সরকারবিরোধী তৎপরতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হলো কয়েকজন বিপ্লবীকে। প্রায় আট মাস জেল খাটার পর তাঁদের একদিন সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হলো। উদ্দেশ্য, গুলি করে মারা। করা হলোও তাই। সবাই মারা গেছেন। এখন পালা শেষের জনের। হঠাৎ এক ব্যক্তি ছুটতে ছুটতে এসে বললেন, তাঁদের শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েক সেকেন্ডের কারণে বেঁচে গেলেন শেষের জন। নাটকীয়ভাবে বেঁচে যাওয়া এই মানুষটি হলেন ফিওদর দস্তয়ভস্কি। বলা হয়ে থাকে, দস্তয়ভস্কি তাঁর লেখার মাধ্যমে পাশ্চাত্য জগৎকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিলেন। ১৮২১ সালের ৩০ অক্টোবর মস্কোতে জন্ম নেওয়া দস্তয়ভস্কি বড় হয়েছেন অদ্ভুত এক পরিবেশে। অদ্ভুত পরিবেশটা পেয়েছিলেন মূলত তাঁর বাবার কাছ থেকে। যিনি ছিলেন একজন রক্ষণশীল, কৃপণ ও মদ্যপায়ী ব্যক্তি। শিশু বয়সেই দস্তয়ভস্কি বাবার খামারে কাজ করতে আসা কৃষকদের দারিদ্র্য দেখে ব্যথিত হন। ১৬ বছর বয়সে হারান মাকে। একই বছরে ভর্তি হন ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে। পড়াশোনা শেষ করে শুরু করেন চাকরি। কিন্তু ধরাবাঁধা নিয়মকানুন তাঁর ভালো লাগছিল না, ক্রমেই হয়ে পড়ছিলেন হতাশ আর মনোযোগী হচ্ছিলেন সাহিত্যের দিকে। হতাশা একসময় এতটাই বেড়ে যায় যে শেষ পর্যন্ত চাকরি ছেড়ে দেন দস্তয়ভস্কি। তত দিনে তৈরি করে ফেলেছিলেন 'পুওর ফোক' নামে নিজের প্রথম উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি। এ উপন্যাসটি প্রকাশের পর ব্যাপকহারে আলোচিত ও সমালোচিত- দুই-ই হন দস্তয়ভস্কি। আর এভাবেই ইঞ্জিনিয়ার থেকে লেখক হয়ে যান ফিওদর দস্তয়ভস্কি। পুওর ফোক উপন্যাসটিতে তিনি মূলত দেশের গরিব কৃষকসমাজের কথা বলেছিলেন। এর পর তিনি লিখেছেন 'দ্য হাউস অব ডেড', 'ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট', 'লেটারস ফ্রম দ্য আন্ডারওয়ার্ল্ড'-এর মতো কালজয়ী সব গ্রন্থ। বয়স খুব বেশি না হলেও নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৮৮১ সালের ২৫ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন ফিওদর দস্তয়ভস্কি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৩:১০