somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প- আমজাদঃ এক ভাগ্যাহত লেখক

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমজাদ বুঝতে পারছে সে একটা বিরাট ভুল করে ফেলেছে।শুধু ভুল নয়---এটা অনেক বড় একটা অপরাধ।এমন গর্হিত কাজ করতে পারলো কিভাবে তা আজ তিন দিন পার হয়ে গেলেও সে বুঝতে উঠে পারছেনা।কিভাবে কাজটা করেছে তাও তেমন মনে পড়ছেনা।শুধু জানে যে কাজটা করেছে তা করা একদম উচিত হয়নি। এর ফলাফল তাকে ভোগ করতেই হবে। মাঝে মাঝে তার মনে হয়েছে কাজটা কি সেই করেছে??নাকি মতিভ্রম! হয়তো কিছু একটা ভর করেছিলো তার ভিতর।এতোটা বাড়াবাড়ি করার স্বভাব তো তার কখনোই ছিলোনা।তবে সে কেনো এই অন্যায়টা করলো! কারন একটা আছে।কিন্তু সেটা এই ধরনের অপরাধ করার পক্ষে যথেষ্ট নয়।অন্তত বাইরে থেকে এমনটাই মনে হয়।তার মধ্যে কি কোন দ্বৈত সত্তা বসবাস করছে!ডাঃ জেকিল আর মিঃ হাইডের সেই বিখ্যাত কাহিনিটার পুনরাবৃত্তি কি তার মাধ্যমে ঘটছে।সে জানা যাবে গল্পটা শেষ হলে।আপাতত আমজাদের কথা বলা যাক।

আমজাদের পৃথিবীটা পুরান ঢাকার বাবুবাজারের একটা পুরনো তেতলা বিল্ডিংয়ের ছাদঘরের রুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাইরের দুনিয়াতেও তার যাতায়াত আছে তবে তা শুধু প্রয়োজনীয়তার খাতিরেই।স্বভাবে লাজুক,কিছুটা রাগী আর স্বল্পভাষী দোহারা গড়নের আমজাদ বড় হয়েছে অনেক অনাদর আর অবহেলায়।জন্মের সময়েই মা মারা যায়।সেই যে দুর্ভাগ্য তার পিছু নিলো তা আজ অবধি ছাড়েনি।পরের ইতিহাসটা অন্য দশটা মা হারা ছেলেদের মতোনই। বাবা আরেকটি বিয়ে করে নিজের জীবন রাঙ্গালেও তার ছোঁয়া আমজাদের জীবনে লাগেনি।বাবা কিংবা সৎমা কেউই তাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি।জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে গুরুত্ব না পাওয়া আমজাদ সংসারে একটা বোঝা হিসেবে পনের বছর কাটিয়ে দিলো।এরপর একদিন নিজের ইচ্ছেতেই সংসার ছেড়ে পালালো।

ট্রেনে উঠে চলে গেলো এক মফস্বল শহরে। সেখানে দিন কয়েক ছন্নছাড়ার মতো ঘুরার পর ভাগ্যক্রমে কাজ পেয়ে গেলো এক গাড়ি মেরামতের গ্যারাজে।কাজের বিনিময়ে থাকা আর খাওয়ার ব্যবস্থা হলো।মাধ্যমিক পাশের পর দুবছর তার গ্যাপ থেকে গেলো তাই।পড়াশুনায় আমজাদের ছোটকাল থেকেই বেশ মনোযোগ ছিলো। বইয়ের প্রতি আলাদা একটা ভালোলাগা কাজ করতো।সেজন্যই বাইরের দুনিয়ার নিষ্ঠুরতা ভুলে থাকবার জন্য সে ডুব দিতো বইয়ের দুনিয়ায়।গ্যারাজ মালিকের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করিয়ে মালিকের সুনজরে আসে এক সময়।দু বছর গ্যাপ দিয়ে তাই সে সেখানেই এক কলেজে ভর্তি হবার সুযোগ পায়।কিন্তু কাজে ফাঁকি দিয়ে পড়াশুনা চালানো যেতোনা।তবুও পড়াশুনা চালিয়ে গেছে সে।গ্যারাজের পিছনে অন্য কর্মচারীদের সাথে একটা রুমে কোনমতে থাকতো।মাঝে মাঝে গল্পের আসর বসতো সেখানে। কর্মচারীদের জীবনের হাসি,কান্না আর দুঃখ মেশানো কাহিনি শুনতে শুনতে আমজাদের একবার মনে হলো এইসব কাহিনি লিখে রাখতে হবে।মানুষের গল্প নিজের ভাষায় খাতায় তুলে রাখতে হবে।সেই থেকে লেখার ভুত চাপলো তার মধ্যে।নিজের মনের মতো করে লিখে যেতে থাকলো সে। ছাপানোর চিন্তা তখনো মাথাতে আসেনি।

