somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুবু

০৯ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

--যেদিন আমার বাবা আম্মুর গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছিলো উফফ আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।সেদিন আমার জন্মদিন ছিল। আমি খুব খুব কেঁদেছিলাম।
তারপর যেদিন আব্বু আম্মুকে ছেড়ে চলে গেল তখন আমার বয়স ১০। যাওয়ার আগে বাবা আম্মুকে এতজোরে থাপ্পড় দিল যে আম্মু অনেকদিন দাতের ব্যাথায় চিল্লাতে লাগতো। বাবা এরপর আর আসে নি। হনহন করে সেই যে চলে গেল।
হঠাৎ আমি বড় হয়ে গেলাম। ১০ বছরের ছেলেটা অনেক বড়। আম্মু কাঁদতো। কিছুদিন আগে আম্মু কাঁদতে কাঁদতে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো, ঘুম থেকে উঠে দেখি আম্মু আমাদের ঘরের ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে।
--হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা রুবুর কথা গুলো শুনতে শুনতে কখন যে নিজেই কেঁদে দিয়েছে, টের পায়নি মনি।
---তুমি কাঁদছো?
--নারে রুবু, চোখে কি যেন পড়েছে তাই।
---অহহহ আচ্ছা আমি কি এখন খেলতে পারবো?
---নাহ একদম না। অনেক খানি কেটে গেছে, কাটা ঘা শুকায় নিক, তারপরে যাস।
---আমি তো এত শুয়ে থাকতে পারি না।
---যদি কলা,ডিম,রুটি দেই?
---উহু থাকবো থাকবো।
---তাহলে আমাকে মা বলে ডাকবি?
---নাহ আম্মু-আব্বু পঁচা। শুধু রাগ করে।
---আমি রাগ করবো না, তুই আমাকে মনি-মা বলে ডাকবি কেমন।
---আচ্ছা।মনি-মা
-- এখন ঘুমা, পায়ের ব্যান্ডেজ নতুন করে লাগিয়ে দিছি, আর ময়লা করবি না।
_---------------
রুবু বেশ দুষ্ট হয়ে গেছে। পায়ের কাটা অংশ প্রায় শুকিয়ে এসেছে প্রায়। হাসপাতালের এমাথা থেকে ওমাথা কিছুই বাদ রাখে নি সে। হাসপাতাল পুরো মাতিয়ে রেখেছে। যাদের ছোট ছোট বাচ্চা আছে তাদের সাথে খেলতে বসে যাচ্ছে।
কর্তব্যরত ডাক্তার এসে খুজে গেছে, পায়ের কাটা অংশ দেখতে।
এত দুষ্টু হলে চলে বল? ( রুবু কে বিছানায় শুইয়ে দেয় মনি) । আর দুই ভাল হয়ে থাক।
--কেন দুই দিন পর কি হবে?
--তোকে বাসায় নিয়ে যাবো। তুই বাসায় থাকবি।
--নাহ আমি তোমার কাছে থাকবো মনি-মা।
---হাসপাতালের কাউকে এভাবে রাখে না। বুঝছিস। নে শুয়ে পড়।
_----
হাত থেকে অনেক রক্ত পড়ছে রুবুর। ডাক্তার এসে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছে। জানালার কাচ ভেঙ্গে রুবুর হাতে ঢুকে গেছে।
প্রায় ৪ টা সেলাই দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হলো রুবুর।
চোখ দিয়ে ফোটা ফোটা পানি পড়ছে মনির।
তুই দেখে চলতে পারিস না। এভাবে হা-পা কাটা কি ভাল?
---মনি-মা আমি ইচ্ছা করে এমন করেছি, যেন তোমার কাছেই থাকতে পারি।
রুবু কে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে মনি। আপন সন্তানের চেয়েও বেশি মনে হয় রুবু কে।
মনি উঠে চলে আসে। মেডিসিন ঘরে যেতে হবে। রুবুও পিছন পিছন চলে আসে। মেডিসিন রুমের গন্ধটা কেমন বিষাক্ত। কিন্তু মনি-মার জন্য নাক কুঁচকে বসে থাকে রুবু।
কতবার মনি বলে রুবু তুই যা। কিন্তু কে শুনে কার কথা ।
টুলের উপর বসে আছে রুবু।
কাগজের বাক্স থেকে সিলভার কালারের বোতল বের করে মনি। সেটা তাকে তুলে রেখে কাগজে লেখে রাখে। আবার অন্য বাক্সের কাছে যায়..
