১৯৭১ সনের মহান মুক্তিযুদ্ধের যারা বিরোধিতা করে হানাদার বাহিনীর পক্ষাবলম্বন করেছিল তাদের শুধুমাত্র পাকিস্তানের সংহতি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাই একমাত্র লক্ষ্য ছিল না। সে কারণে পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার পর বাংলাদেশের সৃষ্টি হলেও তারা তাদের লক্ষ্য হতে সরে দাঁড়ায়নি। পাকিস্তান তারা অখণ্ড রাখতে চেয়েছিল এ কারণে যে তাহলেই তাদের সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি ও সংস্কৃতি সক্রিয় থাকবে ও সেই ধারায় রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালিত হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে মূল্যবোধ সমূহের সৃষ্টি হয়েছিল তারা ছিল মূলত তারই বিরোধী, তাই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তারা তাদের রাজনীতির ধারাবাহিকতায় কোনো পরিবর্তন আনেনি। স্বাধীন বাংলাদেশকে রাজনৈতিক অর্থে আবার পাকিস্তানে রূপান্তরিত করা সম্ভব নয় জেনেই তারা বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধসমূহ ধ্বংস করে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানি ধারায়ই ফিরিয়ে নিতে চেয়েছে। জনগণ সাথে না থাকায় তারা স্বৈরশাসকদের উপর ভর করে। ২৩ বছর সংগ্রামের পর স্বাধীন করা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বাঙালি জাতির জনককে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতা অর্জনকারী সর্ববৃহৎ দলকে ক্ষমতাচ্যুত করে তারা মূলত ১৯৭১ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করে এবং প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমেই তা করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে যে ধরনের কাল্পনিক কাহিনী বলা হয়ে থাক না কেন আসলে ঐ হত্যাকাণ্ড সত্যিকার অর্থেই ছিল একটা প্রতিবিপ্লব এবং সে কারণেই একাত্তরের বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধসমূহ ১৯৭৫ এর প্রতিবিপ্লবের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা অধিষ্ঠিত হন তারা ধ্বংস করতে উদ্যত হয়। তাদের লক্ষ্য যদি শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাই হতো তাহলে তাদের সংবিধানের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না।
আসলে তারা একটা প্রতিবিপ্লব সফল করে প্রতিক্রিয়ার ধারায় দেশকে পরিচালিত করতে চেয়েছিল বলেই ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতাকে বর্জন করে তদস্থলে ধর্ম সাপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিষ্ঠিত করে। জেনারেল জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মুক্তিযুদ্ধের অর্জনসমূহ ধ্বংস করতে দ্বিধাবোধ করেননি। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যা নাকি সুদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে গড়ে উঠে তার সাথে জেনারেল জিয়ার কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকলে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিনি সোয়াত জাহাজ থেকে পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র খালাস করতে অগ্রসর হতেন না। তাই জিয়াকে একজন স্বাধীনতার সংগ্রামী বলে অভিহিত করা গেলেও মুক্তিযোদ্ধা বলে অভিহিত করা যায় না। এমন কি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যখন অনেক বাঙালি সামরিক অফিসার জড়িয়ে পড়েন তখন জেনারেল জিয়ার কোথাও কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশে যে স্বায়ত্বশাসন, স্বাধীনতার আন্দোলন, ৬ দফা ১১ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, তার কোথায়ও জেনারেল জিয়ার সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এ কারণে তার পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি। তিনি তা হওয়ার চেষ্টাও করেননি। স্বাধীনতার যুদ্ধে তিনি বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হন। দেশ ও জাতির স্বাধীনতা অর্জনের মূল লক্ষ্যের সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। এ কারণেই ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধই জিয়া ও তার অনুসারীরা যথাযথ মূল্যায়ন করতে আগ্রহী। