হিজাব অপকর্ম থেকে বিরত থাকার রক্ষা কবচ, কিন্তু হিজাব পরিধান অপকর্ম করে কেন? এই প্রশ্নটা সবার মনে কম বেশি ঘুরপাক খায় এবং প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক বটে। প্রায়শই দেখা যায়, হিজাবধারী কোন নারী পার্কে বসে আপত্তিকর কাজ করছে, পকেটমার, রাস্তায় যৌন ঔষধ বিক্রি করে বোরখা পড়ে, পতিতা পতিতাবৃত্তি করে হিজাব পড়ে, এতোসব দেখেও কেন মানুষ প্রশ্ন তুলবেনা হিজাব অপকর্মের সহায়ক? প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। তারা বলবেই হিজাব অপকর্মের সহায়ক, বিরত রাখার রক্ষাকবচ নয়।
আমার মনেও প্রশ্ন জাগে, আমি উত্তর খুঁঝে বেড়াই, কেন হিজাব পরিধান করে অপকর্মে লিপ্ত হয়? হিজাবের কাজ তো বিকৃত যৌনতা থেকে রক্ষা করা , কিন্তু হচ্ছে তার উল্টো, কেন? হিজাবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অতি উত্তম, যদি না সে নারী হিজাব পরিধান করে উত্তম উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নয় বরং অপরাধ ঢাকার উদ্দেশ্যে, সহজে লোকের চোখে ধুলা দিয়ে নিজেকে ধরা ছোয়ার বাইরে রাখতে।
এখন আসি কেন হিজাব পরেও অপকর্ম করে বেড়ায়। কারণ অনেক মেয়ে হিজাব পরে পারিবারিক চাপের কারণে, বাবা মা ধর্মকর্ম পালন করে, মৌলভী বাড়ী, অনিচ্ছা সত্বেও সবার কাছে ধার্মিক পরিচয় পাকাপোক্ত করার জন্য হিজাব পড়ে, মাদ্রাসায় পড়লে অঘোষিতভাবে চাপ থাকে মেয়েদের উপর হিজাব পড়ার, কেওবা অন্যের দেখাদেখি পড়ে, বাজারে নানা স্টাইলের হিজাব পাওয়া যায়,যা পড়লে সাধারণ জামা কাপড়ের চাইতে বেশি আকর্ষনীয় মনে হয়, তাই অন্যের চোখে আকর্ষণীয় করার তোলার অংশ হিসেবে।
অধিকাংশ হিজাবধারী নারী পর্দার সঠিক বিধান, গুরুত্ব অথবা পালন না করার পরিণাম সম্পর্কে না জেনেই শুধু পারিবারিক বা প্রাতিষ্ঠানি অথবা সামাজিক চাপের কারণে পরিধান করে থাকে। তারা তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে অথবা অজ্ঞতাবশত গার্ডিয়ানদের চাপচাপিতে হিজাব পরিধান করে বলে যখনি সুযোগ পায়, গা থেকে হিজাব খসে পড়ে। যেমন বাড়ি থেকে দূরে কোন বান্ধবীর বাসায়, বিশ্ববিদ্যালয়, বিয়ে বাড়ীতে গেলে হিজাবের নিশানা আর খুঁঝে পাওয়া যায়না যেন বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়েছে।
যে মেয়ে বলে একদিন হিজাব পরিধান না করলে কিছু হয়না, সে আদতে জানেনা, একদিন কেন এক মিনিটের জন্যও (যেসব কারণে পর্দায় শিথিলতা আনা যায়, সেসব কারণ ছাড়া যেমন ডাক্তারকে অসুস্থ শরীরের বিভিন্ন অংগ দেখানো ইত্যাদি) পর্দার বিধান শিথিল করার কোন সুযোগ নাই অথবা বিরুদ্ধাচারন করাই তার উদ্দেশ্য! যে শিক্ষক বলে ক্লাসে পর্দা করা জরুরী নয়, তিনি আদতে জানেন না, তার ছাত্রীর জন্য তিনি গায়রে মাহরাম কিনা অথবা পর্দার বিরুদ্ধাচারণ করাই তার উদ্দেশ্য! যে মেয়ে কোন গুরুজনের কথা শোনেই হিজাব খুলে ফেলে, সে আদতে হিজাব পরিধান করতে চায়না অথবা হিজাবের অপমান করাই তার উদ্দেশ্য! হিজাব খুলেই মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ে বেড়ায়।
