somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাজহাব মানা ও না মানা বিতর্কের চির অবসান

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


----(১ম পর্ব)------ আল হামদুলিল্লাহি রব্বিল আ'লামিন ওয়া সালামু আলা রসুলিহী । দয়াময় আল্লাহ সুবহানা তায়ালার নামে শুরু করছি বিসমিল্লাহ-- বর্তমানে মাজহাব মানা ও না মানা নিয়ে যে বিতর্ক দেখা যায় তা নতুন কোন বিতর্ক নয়, এই বিতর্ক অনেক পুরানো। অথচ এই ধরনের কোন বিতর্কের জন্মাই হত না যদি না আমরা মুসলমানরা সবাই নুন্যতম ধর্মের জ্ঞানটুকু অর্জন করতাম। সত্যিই আল্লাহ সুবহানাতায়ালার বিধান অনুযায়ি সততার সাথে চলার ইচ্ছে থাকলে মুসলমানদের মাঝে কোন প্রকার বিভেদ ও দন্দ্বের সৃষ্টি হত না। যাইহোক ১দিক দিয়ে আশার কথা এই যে, মুসলমানদের পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে এবং আল্লাহ প্রদত্ব একধরনের সচেতনতাও সৃষ্টি হয়েছে আর এমনও হতে পারে যে এখন হতে শুরু হয়ে ইমাম মাহদীর আত্বপ্রকাশের মধ্য দিয়ে এইসকল বিতর্কের চির অবসান ঘটতে ঘটতে ঈসা ইবনে মরিয়মের শাষনের দ্বারা তা একেবারেই বিনাশ হয়ে যাবে ইনশাহ আল্লাহ। মাজহাব মানা যাবে কি যাবে না, কোনটি সঠিক এবং মুসলমানদের ইসলাম অনুযায়ি কিভাবে চলতে হবে? এসবের উত্তর জানতে হলে ১মে কিছু মৌলিক জিনিস জানা জরুরী। যেমন- আদ্ব-দ্বীনুল ইসলাম কি?, মাজহাব কি?,কুরান,হাদিস,সুন্নাহ,ফিকহ,ইজমা,কিয়াস,ইজতিহাদ কি? ইত্যাদি। আদ দ্বীনুল ইসলাম হল আল্লাহ(সুবঃ) কর্তৃক অবতীর্ন এক জীবন বিধান বা দ্বীন যা শেষ নবী মুহাম্মস সাঃ এর উপর নাজিল হয় সমস্ত মানুষ ও জ্বীনদের সুপথ দেখাতে। অতীতেও আল্লাহ(সুবঃ) এরকম অনেক দ্বীন নাজিল করেছিলেন কিন্তু দ্বীনুল ইসলাম দিয়েছেন সর্বশেষ দ্বীন হিসেবে আর এরপর তিনি আর কোন দ্বীন দিবেন না কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত। আল কুরান হল স্বয়ং আল্লাহ(সুবঃ)এর বানী যার মাঝে দ্বীনুল ইসলামের মূল ভিত্তি মজুত আছে আর হাদিস হল নবী সাঃ এর উপর আল্লাহ(সুবঃ)এরই অহী মারফত দেয়া বিস্তারিত ব্যাখ্যা যা নবী সাঃ এর মুখের কথা ও কর্মবিশেষ এবং তার বিশেষ হিকমা বা জ্ঞানবুদ্ধি মুলক মতামত। আর ইজমা অর্থ সম্মিলিত মত, কিয়াস হল যুক্তি নির্ভর অনুমান । কুরান সুন্নাহকে প্রধান বা সুত্র হিসেবে ধরে দ্বীনের ক্ষেত্রে নিজের জ্ঞানকে যথেষ্ট কাজে লাগিয়ে ইজমা কিয়াস এর মাধ্যমে বিধানগুলিকে বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতির উপর আরো ব্যাখ্যা করাই হল ইজতিহাদ বা আমলগত সত্য জানার জন্য শরঈ হুকুম নিরুপণের প্রানান্তকর চেষ্টাকেও ইজতিহাদ বলে । ইজতিহাদের বিভিন্ন বিষয়াবলি বিস্তারিত যেখানে মজুদ রয়েছে তাকে বলে ফিকহ শ্বাস্ত্র আর এ সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যাক্তিকে বলে ফকিহ বা ফুকাহগন। ইজতিহাদকারীকে মুজতাহিদ বলে আর দ্বীনের ব্যাপারে কোন ধরনের মতামত দেয়াকে ফতোয়া বলে আর ফতোয়া দেয়ার যোগ্য ব্যাক্তিকে মুফতী বলে, এছারাও কুরানের তাফছিরকারীকে মুফাসসির এবং আরও যোগ্যব্যাক্তিকে উপমহাদেশে শায়খ বলা হয়। আলীয়া মাদ্রাসাতে পরীক্ষায় পাশের উপর ভিত্তি করে আলেম , আল্লামা ইত্যাদি টাইটেল থাকে কিন্তু আরব দেশের মাদ্রাসার সিলেবাস উপমহাদেশের তুলনায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে এমনকি সিলেবাসের পাঠ্যপুস্তকেও রয়েছে ভিন্নতা তাই আমদের দেশের আলেমদের সাথে তাদের মতেরও রয়েছে ভিন্নতা ।