বই পড়া,লেখা আর গ্যারাজে কাজ করা---এই নিয়ে দেখতে দেখতে আরো দু বছর পার হলো।তারপর পাশ করলো উচ্চ মাধ্যমিক।উচ্চাবিলাসী আমজাদ মালিকের অনুমতি নিয়ে চলে এলো রাজধানী ঢাকায়।মালিকের পরিচিত জনের সাহায্যে সেখানে থাকা আর কাজ জুটলো। কিন্তু সে কাজ ছেড়ে ভর্তি হলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে।জীবিকার জন্য বেছে নিলো ছাত্রদের সেই চিরচেনা ঐতিহ্য টিউশনি।চলে এলো হলে।তবে ভার্সিটি জীবনেও তেমন বৈচিত্র্য এলোনা ।হলে থেকে পড়তো আর লিখতো।নিজেকে গুটিয়ে রাখতো সবসময়। সেটা হয়তো অন্যদের চেয়ে তার নিজের অবস্থার তুলনা করতো বলেই।ঈদ কিংবা পুজোর বন্ধে হলেই কাটিয়ে দিতো। সে সময়টুকু সে কিছুটা স্বাধীন হয়ে চলতো। খালি হয়ে যাওয়া শহর ঘুরে বেড়াতো একাকী।বন্ধু তার ছিলো। সে হাতেগোনা কয়েকজন।এর মধ্যে ঘনিষ্টতা বেশি হয়েছিলো সাদিকের সাথে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সাদিক সাহিত্য পত্রিকা বের করতো নিজের সম্পাদনায়। একদিন চুপিসারে ছদ্মনামে সেই পত্রিকাতে লেখা পাঠিয়েছিলো সে।সাদিক তা ছাপায়। খুশি হয়ে নিজের নাম প্রকাশ করে ফেলে আমজাদ।নিজের লেখা ছাপার অক্ষরে দেখার সেই অমূল্য অনুভূতির জেরে সাদিককে তার বেশ আপন মনে হয়েছিলো। সাদিকও তাকে লেখার ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়ে গিয়েছিলো।সেই সাদিক এখন ব্যাংকার।কোন যোগাযোগ নেই। ভার্সিটির কারো সাথেই যোগাযোগ রাখেনি আমজাদ।চার বছরের ভার্সিটি লাইফ কেটে গেছে উন্মাদনাহীন সাদামাটাভাবে।মাঝে বেশ কয়েকবার লেখা ছাপা হবার আনন্দে ভেসেছিলো সে।ও হ্যাঁ,পরিবারের সাথেও একবার দেখা হয়েছিলো।সে এক ভিন্ন কাহিনি।এই গল্পে অপ্রয়োজনীয়। পরিবারের সাথে তার কখনো সম্পর্ক ছিলোনা আর। এখন এই ভাড়া রুম আর টিউশনি করেই জীবন চালাচ্ছে। চাকুরি করার কোন ইচ্ছে তার নেই। যে লেখক হবে সে কেন চাকরি করবে ! কিন্তু লেখা আর ছাপা হলো কই!