আমি খুব জোরের সঙ্গেই বলতে পারি, কোন মেয়ে যদি পর্দার শরয়ী বিধান সম্পর্কে আংশিক নয় বরং পরিস্কার জ্ঞান রাখে, বাস্তব জীবনে অনুশীলনের প্রচেষ্টা চালায়, উপলব্দি করে তা অবশ্য পালনীয়, তার দ্বারা অপকর্ম হতে পারেনা, তবে হতেও পারে তখনি যখনি সে শয়তানের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়, অনুশীলনে শিথিলতা অবলম্বন করে থাকে।
হিজাব পতিতা, চোরাচালানি, অপরাধীদের পোশাক ইত্যাদি ঢালাওভাবে মুখে না আওড়ায়ে ভেবে নেয়া উচিত, বুঝতে চেষ্টা করা উচিত, সমস্যা হিজাবের নয়, সমস্যা ব্যক্তির। হিজাব পরিধান করেও ব্যক্তির মনে শয়তানের প্ররোচনা কাজ করতে পারে, সবার আগে ভাবতে হবে, হিজাব ধারীও একজন মানুষ, অন্যান্য নারীদের মত তারও বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, একজন মানুষ একজন নারী হিসেবে তারও জৈবিক চাহিদা, তাড়না, শয়তান যা অবৈধ পন্থায় তাকে দিয়ে মেটাতে চায়, সে বিভ্রান্ত হয়। সে যদি একথা মনে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং স্মরণ করে পর্দা করার উদ্দেশ্যইতো এইসব যাবতীয় অনাচার থেকে বিরত থাকা, তাহলে বিরত থাকা তার জন্য হবে। এই জন্যই শয়তানের পক্ষে হিজাবের প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝে হিজাব পরিধান করে এমন নারীদের নারীদের বিপথগামী করা পাহাড়সম কঠিন।
সে সব মা বোনদের উদ্দেশ্যে বলছি, যারা হিজাবের অপব্যবহার করে থাকেন, আপনারা উলঙ্গ হয়ে চলাপেরা করেন, আপনার শাস্তি আপনার জন্যই, আল্লাহ আপনার প্রতি কর্মের হিসেব রাখেন, এটা বুঝেও যদি বেপর্দায় চলেন তা আপনার ব্যাপার, কিন্তু হিজাব পরে হিজাবের পবিত্রতা নষ্ট করবেন না! যে হিজাব পরে আপনি নষ্টামি করছেন, সে হিজাব পরেই কিছু মা বোন চরম প্রতিকুল পরিবেশে প্রাণান্তকর চেষ্টা সাধনাকরে যাচ্ছেন পর্দার বিধান পালন করতে। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন, তারাও আল্লাহর নিকট অসামান্য পুরস্কার পেয়ে ধন্য হবে। আপনারা বাদ থাকবেন কেন, আপনিও তাদের সাথে সামিল হোন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে নিজেদের ধন্য করুন।
আমার আজকের লেখাটি তাদের জন্য যারা হিজাবের অপব্যবহার করে থাকেন, তাদের জন্য নয় যারা হিজাবের টোটালি বিরোধী।
উল্লেখ্য যে, হিজবা মানে শুধু লম্বা বোরখা হতে হবে তেমনটা জরুরী নয়, বরং লম্বা এমন যেকোন কাপড়,যা দিয়ে শরীরকে ভাল ভাবে ঢেকে দেয়া যায়, যাতে পর্দার নিয়ম পুরোপুরি পালন করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৩