যাইহোক মাজহাব বিষয়টি আসলে কি এটি জানা বেশ গুরুত্বপূর্ন । মাজহাব আসলেই কি? এটা ভালভাবে বুঝতে হলে আমাদের প্রথমেই স্রষ্টা কর্তৃক নবী-রাসুলদের দেয়া পদ্ধতিগুলো ১মে পর্যালোচনা করতে হবে । ১মত দেখা যায়, আল্লাহ সুবহানাতায়ালা মানুষকে তাঁর সন্মন্ধে জানার জন্য এবং মানুষের জীবন ধারনের জন্য যুগে যুগে যেসব বিধান বা দ্বীন প্রেরন করেছেন তা তিনি কখনও কোন ফেরেশতা বা কোন জড় বস্তু যেমন- পুস্তক, কিতাবকে মাধ্যম করেননি বরং মানুষের জন্য মানুষই(নবী রসুল) মাধ্যম করেছেন । এমন করার আরো একটি কারন হল- মানুষকে আল্লাহ সুবঃ জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েছেন এবং সেই জ্ঞানের দ্বারা মানুষ ভাল ও মন্দ যা ইচ্ছা তাই করার সুযোগ পায়, পাশাপাশি মানুষ কোন কিছু জানার পর হোক সেটা ভাল বা খারাপ সেই বিষয়কে আরো প্রসার ঘটাতে সক্ষম হয় জ্ঞানের দ্বারা , আর সেই প্রসারিত জ্ঞান ভালোর দিকেও হতে পারে আবার মন্দের দিকেও হতে পারে । আর স্রষ্টা কর্তৃক কোন জ্ঞান পাবার পর সেই জ্ঞানকে কিভাবে শুধু ভালর দিকেই প্রসারিত করে আরো বিস্তার ঘটানো যায় এবং কিছুতেই মন্দর দিকে নয়, সেটা প্র্যাকটিক্যালী দেখানোর জন্যও আল্লাহ সুবঃ মানুষকেই নবী-রসুল বানিয়েছেন । এখানে যদি তিনি ফেরেশতাদের নবীর দায়িত্ব দিতেন তবে তাদের যেহেতু মন্দ প্রবনতা নেই তাই তারা মানুষ না হওয়াতে কিছুতেই দেখাতে পারত না যে আল্লাহর পাঠানো অহীর সাপেক্ষে কিভাবে মন্দ প্রবনতাকে দাবিয়ে রেখে ভাল প্রবনতাকে আরো বিস্তার ঘটানো যায় । ঠিক একইভাবে প্রাণহীন জড় বস্তু যেমন- পুস্তক, কিতাবের মাধ্যমেও অহী পাঠালে আমরা শুধু তাঁর সোজাসাপটা শাব্দিকভাবে বিধি নিষেধ গুলোই জানতে পারতাম কিন্তু পুস্তক কিছুতেই বিধি বিধানগুলো ব্যাবহারিকভাবে আমাদের দেখাতে পারত না আর এসব জড় বস্তুগুলোও নিজের জ্ঞান থেকে কিছুতেই আমাদের আল্লাহ সুবঃ এর বিধি বিধানকে প্রসারিত করে আরো ব্যাখ্যা ও বিস্তার করে দেখাতে পারত না কিন্তু নবী রসুল মানুষ হওয়ায় তা সম্ভব হয়েছে । এখানে ১টি বিষয় লক্ষ্যনিয় যে মানুষের মধ্য হতেই নবী বানানোর আরেকটি উদ্দেশ্য হল- আল্লাহর প্রেরীত দ্বীনকে প্রসারিত করে আরো বিস্তার ঘটানোর মাধ্যমে মানুষের আল্লাহ সুবঃ এরই দেয়া জ্ঞানকে ব্যাবহার করানো । আর মাজহাবে যে জিনিসটা হয় তা হল- আল্লাহ সুবঃ এরই দেয়া জ্ঞানকে দ্বীনের ক্ষেত্রে ব্যাবহার করানো হয়, যার মাধ্যমে আল্লাহর প্রেরীত দ্বীনকে প্রসারিত করে আরো ব্যাখ্যা করে পরিবেশের ও যুগের সাপেক্ষে বিস্তার ঘটানো যায়। তাছারা কুরানে আল্লাহ সুবঃ বলেন- আমি প্রত্যেক নবী রসুলকেই দিয়েছি