কে কাকে প্রতিষেধক দিয়ে সারিয়ে তুলবে যখন অধিকাংশ মানুষই মহামারিতে আক্রান্ত! প্রযুক্তি আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ, সেদিকে যাচ্ছি না, তবে ইন্টারনেট এক্সেসের কারণে সন্তানদের অপকর্মের শতভাগের ৯৮ভাগই জানে না গার্ডিয়ানরা, তেমনি করে স্বামী/স্ত্রী, ভাই-বোন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের পরস্পরের সিকিভাগ অপকর্মই জানতে পারে না।
এক সময় প্রেমে চিঠি বিনিময় হতো, তা ছিল সময়সাপেক্ষ এবং লুকিয়ে দেখা করা, কথা বলা ছিল আরো কষ্ট সাধ্য। তারপর আসল মোবাইল, যার মাধ্যমে অবৈধ প্রেমের সুযোগ বেড়ে গেলো, অন্যগামী/বহুগামী হওয়া অনেকাংশে সহজ হল কিন্তু ধরা পড়ে যাবার ভয়ও ছিল। বেশি সময় কানে মোবাইল ধরে রাখা, অথবা ওয়াইটিংয়ে থাকা অনেকের মনে সন্দেহের উদ্রেক করতো, তারপর মোবাইলে টাকা খরচের হিসাবও লাগত, তাতে করে গার্ডিয়ানদের পক্ষে অনেক সময় সম্ভব হতো বখে যাওয়ার আগেই সময়োচিত ব্যবস্থা নেয়া।
আর এখন সোস্যাল মিডিয়ায় সর্বজনার সহজ প্রবেশাধিকার সন্তানদের মতিগতি, স্বামী/স্ত্রীর লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়া সম্পর্কে মহা ধোঁয়াশায় ফেলে দিচ্ছে! একজনকে পাশে ঘুম পাড়িয়ে সারারাত তৃতীয় জনের সাথে ‘অফলাইনে’ চ্যাটিং বা ভিডিও চ্যাটিং করলেও ঘুণাক্ষরেও টের পাচ্ছে না। এভাবেই ছেলেসন্তান বাবা মাকে, ভাই বোনকে, বোন ভাইকে, শিক্ষক শিক্ষার্থীকে, শিক্ষার্থী শিক্ষককে প্রতিনিয়ত ঘুমে রেখে অবলীলায় অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে কিন্তু সামনে সবাই সাধু মহা সজ্জন!
প্রায় সবাই সমস্যাগ্রস্ত। মোবাইল-কম্পিউটারের হিস্ট্রি দেখলে বুঝা যায় পর্নোগ্রাফিতে প্রায় সবাই কম বেশি আসক্ত। তাই চলে হরদম লুকোচুরি খেলা! স্বামী বাহিরে ভন্ডামিতে পাকা খেলোয়াড়, ঘরে আদর্শ স্বামী। স্বামীর অবর্তমানে স্ত্রী এজমালি সম্পত্তি, স্বামীর উপস্থিতিতে সতী সাধ্বী! আগে প্রেমিক/প্রেমিকাকে মোবাইলে ওয়াইটিং দেখালে হাজারো কৈফিয়ত দিতে হত, চ্যাটিংয়ে ওয়াইটিংয়ে ধরা পড়ার ভয়টা অন্তত নেই তাই অসংখ্য জনের সাথে খুব নিরাপদভাবেই সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারছে। কখনো একে অপরের অপকর্ম দেখে ফেললেও জোর দিয়ে কিছু বলতে পারে না, কারণ চারিত্রিক দৃঢ়তা দুজনারি বড্ড নড়বড়ে।
এ অবস্থায় নিকটজনের নষ্ট হয়ে যাওয়ার একশভাগের মাত্র দুইভাগ আলামত দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবেন না! দোষটা শুধু তার একার নয় বরং সে বহমান কলুষিত সমাজের দোষে দূষ্ট। অন্যায়কাজে চতুর্মুখী হাতছানি এবং উপাদান সহজলভ্যতায় সে বেদিশা। নষ্ট সমাজের বিষ বাষ্পে তার পেট ভরে আছে, ফলে আপনার আদেশ, উপদেশ, নীতিকথা তার এক কান দিয়ে ঢুকে, অন্য কান দিয়ে ফুড়ুৎ করে বেরিয়ে যায়।
এমন গো ধরে থাকবেন না যে, 'সে আমার ছোট ভাই/বোন, অথবা সন্তান হয়ে এমন করবে, তা আমি কিছুতেই বরদাশত করব না!। তার মানে এও নয় যে, আপনি শাসন করবেন না। আপনার এখতিয়ার অনুযায়ী শাসন অবশ্যই করতে হবে। আর ‘শাসন করাতো তাকেই সাজে, আদর করে যে’।
কৃত অপরাধের জন্য যতনাটা বকা বা শাস্তি দেবেন, তার চেয়ে বেশি বেশি করে সাধারণভাবে ন্যায় অন্যায়ের বিষয়গুলো এবং দুজাহানে তার আশু পরিণতি তার মাথায় ঢুকিয়ে দিতে হবে, তাতে করে দুচারবার অন্যায়ে মিশে গেলেও নিশ্চয় সঠিক পথে ফিরে আসবে এবং ধীরে ধীরে ব্যক্তির মাঝে পরিবর্তন আসবে, সর্বোপরি সমাজটাকেই পরিবর্তন করতে পারলে তবেই আপনার উপদেশ তার কান আমলে নেবে।
হতে পারে সে আপনার সন্তান, আপনার স্ত্রী/স্বামী, ছোট/বোন, স্যোশাল মিডিয়ায় তার কাজ সম্পর্কে খোঁজ নিন, উপকারী জিনিসগুলোর সাথে পরিচয় করি দিন, পড়াশোনা সংক্রান্ত গ্রুপ-পেইজ-ওয়েবসাইট ভিজিটে বেশি বেশি উদ্বুদ্ধ করুন, প্রযুক্তির সদ্বব্যবহার করতে শেখান, আর সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম, সদা সৎসঙ্গ এবং উত্তম পরিবেশের ব্যবস্থা করুন। তাহলে স্যোশাল মিডিয়া তার জীবনে অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ হয়েই দেখা দেবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৪