গত তিনটি বছর সে একমনে লিখে গেছে।লিখার ক্ষেত্রে তার কোন রাইটার্স ব্লক আসেনা। সে লিখে যায় আর লিখে যায়।কিন্তু সত্যি বলতে দুয়েকটা লিটল ম্যাগাজিন বাদে লেখা কোথাও হলো না ছাপা। পেলো না সে প্রতিভার দাম তার।তবুও হাল ছাড়েনি।সে জানে উঠতি লেখকদের এমন অবস্থা কাটাতে হয়।প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে হোঁচট খেতেই হবে।জীবনানন্দ দাশ তো জীবনকালে নিজের প্রতিভার দাম পাননি। তবুও তার জন্য ছিলো বুদ্ধদেব।আমাদের এই লেখক চরিত্রটির জন্যে সেইরকম কোন বুদ্ধদেব এসে হাজির হননি।নিজের জন্য নিজেকেই এগুতে হবে এইটুকু আমজাদ বুঝেছিলো।তাই লজ্জার মাথা খেয়ে প্রকাশকদের দ্বারে দ্বারে সে বারবার হানা দিয়েছিলো। তিন তিনটে বইমেলা পেরিয়ে গেলো,কেউ তার লেখা ছাপলো না।কিন্তু তাই বলে কিছুদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা সে ভুলতে পারেনা। একদিনের ঘটনা,দুরুদুরু বুকে খ্যাতনামা এক প্রকাশনীর অফিস রুমে ঢুকলো।পরিপাটি রুম।ঢুকতেই সেখানে নিজেকে কেমন জানি বেমানানা লাগলো আমজাদের।প্রকাশক প্রকান্ড টেবিলের ওপারের রোলিং চেয়ারে বসে ভারিক্কি গলায় জিগ্যেস করলেন,‘কি চাই?’
-জ্বী মানে একটা লেখা নিয়ে এসেছি।
--হাতে লেখা??
--আজকাল তো হাতে লেখা হয়না।সবাই কম্পিউটারেই লেখালেখি করে। তারপরেও এনেছেন যখন রেখে যান।
সেই যে দিয়ে এলো তারপর এ নিয়ে আর কোন খবর সে পেলোনা।খবর নিতে নিজেই যখন গেলো তখন দেখা গেলো তার পান্ডুলিপি সেই প্রকাশক হারিয়ে ফেলেছেন।অনেক দোনামোনা করলেন এই নিয়ে।তার পর চা বিস্কিট খাইয়ে পরে এসে আরেকবার জেনে যেতে বললেন।যদি খুঁজে পান তো রেখে দিবেন। অসহায়ের মতো সেদিনকার মতো সে চলে এসেছে।আর কখনো ওইমুখো হয়নি।বুঝে গেছে তার পান্ডুলিপি চিরদিনের জন্য খোয়া গেছে। অথচ এই উপন্যাস লেখার জন্য সে কমলাপুরের বস্তিতে দিন দশেক থেকেছে। বস্তির মানুষের জীবনযাপন আর বাস্তবতা নিয়ে উপন্যাসটি খাড়া করেছিলো অনেক খাটা খাটনি করে।এরপর গেলো আরেক প্রকাশকের কাছে।সেইখানেই এরচেও খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হলো।প্রকাশক বললেন তার লেখাটা প্রথম পাতায় একবার চোখ বুলালো। বললো,“সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো।আমি বসে বসে টিনের চাল বেয়ে পড়া বৃষ্টির পানির দিকে তাকিয়ে রইলাম অপলক”---এভাবে কেউ উপন্যাস শুরু করে?? নাহ। এই জিনিস আমরা ছাপাবো না।বড় বড় লেখকদের লেখা ছাপতেই হয়রান হয়ে যাচ্ছি।নতুনদের ছাইপাশ ছাপিয়ে রিস্ক নিতে পারবো না।আপনি আসতে পারেন।”

এভাবে আরো দশ বারো প্রকাশকের কাছে গিয়েও লাভ হয়নি।আজকাল নিজের টাকায় বই ছাপাতে হয়।কিংবা চেনাজানা মানুষের রিকমেন্ডেশন দরকার পড়ে।কিন্তু তাই বলে এরপর যা ঘটলো তা সে মেনে নিতে পারেনি।পাঁচ দিন আগের ঘটনা। বইমেলায় ঘুরছিলো সে। বই দেখে বেড়াচ্ছিলো। মনে মনে কিছুটা আফসোসও হচ্ছিলো নিজের কোন বই না থাকায়।ছাপানোর মতো সামর্থ্য থাকলে সে নিজেই ছাপাতো নিজের বই।ঘুরতে ঘুরতে চলে এলো সেই প্রকাশনী স্টলে যেই প্রকাশনী তার পান্ডুলিপি হারিয়ে ফেলেছিলো।বই ঘেঁটে দেখতেই হঠাৎ একটা বইয়ের নামের উপর চোখ পড়লো। নামঃ স্বরলিপি আখ্যান।লেখক-রবিউজ্জামান শাকিল।সে কি ! এ বইটার নাম তো তার দেয়া।সেই উপন্যাসটার নাম।বইয়ের ভিতর দেখলো ভালো করে। পুরোপুরি তার উপন্যাস আগাগোড়া ছাপানো হয়েছে।অন্য কারো নাম দিয়ে।নিশ্চিতভাবেই বইটা ভালো বিক্রি হচ্ছিলো।তার সামনেই দু তিন কপি বিক্রি হয়ে গেলো।একজন লোক বসে অটোগ্রাফও দিচ্ছে। সে গিয়ে লোকটাকে ধরলো।
-এই বইটি আপনি লিখেছেন?
-জ্বী।কেনো?
-জ্বী? মিথ্যা বলছেন কেনো। এ বই আপনি লিখেন নি।
-কি যে বলছেন।এই বই আমার লেখা। আপনি কে ভাই?
-আপনি লিখেছেন? এর শেষ কি হয় তা বলতে পারবেন?