অহীর জ্ঞান এবং হিকমা। ইমাম বুখারী রহঃ বলেন- হিকমা হল অহী ছারা প্রাপ্ত জিনিসকে বুঝায় । আরবীতে হিকমা অর্থ বুদ্ধি বা বিশেষ জ্ঞান, কৌশল, বাছ-বিচার করার ক্ষমতা। হিকমা সব মানুষেরই কম বেশী থাকে কিন্তু নবীদের দেয়া হয়েছে বিশেষ হিকমা বা বিশেষ জ্ঞান বুদ্ধি অথবা বলা যায় নবীদের দেয়া হয়েছে সাধারনের তুলনায় অনেক বেশী হিকমা। আর দ্বীনুল ইসলামের মূল উৎসও ২টি ১মটি হল আল-কুরান অপরটি হল আল হাদীস। আল কুরান হল আল্লাহ সুবঃ এর এমনি অহী যার প্রতিটি শব্দই আল্লাহ সুবঃ এর নিজের। আর হাদিস হল এমনি বিষয় যেখানে রয়েছে ১মত জিব্রাইল আঃ দ্বারাই আল্লহ সুবঃ এর পাঠানো বিভিন্ন বিষয়ের অহী ২য়ত রয়েছে নবী সঃ এর হিকমা নিঃসৃত নির্দেশনা যার কিছু আবার প্রত্যাখ্যাতও হয়েছে অহীর মারফতেই(যেমন-সূরা তাহরীম নাজিলের ঘটনা) বা নবী সঃ এরই হিকমার মাধ্যমে আবারও পরবর্তীতে, তাছারাও দেখা যায় হিকমা নিঃসৃত বেশীরভাগ নির্দেশনাই দ্বীনের অন্তর্ভুক্তও হয়েছে। ৩য়ত নবী সঃ সম্মুখে সাহাবী রাঃ দের বিভিন্ন সৎ আমল/কর্মকান্ড বা তিনাদের নিজস্ব হিকমা খাটিয়ে বিভিন্ন মতবাদসমূহ, অথবা নবী সঃ অনুপস্থিতেও সাহাবীদের এইসব বিষয়গুলো যখন পরবর্তীতে নবী সঃ মৌখিক বা মৌন সম্মতি দিয়েছেন সেগুলোও কিন্তু আল হাদিসের অন্তর্ভুক্ত । আর কুরান অনুযায়ি যেগুলো নবী সঃ এবং সাহাবা রাঃ তিনাদের বাস্তব ব্যাবহারিক জীবনে প্রয়োগ করেছেন সেগুলোকেও সুন্নাহ বলা হয় । এখন আল কুরানের অহী ব্যাতীত জিব্রাইল আঃ দ্বারা আল্লহ সুবঃ এর পাঠানো বিভিন্ন বিষয়ের অহীও আবার ২ধরনের ১) হুবহু জিব্রাইল আঃ এর দেয়া তথ্য। যেমনঃ হাদিসে কুদসি এর অন্তর্ভুক্ত ২) জিব্রাইল আঃ এর দেয়া তথ্য নবী সঃ মনে রাখার পর বিভিন্ন পরিবেশ ও সাহাবাদের নেচারের উপর ভিত্তি করে যখন নবী সঃ নিজের হিকমা ব্যাবহার করে সাহাবাদের এবং ততকালীন আরবদের বুঝার সুবিদার্থে আরো সহজ ভাষায় বর্ননা করা। এ হাদিসসমূহ হাদিসে কুদসির অন্তর্ভুক্ত নয়। সাধারনত উপরে উল্লেখিত এই দুই প্রকারের হাদিস কখনও আল্লাহ সুবঃ ২বার সংশোধন করে দিয়েছেন তার দলিল পাওয়া যায় না কিন্তু পূর্বের অহীলব্ধ জ্ঞান হতে নবী সঃ নিজের হিকমা ব্যাবহার করে যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন তার বেশিরভাগই হাদিসের অন্তর্ভুক্ত হলেও হিকমানিসৃত কিছু কিছু ভুল নির্দেশনা সংগে সংগেই অহীর মারফতে সংশোধিত হয়েছে কারন নবী রসুলগন বেশীক্ষন ভুলের উপর থাকলে মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারে । যেমনঃ স্ত্রীদের নিকট হতে মধুর খারাপি গুন শ্রবনের পর তিনি পূর্বের অহীলব্ধ জ্ঞান(সকল খারাপ ক্ষতিকর জিনিসই হারাম) মাথায় রেখে নিজের হিকমা ব্যাবহার করে মধুকে হারাম ঘোষনা করলেন আর সংগে সংগেই আল্লাহ সুবঃ তার এই হিকমা নিসৃত ভুলকে সংশোধনের জন্য কুরানে আত তাহরীম নামে ১টি সুরাই নাজিল করলেন। এখন প্রশ্ন হল নবী সঃ আল্লাহর অহী ছারাই কিসের ভিত্তিতে নিজের হিকমা/বুদ্ধি ব্যাবহার করে দ্বীনে হালাল হারাম করার সাহস পেলেন ? কারন হল স্বয়ং আল্লাহ সুবঃ ই