somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খারেজী

০১ লা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খারেজী:

খারেজী অর্থ দলত্যাগী বা বিদ্রোহী। ৩৫ হিজরী সালে (৬৫৬খৃঃ) ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান উসমান (রাঃ) কতিপয় বিদ্রোহীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন।এরপর আলী (রাঃ) খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।মুসলিম রাষ্ট্রের সেনাপতি গভর্নরগণ আলী (রাঃ) এর আনুগত্য স্বীকার করেন। কিন্তু সিরিয়ার গভর্নর মুআবিয়া (রাঃ) আলীর আনুগত্য গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তিনি উসমান (রাঃ) এর হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেন। হামলাটা অতর্কিত ছিল বিধায় খুব স্বল্প সময়ে অপরাধীদের শনাক্ত করা এবং তাদের বিচারের আওতায় আনা আলী (রাঃ) এর পক্ষে কঠিন ছিল।উসমান (রাঃ) এর হত্যার বিচার দ্রুত শুরু না হওয়ায় আব্দুল্লাহ ইবনু সাবা মুসলিমদেরকে প্ররোচিত করে মুআবিয়া (রাঃ) এবং আলী (রাঃ) এর মধ্যে যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করে।শুরু হয় তাদের মধ্যে সিফফীনের যুদ্ধ। যুদ্ধের একপর্যায়ে মীমাংসার জন্য আলী (রাঃ) ও মুআবিয়া (রাঃ) এর পক্ষ থেকে যথাক্রমে আবু মূসা আশআরী ও আমর ইবনুল 'আছকে শালিস বা তৃতীয় পক্ষ নির্ধারণ করা হয়।তখন আলী (রাঃ) এর পক্ষের একদল যুবক এই শালিসকে বাতিল অবহিত করে আলী (রাঃ) এর দল ত্যাগ করে।ইতিহাসে এরাই খারেজী নামে পরিচিত। তারা সর্বদা ইসলাম সম্পর্কে নিজেদের বুঝ বা মতকেই একমাত্র সঠিক বলে মনে করে, কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তিকে কাফির এবং পরকালে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামি হবে বলে মনে করে,উসমান (রাঃ),আলী(রাঃ),উষ্ট্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীগণ,মুআবিয়া, সিফফীনের যুদ্ধের দুই শালিস আমর ইবনুল আছ (রাঃ),আবু মূসা আশআরী (রাঃ) এবং তাদের দুজনের বা একজনের বিচারকে যারা সঠিক বলে মনে করে, তাদের দৃষ্টিতে সকলেই কাফির এবং তাদের মতে যালিম রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা এবং জিহাদ করা ফরয,উপরন্তু জিহাদ আরকানে ইসলাম বা ইসলামের স্তম্ভের মতোই ফরযে আইন এবং সবচেয়ে বড় ফরয।ইতিহাসে এরাই চরমপন্থী বিদআতী দল হিসেবে পরিচিত।

চরমপন্থি খারেজীদের ৩৫ টি বৈশিষ্ট্য ও আলামত!

১. তারা হবে নবীন, তরুণ ও নির্বোধ, অথচ নিজেদেরকে অনেক জ্ঞানী ভাববে।

[বুখারী হা/৩৬১১, ৫০৫৭, ৬৯৩৪; মুসলিম হা/২৪৬২, ২৪৬৯]

২. তারা সর্বোত্তম কথা বলবে, কিন্ত সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ করবে।

[মুসলিম হা/২৪৬২; আবুদাঊদ হা/৪৭৬৭; আহমাদ হা/২০৪৪৬]

৩. বাহ্যিকভাবে সুন্দর কথা বলবে।
[বুখারী হা/৫০৫৭]

৪. মুখে ঈমানের কথা বললেও তাদের অন্তরে ঈমানের লেশমাত্র থাকবে না। [বুখারী হা/৩৪১৫]

৫. তাদের ঈমান ও সালাত তাদের গ্রীবাদেশ অতিক্রম করবে না।
[মুসলিম হা/২৪৬২]

