somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুপ্তচর কাকন বিবি

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী
কাকন বিবি পাহাড়ি খাসিয়া নারী। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও তিনবেলা অন্ন আর ন্যূনতম জীবনযাপনের ভাগ্য হয়নি তার। খেয়ে না খেয়ে অর্ধাহারে পরিণত বয়সে উপনীত হয়ে নানাবিধ রোগবালাই নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে এখনও শান্তিতে নেই ওই বীরাঙ্গনা। স্থানীয়ভাবে নানা ষড়যন্ত্রের রোষানলে পড়ে এখনও লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে আঁতকে ওঠেন তিনি। জীবনের এই শেষ মুহূর্তে এসে ধন নয়, সম্পদ নয়, জীবনের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান তিনি। খাসিয়া সমপ্রদায়ের নারী কাকন বিবির বাড়ি ছিল ভারতের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে। ১৯৭০ সালে তার বিয়ে হয় দিরাই উপজেলার জনৈক শহিদ আলীর সঙ্গে। তখন তার নাম হয় নুরজাহান বেগম। ১৯৭১ সালের ১৬ই মার্চ কন্যা সন্তানের জন্ম দেন কাকন বিবি। কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে স্বামী শহিদ আলীর সঙ্গে তার মনোমালিন্য দেখা দেয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে মৌখিক ছাড়াছাড়ি হয়। পরবর্তীতে এপ্রিল মাসে ইপিআর সৈনিক মজিদ খানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মজিদ খান তখন সিলেট ইপিআর ক্যাম্পে চাকরিরত ছিলেন। স্বামীর সঙ্গে ২ মাস সিলেটে থাকার পর কাকন বিবি তার মেয়ে সখিনাকে আনতে যান। মেয়েকে নিয়ে সিলেট আসার পর স্বামী মজিদ খানকে আর খুঁজে পাননি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার স্বামীকে দোয়ারাবাজার সীমান্ত এলাকার কোনও এক ক্যাম্পে বদলি করা হয়েছে। স্বামীর খোঁজে তিনি সিলেট থেকে দোয়ারাবাজার সীমান্তে যান। তখন ছিল জুন মাস। যুদ্ধ চলছিল। শিশুকন্যা সখিনাকে সীমান্তবর্তী ঝিরাগাঁও গ্রামে জনৈক শাহিদ আলীর আশ্রয়ে রেখে দোয়ারাবাজারের টেংরাটিলা ক্যাম্পে তিনি স্বামীকে খুঁজতে যান। কিন্তু পাননি। তখন পাকবাহিনী তাকে আটক করে বাঙ্কারে নিয়ে যায়। বাঙ্কারে রেখে তাকে কয়েকদিন নির্যাতনের পর ছেড়ে দেয়। নির্যাতিতা কাকন বিবি এরপর স্বামীর আশা বাদ দিয়ে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠেন। জুলাই মাসে তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন দেখা হয় মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর সঙ্গে। রহমত আলী তাকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর শওকতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। মীর শওকত তাকে গুপ্তচরের দায়িত্ব দেন। কাকন বিবি সাহসিকতার সঙ্গে গুপ্তচরের কাজ করতে থাকেন। গুপ্তচরের কাজ করতে গিয়ে পশ্চিম বাংলাবাজারে তিনি পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়লে তারা তাকে একনাগাড়ে ৭ দিন নির্যাতন চালায়। পরে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। সাতদিন পর তার জ্ঞান ফিরে এলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে বালাটে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। চিকিৎসা শেষে পুনরায় তিনি বাংলাবাজারে আসেন। সেখানে তিনি মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর কাছে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। রহমত আলীর দলের সদস্য হয়ে অস্ত্র সহকারে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে টেংরাটিলায় পাকসেনাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে করেন তিনি। সেই যুদ্ধে কয়েকটি গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়। উরুতে কয়েকটি গুলির ক্ষতদাগ এখনও আছে। টেংরাটিলা যুদ্ধের পর আমবাড়ি, বাংলাবাজার, টেবলাই, বালিউরা, মহব্বতপুর, বেতুরা, দুর্বিনটিলা, আধারটিলাসহ প্রায় ৯টি স্থানে তিনি অস্ত্রসহকারে যুদ্ধ করেন। আমবাড়ি বাজার যুদ্ধে তার পায়ে গুলি লাগে। সেই গুলির চিহ্ন আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। নভেম্বর মাসের শেষদিকে তিনি রহমত আলীসহ আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে জাউয়া ব্রিজ অপারেশনে যান। ব্রিজ অপারেশনে তারা সফল হন। এভাবেই যুদ্ধে যুদ্ধে দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কাকন বিবি দোয়ারা বাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ঝিরাগাঁও গ্রামে জনৈক এক ব্যক্তির কুঁড়েঘরের বারান্দায় মেয়ে সখিনাসহ আশ্রয় নেন। ’৭১-এর এই যোদ্ধা স্বাধীনতার পর লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন বহুদিন।

