কেন একের অধিক বাচ্চা এক সময়ে গর্ভে আসে তা অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। চিকিৎসা শাস্ত্রের আবিষ্কারে জানা যায়, পুরুষের অসংখ্য শুক্রাণুর ভেতর থেকে একটি ভাগ্যবান শুক্রাণু নারীর একটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করলে একটি মানবশিশুর জন্ম হয়। কিন্তু মায়ের গর্ভে কখনো সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়েও জন্ম নিতে পারে ভিন্ন দুটি শিশু। এক্ষেত্রে শুক্রাণু দুটিও হয় ভিন্ন ভিন্ন। আবার কখনো একটি ডিম্বাণুই নিষিক্ত হওয়ার পর সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি শিশুর জন্ম হতে পারে।
প্রথম ধরনের জমজকে বলে বাইনোভুলার বা ডাইজাইগোটিক এবং পরেরটিকে ইউনিওভুলার বা মনোজাইগোটিক। বাইনোভুলার বা ডাইজাইগোটিক অর্থ হচ্ছে একই সঙ্গে সম্পূর্ণ আলাদা দুটি ডিম্বাণু আলাদা দুটি শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়ে দুটি আলাদা জাইগোট গঠন। ফলে একই জরায়ুতে বড় হওয়া শিশু দুটির আলাদা আলাদা ফুল বা প্লাসেন্টা থাকে। এদের লিঙ্গ ভিন্ন হতে পারে, আবার আলাদাও হতে পারে। দেখা যায় এরা জমজ হলেও এদের লিঙ্গ, রক্তের গ্রুপ, গড়ন, গায়ের রঙ বা অন্যান্য অনেক বৈশিষ্ট্য এক নয়।তবে দুজন একই রকম হওয়াটাও কিন্তু অসামঞ্জস্যপূর্ণ বা অস্বাভাবিক নয়। এরকম শিশুর দুটিতে জোড়া লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। টুইন বাচ্চাদের দুই তৃতীয়াংশই এমনভাবে জন্ম নেয়। অপরদিকে ইউনিওভুলার বা মনোজাইগোটিক অর্থ হলো একটি মাত্র ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে একটি শুক্রাণু কিন্তু দুটি শিশুর জন্ম হয়।কিভাবে: নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জাইগোট গঠনের পর সমানভাবে বিভাজিত হয়ে দুটি আলাদা জাইগোট গঠন করে। এর ফলে দুটি শিশুর জন্য কেবল একটি মাত্র ফুল বা প্লাসেন্টা থাকে। শিশু দুটির লিঙ্গ এবং সব শারীরিক বৈশিষ্ট্য এক হয়ে থাকে। শিশু দুটি পুরোপুরি একই জিন বহন করার কারণে সব বৈশিষ্ট্য একই রকম হয়। তাই এদেরকে অনেক সময় আইডেন্টিকাল টুইনও (Identical twin) বলা হয়। জমজ শিশুদের মধ্যে এই প্রকার শিশুদের অনুপাত এক তৃতীয়াংশ। অনেক সময় এ ধরনের জমজ শিশু একজন অপরজনের কাছ থেকে পুরোপুরি আলাদা হয় না এবং জন্মের পরও এদের কিছু কিছু অঙ্গ সংযুক্ত থাকতে পারে।অবশ্য বর্তমানে উন্নত শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে এ ধরনের শিশুকে আলাদা করার ব্যবস্থা আবিষ্কার হয়েছে। জমজ সন্তান ধারণ করলে গর্ভবতী মায়ের নিতে হয় বাড়তি সাবধানতা। বর্তমানে আল্ট্রাসনোগ্রাফির কল্যাণে আগে থেকেই গর্ভের সন্তান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই মায়ের অবস্থা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এসকল মায়ের এনিমিয়া, এক্লাম্পসিয়া, এন্টিপারটাম হেমোরেজ, ম্যাল প্রেজেন্টেশন, প্রিটার্ম লেবারসহ (আগাম প্রসবব্যথা) নানাবিধ সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। এজন্য এক্ষেত্রে শুরু থেকেই একজন স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকলে মা এবং শিশু উভয়েরই শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়
www.alokitobangladesh.com/