তাকে এই অধিকার দিয়েছেন যেমন কুরানে বলা হয়েছে যে – নবী সঃ যা বলে তা তোমরা মান । সেখানে কিন্তু এটা বলা হয়নি যে কুরানে শুধুমাত্র আল্লাহ সুবঃ নবীর মাধ্যমে যে নির্দেশ দেন শুধু তাই মান বরং বলা হয়েছে নবী সঃ এর যেকোন নির্দেশেই সারা দিতে। শুধু তাই না তিনি সরাসরি নিজের হিকমা/বুদ্ধি খাটিয়ে যেকোন জিনিসকে ফরয করারও অধিকার রাখতেন কোন প্রকার অহী নাজিল ব্যাতীরেকেই যেমনঃ তিনি বলেন- আমি মেছওয়াক ফরয করে দিতাম যদি আমার উম্মতের জন্য বেশী কষ্টসাধ্য না হত। কিন্তু হিকমা ব্যাবহার করে যদি তিনি কখনও ভুল করে বসতেন তবে সেটাকে অবশ্যই অহীর দ্বারা শুধরানো হত আর ভুল না করলে সেটিই দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হত । এছারা নবী সঃ নিজের হিকমা খাটিয়ে কোন নির্দেশনা দিয়ে পরবর্তীতে আবার নিজেই নিজের হিকমা খাটিয়ে নিজের নির্দেশনাকে নিজেই পুনরায় তুলে নেয়ার দলিলও আছে যেমন- মদীনার লোকেরা খেজুর বেশী উৎপাদনের জন্য গাছে সংগম করানোর ১ধরনের পদ্ধতি ব্যাবহার করত যা মক্কাবাসিরা করত না, শুরুতে তিনি এটাকে নিজের হিকমা দিয়ে বিবেচনা করে কুসংস্কার ভেবে এমন করতে বারন করে দেখলেন সেবছর খেজুর উৎপাদন কম হল তখন তিনি তার পুর্বের নির্দেশনা তুলে নিলেন। শুধু তাই না অনেক ক্ষেত্রে তার হিকমার জায়গায় সাহাবীদের হিকমাকেও অগ্রাধিকার দিতেন যেমন- একবার ১ যুদ্ধে ১ সাহাবি নবী সাঃ কে বললেন আপনি যে পদ্ধতির কথা বললেন তা যদি আল্লাহর ফয়সালা না হয়ে আপনার মস্তিস্কপ্রসুত বিবেচনা হয় তবে আমি এর চাইতে উত্তম ১টা পদ্ধতির কথা আপনাকে বলতে পারি, এরপর কিন্তু নবী সঃ নিজের সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে সেই সাহাবির সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছিলেন । এরকম আরো উদাহরন থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি সাহাবিদের হিকমা নিঃসৃত মতবাদও দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হত যেমন- রুকু থেকে উঠার পর রব্বানা লাকাল হামদ এর পর অতিরিক্ত বাক্য সংযোজন , আজানের বাক্য , পর্দা প্রথা ফরজ ইত্যাদি অনেক বিধান।
এখন উপরের উল্লেখিত বিষয়গুলোকে পর্যালোচনা করলে ৩টি জিনিস পরিস্ফুট হয়- ১) দ্বীনুল ইসলামের সব বিধানই সরাসরি জীব্রাইল আঃ এর মাধ্যমে আসেনি বরং অনেক বিধানই নবী সঃ নিজের বুদ্ধি বা হিকমা খাটিয়ে দিয়েছেন পুর্বে নাজিলকৃত বিধানের উপর ভিত্তি করে, এক্ষেত্রে বলা যায় নবী সঃ পুর্বে নাজিলকৃত বিধানের ব্যাখ্যা করেছেন এবং তা ব্যাবহারিক জীবনে আরো বিস্তার ঘটিয়েছেন , আর একেই কিন্তু ১ম ফিকহ বা মাজহাব বলা যায় কারন এই ইজতিহাদ বা মাজহাব দিয়েছেন স্বয়ং নবী সঃ নিজেই আর নবীর সাঃ মাজহাবে বা ইজতিহাদে কোন ভুল করলে শুধরিয়ে দিতেন মহান আল্লাহ সুবঃ নিজেই । অর্থাৎ মহান আল্লাহ সুবঃ দ্বী্নের বিষয়বস্তু শুধুই অহীকেই না বানিয়ে বরং আল্লাহ সুবঃ এরই দানকৃত আরেকটি জিনিস মানুষের জ্ঞানকেও দ্বীনের মধ্যে স্থান দিয়েছেন। ২) হিকমা শুধু নবী সঃ এরই রয়েছে এমন না বরং