কাকন বিবি পাহাড়ি খাসিয়া নারী। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও তিনবেলা অন্ন আর ন্যূনতম জীবনযাপনের ভাগ্য হয়নি তার। খেয়ে না খেয়ে অর্ধাহারে পরিণত বয়সে উপনীত হয়ে নানাবিধ রোগবালাই নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে এখনও শান্তিতে নেই ওই বীরাঙ্গনা। স্থানীয়ভাবে নানা ষড়যন্ত্রের রোষানলে পড়ে এখনও লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে আঁতকে ওঠেন তিনি। জীবনের এই শেষ মুহূর্তে এসে ধন নয়, সম্পদ নয়, জীবনের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান তিনি। খাসিয়া সমপ্রদায়ের নারী কাকন বিবির বাড়ি ছিল ভারতের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে। ১৯৭০ সালে তার বিয়ে হয় দিরাই উপজেলার জনৈক শহিদ আলীর সঙ্গে। তখন তার নাম হয় নুরজাহান বেগম। ১৯৭১ সালের ১৬ই মার্চ কন্যা সন্তানের জন্ম দেন কাকন বিবি। কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে স্বামী শহিদ আলীর সঙ্গে তার মনোমালিন্য দেখা দেয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে মৌখিক ছাড়াছাড়ি হয়। পরবর্তীতে এপ্রিল মাসে ইপিআর সৈনিক মজিদ খানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মজিদ খান তখন সিলেট ইপিআর ক্যাম্পে চাকরিরত ছিলেন। স্বামীর সঙ্গে ২ মাস সিলেটে থাকার পর কাকন বিবি তার মেয়ে সখিনাকে আনতে যান। মেয়েকে নিয়ে সিলেট আসার পর স্বামী মজিদ খানকে আর খুঁজে পাননি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার স্বামীকে দোয়ারাবাজার সীমান্ত এলাকার কোনও এক ক্যাম্পে বদলি করা হয়েছে। স্বামীর খোঁজে তিনি সিলেট থেকে দোয়ারাবাজার সীমান্তে যান। তখন ছিল জুন মাস। যুদ্ধ চলছিল। শিশুকন্যা সখিনাকে সীমান্তবর্তী ঝিরাগাঁও গ্রামে জনৈক শাহিদ আলীর আশ্রয়ে রেখে দোয়ারাবাজারের টেংরাটিলা ক্যাম্পে তিনি স্বামীকে খুঁজতে যান। কিন্তু পাননি। তখন পাকবাহিনী তাকে আটক করে বাঙ্কারে নিয়ে যায়। বাঙ্কারে রেখে তাকে কয়েকদিন নির্যাতনের পর ছেড়ে দেয়। নির্যাতিতা কাকন বিবি এরপর স্বামীর আশা বাদ দিয়ে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠেন। জুলাই মাসে তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন দেখা হয় মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর সঙ্গে। রহমত আলী তাকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর শওকতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। মীর শওকত তাকে গুপ্তচরের দায়িত্ব দেন। কাকন বিবি সাহসিকতার সঙ্গে গুপ্তচরের কাজ করতে থাকেন। গুপ্তচরের কাজ করতে গিয়ে পশ্চিম বাংলাবাজারে তিনি পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়লে তারা তাকে একনাগাড়ে ৭ দিন নির্যাতন চালায়। পরে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। সাতদিন পর তার জ্ঞান ফিরে এলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে বালাটে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। চিকিৎসা শেষে পুনরায় তিনি বাংলাবাজারে আসেন। সেখানে তিনি মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর কাছে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। রহমত আলীর দলের সদস্য হয়ে অস্ত্র সহকারে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে টেংরাটিলায় পাকসেনাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে করেন তিনি। সেই যুদ্ধে কয়েকটি গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়। উরুতে কয়েকটি গুলির ক্ষতদাগ এখনও আছে। টেংরাটিলা যুদ্ধের পর আমবাড়ি, বাংলাবাজার, টেবলাই, বালিউরা, মহব্বতপুর, বেতুরা, দুর্বিনটিলা, আধারটিলাসহ প্রায় ৯টি স্থানে তিনি অস্ত্রসহকারে যুদ্ধ করেন। আমবাড়ি বাজার যুদ্ধে তার পায়ে গুলি লাগে। সেই গুলির চিহ্ন আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। নভেম্বর মাসের শেষদিকে তিনি রহমত আলীসহ আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে জাউয়া ব্রিজ অপারেশনে যান। ব্রিজ অপারেশনে তারা সফল হন। এভাবেই যুদ্ধে যুদ্ধে দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কাকন বিবি দোয়ারা বাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ঝিরাগাঁও গ্রামে জনৈক এক ব্যক্তির কুঁড়েঘরের বারান্দায় মেয়ে সখিনাসহ আশ্রয় নেন। ’৭১-এর এই যোদ্ধা স্বাধীনতার পর লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন বহুদিন।
[১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন]

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×