somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রীলঙ্কার অন্তত দুঃখ প্রকাশ করা উচিত :( :|

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রীলঙ্কা আমাদের প্রতিবেশী দেশ। সার্কভুক্ত দেশ হওয়ায় শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের বেশ একটা ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্ক আছে। কূটনৈতিক সম্পর্কের বাইরে বেসরকারি পর্যায়ে অভিবাসন কিংবা বাণিজ্যিক যোগাযোগে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের উল্লেখযোগ্য কোনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নেই। তবে আমাদের দুঃসময়ের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই দেশটির নাম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যে রক্তপাত, আমাদের যে অশ্রুগঙ্গা, আমাদের লাঞ্ছনা আর বেদনার যে বিপুল ইতিহাস এর একটা দায়ভার এই দেশটির ওপরও বর্তায়।



মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিরোধিতা করা দেশের অভাব নেই। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিকভাবে মদদ দিয়ে পাকিস্তানি রক্তলোলুপ সেনাশাসক আর ভুট্টোর মতো গোঁয়ার লোকদের সাহস অনেকাংশেই বাড়িয়ে দিয়েছিল। এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর কুলাঙ্গাররা শেষ দিকে মার খেয়ে যখন চোখে বাংলার আদি ও অকৃত্রিম শর্ষে ফুল দেখছে, তখনো তারা আশা করেছিল যে মার্কিনিদের সপ্তম নৌবহর আর চিনাদের সেনাবাহিনী উড়ে এসে তাদের উদ্ধার করে দিয়ে যাবে। বিশ্ব বাস্তবতায় সেটা হয়নি, তবে মার্কিন-চীন-আরব রাষ্ট্রপুঞ্জের হোমরা-চোমরা নেতারা প্রবাসী সরকারের সঙ্গে নিয়ত কূটনৈতিক মারপ্যাঁচ খেলে আমাদের যাত্রাপথকে আরো ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ করে তুলেছিলেন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।



এত এত শক্তিধর দেশগুলোর পাশে শ্রীলঙ্কাকে টেনে এনে আলাদাভাবে কথা বলার দরকার পড়ত না, যদি না ১৯৭১ সালে দেশটি কূটনৈতিক মুখোশের আড়ালে মুখ লুকিয়ে অন্য ষড়যন্ত্রকারী দেশগুলোর কাতারেই নিজেকে রেখে দিত। বিশেষ করে এক আমেরিকার পাপের কাছে দুনিয়ার সব দেশের মিলিত পাপও কিছুই নয়।কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিষয়ে আমাদের বেদনা অন্যখানে। ২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে, ভারত স্বাভাবিকভাবেই তার আকাশসীমাকে সীমাবদ্ধ করে দেয়। এ সময় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য পরিবহনের কোনো সুযোগ ছিল না এ দেশে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক সংঘাতে যুদ্ধরত সৈন্যদের নিয়মিত নতুন আসা সৈন্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করা একটি সাধারণ সামরিক কৌশল। বিশেষ করে যে যুদ্ধে কোনো আদর্শের বালাই থাকে না, ওই যুদ্ধে সৈন্যরা দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক যে চাপ পড়ে, তা যাতে তাদের মনোবলকে ধ্বংস করে দিতে না পারে, এ জন্য নতুন করে সৈন্য প্রতিস্থাপন করা হয়।এই জায়গায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য আসার পথ বন্ধ হয়ে গেলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একটি স্বাভাবিক সামরিক সুবিধা চলে আসে।