সাধারন মানুষেরও কম বেশী রয়েছে যেটা প্রমান হয় সাহাবীদের হিকমাও দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৩) হিকমা/বুদ্ধি ভুলও হতে পারে কিন্তু অহী ভুল হয় না কখনও। এখন উপরের বিষয়বস্তু হতে আমরা বুঝতে পারি যে নবী সঃ এর হিকমার পাশাপাশি যেহেতু সাহাবিদের হিকমাও দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাই এর মাধ্যমেই প্রমান হয় যে ফিকহ/ইজতিহাদ/ মাজহাবের অস্তিত্ব দ্বীনুল ইসলামেরই ১টা অবিচ্ছেদ্য অংশ কেননা ইজতিহাদ বা মাজহাব আর কিছু নয় বরং কুরান হাদিসকে ব্যাখ্যা বা আরো প্রসারিত করার জন্য আল্লাহরই দেয়া মানুষের হিকমা বা জ্ঞান নিঃসৃত ১টি বিষয় মাত্র । অনেকে ভাবতে পারেন যে নবী সঃ জীবিত থাকাবস্থায় তিনাদের হিকমায় ভুল হলে অহীর মাধ্যমে আল্লাহ সুবঃ যেহেতু সংশোধন করে দিতেন তাই সেগুলো দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হলেও নবী সঃ এর পর অহী বন্ধ হয়ে যাবার পর হিকমার ভুল হবার সম্ভাবনা থাকায় আর কারও হিকমা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না কারন এখন ভুল সংশোধন কে করে দিবে ? এটা আসলে ভুল ধারনা কারন- নতুন অহীর পথ বন্ধ হলেও আমাদের কাছে পরিপূর্ন দ্বীনের অহী আল কুরান তো আছেই তাই এখন কেউ হিকমায় ভুল করে বসলে কুরান হাদিসের ভিত্তিতে তা সংশোধন করে নিতে পারবে নিজে নিজেই বা অন্য কারও দ্বারা ।
আরেকটি ব্যাপার হল, যারা মাজহাব মানেন না তাদের বেশীরভাগই কিন্তু নবী সঃ কে রোবটের মত যান্ত্রিক বুদ্ধিসম্পন্ন মনে করেন, যে কিনা নিজের জ্ঞানে কিছুই করেনি, যা অহী হয়েছে শুধু তাই বলেছেন নয়তো চুপ থেকেছেন। এমন রোবট মতবাদীদের জন্য উপরে উল্লেখিত দলীলই যথেষ্ট । তারা আবার এই দলীল পেশ করতে পারে যে , আল্লাহ সুবঃ বলেন- আমার নবী নিজের জ্ঞানে কোন কথা বলেন নি, যদি বলতেন তবে আমি তার গলা চেপে ধরতাম । এখানে উল্লেখ্য যে এটা বলতে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে কিন্তু দ্বীনুল ইসলাম নয়, যেহেতু দ্বীনুল ইসলামের বিষয় শুধুই কুরান নয় যেমন- কুরানে নামাজ পড় বলা হয়েছে কিন্তু কিভাবে পড়তে হবে তা হাদিসে আছে। আবার অনেক মাজহাবী ভাইরা আছেন যারা নবী সঃ কে ভুল ত্রুটির উর্ধে এমনকি সাহাবীদেরকেও তাই ভাবেন, তাদের জন্যও উপরে উল্লেখিত দলিল সমুহ ভুল ভাংগাবে এবং কুরানে আল্লাহ সুবঃ বহু আয়াতে নবী সঃ কে বলতে বলেছেন যে – বল, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ মাত্র (মানুষ হলে ভূল করতে বাধ্য)। নবী সাঃ কিন্তু নিঃস্পাপ ছিলেন ঠিকই, পাপ করা আর ভুল করা এক জিনিস নয় । এছারা তিনি ১দিন ইনশাহ আল্লাহ বলতে ভুলে গেলে অহী বন্ধ ছিল কিছুদিন। এছারা বুখারীর হাদিছে উল্লেখ আছে –একদিন তিনি তার বিচারের ফয়সালা চোখবন্ধ করে ১ব্যক্তিকে নিতে বারন করছিলেন কারন তিনি আমাদের মতই মানুষ, ভুলের উর্ধে নয়, সাক্ষ্যিদাতার নিকট ভুল শুনে ভুল বিচারও করে বসতে পারেন, এরকম আরো অসংখ্য দলীল উল্লেখ করা যাবে নবী-পুজারীদের জন্য। এখন আমাদের জানতে হবে মাজহাব মানে কি? বা