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। অতীতকে নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে তাদের অনাগ্রহ। তারা স্বাধীন বাংলাদেশকে হঠাৎ করে পাওয়া একটা দেশ হিসেবে গণ্য করেছেন যার কোনো অতীত ঐতিহ্য নেই। এজন্যই তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদ পরিবর্জন করতে দ্বিধাবোধ করেননি। এমন কি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা পর্যন্ত পাল্টে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করেছেন।
১৯৭১-এ পরাজিত হওয়ায় গোলাম আজম, জামাত প্রধান যিনি হানাদার বাহিনীর ১ নম্বর দোসর হয়ে কাজ করেছিলেন তিনি তার দেশ পাকিস্তানে চলে যান প্রায় সদলবলে এবং
পাকিস্তান থেকেই বাংলাদেশের বিরোধিতা অব্যাহত রাখেন। মুসলিম উম্মার কাছে বাংলাদেশ যাতে স্বীকৃতি না পায় সে চেষ্টা চালাতে থাকেন। সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেই তিনি দেশে ফিরে তার রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে থাকেন। এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে বাংলাদেশে প্রতিবিপ্লব ঘটাতে চেষ্টা করেন। তাদের চেষ্টা সফল হওয়ায় ঐ প্রতিবিপ্লবের মূল নায়ক জেনারেল জিয়াই তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে সর্বতোভাবে পুনর্বাসিত করেন। মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল জিয়া কেন গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেন এ প্রশ্নের উত্তরই বলে দেয় যে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের সাথে যোগসাজস করেই জেনারেল জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করান এবং সে কাজে হয়তো গোলাম আজম দেশের বাইরে থেকে তাকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করায় প্রতিদান হিসেবে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে জামায়াতের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। আসলে জিয়া বাংলাদেশের সংবিধানের যেসব পরিবর্তন সাধন করেন তা জামাতকে তুষ্ট করবার জন্যই করা হয়েছিল। যাদের আদর্শ বাস্তবায়ন করবার জন্য এটা করা হয়েছিল, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ তাদেরই রাজনৈতিক দর্শন। কাদের তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য করলেন, দল গঠন করে তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত করলেন, সংসদে নির্বাচিত করে আনলেন। সর্বশেষ পঁচাত্তরের খুনিচক্রকেও পুনর্বাসিত করে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা হল। বিদেশের দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হল। খুনিদের বিচার ইনডেমনিটির মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হল। কারণ একটাই তিনি প্রতিবিপ্লবের নেতৃত্বে ছিলেন। হত্যাকারীরা যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা করে, তখন তাকেও অবহিত করা হয়। তিনি তা বঙ্গবন্ধুর কাছে না বলে হত্যাকাণ্ডকেই সরাসরি প্রশ্রয় দিয়েছেন। ‘গো এ্যাহেড’ বলে আস্বস্ত করেন। তাই ঘটনা প্রবাহই প্রমাণ করে দিয়েছে প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৫ এর প্রতিবিপ্লবের নায়ক কে। হয়তো মোশতাককে তিনি সংশ্লিষ্ট করেছিলেন রাজনৈতিক সমর্থন লাভের জন্য। বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর সমর্থন তার প্রয়োজন ছিল। আর লোভী মোশতাক এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়েছিল তার বিদেশী প্রভুদের পরামর্শ ও নির্দেশ অনুযায়ী। তাই বঙ্গবন্ধু হত্যার কে প্রকৃত খুনি ও কে খুনের সাহায্যকারী তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। হয়তো মোশতাক মূল ব্যক্তি না হয়ে সাহায্যকারী। মোশতাক হয়তো আশ্বাস দিয়েছিলেন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেই তিনি সংসদে ঐ হত্যাকাণ্ডের অনুমোদন করিয়ে নিতে পারবেন। আসলে তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় হত্যা পরিকল্পনাকারীরা বুঝতে সক্ষম হয় যে