somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার শিক্ষা জীবন

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে হটাৎ কেন যেন আমার শিক্ষাজীবনের গল্প বলতে ইচ্ছা করছে। পুরোটা ১বারে লিখতে গেলে পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাচ্ছেচ্ছে তাই ২ভাগে লিখছি।এটা ১ম পর্ব.

ক্লাস ৫ এ অল্পের জন্য বৃত্তি পায়নি। তবে বার্ষিক পরিক্ষাতে ৫ম হয়েছিলাম। ছাত্র হিসেবে সম্ভবত খারাপ ছিলাম না। ঐ সময়ে ক্লাশ সিক্সে ১মে সবাইকে ভর্তি করিয়ে নিত।তারপর ১ মাস পর পরিক্ষা নিয়ে রেজাল্ট অনুসারে রোল নাম্বার দেওয়া হত। আমার ঐ পরিক্ষার আগের ৩দিন আমি মামার বিয়ে উপলক্ষে নানা বাড়িতে মজায় ছিলাম। পরিক্ষার আগের দিন সন্ধ্যায় চাচা মনে করিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত আমার মনেই ছিল না যে পরদিন পরিক্ষা! যাইহোক, মামার বিয়েতে সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করে শক্তি সব শেষ করেরে ফেলেছিলাম বলে রাতে পড়তে বসেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।পরদিন পরিক্ষার হলেও পৌঁছায় ১৫মিনিট পরে। পরে রেজাল্টে দেখা যায় আমার রোল হয় ২০,এবং ক্লাশ ৫এ রোল ১ হওয়া মেয়েটার রোল হয় ২৫!!! অথচ আমি কিছু না পড়েড়েই পরিক্ষা দিয়েছিলাম!!! বাজে প্রিপারেশন নিয়ে ভাল পরিক্ষা দেওয়ার অভ্যাস আমার এখনো আছে।

যাই হোক,১বছর গ্রামের স্কুলে পড়ার পর পরিবারের ইচ্ছায় ক্লাস ৭ এ সরকারি স্কুলে ভর্তি পরিক্ষা দিয়ে পরিবারের ১ম সদস্য হিসেবে টিকেও যায়। তারপর গ্রামের স্কুলের স্যারদের নিষেধ শর্তেও সরকারি স্কুলে ভর্তি হই।এতে স্যারেরা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন, আর এর প্রভাব পড়ে আমার পড়ালেখার উপরে। ক্লাস সেভেনে বিশেষ বিবেচনায় পাশ করে ক্লাশ ৮এ উঠি।তারপর ক্লাস ৮এ ২বার ফেল করায় নিয়মনুসারে সরকারি স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেয়। পরে অন্য স্কুলে ক্লাস ৯এ ভর্তি হই।সেই হিসেবে বলা যায় আমি দুর্লব শ্রেনীর একজন যে ক্লাস ৮ পাশ না করেই অর্নাস পাশ করে ফেলছে :p :p শিক্ষকদের অসন্তুষ্টি যে একজন ছাত্রের উপর কেমন প্রভাব ফেলে সেটা ঐ সময়ে খুব করুনভাবে বুঝতে পেরেছিলাম,তাই এখন সবাইকে পরামর্শ দি ছাত্র জীবনে এমন কিছু না করার জন্য যাতে শিক্ষকরা অসন্তোষ হয়।

মূল বিষয়ে ফিরে আসি, ক্লাস ৯এও ৪বিষয়ে ফেল করেও বেসরকারি স্কুল বলে ক্লাস ১০এ উঠে যায়। বিশ্বাস করবেন? ক্লাস ৯এই আমি সর্বপ্রথম ইংরেজি গ্রামারের কমন বিষয় "টেন্স" বুঝি এবং শিখি!! এরপর এসএসসি পরিক্ষার টেস্ট পরিক্ষাতে ৩বিষয়ে ফেল করেও, এসএসসি পরিক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাই। এবং জীবনে ১ম বারের মত ৩.২৫ পয়েন্ট নিয়ে সববিষয়ে পাশ করি। ওহ্ আরেকটা বিষয় মিস করে গেলাম। ক্লাস ৯এ থাকতে বাসায় যে টিচারটা আমাকে পড়াতে আসতে আসতেন তিনি আমি জীবনেও পাশ করতে পারবো না বলে আমাকে পড়ানোই বাদ দিয়ে দেন,এবং আমি এসএসসি রেজাল্টের দিন ওনার সাথেই সবার আগে দেখা করি ;) আরেকটা মজার বিষয়কি জানেন, আমি আমার জীবনে কোন দিনও কোন প্যারাগ্রাফ এবং রচনা a2z শিখি নি ;)