এটি বলতে আসলেই কি বুঝায়? ইত্যাদি । মাজহাব শব্দের অনেক অর্থ আছে। তার ভিতরে ১টি হল মতামত এছারাও মাজহাব মানে বিশ্বাস, আদর্শ, পন্থা, মতবাদ,দল উৎস বা চলার পথ। কিন্তু শাব্দিক অর্থ যেটাই হোক মাজহাব বলতে বুঝায়- কুরান হাদিস অনুযায়ি কিভাবে চলতে হবে সেটার ব্যাবহারিক বর্ননা আর মাজহাবের সংগা এমনটি ধরেই কিন্তু উপরে নবীর জামানা হতেই মাজহাবের অস্তিত্ব প্রমান করা হয়েছে এখন দেখতে হবে সাহাবাদের জামানা ।
প্রথমে আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, স্বয়ং আল্লাহ (সুবঃ)ই ছিলেন নবী সঃ এর শিক্ষক আর নবী ছিলেন ছাত্র আর দুনিয়ার বুকে নবী সঃ ছিলেন শিক্ষক আর ছাত্র ছিলেন সাহবা রাঃ গন। এখন নবী সঃ এর পর তার ছাত্র সাহাবাগন কিভাবে দ্বীনুল ইসলাম পালন করেছেন তার পর্যালোচনা হতেও মাযহাবের(পন্থা বা চলার পথ) অস্তিত্ব আছে কিনা তার সুস্পষ্ট ধারনা পাওয়া যাবে । নবী সাঃ এর জীবদ্দশায় তার সাহাবীদের দ্বীনের বিষয়ে কোন সমস্যা বা মতবিরোধ দেখা দিলে খোদ নবী সাঃ নিজেই তার সমাধান করে দিতেন ফলে মুমিনদের মাঝে তখন কোন দলাদলি বা মতানৈক্য টিকত না। আর নবী সাঃ ইন্তেকালের পরেও কিন্তু দ্বীন নিয়ে সমস্যা হত না কারন মুসলিমদের খিলাফত নামক একটি ব্যাবস্থা ছিল এবং মুসলিমদের ১জন খলিফা থাকতেই হত যে কিনা নবীর মত নেতৃত্ব দিবে । খলিফা মানে হল প্রতিনিধি আর এই খলিফা কিন্তু জনগনের প্রতিনিধি নয় অনেকে ভুলবশত তাই ভাবে । খলিফা আসলে প্রতিনিধি হল স্বয়ং নবী সাঃ এর অর্থাৎ নবী সাঃ এর অবর্তমানে তার হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। আসলে আল্লাহ সুবঃ প্রেরীত যেকোন ধর্মকেই মানুষের মাঝে চালনা করার জন্য একের পর এক নবী রাসুলগন আসতেন যেমনঃ- বনী ঈসরাইলদের একজন নবী ইন্তেকাল করলে অন্যজন তার স্থলাভিসক্ত হতেন কিন্তু আমদের নবী হলেন শেষ নবী অথচ এই দ্বীন ইসলাম কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে আবার অন্যদিকে কিয়ামত পর্যন্ত কোন নবীও আসবে না তাই আল্লাহ সুবঃ এই সর্বশেষ এবং পরিপূর্ন দ্বীনকে চালনা করার জন্য এবং উম্মতকে নেতৃত্ব দানের জন্য খলিফার শাষন ব্যাবস্থা দিয়েছেন। নবী সাঃ বলেন- আমার পরে কোন নবী আসবে না কিন্তু অসংখ্য খলিফা হবে আর তাই নবী সাঃ ইন্তেকালের পরে তাকে দাফন করার চেয়ে গুরুত্বপুর্ন কাজ মনে করা হয়েছিল খলিফা নির্ধারন আর সে কারনেই এই মুসলিম উম্মাহর ৩দিনের বেশী খলিফাবিহীন থাকা জায়েজ নাই আর সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন কথা হল নবী সাঃ এরপরে যদি কোন খাঁটি মুসলিমও খলিফার বায়াত ছারা মৃত্যুবরন করে তবে সেই মৃত্যুকে নবী সাঃ জাহিলিয়াতের উপর মৃত্যু অবহিত করেছেন, তারমানে জাহান্নামী হয়ে মৃত্যুবরন আর তাই তো দেখা যায় নবী সাঃ ওফাতের পর পরই কালবিলম্ব না করে আবু বকর রাঃ মুসলিমদের ১ম খলিফা হন তার মৃত্যুর পরে ওমর রাঃ এরপর উসমান রাঃ তারপর আলী রাঃ ইত্যাদি সবাই খলিফা হয়ে মুসলিমদের নেতৃত্ব দিতে থাকেন আর সাহাবীদের জামানাতেও সাহাবী বা তাবেঈগনের দ্বীনের বিষয়ে