লোকটি এবার আমতা আমতা করলো।চারদিকে একটা জটলা বেঁধে গেলো। আমজাদ চিৎকার করে সবাইকে বলতে লাগলো যে বইটি তার লেখা।কোথায় কি লেখা হয়েছে তা সে বলতে পারবে।কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রকাশক এসে পড়লেন। তার চোখে চাতুরি দেখতে পেলো আমজাদ।কোন লাভ হলোনা।আমজাদের কথা কেউ শুনলোনা। উসকো খুশকো চুলের ছন্নছাড়া ধরনের কেউ নিজের বই অন্য কেউ চুরি করে লিখেছে বললেই তো লোকে বিশ্বাস করে বসবেনা। তাছাড়া যার নামে লেখা ছাপা হয়েছে সে ইতিমধ্যে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে।হয়তো এভাবেই চুরি করে নিজের নামে ছাপিয়েছে আগের বইগুলো।সেদিনকার মতো মেলার পাহারারত গার্ডদের গলাধাক্কা খেয়ে তাকে চলে আসতে হয়েছিলো।

সেদিন রাতে সে চিন্তা করলো এভাবে সে এই বিখ্যাত প্রকাশনীর বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবেনা। সে বরং অন্য একটা প্রস্তাব নিয়ে যেতে পারে। যেই ভাবা সেই কাজ। পরদিন প্রকাশকের সাথে দেখা করে বললো সে শুধু এই বইটির রয়্যালটি চায়।
--যে বই আপনি লিখেন নি সে বইয়ের রয়্যালটি আপনাকে দিবো কোন দুঃখে।
--দেখুন, আমি কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে কোন নালিশ করছিনা। আমাকে শুধু আমার প্রাপ্যটুকুর কিয়দংশ দিন।
--আপনি বাজে বকছেন।যান তো।উটকো ঝামেলা যত্তসব।প্রমাণ করতে পারবেন যে এই বই আপনি লিখেছেন??

এবারেও কোন লাভ হলোনা। সত্যিই তার কাছে কোন প্রমান নেই। একটাই পান্ডুলিপি ছিলো। সেটাই সে হস্তগত করেছিলো এই ধান্ধাবাজ স্বার্থান্বেষী প্রকাশকের কাছে। তার পরিশ্রম জলে গেলো।শেষ চেষ্টা হিসেবে সে থানায় যাবে ভেবেছিলো।কিন্তু সেখান থেকেও বেরিয়ে এলো একরাশ হতাশা নিয়ে।প্রমাণ বাদে চাইলেই পুলিশ কেস নিবেনা।বলে দিয়েছে মামলা আদালতে গড়ালে তারই বেশি খরচ যাবে।হতাশা একসময় রূপ নিলো চরম রাগে।আর সেই রাগ এমনি ছিলো যে সে ওই ভয়াবহ কাজটা করে ফেলে।একরাশ ঘৃণাও জন্ম নিলো তার মনে।নিজেকে চরম অপমানিত,অবহেলিত হিসেবে আবিষ্কার করলো।তার জন্য দায়ী ঐ একজন প্রকাশকই না। যারা যারা তাকে প্রত্যাখান করেছে সকলের প্রতিই তার উষ্ণ রাগ উথলে উঠলো।কিন্তু এই একজন তার সাথে বিরাট অন্যায় করেছে।এর বিহিত সে করবে।সেদিনই সে পরিকল্পনা করে ফেলে।সন্ধ্যের পর ঐ প্রকাশকের যাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে রইলো আমজাদ।তখন যেনো সে আর সে ছিলোনা।তার ভিতর এক অভিন্ন রুপ দেখা যাচ্ছিলো। জ্বলজ্বল চোখে সে তাকিয়ে রইলো ঐ প্রকাশকটার আসার পথের দিকে।তারপর??