৬. পথভ্রষ্ট হওয়ার পর এরা আর ঈমানের দিকে ফিরে আসবে না। যেমন তীর আর ধনুকের ছিলাতে ফিরে আসে না।
[বুখারী হা/২৪৬২]

৭. তারা হবে ইবাদতে অন্যদের চেয়ে অগ্রগামী কিন্তু নিজেদের ইবাদতের জন্য হবে অহংকারী। লোকেরা তাদের ইবাদত দেখে অবাক হবে।

[আহমাদ হা/১২৯৭২; ইবনু আবী আছিম, আস-সুন্নাহ হা/৯৪৫; আলবানী একে ছহীহ বলেছেন, যিলালুল জান্নাহ হা/৯৪৫]

৮. তাদের নিদর্শন হ’ল, তাদের মাথা থাকবে ন্যাড়া।
[বুখারী হা/৩৬১০; মুসলিম হা/২৪৫১; ইবনু মাজাহ হা/১৫৭]

৯. তারা মুসলমানদের হত্যা করবে আর কাফের, মুশরিক ও মূর্তিপূজারীদের ছেড়ে দিবে।
[বুখারী হা/৩৬১০; মুসলিম হা/২৪৫১]

১০. তারা দ্বীনদারিতার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করবে, এমনকি দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে।

[বুখারী হা/৩৬১০; মুসলিম হা/২৪৫১; আহমাদ হা/৭০৩৮; ইবনু আবী আছিম, আস-সুন্নাহ, হা/৯২৯-৯৩০]

১১. তারা মুসলিম শাসকদের নিন্দা করে, অপবাদ দেয় এবং তাদেরকে পথভ্রষ্ট ও কাফির বলে দাবী করে। যেমনটি খুওয়াইছারা রাসূল (সাঃ)-এর সাথে করেছিল।

১২. তারা মানুষকে কিতাবুল্লাহর দিকে আহ্বান করবে। কিন্তু সে বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞানই থাকবে না। অর্থাৎ কিতাবুল্লাহ দিয়ে দলীল গ্রহণ করবে। কিন্তু না বুঝার কারণে দলীল গ্রহণের ক্ষেত্রে ভুল করবে।

[আবুদাঊদ হা/৪৭৬৫; আহমাদ হা/১৩৩৩৮; মিশকাত হা/৩৫৪৩; আলবানী ছহীহ বলেছেন, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬৬৮]

১৩. তারা ইবাদতের ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করবে।

[আহমাদ হা/১২৯৭২; বায়হাক্বী, মাজমা যাওয়ায়েদ ২২৯/৬; আলবানী ছহীহ বলেছেন, যিলালুল জান্নাহ হা/৯৪৫]

১৪. তারা সর্বোত্তম দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। যেমন আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে করেছিল। [আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ৭/৩০৫]

১৫. তারা তাদের নিহতদেরকে জান্নাতী মনে করে। যেমন তারা নাহ্রাওয়ানের যুদ্ধের ময়দানে পরস্পরকে ‘জান্নাতমুখী’ ‘জান্নাতমুখী’ বলে ডাকছিল’।

[আল-বিদায়া ১০/৫৮৭]

১৬. ওরা এমন জাতি যাদের অন্তরে রয়েছে বক্রতা।

[আলে-ইমরান ১০৬ নং আয়াতের তাফসীর, মুসনাদে আহমাদ হা/২২৩১৩]

১৭. মতভেদ ও মতানৈক্যের সময় এদের আবির্ভাব হবে।
[বুখারী হা/৬৯৩৩]

১৮. তাদের উৎপত্তি পূর্ব দিক (ইরাক ও তৎসংলগ্ন) থেকে হবে।
[বুখারী হা/৭১২৩]

১৯. যেসব আয়াত কাফেরের জন্য প্রযোজ্য তারা সেগুলিকে মুমিনদের উপর প্রয়োগ করবে।

[বুখারী, হুজ্জাত কায়েম হওয়ার পর খাওয়ারেজ ও মুলহিদদের হত্যা করা অধ্যায়, ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত]

