বাংলাদেশ তো জিতে গেল। সাকিব তার অনাগত সন্তানের উপহারসরূপ ৫ উইকেটের মাইলফলকেও দাঁড়ালেন। তামিম ইকবাল ফিরে পেলেন নিজেকে। বাংলাদেশের ভক্তরা তাঁকে যেসব অভিযোগের আসামী বানিয়ে থাকেন, তা থেকে হয়ত এবার বের হয়ে আসবেন তিনি। মারকুটে চরিত্রের সাথে সংযমের মিশ্রণ, দলের বিপর্যয়ে দেওয়াল হয়ে দাঁড়ানো, সবই নতুন এক তামিমের প্রতিশ্রুতি।
মাশরাফি নিজের কিপটে অপবাদ সম্মানের সাথে ধরে রেখেছেন। আজকে কিপটেমির দৌড়ে সতীর্থদের পর্যন্ত পিছিয়ে রাখলেন। 2.16 ইকোনমি। সাব্বির আর মুশফিকের জুটির মত সুন্দর কিছু অনেকদিন দেখিনি (বাংলাদেশ অনেকদিন ওডিআই খেলে না) অনেকদিন দেখিনি টেলএন্ডারদের "ধুপধাপ লাগিয়ে দেওয়া"।
দেশে জঙ্গী এসেছে এবং বিস্তৃত হচ্ছে এটাও এখন নতুন কোন খবর নয়, খবর হতে চেয়েছিলেন মাঠের জঙ্গী। জঙ্গী নামিয়েছিল জিম্বাবুয়ে, জঙ্গীর নামার কথা ছিল আরও লোয়ার অর্ডারে, কিন্তু জঙ্গী নেমেছিল। জঙ্গী নেমেছিল ওপেনিং করার জন্য।
সরকার জঙ্গী দমন করতে না পারলেও শক্তহাতে জঙ্গী দমন করলেন আল-আমিন। আল-আমিনের উইকেট পাওয়াও একটা বড় ধরণের স্বস্তি।
লিটন দাশের ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাওয়া ছাড়া এই ম্যাচে বাংলাদেশের মন খারাপ করার কিছু নেই। তবে ওসব নয়, আমার ভাল লেগেছে আরেকটা জিনিস।
খেলার গতিপথ তো অনেক আগেই টের পেয়ে গেছিলো সবাই, বাংলাদেশের সাথে জিম্বাবুয়ে এখন আর শক্তিশালী প্রতিপক্ষও নয়। ভাল লেগেছে সাফল্যগুলো শান্ত মুখে গ্রহণ করার প্রবণতা। আগের বাংলাদেশ নেই, এ নতুন কোন কথা না। বড় দলগুলোকে হারানোর পরও উল্লাসে বাঁধ দেন এখন আমাদের ক্রিকেটারগণ।
সিনিয়র খেলোয়াড়দের শুধু খেলা শেষে বিজয়ের সময়ই না, খেলা চলতে থাকা অবস্থায়ও দেখা গেল সংযমী উদযাপন করতে। উইকেট পড়ছে, সাকিব নির্বিকার। শক্ত মুঠো করে একবার শুধু ঝাঁকালেন। উইকেট পড়ছে মাশরাফির বলে, মাশরাফি নির্বিকার।
বাংলাদেশ দলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলছে তারা এখন আর সেই ছোট্টটি নেই, জয়ের আনন্দেই নয় শুধু, সাফল্যের আনন্দেও তারা আত্মহারা হয়ে যায় না।
কারণ এই দলটা মাঠের বাইরে প্রচুর পরিশ্রম করছে। আর পরিশ্রম করলে ফল আসবেই।
সারা বছর পড়াশোনা করা ছেলেটা পরীক্ষাতে প্লেস করে খুশিতে ইয়াহু করে চিৎকার করে না।
তবে যেই ছেলেটা শেষ সাতদিন পড়ে প্লেস করেছে চিৎকারটা তো তাদের জন্যই।
বাংলাদেশ দলের পেছনে তাদের মানসিক আর শারীরিক শক্তি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করতে থাকা মানুষগুলোকে ধন্যবাদ।
ছবিঃ ক্রিকইনফো