এই সুবিধাটি আমরা নিতে পারিনি কারণ, এই সময় শ্রীলঙ্কা তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করে পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্য বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। ঠিক কী পরিমাণ সৈন্য এই সময়ে এসেছে তা হয়ত পশ্চিম পাকিস্তানের দলিল-দস্তাবেজ না দেখে বলা সম্ভব নয়, কিন্তু সেই সৈন্যের সংখ্যা যে কম নয়, তা সাধারণ বিবেচনায়ই বলা যায়।এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি বেসামরিক প্রশাসনের প্রধান হিসেবে কাজ করা রাও ফরমান আলী খানের বই 'হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইডেড'-এর মাঝে সামান্য একটা বাক্যের ঝলক দেখা যায়। এমনিতে ১৯৭১ সালে এ দেশে কাজ করা পাকিস্তানি জেনারেলদের স্মৃতিচারণগুলো খুবই ইন্টারেস্টিং হয়, দুই মলাটের ভেতর একসঙ্গে এত মিথ্যে কথা লেখা পাকিস্তানি জেনারেল ছাড়া দুনিয়ার আর কারো দ্বারা সম্ভব নয়, তাঁদের কথা পড়লে মনে হয়, ১৯৭১ সালে তাঁরা এই দেশে ধর্মপ্রচারে নিয়োজিত ছিলেন, কূটোটিও নাড়াননি, কিন্তু দুষ্ট বাঙালিরা অকারণেই তাঁদের ধরে মেরে বসেছিল। এসব বইপত্রের নিদারুন মিথ্যাচার পড়তে মজাই লাগে, আবার মাঝে মাঝে কিছু তথ্যও সেখানে পাওয়া যায়, যা ইতিহাসের উপাদান হিসেবে কাজে লাগে।রাও ফরমান আলী খানের বইটিতে শ্রীলঙ্কা নিয়ে যে তথ্যটি আছে, সেখানে তিনি বলেছেন, '৩১ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত পিআইএ যে কাজ করে, তা বার্লিন এয়ারলিফটের সমান গুরুত্ব বহন করে। শ্রীলঙ্কার ওপর দিয়ে এ সময় দুই ইনফ্র্যান্টি ডিভিশনকে নিয়ে আসে। তাদের দ্রুত বিভিন্ন সেক্টরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।'



পাঠক এখানে খেয়াল করে দেখবেন, মাত্র সাত দিনে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে দুই ডিভিশন সৈন্য পূর্বপাকিস্তানে আসার ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার আকাশসীমা ব্যবহৃত হয়েছে। সাধারণত একটি ডিভিশনে ১০থেকে ১৫ হাজার সৈন্য থাকে, এ হিসাবে গণহত্যা শুরুর ঠিক পর পরেই যখন পুরো বিশ্বের বিবেক এই গণহত্যা দেখে স্তম্ভিত, প্রতিবাদ ও নিন্দায় মুখর, ঠিক তখন শ্রীলঙ্কা তার আকাশপথ ব্যবহার করে এ দেশে হাজার হাজার সৈন্য প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে। এ ছাড়া এই একই পথে পাকিস্তানিদের যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টারগুলোও যে উড়ে এসেছে, ভারী অস্ত্রশস্ত্র এসে পৌঁছেছে, তার পুরো হিসাব হয়তো কোনো দিনই পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এ কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই, এই হাজার হাজার সৈন্য আমার দেশে ৯ মাস নরকের বিভীষিকা বানিয়ে রেখেছে। শ্রীলঙ্কা যদি তখন এই ভূমিকা না নিত, তাহলে আমাদের হয়তো কয়েক লাখ মানুষ কম মারা যেত, মা-বোনরা হয়তো আরো কমসংখ্যক লাঞ্ছিত হতেন, দেশের সম্পদ হয়তো আরো বেশি রক্ষা পেত। সে ক্ষেত্রে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আরো সংক্ষিপ্ত হতো, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।



সুতরাং আমাদের এই রক্ত আর বেদনার ইতিহাসে শ্রীলঙ্কারও একটা ভূমিকা আছে, সে ভূমিকা কলঙ্কের। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে ৩৯ বছর আগে, এখন পর্যন্ত আমাদের অনেক হিসাব-নিকাশ শেষ করা তো দূরের কথা, শুরুই হয়নি। সবেমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের একটা অংশের বিচার প্রক্রিয়া গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছে, এরপর বাকি আছে পশ্চিম পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, পশ্চিম পাকিস্তানের কাছ থেকে আমাদের সম্পদের হিস্যার ব্যাপার। এভাবে হয়তো প্রজন্মের পর প্রজন্ম লাগবে, কিন্তু একদিন অবশ্যই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সব হিসাব-নিকাশ আমরা চুকিয়ে নেব। সে সময় বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা নিয়ে নিশ্চয়ই কথা উঠবে।শ্রীলঙ্কার উচিত হবে না ততোদিন অপেক্ষা করা। তারা আমাদের প্রতিবেশী, আমরা তাদেরকে সৎ প্রতিবেশী ভাবতে চাই। আমাদের লাখ লাখ মানুষকে হত্যার পাশবিক উৎসবে শ্রীলঙ্কা তার ভূমি ও আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিয়েছিল, এটি তাদের জন্য লজ্জ্বার বিষয়। আমরা হয়তো এখনই দাবি করব না যে তারাও ক্ষমা প্রার্থনা করুক, কিন্তু অন্তত পক্ষে তারা দুঃখ প্রকাশ করে হলেও একটি সৎ প্রতিবেশীর উদাহরণ হতে পারে

সূত্র: Click This Link
১৪টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×