somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বীরঙ্গনা কাকন বিবির প্রয়ান ও একজন সংগ্রামী নারীর বিদায়

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের দুর্ঘর্ষ গুপ্তচর, পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে একাধিকবার বন্দি ও নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধ, বীরাঙ্গনা কাকন বিবি বীরপ্রতীক মৃত্যুর কাছে হার মানলেন। ২১ মাচ ২০১৮ বুধবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন। তিনি নিউমোনিয়া, শরীরের লবণ কমে যাওয়াসহ শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। কাকন বিবির মেয়ে সকিনা মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে দোয়ারাবাজার থেকে সিলেট নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে হাসপাতালের তৃতীয় তলার ১০ নম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়। রাতে অবস্থার অবনতি হলে তার আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
তাঁর একামত্র কন্যা সখিনা বেগম জানান, তিনদিন ধরে জ্বরে ভুগছেন মা কাকন বিবি। এরপর থেকে তার কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দোয়ারাবাজার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হয়। তখনই ইউএনও কাকন বিবিকে দ্রুত ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসতে আর্থিক সহযোগিতাসহ সবধরণের সহযোগিতা করেছেন।
তিনি ভারতের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে খাসিয়া সম্প্রদায়ের এক পরিবারে জন্ম কাকন বিবির। ১৯৭০ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শহীদ আলীর সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর নাম পরিবর্তিত হয়ে নুরজাহান বেগম করা হয়। তার বর্তমান বসতি সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ঝিরাগাঁও গ্রামে।
কাকন বিবি মাত্র তিন দিনের শিশু কন্যা সন্তান সকিনাকে রেখে যুদ্ধে চলে যান। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর বিপক্ষে মুক্তিবাহিনীর হয়ে শুধু গুপ্তচর হিসেবেই কাজ করেননি, করেছেন সম্মুখযুদ্ধও। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়া হয়।
কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার কারণে স্বামীর সঙ্গে কাকন বিবির প্রথম সংসার ভেঙে যায়। পরবর্তীতে ইপিআর সৈনিক মজিদ খানের সঙ্গে কাকন বিবির বিয়ে হয়। মজিদ তখন কর্মসূত্রে সিলেট ইপিআর ক্যাম্পে থাকতেন। দুই মাস সিলেটে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করার পর তিনি আগের স্বামীর ঘর থেকে মেয়ে সকিনাকে নিয়ে আসেন। মেয়েকে নিয়ে এসে তিনি স্বামীকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, স্বামী বদলি হয়ে দোয়ারাবাজার সীমান্ত এলাকার কোনো এক ক্যাম্পে আছেন। সীমান্তবর্তী ঝিরাগাঁও গ্রামে শহীদ আলীর আশ্রয়ে মেয়েকে রেখে দোয়ারাবাজারের টেংরাটিলা ক্যাম্পে যান তিনি।
১৯৭১ সালের জুন মাস তখন। পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন। তাদের বাঙ্কারে দিনের পর দিন অমানুষিকভাবে নির্যাতন সহ্য করতে হয় কাকনকে। এরপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখনই কাকন স্বামীকে পাওয়ার আশা ত্যাগ করে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।
জুলাই মাসে তার সঙ্গে দেখা হয় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী তার সঙ্গে সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর শওকতের দেখা করিয়ে দেন। তার ওপর দায়িত্ব পড়ে গুপ্তচর হিসেবে বিভিন্ন তথ্য জোগাড়ের। কাকন বিবি শুরু করেন পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা। তার সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালিয়ে সফল হন।
গুপ্তচরের কাজ করতে গিয়েই দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজারে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ফের ধরা পড়েন তিনি। এবার একনাগাড়ে ৭ দিন পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা তাকে বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। লোহার রড গরম করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছেঁকা দেয়। মৃত ভেবে অজ্ঞান কাকন বিবিকে পাকিস্তানি বাহিনী ফেলে রেখে যায়। তাকে উদ্ধার করে বালাট সাব সেক্টরে নিয়ে আসা হয়। সুস্থ হয়ে তিনি আবার ফিরে আসেন বাংলাবাজারে। অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ নেন। মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী তাকে প্রশিক্ষণ দেন। পরবর্তীকালে তিনি সম্মুখ যুদ্ধে আর গুপ্তচর উভয় কাজই শুরু করেন।
কাকন বিবি প্রায় ২০টি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করার ঘোষণা দেন।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৫৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×