কিছুদিন পূর্বে বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে হাসান কালবৈশাখীর একটি পোষ্টের কিছু জবাব দিয়েছিলাম।
হাসান কালবৈশাখীর লেখার লিনক
Click This Link
এবং আমার জবাব এর লিংক
Click This Link
আজ একই ঘটনা নিয়ে হাসান কালবৈশাখীর লেখা আরেকটা লেখার জবাব দিচ্ছি।
Click This Link
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন, "আসলে সেদিন সকালে সত্যই কি ঘটেছিল তা হয়তো কোনদিনও জানা যাবেনা।
বেচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শি সেনা কর্মকর্তাদের টিভি তে বক্তব্যে দরবার হলের প্রথম দিকের ঘটনা গুলো অস্পষ্ট রেখে শেষের দিকে সৈনিকদের আসন ত্যাগ করে পরে অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে এসে এলোপাথারি গুলিবর্ষনের কথাই বার বার বলা হয়েছে।
কিন্তু ২৬ তারিখের যুগান্তর, মানব জমিন, নয়া দিগন্ত, আমার দেশ প্রভৃতি পত্রপত্রীকাগুলোতে কিছু বেঁচে যাওয়া BDR সদস্য, দুজন বেঁচে যাওয়া সেনা কর্মকর্তা যারা সেদিন দরবার হলের প্রত্যক্ষদর্শি। তারা বিস্তারিত বর্ননা দেন। বর্ননা তে অতিরঞ্জন ছিল, খন্ড খন্ড বিবরন গুলো বিশ্লেষন করে আসল সত্যই কি ঘটেছিল সেটা বোঝা মুসকিল।
একজনকে উচ্চস্বরে ধমক ও মারধরের মত ঘটনা। ডিজি সাকিলের পিস্তল উচিয়ে উচ্চস্বরে কাকে যেন কি বলছে. বেয়াদব দুটোকে কোয়াটার গার্ডে আটকে রাখার নির্দেশ। একজন সৈনিকের স্টেজের মেঝেতে লুটিয়ে পরা। আরেকজন পিস্তলের ফাঁকা গুলির শব্দে জানালা দিয়ে পলায়ন। উপস্থিত সৈনিকদের একযোগে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করা। এর পর সবাই হল ছেড়ে চলে যাওয়া।
মানবজমিন এ এক সৈনিকের বক্তব্যে সাকিলের পিস্তল থেকে গুলিবর্ষনের কথা বলা
হলেও এটা অতিরঞ্জিত বক্তব্য বলেই মনে হচ্ছে। অন্যান্ন সুত্রে এরও কোন সত্যতা পাওয়া যায়না। হয়তো সাকিলের হাতে কোন অস্ত্রই ছিলনা। কারো কারো বক্তব্যের উধৃতি দিয়ে কিছু পত্রীকায় বলা হয় মেঝেতে লুটিয়ে পরা সৈনিকটি একটি সাবম্যেশিনগান উঁচিয়ে হুমকি দিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রথমদিন বিভিন্ন চ্যানেলে দেয়া বিবরন গুলো বিশ্লেষন করে এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। এই অভিযোগ অমুলক, কারন পিলখানার সকল অস্ত্র ও গুলি পৃথকভাবে দুটি ভিন্ন অস্ত্রাগারে সুরক্ষিত ছিল। কিছু অফিসারের ব্যক্তিগত মোবাইলে ধারন করা ছবিগুলোতে কোন অস্ত্রধারি সৈনিক দেখা যায়নি। ছবিতে মেঝেতে পরে থাকা সৈনিকের সাথেও কোন আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়নি।
পরে বিশেষ আদালতে সেনা কর্মকর্তারা সাক্ষ্যে এগেয়ে কথা বলতে আসা দুই সৈনিককে অস্ত্রধারী বলা হয়েছে, একজন সৈনিক লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে বলা হয়। এ সময় এক রাউন্ড গুলিবর্ষনের শব্দ শোনা যায়,(গুলির শব্দ সম্ভবত পিস্তলের, সাব-মেসিনগানের হলে একপসলা গুলি হত) আর অপর সৈনিকটি গুলির শব্দের সময় দৌড়ে জানালা ভেঙ্গে পালিয়ে যায় বলা হয়। আদালতের শুনানিতে কে গুলি করলো এ কথার কোন জবাব জানতে চাওয়া হয়নি।
এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ডিজি সাকিল অকারনে ফাঁকা গুলিবর্ষন করলে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হয়। সাধারন সৈনিকরা সাভাবিক ভাবেই ভুল বোঝে। যে লুটিয়ে পরা সৈনিকটি বুঝি শাকিলের গুলিতেই মারা গেছে।"
