্যে অনেক রাণি জীবনের মুক্তি পেয়ে শাড়ির আড় প্যাঁচের মাধ্যমে।।।

হে আল্লাহ! এই তোমার দুনিয়া ! মাঝে মাঝে মেহেরজান ভাবতো দেশটা হইতো স্বাধীন হবে ,সে ফিরে যাবে তার পরিবারের কাছে। কিন্তু সময় আর যাই না তার...।
প্রত্যেক রাত্রি যেতো পশুদের হত্যাচারে, শেষ রাত্রি যেতো কষ্ট ও দেহের যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে।
তার সাথে অন্যান্য বন্দীদের বয়স ছিলো ১৪- ৪০ কিংবা তার চেয়ে যৌবনোত্তীর্ণ মহিলা!!
পাকিস্তানীরা বলেছিলো ইসলাম রক্ষার জন্য তারা লড়াই করছে, এই হলো তাদের লড়াই!!
সভ্যতার আলোকিত পুষ্প সেদিন এই ভয়াল দশা দেখে হইতো নুয়ে পরেছিলো।

ভাত তারা দেখে নি গত কয়েকটা মাস , রুটির মতো দেখতে পোড়া এক ধরণের খাবার দেওয়া হতো, খাবার দেওয়ার সময় জমাদারনি বলতো কার কি জাত ,ধর্ম! তাই মাংশ দেওয়া হতো না।
হাইরে পাকি, তোরা আবার ধর্মের ব্যাখ্যা বুঝতি! ভেবে কূল পাই না।
আজকাল, মেহেরজানদের ক্যাম্পের বাইরে গোলাগুলি শোনা যায়, জমাদারনি বললো, জায়গাটা ময়মনসিংহ ।পাশে কমলগঞ্জে মুক্তিদের সাথে পাকিদের যুদ্ধ হচ্ছে। মেহেরজান ভাবলো, হ্যাঁ এবার শুরু হয়েছে তাহলে যুদ্ধ আমাদের বাঁচার যুদ্ধ স্বাধীনবাংলার যুদ্ধ।

একদিন জিপে করে মেহেরজানদের নিয়ে যাওয়া হলো, এক অদ্ভুত এক জায়গায় যেখানে তাঁবু আছে, কাঁচাপাকা টয়লেট কিন্তু এবার বেড়ার ফাঁক দিয়ে আলো দেখা যায়, অদ্ভুত অনুভূতি যে আলো তারা দেখে নি অনেক মাস যাবত। মাসের হিসেব নেই তবে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে।

পশুদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে ভাব গভীর, ভয় ভয় এক ব্যাপার। গোলাগুলি বন্ধ। তাইলে কি কিছু হয়েছে? না, ভারতীয়রা বিমান হামলা করছে। এক বুড়ো পাঠান সেনাকে, মেহেরজান জিজ্ঞাস করলো কি হয়েছে, বুড়ো পাঠান বললো যুদ্ধ শেষ হয়ে যাচ্ছে।বুড়ো পাঠান বললো পিয়ারি তোমার দেশ স্বাধীন হবে আর তুমি এক লাড়কা দেখা বিয়া করবে। মুক্তিলোক আমাগোকে ছাড়বে না।
জিদ করে, মেহেরজান বললো না আমি তোমারে বিয়ে করবো, আমার সমাজ আমাকে মেনে নিবে না।

অবাক হচ্ছেন তাই না! পশুদের সাথে মেহেরজানের সংলাপ শুনে, হ্যা আমিও অবাক হয়েছি, সেদিন আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম ঠিকই কিন্তু নিজেদের মানুষিকতার বিরুদ্ধে আমরা কি সেদিন যুদ্ধ করেছিলাম!
অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম তাঁর বই "আমি একজন বীরাঙ্গনা বলছি" খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। কে আমাদের বীরাঙ্গনা, তারা চেয়েছিলো কি?
কারণ আমি জানি এরা আমাদের নারী মুক্তিযোদ্ধা ।
বঙ্গবন্ধু এই নির্যাতিত নারীদের ' বীরাঙ্গনা ' নাম দিয়েছেন । আমাদের সমাজে যখন এই মেয়েদেরকে নিয়ে বাজে মন্তব্য ছড়াচ্ছিলো তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বীরাঙ্গনাদের পিতার নামের পাশে আমার নাম লিখে দাও। মুজিব তো মরে গেছে!
আর আমরা তারপর কি করলাম! সবই ভুলে গেলাম। নিজেদের মানুষিকতা পশু থেকে আরো পশু বানিয়েছি। খবরে আজকে দেখলাম চট্টগ্রামে ক্লাস ' ফোরের' এক বাচ্চা মেয়ে স্কুলে নির্মানাধিন ভবনের শ্রমিক দ্বারা অশোভন আচরণে শিকার হয়েছে।
নতুন কিছু ভাবছি না, তবে একটা হতাশা বারবার কাজ করছে 'মুক্তিযুদ্ধের বাংলা ' বলি কিন্তু আসল মুক্তির শিক্ষা কেউই পেলাম না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×