কোন সমস্যা বা মতবিরোধ দেখা দিলে খোদ খলিফা নিজেই তার সমাধান করে দিতেন ফলে মুমিনদের মাঝে তখনও কোন দলাদলি বা মতানৈক্য টিকত না। আদ্ব-দ্বীনুল ইসলাম যেমন আধ্যাত্বিক এবং বৈষয়িক বিষয়ের এক সুন্দর সমন্বয়ে গঠিত জীবন বিধান ঠিক তেমনি নবী সাঃও আধ্যাত্বিক বা বৈষয়িক যেকোন সমস্যাই হোক না কেন তার পরিপুর্ন সমাধান করে দিতেন আর নবী সাঃ ইন্তেকালের পর ১ম চার খলিফাও বিভিন্ন হারে একই কাজ করতেন আর তিনাদের যোগ্যতাও ধার্মিক এবং রাষ্ট্রিয় উভয় ব্যাপারেই থাকত। ১ম চার খলিফার সবাই কুরান সুন্নাহ অনুসারে এবং জ্ঞানী সাহাবীদের সাথে আলোচনা করে ইজতিহাদ করে উম্মতের সমাধান দিতেন আর ভুল হলে সংগে সংগেই অন্যরা শুধরিয়ে দিত কুরান সুন্নাহ অনুযায়ি, ঠিক যেভাবে নামাজের কিরাতে ইমাম ভুল করলে পেছন হতে যে কেউ ই লোকমা দিয়ে থাকে ।
এবারে আসল আলোচনায় আসা যাক, নবী সাঃ এর পরে ১ম খলিফা আবু বকর রাঃ উম্মাহর ধার্মিক বা রাজনৈতিক যেকোন নতুন সমস্যার সমাধানে কুরান হাদিসকেই মূল সুত্র ধরে বিভিন্ন ইজতিহাদকৃত কর্ম সম্পাদন করেন যেমন- সম্পূর্ন কুরানই একত্র করে লিখিতভাবে সংকলন করেন এরপর উমার রাঃ ২য় খলিফা হলে তিনিও ইজতিহাদ এর মাধ্যমে রাত্রিকালীন নামাজকে(তারাবীর সলাত) এক ইমামের পিছে জামাতে পড়ার সিস্টেম চালু করেন এমনকি এই দুই খলিফার আমলেই কিন্তু হাদিস বর্ননা পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয় কারন মুনাফিকরা নবী সাঃ এর নামে মিথ্যে হাদিস বর্ননা করে পরিস্থিতি তাদের অনুকুলে নেবার চেষ্টা করত তাই এ ধরনের ফিতনা হতে বাঁচতে এবং হাদিসকে যেন কুরানের চাইতে বেশী মুল্য না দিয়ে ফেলে ইত্যাদি বিশেষ কারনে খলিফা ইজতিহাদের ভিত্তিতে ইসলামের ২য় উৎস হাদিস বর্ননা পর্যন্ত নিষেধ করেছিলেন আর ৩য় খলিফা উসমান রাঃ আল কুরানকে বক্তব্যেরধারা অনুযায়ি ক্রমান্বয় করে সাজান এবং আরবীর সাতটি আঞ্চলিক ভাষায় কুরান তেলায়ত থাকলেও তিনি শুধুমাত্র একটি ভাষায় কুরান রেখে অন্নান্য কুরান পুড়িয়ে ফেলেন কারন এসব নিয়ে তখন ফিতনার সৃষ্টি হচ্ছিল আর তিনিই ১ম জুময়ার নামাজে ২টি আযান চালু করেন এমনকি হজ্বে নবী সাঃ থেকে শুরু করে একাধারে আবু বকর , উমার রাঃ সবাই নবী সাঃ এর অনুকরনে নামাজ কসর পড়তেন কিন্তু তিনিই একমাত্র খলিফা যে কিনা ইজতিহাদ করে কসর নামাজ পড়েননি কারন সফরকালে সুবিধার জন্য আল্লাহ যে কসরের বিধান দিয়েছেন তা কিন্তু ফরজ নয় বরং সফরে থাকাবস্থাতেও সুযোগ সুবিধা বেশী থাকলে কসর না করে পুরো নামাজই পড়া যাবে এই সিস্টেমের ব্যাবহারিক প্রমান সর্ব প্রথম তিনিই দেখান । উপরোক্ত প্রমানগুলোর মাধ্যমে একথা প্রমান হল যে নবী সাঃ এর ন্যায় খলিফাগনও ইজতিহাদ করতেন। নবী সাঃ এর ইজতিহাদের ভুল হলে আল্লাহ সুবঃ ই সংশোধন করে দিতেন আর খলিফাদের বেলায় কুরান সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে মানুষেরাই ভুল সংশোধন করে দিত যেমনঃ- একদিন মসজিদে ইজতিহাদের মাধ্যমে উমার রাঃ চাচ্ছিলেন মহরানা ফিক্সড করে দেয়া যায় কিনা কিন্তু তার সেই ভুল ধরিয়ে