শান্তিপ্রীয় এবং জনবহুল এ দেশটির গনপরিবহন খাতের সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। একদিকে যেমন ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে অন্যদিকে সাধারণ মানুষ ঠিকসময় যেতে পারছেনা তাদের নিদ্ধিষ্ট গন্তব্যে। সাধারণ মানুষকে এক প্রকার বাধ্য হয়েই গনপরিবহনের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে, হোকনা সেটি সল্পপাল্লার কিংবা দুরপাল্লার। এতেকরে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা , এক পরিসংখ্যানে দেখাযায় প্রতিবছর আমাদের দেশে গড়ে প্রায় ১২০০০ ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। এবং তাতে প্রান হানির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে, যেমন ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে ৫ হাজার ৬৪৫ জনের এবং ২০১৬ সালের চেয়ে ১৫০০ মৃত্যু বেড়েছে ২০১৭ সালে। পরিস্থিতি দিন দিন খারপের দিকেই যাচ্ছে।
কিন্তু কেন আমরা এত বেশি গণপরিবহনের উপর নির্ভরশীল? সোজা কথায় আমাদের এখনো তেমন কোন কিকল্প ব্যাবস্থা হয়ে উঠেনি তাই। অধিক জনসংখ্যার এই দেশে মটরসাইকেল বা বাইক সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা এখন সময়ের দাবি। এতেকরে গনপরিবহনের উপর চাপ কমবে এবং দুর্ঘটনার পরিমানও কমবে। কিন্তু মটরসাইকেল যে আমাদের মত সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। আমরা উন্নয়নশীল, কিন্তু আমাদের জীবনযাত্রার মান তুলনামূলক কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে? পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ অনুযায়ী ব্যক্তিগত মোটরগাড়ির মালিকানার হার বিবেচনায় ৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। আমরা যদি আমাদের পার্শবর্তী দেশগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখবো ভারতে প্রতি ২০ জনে একটি মটরসাইকেল প্রক্ষান্তরে বাংলাদেশে তা ১০৪ জনে একটি, এবং পাকিস্থানে এর পরিমান প্রতি ১৭ জনে একটি। এদেশে মটরসাইকেল বা বাইকের ব্যাবহার অাসানুরুপ না বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এটি এখনো সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসেনি। মোটরসাইকেল শিল্পের যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি নাহওয়ায় এখানে পর্যাপ্ত বিনোয়গ আসেনি। এর ফলে আমদানিকারকদের গুনতে হচ্ছে চওড়া শুল্ক যা একেবারেই বিরল। বাংলাদেশে বিভিন্ন হারে বিভিন্ন স্তরে এ শিল্পের আমদানিকারকরা শুল্ক প্রাদান করে আসছে। যেমন-
যারা বাংলাদেশে মোটরসাইকেল শিল্লের কাঁচামাল আমদানি করে দেশেই প্রস্তুত করছে তাদেরকে ৩৮% কর প্রদান করতে হয়, যেমন এ পদ্ধতিতে রানার অটোমোবাইলস মোটরসাইকেল উৎপাদন করে আসছে।
যারা ইঞ্জিনসহ সব যন্ত্রাংশ আলাদাভাবে এনে দেশে সংযোজন করে, তাদের ৮৯% কর প্রদান করতে হয়। হিরো, বাজাজ, টিভিএস সহ আরো অনেক কোম্পানিই এ পদ্ধতি অনুসরন করে আসছে।
এবং যারা সম্পূর্ণ তৈরি মোটরসাইকেল আমদানি করে তাদেরকে সব মিলিয়ে ১৫১% কর প্রদান করতে হয়। ইয়ামাহা (এ.সি.আই লিমিটেড) সহ আরো অনেক কোম্পানিই এ পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে।
এরফলে মোটরসাইকেলের দাম হয়েউঠে আকাশচুম্বি, যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। উদহারণ সরুপ নিম্নে একটি সাধারণ মটরসাইকেলের মূল্যের তারতম্য দেখুন---
আর মধ্যম মানের আধুনিক মটরসাইকেলতো অনেকটা সবারই ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। দেখুন বাংলাদেশে কতজন এ বাইকটি কেনার ক্ষমতা রাখে। মূল্য দেখলে মনেহয় মঙ্গলে যাওয়ার বাজেট। অথচ অনেক উন্নত দেশে তা একেবারেই সাধারণ এমনকি আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারতেও।
প্রশ্নটা হচ্ছে কেন আমাদেরকে এতটা দাবিয়ে রাখা হচ্ছে? সরকারি আমলা, এম.পি, মন্ত্রিরা তো বিনা শুল্কে পৃথিবির সবচেয়ে বিলাস বহুল গাড়ি নিয়ে আসছে, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো দেশ। আমরা কেন সামান্য একটা মটরসাইকেল দিয়ে বাচ্চাকে স্কুলে কিংবা নিজের অফিসে যাতায়ত করার মত ক্ষমতা রাখিনা।
দু:খ্য হয় যে, উনাদেরই পরিচালিত আকাশপথ (বিমান-বাংলাদেশ), নৌপথ (বি-আই-ডব্লিউ-টি-এ), স্থলপথ (বি-আর-টি-সি) সবপথেই উনারা লোকশান গুনে বন্দুকটা আমাদের ঘাড়েরেখেই বড় বড় বুলি পুটাচ্ছেন।
এতোকিছুর পরেও আমাদের দেশে বাড়ছে মোটরসাইকেলের চাহিদা বাড়ছে বিক্রয়, সিটি ভাবতেও ভাললাগছে। মার্কেট রিসার্চ নামের বেসরকারি এক সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন প্রতি বছরে গড়ে প্রায় দুই লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। আর্থিক দিক হিসাবে এই বাজারের আকার প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার। বি.আর.টি প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ঢাকায় নিবন্ধিত হয়েছে ৩২ হাজার ৫৬২টি মোটরসাইকেল। অর্থাৎ প্রতি মাসে ৮ হাজার ১৪০ আর প্রতিদিন ২৭১টি করে নতুন মোটরসাইকেল নিবন্ধন নিয়েছে।
বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের মূল্য সহ তথ্যাদি -
এটি আমার প্রথম পোষ্ট, কোন রকম ভুল হলে দয়া করে ক্ষমা করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৪৬