somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরাধী(স্কুল জীবনের স্মৃতিময় কিছু ঘটনা)

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি তখন ক্লাস এইটে এ পড়ি।আমার স্কুলটার নাম ছিল গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুল।আমি আমার ক্লাসে মোটামুটি নতুন ছিলাম। তাই হয়তো ক্লাসে কথা কম বলতাম। সবাই আমাকে তাই শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট ভাবত।যেন আমি সাধাসিধে মানুষ ,আমি তাই কিছু মনে করতাম না ।যার যা মন চায় ভাবুক না।আমি সবাইকে আমার বন্ধু ভাবার চেষ্টা করতাম।আমার মনে আছে আমি যেদিন প্রথম স্কুলটায় যাই সেদিন এক জন ছেলে (নাম তিতাস) আমাকে বলে তুমি কি হিন্দু?
আমি একটু অবাক হলাম কারণ প্রথম দেখায় কেউ কাউকে তো এ রকম কথা জিজ্ঞাসা করেনা।
তারপরও হাসি মুখে বললাম না ভাই আমি মুসলমান।
-কিন্তু কেন ভাই?
-না আমাদের ক্লাসটা তো মালাউন মুক্ত তাই ভাবলাম এবার আবার কেউ হিন্দু এল নাকি?
আমি একটু হাসলাম। বললাম ও আচছা ঠিক আছে ।আমি বুঝতে পেরেছি।
এর মধ্য এ আমার অনেকের সাথেই পরিচয় হল।সবচেয়ে মজার বিষয় হল যে ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট ছেলেটি আমার ভাল বন্ধু হয়ে গেল।আমি লক্ষ্য করলাম এই ছেলেটি কে অন্য ছেলেরা কেন যেন অনেক ভয় পায়। কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম কেন ওকে সবাই ভয় পায়। সে অন্যদের উপর সরদারি করত। অন্যদের সাথে তার কিছু গোলমাল হলে ও তাদের কে মারতো। আচ্ছা আমি তো এখনো ওর নামই বলিনি।ওর নাম রকিব। আমি রকিবকে খুব ভাল বুঝতাম। রকিবও তার মনের অনেক কথা আমার সাথে শেয়ার করত। যাই হোক একটা গল্প বলি।
শুরুতেই আমি বলেছিলাম যে আমি বেশ শান্ত ছিলাম ক্লাসে।কারও সাথে দরকার ছাড়া খুব একটা কথা বলতাম না। কিন্তু আমার ক্লাসে কিছু ছেলে ছিল যারা আমাকে অনেক বোকা ভাবতো।ভাবত নতুন ছেলেটা তো একবারে বেকুব।চুপচাপ বসে থাকে। ওরা আমাকে নিয়ে অনেক মজা করত।ওরা আমাকে নিয়ে অশালীন কিছু কথা বলতো।আর নিজেরা পশুর মতো হাসতো।
আমার অনেক রাগ লাগত।কিন্তু কিছু বলতামনা।চুপচাপ থাকতাম।তিন জন ছেলের কথা আমি এখনো মনে করতে পারি যারা আমাকে নিয়ে সবসময় অনেক ফাজলামো করতো।তাদের নাম হল অমি,রাব্বি আর মোল্লা।মোল্লা সবচেয়ে বেশি দুষ্টামি করত।প্রচুর খারাপ কথা বেশি বলত।
একদিন চুপচাপ ওফ পিরিওডে ক্লাসে বসে আছি।অমি এসে আমাকে বলল
আচ্ছা তুমি কোনো টিচারের কাছে পড়?
আমি বললাম হ্যা পড়ি কেন?
-ও আচ্ছা।কার কাছে পড় তুমি?
-আমার বাসায় এক ভাইয়া আছে।উনার কাছে পড়ি।
তখন আমি আমাকে হটাত করে বলল তোমার বইতে একটা কথা লিখি। তুমি বাসায় গিয়ে তোমার স্যার কে জিজ্ঞাসা কর।এই বলে আমার বইতে সে খুব একটা খারাপ শব্দ লিখল।(কথাটা লিখা গেল না)
আমি আর মেজাজটা কন্ট্রোল করতে পারলাম না।আমি সাথে সাথে অমির কলার চেপে ধরলাম।
বললাম তুমি কি লিখলা?
-তুমি কি তোমার মাকে এই নামে ডাক?
বলেই দুইটা চড় মারলাম ওর গালে। সবাই বেশ অবাক।নতুন ছেলেটার এত রাগ।
এমন সময় বাংলা স্যার গোকুল স্যার আমাদের ক্লাসে এলেন।তিনি মারামারি করছি দেখে দু'জনকেই কাছে ডাকলেন।রকিব পুরো ব্যাপারটা স্যার কে বলল।
স্যার সব শুনে বললেন ক্লাসে নতুন কেউ দেখলে তোমাদের আর আনন্দ ধরে না?
বলেই মোল্লা ,অমি,রাব্বিকে অনেক মারলেন। আমাকে স্যার বললেন বাবা তুমি মন খারাপ করনা।
এই ক্লাসে অনেক ভাল ছেলে আছে।সবাই এরকম না।স্যারের কথা শুনে আমার চোখে পানি এসে যাচ্ছিল।
স্যার বললেন তুমি ব্যাপারটা হেড স্যারকে বলবে। ওরা আমার কাছে তখন মাফ চাইল।ক্লাসে আর ৭০ জন ছিল।সবাই দেখল।স্যারকে বললাম স্যার ওদের কে মাফ করে দেন।
স্যার নিজের চশমা খুলে পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছতে মুছতে বললেন ওর থেকে কিছু শেখো তোমরা। আমি পরে আর হেড স্যারকে ব্যাপারটা বলিনি।
স্যারের সেই কথা এখনও আমার মনে পড়ে।

শেষ কথা

সেদিনের পর থেকে আমার বন্ধুর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল।আমি ক্লাস ক্যাপ্টেইন হলাম এরপর।
আগের চেয়ে অনেক ফ্রী হলাম সবার সাথে।আর সেই তিন জন আমাকে দেখলে অপরাধীর মতো চেয়ে থাকতো।

আগামী ২৩ ডিসেম্বর আমাদের স্কুলের ৫০ বছর উপলক্ষে পুনর্মিলনী হবে। অনেক দিন পর স্কুলে যাব।স্কুলের কথা খুবই মনে পড়ছে। আবার স্কুলের ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা হবে।
ইমির
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:০৪
১৯টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×