দাদা, আপনার নিজের লেখায় আমার আন্ডারলাইন করা অংশটুকু দেখুন। আপনার কি মনে হচ্ছে না যে আপনি নিজেই দুই ধরনের কথা বলছেন? আসল সত্য হলো, দরবার একটি রেজিমেন্টাল কার্যক্রম। একমাত্র কুচকাওয়াজ, কোয়ার্টার গার্ড ছাড়া আর কোনো রেজিমেন্টাল কার্যক্রমে অস্ত্র সাথে থাকে না। কখনো ছিলো না। ডিজি, বিডিআর এর হাতে কোনরকমের অস্ত্র ছিলো না। দরবার হলে উপস্থিত কোন অফিসার বা কোন বিডিআর জওয়ানের কাছে কোন প্রকার অস্ত্র ছিল না। যে বিডিআর জওয়ান অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করেছিলো, সে দরবারে উপস্থিত ছিলো না। সে বাইরে থেকে ঢুকেছে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী।
হাসান কালবৈশাখী বেয়োনেট নিয়ে বলেছেন, " কিছু বেচে যাওয়া সেনা সেনাকর্মকর্তা ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। হাস্যকর ভাবে অতিরঞ্জিত বর্ননা করা হয়। বলা হয় গুলি করে মারার পর তাদের মৃত্যুনিশ্চিত করার জন্য বেয়নেট চার্জ করা হয়। এটি সম্পুর্ন মিথ্যা, রাইফেলের মাথায় বেওনেটের চল উঠে গেছে অনেক আগেই। বর্তমানে বিডিয়ার কেন পুলিশ, সেনা বাহিনী কোন বাহিনিই বেওনেট ব্যবহার করে না। কিছু ডামি বেয়নেট ডামি রাইফেলে লাগানো যা হালকা, সুধুমাত্র প্যারেডের সময় বা গার্ডঅব অনার দেয়ার সময়ই ব্যবহৃত হয়। এই হাস্যকর বেয়নেট আক্রমনের কথা ম্যাডাম খালেদা সহ অনেকেই এখনো প্রায়ই ভাষনে বলতে শোনা যায়।"
বেয়োনেট নিয়ে আমি আগের পর্বেই প্রমান দিয়েছি এবং আগের যু্ক্তিখন্ডনের লিংক আমি এই পোষ্টের প্রথম দিকেই দিয়েছি। আমি জানি না হাসান কালবৈশাখী কি মিথ্যা বলছেন না কি উনি সীমিত জানার পরিধি নিয়ে অহেতুক তর্ক করতে পছন্দ করেন। পাঠকরা দয়া করে আমার আগের লিংকটা দেখে নিলেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন। এতে আপনাদের সঠিক তথ্যটি জানা হবে, না কি হাসান কালবৈশাখীর জ্ঞানের পরিধি অথবা মিথ্যাচারিতা উম্মোচিত হবে, না কি ২ টাই যুগপৎ ভাবে হবে তা আমি বলতে পারছি না। এটা পাঠকদের ব্যাপার।
বেয়োনেট নিয়েই সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই এর করা ৯ নং কমেন্টের বিপরীতে হাসান কালবৈশাখী বলেছেন, " লেখক বলেছেন:
৮০র দশকের পর মার্কিন কম্বাট সোলজারদের ক্ষিপ্রতা বাড়ানোর জন্য রাইফেলের সংযুক্ত বেওনেট অপসারন করা হয়। অন্যান্য দেশের বাহিনীরাও আমেরিকান দের অনুসরন করে।
সাধারনত সব সামরিক তথ্য পাবলিক ডমেইনে দেয়া হয়না।
বর্তমানে সবচেয়ে বেশী প্রচলিত রাইফেল, কালাশনিকভ AK47, মার্কিন M16 রাইফেলে কোন বেওনেট লাগানো থাকে না।
আমাদের সেনাবাহিনী ও BDR একই ধরনের Type58 রাইফেল ও AK47 ব্যাবহার করে।
এই বিদ্রোহের হাজার হাজার ছবি বা ভিডিওতে, সেনা বাহিনী, বিডিআর, RAB, পুলিশ কোন ছবিতেই বেওনেট দেখতে পাইনি।"
দাদা, বোনাস হিসাবে এইবার ২টা ছবি দেই। যেখানে ইউএস আর্মি আর ইউএস মেরিন কোর থেকে এখনো বেয়োনেট ফাইটিং এর প্রচলন বা বেয়োনেট এর প্রচলন উঠে যায় নি, সেখানে হাসান কালবৈশাখী দাদা বলছেন বাংলাদেশ আর্মি বা বিডিআর থেকে নাকি বেয়োনেট এর অভিযানগত প্রচলন উঠে গেছে। এবার আপনিই বলেন, আমাদের কি মফিজ পেয়েছেন? মনে করেছেন যাই বলবেন তাই সবাই বিশ্বাস করবে?