বাসার কাছেই কলেজ থাকলেও সেখানে ভর্তি না হয়ে সবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ৭ কিলো দুরের কলেজে ভর্তি হই। কারণ ঐ সময়ে আমি নিজেকে প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম,পারিবারিক পরিচয়ে পরিচিত না হয়ে নিজের পরিচয়ে পরিচিত হতে চেয়েছিলাম যেটি বাসার পাশের কলেজে সম্ভব ছিল না। এখন পিছনে ফিরে তাকালে মনেহয় আমি সফল। কলেজে আমার নিজের পরিচয়েই পরিচিত হতে পেরেছি,নিজের ছাপ রেখে আসতে পেরেছি। ইন্টার ১ম বর্ষে বেশ ভাল রেজাল্ট করায় কলেজে প্রিন্সিপাল আমাকে এইচ এসসিতে A+ এর টার্গেট দেয়। আর আমি??? এইচ এসসি পাশ করি ২.৩০ পয়েন্ট নিয়ে!! আর এখন পোলাপাইন দেখি অল্পের জন্য A+ না পেলে সুইসাইড করে!!! রেজাল্টটা এতটাই অপ্রত্যাশিত ছিল যে আমি নিজেই হতাশ হয়ে যায়,তবে পরিবারের পূর্ণ সাপোর্ট পাই। রেজাল্টের লজ্জায় ১মাস পরে কলেজের টিচারদের সাথে দেখা করতে যায়। আমার সৌভাগ্য টিচারদের কাছ থেকেও মেন্টালি সাপোর্ট পায়।

এরপর ঠিক করি অনার্স না করে ইন্টরিউর ডিজাইন নিয়ে পড়ালেখা করবো। সেজন্য প্রতিষ্টানের সাথে কথাবলা বাসা ঠিক করা সবই করে ফেলি। কিন্তু শহরে বাসায় উঠার আগেই ইলিয়াস আলী গুম হয়ে দেশের পরিস্তিতি খুব খারাপ হয়ে যায় বলে সেটা আর করা হয়ে উঠেনি। আবার ঐ দিকে অনার্সে ভর্তি হই নি বলে পুরো ১ বছর বাসায় বেকার বসে থাকি। ঐ সময়ে খুব ডিপ্রেস্টড হয়ে যায়। নিজেকে হারিয়ে ফেলি,হাসিখুশি আমি কিছুটা গম্ভির হয়ে যায়।খুব বিরক্ত লাগতো সবকিছু। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, যে আমি সবাইকে মেন্টালি সাপোর্ট দিতাম,সাহস জোগাতাম সেই আমাকেই অন্যের সাপোর্ট নিয়ে চলতে হয়েছিল :( এখানেই আমি ফেসবুকের ২ জনের অবদানের কথা ভুলতে পারবো না। একজন Jadid ভাই আর আরেকজন একটা বড় আপু ওনার নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। ওনারা সময় নিয়ে আমার কথা শুনে সাহস জুগিয়েছিলেন বলেই আমি আজকের আমি। আবার মূল বিষয়ে ফিরে আসি, ইন্টরিউর ডিজাইনে যেহেতু পড়া হল না,তাই ফ্যামিলি থেকে বললো অনার্সে ট্রাই করার জন্য এবং পাশাপাশি অন্য কোর্স গুলোও করার জন্য। আমিও ভাবলাম বসে না থেকে ট্রাই করে দেখি কি হয়। ভালভাবে পরিক্ষা দিলাম, এবং আল্লাহর রহমতে হিসাববিজ্ঞান ও চান্স পেয়ে যায়। তারপর আর কি জীবন চলছে জীবনের গতিতে। ছোটবেলা থেকেই আমি সবসময় সমসাময়িক সবার থেকেই এগিয়ে থাকতে চেয়েছি,আর যখন তা পারি না তখন একটু হতাশা আসে,তবে ভেঙ্গে পড়ি না। এই কারণেই যখন চারপাশে তাকিয়ে দেখতাম আমার আশে পাশের সবাই কিছু না কিছু করছে, কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছি না তখন নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগতো। তারপর একদিন হটাৎ করেই বিজনেসের আইডিয়াটা মাথায় এল এবং খুব বেশি চিন্তাভাবনা না করেই কাজে নেমে পড়ি। ভালই আছি এখন।

আমার পরিক্ষার এমন বাজে রেজাল্ট নিয়েও অনার্সে একাউন্টিং এ পড়ছি,আবার আমার ফ্রেন্ডরাই A+,A পেয়ে আমার সাথেই পড়ছে। তাই আমি সবসময় মজা করে বলি "তোদের এই জিপিএর আদো কি কোন দাম আছে?তোরা যে এত্ত সিরিয়াস হয়ে এত্ত পড়ালেখা করলি তার লাভটা কি হল? আমার মত রেজাল্ট করা একজনের সাথেই তোদের পড়তে হচ্ছে"" :p

সবাই আমাকে বলে যে লাইফে একটু সিরিয়াস হওয়ার জন্য, একটু মনোযোগি হওয়ার জন্য। আমি বলি,লাভ কি?? এভাবে চলেই আমি এই অবস্থানে আসছি,আমি আমাকে নিয়ে খুশি,আমার ফ্যামিলি আমাকে নিয়ে খুশি। দ্যাটস ইট

হয়তো বলতে পারেন যে একটু সিরিয়াস হলে জীবনে এই ধাক্কাগুলো আমি খেতাম না,একটু সুন্দরভাবে লাইফটা চালাতে পারতাম।আর এখানেই সবার সাথে আমার পার্থক্য। আমি মনে করি এই ধাক্কাগুলো আমার প্রয়োজন ছিল,এই ধাক্কা গুলোর কারণে আমি কিছুই শিখেছি,অনেক শক্ত হয়েছি যা আমাকে প্রফেশনাল লাইফে প্রচুর হেল্প করবে। এই ধাক্কাগুলোর কারণেই আমি আজকের আমি।

ভাল থাকবেন

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১২
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×