মোশতাক যে আশ্বাস দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়িত হওয়ার নয়। কেননা মোশতাক দুদুবার সাংসদদের সাথে বসেও ঐ হত্যাকাণ্ডের অনুমোদন করিয়ে নিতে পারেননি। বরঞ্চ সাংসদ সিরাজুল হকের মতো সাংসদরা তাকে খুনি বলে অভিহিত করেন, তার বিচার দাবি করেন। ঠিক তখন এমন একটা অভ্যুত্থান ঘটান হয় যার মাধ্যমে দেশকে আরও অস্থিতিশীল করা যায় এবং সংসদকে বাতিল করে ক্ষমতা সামরিক বাহিনীর কাছে জেনারেল জিয়ার নেতৃত্বে অর্পন করা হয়। জিয়া প্রতিবিপ্লবের প্রধান হিসেবে মোশতাকের স্থলে অধিষ্ঠিত হয়ে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জিয়া হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত একথা যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য অতি সঙ্গোপনে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্নভাবে ঐ হত্যা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা হয়। ১৯৭১ সনে পাকিস্তানিরা পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে না পারলেও ’৭৫-এ স্বাধীন বাংলাদেশে তারা তাকে তার বাড়িতে তার মন্ত্রিসভার সদস্য ও সেনাবাহিনীর কর্মরত জেনারেল দিয়ে হত্যা করাতে সক্ষম হয়।
১৯৭১ সনে পরাজিত হয়ে হানাদার বাহিনী পাকিস্তানে ফিরে যেতে সক্ষম হলেও তাদের দোসর অর্থাৎ জামায়াত, শিবির, রাজাকার, আলবদর, আল শামস স্বাধীন বাংলাদেশে থেকেই তাদের তৎপরতা চালাতে শুরু করে। যেহেতু তখন জামায়াত রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল সে কারণে তারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ অর্থাৎ মসজিদ মাদ্রাসা ভিত্তিক তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে যতো ওয়াজ মাহফিল হয়েছে তার অধিকাংশই ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। ঐ ৩ বছর এদেশে যতো ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়েছে ১০ বছর মিলেও তা হয়নি। জামায়াত বিভিন্ন নামে বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করে তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা চালায়। সরকারের বেশ কিছুটা উদাসীনতার কারণে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ঐ তিন বছরে ধর্মীয় ক্রিয়াকর্মের নামে তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা সফলতার সাথে চালিয়ে যায়। সে সময়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী অনেক মৌলভী মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে সক্ষম হন। এভাবে ধর্মের আবরণে সুকৌশলে জামায়াত তার রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এখন বাংলাদেশে ৪ লক্ষ মসজিদ মাদ্রাসার প্রায় সবকটি তাদের নিয়ন্ত্রণে এবং অনেক প্রতিষ্ঠানে তারা অস্ত্র পরিচালনার পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। মাদ্রাসার নামে জঙ্গিবাদী তৎপরতা চালানো হয়। আর এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার সাথে সাথেই ইসলামের বিরোধিতা বলে অভিহিত করা হয়।
যুদ্ধাপরাধী বলে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে তাদের দালাল আইনে বিচার শুরু করা হয়। কিন্তু জেনারেল জিয়া ক্ষমতাসীন হয়ে বিচারাধীন আসামিদের মুক্ত করে দেন। দালাল আইন প্রত্যাহার করে স্বাধীনতার শত্রুদের মুক্ত করে দেন। বঙ্গবন্ধু যে বিচার শুরু করেছিলেন সে বিচার প্রক্রিয়া জিয়া বন্ধ করে দেন। আর এটা করা হয়েছিল এ কারণে যে রাজনৈতিক শক্তির উপর নির্ভর করে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন বলে স্থির করেছিলেন তাদের সবাই ছিল স্বাধীনতা বিরোধী। স্বাধীনতার সপক্ষের কিছু সুবিধাবাদী ছাড়া কেহই জিয়ার পক্ষাবলম্বন করেনি। জিয়া ভালো করেই জানতেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী কেহই তার সাম্প্রদায়িক ধর্ম সাপেক্ষ রাজনীতিকে সমর্থন করবে না। এ কারণেই তার জন্য জামায়াত পুনর্বাসন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। আর সেই সুবাদে জামাত পাকিস্তান আমলের রাজনীতির ধারা আবার বাংলাদেশে পুনঃপ্রবর্তন করতে সক্ষম হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে সংবিধান রচিত হয় তার প্রাণশক্তি হচ্ছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা। প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদ পরিবর্জন করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে রূপান্তর ঘটানো হয়।