যেই প্রকাশককে আসতে দেখলো তার বুক একবার কেঁপে উঠলো।একবার ভাবলো ফিরে চলে যাবে।পরমুহুর্তেই প্রতিশোধের নেশাইয় আচ্ছন্ন হলো। হাতে একটা ইট নিয়ে এগিয়ে গেলো লোকটির দিকে।কাছে গিয়েই ইটটি দিয়ে লোকটির মাথায় আঘাত করলো। একবার চিৎকার করেই পড়ে গেলো লোকটি।আমজাদ মুখে কুটিল হাসি নিয়ে বিড়বিড় করে বললো,‘ এটাই তোর প্রাপ্য ছিলো’।

এরপর জানা গেলো লোকটি পরে হাসপাতালে মারা যায়। সারাদেশের খবরের শিরোনাম হয়ে যায়।কাজটি কে করেছে তা জানতে পুলিশের বাকি থাকেনা।কিন্তু আমজাদের বাড়িতে এসেই তারা হানা দেয়নি সাথে সাথে।কেননা আমজাদ কই থাকে তা কেউ জানতো না। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশ যে তার বাসার খোঁজ পেয়ে গেছে তা আমজাদ বুঝে গেছে।দুজন সাদা পোশাকধারী নিচের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষন হলো।তাই সে নড়েনি নিজের রুম থেকে। সেই ঘটনার পর থেকেই একবারের জন্যেও সে বের হয়নি।বসে বসে ভেবেছে সে কি করেছে !! একটা পান্ডুলিপির জন্য সে একজন মানুষের প্রাণ নিয়ে নিলো! কখনো কখনো মনে হতো কাজটা উচিত হয়েছে।তার সাথে যা করা হয়েছে তা মায়ের কাছ থেকে সন্তান কেড়ে নেয়ার মতো ঘটনা।আবার কখনো মনে হয়েছে কাজটা মোটেও ঠিক হয়নি।পরেরবার তার লেখা কেউ না কেউ ছাপতোই।এই দোটানার মধ্যে থাকতেই থেকেই তিন দিন চলে গেলো।

আমজাদ সিদ্ধান্ত নিলো সে নীচে নেমে ধরা দিবে।এমনিতেও সে ধরা পড়ে গেছে।তার উপর নজর রাখা হচ্ছে।কাজটা যে সেই করেছে সেটা পুলিশ নিশ্চিত না হলেও প্রকাশকের দোকানের কর্মচারী আর ভুয়া লেখকের জবানবন্দি সেটা নিশ্চিত করেছে। তবে আজকাল যেহেতু অন্য কারনেও প্রকাশক খুন হচ্ছে তাই পুলিশ সময় নিচ্ছে ব্যাপারটা বুঝতে। জাল তারা গুছিয়ে প্রায় এনেছে বলা যায়।এবার সেই জালে আমজাদ নিজেই ধরা দিবে।প্রায়শ্চিত্তের জন্যে নয় অবশ্য।







আমজাদ এখন জেলে।ধরা দেবার পর তার নাম ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।কিন্তু তার ফাঁসি হয়নি আদালতের রায়ে।ভুয়া লেখক রবিউজ্জামান শাকিলের চলচাতুরিও ধরা পড়ে এই মামলার খাতিরে। প্রকাশকের কুকীর্তিও জানা যায়।তাই ফাঁসি না হয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে আমজাদের। জেলে আমজাদ কিছুটা সুখেই আছে।মানুষ তার লেখার বেশ প্রশংসা করেছে।যদিও সমালোচনা আর নিন্দাই জুটেছে বেশি। তবে এসব তার জন্য বিজ্ঞাপন হিসেবে কাজ করেছে।মানুষ তার প্রতি আরো বেশি করে আগ্রহী হয়েছে।‘স্বরলিপি আখ্যান’ এর জন্য সে পুরষ্কারও পায়।যদিও খুন করার মতো গর্হিত কাজ করায় তাকে পুরষ্কারের অর্থ আর সম্মাননা ক্রেস্ট দেয়া হয়নি।এখন জেল থেকেই তার লেখা বই বের হয়।জনপ্রিয়তায় জেলবাসী এই লেখক দেশের অন্যতম একজন।তবে পুরনো ঝাল এখনো মিটেনি তার। যে জীবন মুক্ত পৃথিবীতে মুক্তভাবে উপভোগ করার কথা ছিলো তা সে অতিবাহিত করছে বদ্ধ এক টুকরো জায়গায় থেকে।এর জন্য যারা দায়ী তাদের সে কখনো ভুলবেনা। তবে সে লিখে যাচ্ছে। তার লেখা সে সব প্রকাশককেই দিচ্ছে শুধু তাদের ছাড়া যারা তাকে অপমানিত করেছিলো, করেছিলো প্রত্যাখ্যাত।তার হিট লিস্টে এদের নাম এখনো রয়ে গেছে। বাকি কাজ সে জেলের বাইরে গিয়েই করবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×