somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিপাইমুখ, টেকনিক্যাল দিকটা চিন্তা করুন, কার ক্ষতি কে করছে?

২৭ শে জুন, ২০০৯ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিপাইমুখ বাঁধ। আসলে কি হতে পারে বাঁধ নির্মাণের ফলে? আমরা অনেকেই মিডিয়াতে পড়ছি। প্রতিনিয়ত জানতে পারছি। আসুন টেকনিক্যালি ব্যাপারটা একটু জেনে দেখি।

খুব সংক্ষেপে বলব। ফারাক্কা বাঁধ আর টিপাইমুখ কিন্তু এক না। এটা একটু খেয়াল রাখতে হবে। ফারাক্কা ব্যারেজ পৃথিবীর সব থেকে বড় বাঁধ যেটা নির্মাণ করা হয়েছিল, গঙ্গার পানিকে বাংলাদেশে ঢুকতে না দিয়ে কোলকাতার হুগলি নদীতে ডাইভার্ট করার জন্য। অনেকে মনে করেন ফারাক্কা দিয়ে পানি আটকে ভারতীয়রা সেচ কাজ করবে। আসলে তা নয়, এই বাঁধের কাজই হচ্ছে পানিকে ডাইভার্ট করে দেওয়া। বাংলাদেশের সাথে যুক্তি মোতাবেক ভারত একটা নির্দিষ্ট পরিমান পানি প্রতিবছর বাংলাদেশকে দিবে।

যদিও তা তারা করে না। ভারত বাঁধ দিয়ে হুগলিতে পানি দিত, কারণ হুগলিতে প্রাকৃতিক ভাবে গঙ্গার পানি যেত না। ফলে নদী শুকিয়ে যাচ্ছিল। এদিকে এই বাঁধ নির্মাণের ফলে গঙ্গার অতিরিক্ত পানি হুগলিতে হুরমুর করে ঢুকে পড়ে, তার ফলে সেখানে বন্যা হয় প্রতিবছর। ভারত তখন এই অতিরিক্ত পানিকে বাংলাদেশের দিকে পাঠিয়ে দেয়। বাংলাদেশের নদীগুলো তখন ভরাট হয়ে বন্যা হয়। ব্যাপারটা উভয় সংকট। এখন কথা হলো, এই বাঁধ নির্মাণের ফলে আসলে কে কতটা লাভবান হয়েছে?

বাঁধ নির্মাণ না করে নদী ড্রেজিং করলে হুগলী শুকাত না। আর অতিরিক্ত পানি প্রবাহের ফলে বন্যাও হত না। ব্যাপারটা খুব সাধাসিধা। ভারত তা না করে বাংলাদেশের উপর তাদের পানিকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করল, যা একটা বড় দেশ হয়ে ছোট দেশের প্রতি জঘন্য আচরণ।

এবার আসি টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে। টিপাইমুখ বাঁধের স্ট্রাকচারটা ভালো করে লক্ষ্য করলাম। এটা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নির্মীত হচ্ছে। এটাতে নদীর পানি ডাইভার্ট করার কোন সিস্টেম নাই। তবে মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকটা বাঁধে একটা নির্দিষ্ট পরিমান পানি ধরে রাখার ক্ষমতা থাকে। টিপাইমুখ বাঁধের এই ক্ষমতা কতখানি তা আমরা জানি না। তবে মোটামুটিভাবে ধরে নেওয়া যায়, অনেক বেশি। কাপ্তাই লেকে যে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল, তাতে সম্ভবত এগার হাজার কিউবিক মিটার পানি ধরার ক্ষমতা ছিল। যে পানিকে ছেড়ে দিলে, আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। অনেক মানুষ তাদের বাড়ি ছাড়া হয়। এক হিসেবে ৪০ হাজার চাকমা আদিবাসীকে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। কাপ্তাই বাঁধ দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন শুনেছি বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আসলেই অনেক ক্ষতি হয়। নদীর পানি একসময় তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলে। কাপ্তাই বাঁধের ফলে আমাদের দেশের সে এলাকার অনেক জীব বৈচিত্রের ক্ষতি হয়েছে।

টিপাইমুখ বাঁধ হলেও ঐ এলাকার হাজার হাজার মানুষের ক্ষতি হবে। এবং একসময় এ বাঁধের কার্যকারিতা হারাবে। তখন কিন্তু বাঁধ ঠিকই থাকবে, অথচ, যা ক্ষতি হবার হয়ে যাবে।

কথা হলো, বাংলাদেশের নদীগুলোতে এর প্রভাব কী হতে পারে? এটার দু'টা ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে। প্রথমটা হলো, এখানে কোন ব্যারেজ নির্মিত হচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশের নদীগুলো প্রাথমিকভাবে পানি পেতে পারে। তবে সেটা কয়েকবছরের জন্য। এরপরে টিপাইমুখ দিয়ে পানি আসা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন নদীগুলো শুকিয়ে যাবে।

দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হলো, ভারত টিপাইমুখে পানি আটকে রাখতে পারবে না। পানি ছাড়তে তাদের হবেই। কিন্তু খেয়াল করুন, পানি ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে, তাহলে বাংলাদেশে সে পানির যতসামান্যই আসবে। এতে আমাদের জীব বৈচিত্র, কৃষি, এবং তথাপি নদী পথের হাজার হাজার প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি হবে। বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল একটা মরুভূমিতে পরিণত হবে। ভেবে দেখুন...

বাংলাদেশের বৃহত্তম স্বার্থে আমি বলতে চাই, সরকারি দল আর বিরোধিদলকে ঐক্যে আসতে হবে। এখন ঝগড়া করার সময় নয়। এখন কাজ করার সময়। আমাদের আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। মুছে ফেলতে হবে পূর্বে কে কী করেছে, সেইসমস্ত চিন্তা।

সরকার বরাবরই বলেছে এই বাঁধের ফলে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হবে না। বাংলাদেশের তথাকথিত পানি বিশেষজ্ঞ বলে যে কথা ভারতীয় হাইকমিশন বলেছেন, তা আসলেই সত্য। তার বলা উচিৎ ছিল, সরকারি তথাকথিত পানি বিশেষ অজ্ঞরা মনে করেন এই বাঁধ ক্ষতি করবে না।

২৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×