ধর্মনিরপেক্ষতাকে পরিবর্জন করে সংবিধানকে ধর্ম সাপেক্ষ করা হয়। সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেওয়া হয়। সমাজতন্ত্রকে পরিবর্জন করে সামাজিক ন্যায় বিচারের নামে চরম বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়। দেশের ১৫ ভাগ সুবিধাভোগী নাগরিকের হাতে ৮৫ ভাগ সম্পদ রাষ্ট্রীয় আনুকুল্যে তুলে দেওয়া হয়। অথচ মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ছিল শোষণমুক্ত একটা সমাজ বিনির্মাণ। এভাবে প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে সবকিছু বিনষ্ট করে যে বাংলাদেশের জন্ম দেওয়া হল তা পাকিস্তান থেকে খুব দূরত্ব বজায় রাখেনি। অতএব ১৯৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ’৭৫ এ প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা সফলই হয়েছে। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা বেশ কিছু পরিবর্তন করে দেশকে যখন মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনবার চেষ্টা করেন তখনই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রতিক্রিয়াশীল স্বাধীনতা বিরোধী চক্র বেগম জিয়াকে পুনরায় ক্ষমতাসীন করে এবং দেশকে পূর্বের চাইতেও বেশী প্রতিক্রিয়ার ধারায় ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয়। ফলে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক তৎপরতা জঙ্গিবাদে রূপ নেয়। ঐ জঙ্গীবাদ এখনও তৎপর। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন তাদের বিচার শুরু করেছে। তাদের কারও কারও বিচার করে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে। কয়েক শত গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু তাদের জঙ্গিবাদী তৎপরতায় ভাটা পড়েনি। নতুন করে তারা সংগঠিত হচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা বিস্ফোরক ও অস্ত্র নিয়ে ধরা পড়ছে তারা অধিকাংশ মাদ্রাসার ছাত্র এবং জামায়াতের প্রাক্তন কর্মী বা সদস্য। বিভিন্ন নামে তারা আত্মপ্রকাশ করছে। তারা মসজিদে বোমা মারতে দ্বিধাবোধ করে না। শোনা যায় ইতিপূর্বেই তারা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের জঙ্গিবাদের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রে রূপান্তরিত হতে চলেছে। এই যদি বাস্তবতা হয় তবে এদেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা কতোটুকু এগিয়ে নেওয়া সম্ভব এবং কারা তা করবে তা প্রায় তমাসাচ্ছন্ন।
যে দুটি বৃহৎ দলের ভেতর এরূপ ক্ষমতার রদবদল হচ্ছে তার একটাতো প্রমাণই করেছে যে তারা ক্ষমতাসীন হলে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়, জঙ্গিবাদী তৎপরতা বেড়ে যায়। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্পে আকাশ বাতাস বিষাক্ত হয়, স্বৈরাচারের পুনরুত্থান ঘটে, সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিপন্ন হয়, দুঃখী মানুষের নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়, রাতারাতি কোটিপতির জন্ম হয়। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি দুর্বল হয়, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। খাদ্যোৎপাদন হ্রাস পায়। সামাজিক শক্তি দুর্বল হয়, মানবতা বিরোধী তৎপরতা বৃদ্ধি পায়, দুঃশাসন ও দুর্নীতি জেঁকে বসে। আর একবার যদি ঐ অশুভ প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ক্ষমতাসীন হয় তাহলে প্রতিবিপ্লবের ধারায়ই পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এটাই সাধারণ জনগণের আতঙ্ক। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে এটা অনুধাবন করে সুশাসন সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন।
লেখক:
ডা. এস এ মালেক
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:১৮