রুবু-- ওই সিলভার বোলতে কি আছে মনি-মা?
---শরবত।
--ওগুলো কি করে।
--কাজে ব্যাবহার করে।
---কি কাজ?
---ঘুম পারানোর কাজে।
---আমি যদি খাই তাহলে এই হাসপাতালে থাকতে পারবো।
--"ব্যাস্ততার কারনে রুবুর প্রশ্ন টা বুঝে না মনি। শুধু হুম বলে উঠে।
--------
নাকের ভিতর বাম হাতের আঙ্গুল ঢুকিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ময়লা বের করছে রুবু। আর চোখ বড় বড় করে এদিক ওদিক দেখছে। হাসপাতালের সব মানুষ এত মলিন ভাবে থাকে রুবু কেমন যেন বিরক্ত লাগে।
শুয়ে পড়ে সে। কিছুক্ষন পর মনি-মা এসে রুবুর কপালে চুমু দিয়ে দেয়।
""ঘুমিয়ে পড় বাবু, কাল আমার ছুটি আছে, সকালে এসে একসাথে ঘুরতে যাবো কেমন""
দাত বের করে হাসে রুবু। তাকিয়ে থাকি মনি-মার দিকে।
বেশ মাঝ রাতে ঘুম ভাঙ্গে। তখনো কেউ কেউ জেগে আছে হাসপাতালে। বাম হাতে ভর করে বিছানা থেকে আসে।
মেডিসিন রুমের পাশের বাথরুমে যায়। পড়নের সার্ট গলা চিপে ধরে প্রকৃতির কাজে সাড়া দেয়।
কাজ শেষে বাম হাতের কানি আঙ্গুল দিয়ে নাক চুলকায়।
বাথরুম থেকে বের হয়ে সন্তপর্নে এগিয়ে আসে মেডিসিন রুমের দিকে। এদিক ওদিক চেয়ে দরজার লক ঘুড়ায়। নাহ তালা মারা হয় নি। তাড়াতাড়ি ঢুকে যায় ভিতরে।
হলুদ আলো জ্বলছে রুমের ভিতর। একটা ভ্যাপসা গন্ধ বের হচ্ছে রুম থেকে। ফ্যান চালু থাকায় গন্ধটা চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
খুক খুক করে কয়েক বার কেশে উঠে রুবু।
বাম হাত দিয়ে টুলটা আস্তে আস্তে রেখের কাছে টেনে আনে।
বুক আর বাম দিয়ে ভর করে টুলে উঠে দাড়ায় সে। সিলভার বোতল টা হাতে তুলে নেয়।
টুলের উপর বসে আছে রুবু। ডান হাতের বগলে সিলভার বোতল টা রেখে বাম হাত দিয়ে বার কয়েক চাপ দেয়। শক্ত চাপে বোতলের ছিপি খুলে আসে।
প্রচন্ড বিদঘুটে একটা গন্ধ নাকে আসে। অস্থির ভাবে কেশে উঠে রুবু। মুখ চেপে কাশতে থাকে সে। তাড়াতাড়ি বোতল থেকে শরবত মুখে ঢেলে দেয়।
হঠাৎ চোখ গুলো বড় বড় হয়ে উঠে রুবুর। হাত থেকে সিলভার বোতল পড়ে যায়। গলা থেকে কলিজা জ্বলতে থাকে রুবুর। কিন্তু মনি-মা বলেছিল এটা শরবত। তাহলে এমন লাগছে কেন।
দুই হাত দিয়ে নিজের গলা চিপে ধরে, জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে, অসহায় দৃষ্টিতে চিৎকার করার চেষ্টা করে , কিন্তু গোঙানি ছাড়া কিছু বের হয় না।
দুই পা দিয়ে ছটফট করতে থাকে.....
ফজরের আজান দিচ্ছে, বিষে কালো হয়ে যাওয়া রুবুর নিথর দেহ টা পড়ে আছে মেঝের উপর। মুখের কোনে একটা হাসি লেগে আছে। পাশে কার্বলিক এর সিলভার খোলা বোতল পড়ে আছে, গড়িয়ে পড়েছে কিছু তরল....
দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙ্গে যায় মনির। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে তার কপালে...
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×