ইউএস আর্মি র বর্তমান কম্ব্যাট ইউনিফরমের সাথে ব্যবহৃত ওয়েব ইকুইপমেন্ট এবং রাইফেল। রাইফেলের মাথায় বেয়োনেট সংযোজিত।
ইউএস মেরিন কোর এর একজন সৈন্য অন্যদেশী আরেকজন সৈন্যের সাথে বেয়োনেট ফাইটিং প্রশিক্ষনরত।
এগুলো বর্তমানে প্রচলিত কম্ব্যাট ইউনিফরমের ছবি।
কি হাসান কালবৈশাখী দাদা? কেমন দেখলেন?
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন, " বিদ্রহের ১২ ঘন্টা পর বহুল আলোচিত প্রাক্তন বিডিয়ার মহাপরিচলক জেনারেল অবঃ ফজলুর রহমান সহ দুজন প্রাক্তন BDR প্রধান BBC কে একটি সাক্ষাৎকার দেন। তিনি এই বিদ্রহের কারন হিসাবে সরাসরি BDR পরিচালকদের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। ডিজি সাকিল গং দের তীব্র সমালোচনা করে বলেন দুর্নিতি, অনিয়ম এবং পরবর্তিতে “কমান্ড ফেইলিওরের” কারনে এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। তত্তাবধায়ক সরকারের সেইসময়ের কিছু কর্মকান্ডও সৈনিক অসন্তোষের কারন বলে উল্লেখ করেন। BBC কে তিনি আরো বলেন তার আমলেও সৈনিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছিল। তিনি কতৃপক্ষকে শক্তিপ্রয়োগ না করে শান্তিপুর্ন ভাবে মোকাবেলা করতে পরামর্শ দেন।
তার BBC কে দেয়া বক্তব্য যুগান্তর, আমারদেশ, প্রভৃতি পত্রীকায় পরদিন ফলাও করে প্রকাশীত হয়। "
তিনি আবার বলেছেন, " বিষ্ময়কর ব্যাপার হল এর দুদিন পর এই ফজলুর রহমানই ভোল পালটে ফেলেন।
যায়যায়দিন পত্রীকায় সাখ্যাৎকারে সরকারের সমালোচনা করে বলেন প্রথম দিন ঘটনার পর পরই আলোচনায় সময় নষ্ট না করে সেনা অভিযান চালানো হলে নাকি অনেক জীবন বাঁচানো যেত.!! তিনি কোন ব্যখ্যা দেন নি।"
দাদা, যখন মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান (অব
![:)](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_03.gif)
![:)](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_03.gif)
তবে দাদা, কমান্ড ফেইলিওরের অভিযোগ সত্যি এবং যৌক্তিক। শীর্ষ সারির কয়েকজনের (সংখ্যা ৫ এর বেশী নয়) দুর্নীতির অভিযোগ আমি উড়িয়ে দিবো না। এখন দুর্নীতির অভিযোগে মেরে ফেলা যদি জায়েজ হয় তাহলে আবুল হোসেন এর কিছু করছেন না কেন দাদা?
আর সেনা অভিযানের যৌক্তিকতা বা অযৌক্তিকতা নিয়ে আগের পোষ্টেই আমার মতামত দিয়েছি যার মর্মার্থ হলো আমি নিজেই এ ব্যাপারে কনফিউজড। এ ব্যাপারে আমার আগের পোষ্টের শেষের অংশ দেখতে পারেন।
হাসান কালবৈশাখী ভাই, আমরা কদিন আর বাঁচবো? এই ছোট্ট জীবনে কারো প্রতি বিদ্বেষ থেকে মিথ্যাচারিতা করা কি ঠিক হচ্ছে?