somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতি, আমার ধর্ম; প্রযত্নেঃ আমার আমিত্ব

০৮ ই মে, ২০২২ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





আমার আমি'র আমিত্ব মানুষ। যার একটি বিশেষণ হলো চাওয়া পাওয়ার হিসাব-নিকাশে জীবন অতিবাহিত করে দেওয়া। কিন্তু মানুষ এ জন্য সৃষ্টি হয়নি। তাকে একটি বিশেষ গুণ দেওয়া হয়েছে যার জন্য মানুষ সকল সৃষ্টির সেরা। সব মানুষের ভেতর তার নিজেকে আবিষ্কার করার বিশেষ ক্ষমতা বিল্ট-ইন করা হয়েছে। যে এই ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে নিজেকে জানতে পেরেছে সেই স্বার্থক। ইহকালের নরকে যে সুখী তার জন্য পরকালে জান্নাত। অর্থাৎ দোযখের আগুন থেকে তখনই পরিত্রাণ মেলে, যখন দুনিয়ার জীবনে আগুনকে জয় করা যায়। আগুনকে জয় করার অন্যতম উপায় হলো নিজেকে আবিষ্কার করা। আমাদের প্রত্যেকের ভেতর আমার আমিত্ব নামক এক খতরনাক ভাইরাস আছে। যা আমাদের ধ্বংসের মূল কারণ। আমার আমিত্ব থেকে বের হতে পারলে তবেই স্বার্থকতা।

ইবলিশের কথা খুব মনে পরছে। যে কিনা ইবাদত করতে-করতে জীন হতে ফেরেশতা সরদার হয়েছিল। অতপর শয়তানে পরিণত হল আমিত্বর কারণে। ফেরাউন, নমরুদ, হিটলার, অগণিত রাজা-বাদশাহ, শাসক, স্বৈরাচার, ফ্যাসিষ্ট কোথায় আজ তারা! সব ধূলিসাৎ হয়ে গেছে শুধুমাত্র এই আমিত্ব বোধের কারণে।



ইতিহাস তাদেরকে শ্রদ্ধায় স্মরণ রাখে যারা আমিত্ব ছেড়ে নিজেকে উজাড় করে। ইব্রাহীম আগুনে নিক্ষিপ্ত হলেন আর আগুন ফুলের বাগানে রূপলাভ করলো। এটা নিছক কোন মোজেজা নয়। এর দর্শন আরও গভীরে। কেন এই রোজা? বা কেন যাকাত, সালাত প্রথা? বা প্রার্থনা?

এর সবটাই হলো আমিত্ব বর্জন সাধনা। ইউসুফ কে দেওয়া হল চরম নিগৃহিত জীবন। পিতার অঢেল আদর ছেড়ে কুয়ায় নিক্ষেপ, দাস হয়ে নিলাম, অতপর জেল থেকে শুরু করে জীবনের অগ্নিবীণা তিনি অতিক্রম করে মিশরের অধিপতি হলেন আমিত্ব বর্জন করে।


সিধার্থকে দেয়া হয়েছিল রাজপুত্র'র জীবন। কোন এক এলোমেলো জোছনায় নিজেরে খুঁজে পেলেন তিনি। পথে নামলেন রাজপ্রাসাদ ছেড়ে। তারপরের টুকুন শুধুই অহিংসা লালন। জীবে দয়া পরিপালন।


আমরা আমিত্ব নিয়ে গর্ব করি অথচ সামান্য রোগব্যাধির কাছে প্রতিনিয়ত পরাজিত হই, আশঙ্কিত হই, ভীত হই। পারমাণবিক বোমা দাগিয়ে আমারা মনুষত্বের আমিত্ব প্রমাণ করি। অথচ সেই অহঙ্কারের ধণ বোমা মেরে এই চেনা শরীর-রে অমর করতে পারি না। এই হলো আমাদের আসল পরিচয়।

আমাদের জন্ম হয় কথিত সবচে নিকৃষ্ট পথ, যৌনাঙ্গ'র কারিকুলামে। আবার সেই পথেই আমাদের মোহ। অথচ জীবনের মূল রহস্য লুকিয়ে আছে এখানেই। আমার আমিকে নিয়ে গর্বের কিছুই নেই বরং আমিত্বকে উজাড় করে সকল জ্ঞানের উর্ধ্বে এসে মেনে নিতে হয় মরিয়ম কুমারী মা হয়েছিলেন।

অন্যদিকে বিজ্ঞানে আছড় করে কখনো ভেবেছেন বিষয়টা? একটা গাছের ডাল থেকে তো অন্যগাছের জন্ম হয়, কোষ থেকে জীবন সৃষ্টি হয়। স্যারোগেট বেবি হয়, টেষ্ট টিউবে হয়। তাহলে কুমারী মারি'র গর্ভ ধারণে ভ্যজাইনা ক্ষত হওয়া কেন লাগবে? পুরুষ যৌনাঙ্গ নিঃসৃত বীর্য কেন লাগবেই লাগবে?

