সত্য মুক্তি দেয়, মিথ্যা ধ্বংস করে।
কথাটি ছোট কিন্তু তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কি ছোট? না, বরং তা অনেক গভীর।
কেবল সত্য কথাই নয়, যাবতীয় সত্যের পরিণতি এক ও অভিন্ন। আবার, কেবল মিথ্যা কথাই নয়, যাবতীয় মিথ্যার পরিণতি এক ও অভিন্ন।
প্রশ্ন আসে, কেউ সত্যের পথ অবলম্বন করলেও তাহলে ঠকে যায় কেন? আবার কেউ মিথ্যার আশ্রয় নিলেও লাভবান হয় কেন?
এখানে বোঝার অনেক বিষয়ই আছে। চেষ্টা করছি একটি দিক তুলে ধরতে...
ঠকে যাওয়া আর লাভবান হওয়ার বিষয়গুলো কতটুকু বুঝি আমরা? সৎ পথ অবলম্বন করার জন্য সত্যবাদী ঠকলো মানে যদি হয় 'চাকরিটা হলো না' বা 'কাজটা হলো না' -- 'চাকরিটা না হওয়া' বা 'কাজটা না হওয়া' - এগুলো কি লস্? শুধুই ক্ষতি? সবই 'ঠক খাওয়া' হলো?
এ প্রশ্নের জবাবের মৌলিক পার্থক্য হবে একজন বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীর মধ্যে। কীসে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী? আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আখেরাত - মূলত এই তিনটিতে।
একজন বিশ্বাসী বলবে, "না, আল্লাহ ও তাঁর বার্তাবাহক (রাসূল) যেটা সত্যকে বলেছেন, সেই পথ অবলম্বন করে কোনো কাজ 'না হওয়া' মানেই 'লস' না"। অপরদিকে, অবিশ্বাসী দ্বিধা করবে। আজ সে কোনো সত্যকে সত্য স্বীকার করলেও কাল সে মিথ্যাকে গ্রহণ করবে। অথবা কোনো এক সত্যকে সে গ্রহণ করলেও অন্যটিকে অগ্রাহ্য করবে। আর মনে রাখবেন, কেবল আল্লাহকে অস্বীকার করা সবচেয়ে বড় সত্যকেই অস্বীকার করা!
একজন 'আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আখেরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তি' বড় কোনো বিপদে পড়লেও কী বলে জানেন তো?! সে বলে, "সব অবস্থায় আল্লাহ'র শোকর (অর্থাৎ, এ অবস্থায়ও আমি আমার প্রতিপালকের শোকর করছি!)"। এই কথা সে বানিয়ে বলে না, নিজে বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে এ বাক্যটি সে তৈরি করেনি। এঁর পটভূমি এবং মূল কারণে রয়েছে তার বিশ্বাস। আল্লাহ'র রাসূল ﷺ বিশ্বাসীদেরকে এটা শিখিয়েছেন। একজন বিশ্বাসী চরম বিপদেও এই কথাটি উচ্চারণ করে মনে প্রাণে ও কার্যত আল্লাহ অভিমুখী হয় । এটা মান্যতা ও আত্মসমর্পণ ছাড়া সম্ভব হয়নি, হবেও না।
(মুল আলোচনায় ফিরে যাচ্ছি...)
একজন বিশ্বাসীর কাছে আসলে লাভ ও লস বাহ্যিক কিছু অবস্থা ও লক্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। দেখবেন, জগৎ-সংসারে ভুড়ি-ভুড়ি ঘটনা আছে, আগে মনে হয়েছিল এমন না করলে ভালো হত, কিন্তু পরে পরিস্কার হয়ে গেছে, যেটা করা হয়েছে সেটাই ঠিক হয়েছে। বিশ্বাসী না হয়েও অনেক অবিশ্বাসীরাও কেবল বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে, সুদূরপ্রসারী চিন্তা করে এমন কাজ করে যা তার আশে পাশের মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে বোঝে না। পরে দেখা যায়, সত্যিই কাজটির পরিণতি ভালো হয়েছে। তখন সবার বুঝে আসে, এই পথ অবলম্বন করা ভুল ছিল না, বরং ঠিক ছিল।
তাহলে যিনি সৃষ্টি করলেন সবকিছু, আমাদের বিবেক ও বুদ্ধিও, আর বলে দিলেন - এটা খাবে না, ওটা ধরবে না, সেটা দেখবে না, এ পথে চলবে না - তাঁর আদেশ কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে? বিবেকবান ও বুদ্ধিমানমাত্রই বলবে, তিনি তো সব জানেন -- অবশ্যই তাঁর কথা ও আদেশই চূড়ান্ত, এখানে যুক্তি খোঁজার আবার কীসের অবকাশ?! আর আসলেই এ হলো বিবেক-বুদ্ধিরও ওপরের স্তর - বিশ্বাস - ঈমানের স্তর। তাই আল্লাহতে বিশ্বাসী ব্যক্তি এখানে কোনো রকম যুক্তি খোঁজে না। সত্যকে মেনে নেয়।
আপনি কী বিশ্বাস করলেন, কাকে বিশ্বাস করলেন, এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। পার্থিব জীবনের দিকে তাকান। যাকে বিশ্বাস করছেন তাকে সত্য বলে মেনে নিচ্ছেন। বা যাকে সত্য বলে বিশ্বাস করছেন, তার কথা গ্রহণ করে তাকেই মানছেন - তার সিদ্ধান্তের ওপর কোনো উচ্চবাচ্য করছেন না।
সেই সুমহান আল্লাহ তাআলারই সত্য নবী কিন্তু ঐ কথাটি বলেছেন - শুরুতে যেটা উল্লেখ করা হয়েছে: সত্য মুক্তি দেয়, মিথ্যা ধ্বংস করে।
...এবার চিন্তা করুন, কোন্ পথ অবলম্বন করবেন?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:২৭