২০. তাদের আগমন ঘটবে শেষ যামানায়।
[আবুদাঊদ হা/৪৭৬৯]

২১. তারাও কুরআন ও সুন্নাহ দিয়েই কথা বলবে কিন্তু অপব্যাখ্যা করবে। [বুখারী হা/৩৪১৫] ফলে তারা আলেমদের সাথে সবচেয়ে বেশী শত্রুতা পোষণকারী হবে। প্রতিপক্ষের বিরোধিতা করতে গিয়ে জাল হাদিস পর্যন্ত রচনা করে।

[আল-খাওয়ারিজ আক্বীদাতান ওয়া ফিকরান ৫৪-৬৮ পৃঃ]

২২. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের নামে এ সম্পর্কিত শরী‘আতের দলীলগুলিকে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকে।

২৩. তারা কেবল ভীতি প্রদর্শন সংক্রান্ত আয়াতগুলি দিয়ে দলীল গ্রহণ করে। কিন্তু ভাল কাজের পুরস্কার বা উৎসাহমূলক আয়াতগুলিকে পরিত্যাগ করে।

২৪. তারা আলেমগণকে মূল্যায়ন করবে না। নিজেদেরকেই বড় জ্ঞানী মনে করবে। যেমন খারেজীরা নিজেদেরকে আলী, ইবনু আববাস সহ সকল সাহাবী (রাঃ)-এর চেয়ে জ্ঞানী দাবী করেছিল।

২৫. ওরা হুকুম লাগানোর ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে।

[আল-খাওয়ারিজ আউয়ালুল ফিরাক্ব ফী তারীখিল ইসলাম পৃঃ ৩৭-৩৮ ও ১৪৬]

২৬. তারাই সর্বপ্রথম মুসলিমদের জামা‘আত হ’তে বেরিয়ে গেছে এবং তাদেরকে পাপের কারণে কাফের সাব্যস্ত করেছে।

[ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৭৯/৩৪৯, ৭/৩]

২৭. তারা ক্বিয়াস (ধারণা বা অনুমান) ভিত্তিক কাজে বেশী বিশ্বাসী। [আল-মিলাল ওয়ান-নিহাল ১১৬/১]

২৮. তারা মনে করে যালেম শাসকের শাসন জায়েয নয়।
[মাকালাতুল ইসলামমিয়্যন ২০৪/১]

৩০. ওরা মুখে আহলে ইল্মদের কথার বকওয়ায করে কিন্তু তার মর্মাথ বুঝে না।
[আশ-শারী‘আহ ২৮ পৃঃ]

৩১. ওরা লোকদেরকে মুসলিম সমাজ হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আহ্বান জানায়। ফলে তারা নিজেরা মাদরাসা, শিক্ষা ইন্সটিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী চাকুরী এবং মুসলমানদের সাথে বসবাস করা পরিহার করে।

[দিরাসাতুন আনিল ফিরাক্ব ওয়া তারীখিল মুসলিমীন পৃঃ ১৩৪]

৩২. তারা আত্মহত্যার মাধ্যমে এবং অন্যকে হত্যার মাধ্যমে সীমালংঘন করতঃ রক্তপাত ঘটাবে।

৩৩. যতবারই তাদের আবির্ভাব হবে, ততোবারই তারা ধ্বংস হবে। এভাবে রাসূল (সাঃ) বিশ বার বলেন।

[ইবনু মাজাহ হা/১৭৪; আলবানী হাসান বলেছেন, ছহীহুল জামে‘ হা/৮১৭২; আরনাঊত্ব ছহীহ বলেছেন, মুসনাদ ৩৯৮/৯]

৩৪. ভূপৃষ্ঠে সর্বদাই খারেজী আক্বীদার লোক থাকবে এবং সর্বশেষ এদের মাঝেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে।

[ইবনু মাজাহ হা/১৭৪; আলবানী একে হাসান বলেছেন, ছহীহা হা/২৪৫৫]

৩৫. তারা হবে সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টি।
[মুসলিম হা/২৪৬৯, ২৪৫৭]
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৫৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×