কি অবিশ্বাসীর মত বলছি? কোরান তো অসংখ্যবার বলছে 'জ্ঞানীদের জন্য এর ভেতর রয়েছে নিদর্শন! সেই নিদর্শনের খোঁজ কতটা করি আমরা?

আমিত্ব থাকে নিজ সন্তানের পিতা-মাতা দাবী করার মাঝে। আমিত্ব থাকে সম্পদ নিজের দাবী করার মাঝে। জন্ম-মৃত্যু এই দুটোর কোনটাই যখন আমি নিয়ন্ত্রক নই তখন নিছক ক্ষণিকের প্রাপ্ত জ্ঞান ও সম্পদের অহমিকায় না থেকে বরং তা কল্যাণে ব্যয়ের মাঝেই স্বার্থকতা। আমাদের যত রাগ, অভিমান, দুঃখ, বেদনা, গ্লানি, লোভ, হতাশা, নিরাশা, অপমান, জিঘাংসা সবটা তখনই জাগ্রত হয়, যখন আমিত্বর উপর আঘাত আসে। আবার আমাদের যত সুখ, আনন্দ, প্রাপ্তি সবটাই আসে যখন আমিত্ব অর্জিত হয়। অথচ এই আমিত্ব বর্জন করলে জীবন হয়ে ওঠে সহজ-সরল, নির্ঝঞ্ঝাট।

নবী মুহাম্মদ তায়েফে গিয়েছিলেন দীন প্রচারে। সেখানে তিনি রক্তাক্ত হবার পরেও তায়েফবাসীর জন্য মুক্তি কামনা করেন। আমরা কী সেই আমার আমিকে বর্জন করতে সক্ষম হয়েছি?

হে ক্ষণিকের মুসাফির, তুমি দামী প্রসাধনী মেখে, দামী কাপড় পরে চলেছো দাওয়াতে। দামী খাবার খেতে সাথে নিয়েছো দামী উপহার। যোগী সেজে বসে দানবাক্স উন্মুক্ত করেছ- এটা আদতে তোমার সোশ্যাল ষ্টাটাস, লাইফ ষ্টাইল। কিন্তু তুমি কী আহাজারি শুনতে পাওনা যে পথ শিশুটি পথে তোমার জামার আস্তিন ধরে কিছু খেতে চাইছে? তুমি কি অবুঝ শিশুর জন্ম যন্ত্রণার কারণ বুঝেও অবুঝের মত আচরণ করবে? জীবনের দাবী মিটাতে ব্যার্থ হয়ে শরীর বেঁচা নারীর গায়ের দগদগে ঘা আর মনের বৈকল্যকে শুধুই ঘৃণা করবে? কোন এক শরীর বেচা মেয়ের সামান্য কোন জন্তুকে মমতায় জল পান করানো পরপোকারের জন্য তার বেহেস্তের কনফার্রমেসন কি অস্বীকার করবে?

যদি তাই হয় তবে তুমি মানুষ নও, তুমিও আমারই মতো দৃষ্টিশক্তি থেকেও অন্ধ যার চোখ শুধুই অশ্লিলতায় মুগ্ধ। বিজ্ঞান অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে এসেছে আমাদের যাপিত জীবনধারাকে। কিন্তু আবার এই বিজ্ঞান নিজেই অনেক পিছিয়ে আছে। বিজ্ঞান চাঁদে নিয়ে যেতে সক্ষম হলেও খন্ডিত চাঁদর শুকিয়ে যাওয়া পাথুরে নদীকে জুড়ে দেবার দুঃসাহসিকতা দেখাতে পারেনি।

আজকের যুগে বিজ্ঞান ছাড়া আমাদের জীবনের গতি অচল কিন্তু এই যুগেও বিজ্ঞানের ছত্রছায়া ছাড়াই জন্ম হচ্ছে, জীবন চলছে এমন অনেক সভ্যতা আছে। তাদের মাঝেও আমিত্ব আছে। আছে বিজ্ঞানকে জয় করার বাসনা। কিন্তু জয়টা হচ্ছে না কেন? কারণ, যে মানুষ নিজকে বুঝতে চায়, জানতে চায় তার জন্য উদাহরণ প্রয়োজন। মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়ে জন্ম যন্ত্রণা অধিক কষ্টের। যে পথ শিশুটি অভিশপ্ত জীবন নিয়ে বেড়ে উঠছে তাকেও জেনে নিতে হবে মহাসাগরের গহীনে যেসকল অজ্ঞাত প্রাণী আছে তাদেরও নির্দিষ্ট বাস্তুসংস্থান আছে।

দোষ অদৃশ্যের নয়, দোষ সেই খাদকের যে কিনা আমিত্বর ক্ষুধায় দুর্ভিক্ষ তছরুফ করে এনেছে। দোষ তারই যে সীমালংঘন করে চলেছে।

চলো আমিত্ববোধ নির্বাসনে দিয়ে একটু মানুষ হই। দেখবে ধর্ম স্বয়ং এসে হাজির হচ্ছে তোমার জীবনাচরণে। দেখবে, করুনাময় তার করুণাধারা বর্ষণ করছে তোমার রুক্ষ রুদ্র মরুভূমিতে।।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২২ রাত ১০:০৬
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×