দেন এক মহিলা সাহাবী এই বলে যে মহান আল্লাহ যা ফিক্সড করেননি তা আপনি ফিক্সড করেন কিভাবে ? সুতারাং নবী সাঃ এর যুগ হতে সাহাবীদের স্বর্ণযুগ পর্যন্ত দেখা যায় কুরান সুন্নাহকে প্রধান উৎস ধরে অনেক নতুন সমাধানই ইজতিহাদ করে বের করা হয়েছে যাকে ইসলামি ফিকহ শ্বাস্ত্র বলে বা প্রচলিত অর্থে মাজহাব বলে । আর নবী সাঃ হতে শুরু করে খোলাফায়ে রাশেদা পর্যন্ত সাহাবীদের জীবন পর্যালোচনা করলেও দেখা যাচ্ছে যে তিনারাও ইজতিহাদ করে চলেছেন আর ইজতিহাদ ভুল সঠিক দুটোই হতে পারে কিন্তু কুরান আর হাদিস কখনও ভুল হতে পারে না আর এটাও স্পষ্ট যে নবী সাঃ এবং সাহাবীদের যামানা হতেই ফিকহ বা মাজহাবের উৎপত্তি ।

সাহাবীদের যুগের পরে শুরু হয় পর্যায়ক্রমে তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনদের যুগ কিন্তু ৩য় খলিফা উসমান রাঃ এর হত্যাকে কেন্দ্র করে ৪র্থ খলিফা আলী রাঃ এর ক্ষমতা ৫ম খলিফা মুয়াবিয়া রাঃ নিয়ে নেয় এভাবেই ফিতনার সৃষ্টি হয় আর খলিফাগনও রাষ্ট্রীয় বিষয় নিয়ে বেশী মাথা ঘামাতে থাকে আধ্যাতিক বিষয়ের তুলনায়( অথচ নিয়ম ছিল রাষ্ট্র জীবন আর ধর্ম জীবন উভয়েরই সমন্বয় ঘটানো)। আর এর পুর্ব হতেই কিছু কিছু দুনিয়ালোভী সাধারন মুসলিমরা ইসলামী জ্ঞান হতে একটু আধটু দূরে সরে আসতে থাকে অন্যদিক দিয়ে আবার জ্ঞানীগুনি সাহাবাগনও একের পর এক দুনিয়া ছারতে শুরু করেন তাই সর্বদিক বিবেচনা করলে দেখা যায় নবী সাঃ এর ভবিষ্যতবানী অনুসারে মুসলিমদের সবচেয়ে উত্তম যুগ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পেতে তাবে-তাবেঈনদের পর থেকেই মিথ্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যায় এবং তখন থেকেই ধর্মের মাঝে আক্বিদাগত ভুল ভ্রান্তিসহ মারাত্বক সব ফিতনার শুরু হয়। এধরনের গুরূতর সমস্যার সৃষ্টির জন্যে উপরে যে ৩টি কারন দেখানো হয়েছে যার একটি আরেকটির পরিপূরক যেমন- স্বার্থপর মুসলিমদের ইসলাম হতে দূরে আসতে থাকার ফলে মুসলিমদের বৃহত্তর ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পরে আর তাই খলিফাগনের মাঝেও সমস্যার সৃষ্টি হয় আর অপরদিকে তো পথপ্রদর্শক সাহাবীগনও একের পর এক ইন্তেকাল করতে থাকেন কিন্তু খলিফা উমার রাঃ পর্যন্ত কোন ফিতনা প্রবেশ করেনি মুসলিমগুলোও ছিল বেশীরভাগই সচেতন আর তার শাষন আমলেই কিন্তু ইসলাম পৃথিবীর অর্ধেক পর্যন্ত পৌছেছিল। ৩য় খলিফা উসমান রাঃ এর সময় হতে আম মুসলিমদের অজ্ঞতা বৃদ্ধি পায় তাই তারা নিজেদের মাঝে ফিতনার সৃষ্টি করে স্বয়ং খলিফা উসমান রাঃ কেই শহীদ করে ফেলে কিছু মুসলিমরা, এরপর আলী রাঃ খলিফা হয়েও এইসকল ফিতনা পরিপূর্নভাবে মিটাতে পারেনি যার মূল উৎস লুকিয়ে ছিল আম মুসলিমদের মাঝেই তাই ফিতনা আরো বাড়তে থাকে এবং শীয়া সুন্নি খারেজী নামক দল তৈরী হয়ে আলী রাঃ কেও শহীদ করে মুসলিমরাই। এরপর খিলাফত মুয়াবিয়া রাঃ এর হস্তগত হলেও ততদিনে কিন্তু নবুয়াতের আদলে খিলাফত শেষ হয়ে গিয়ে ফিতনা আরো চরম আকার ধারন করে ইমাম হাসান হোসেন রাঃ কেও শহীদ করে ফেলে। আপাত দৃষ্টিতে সবাই এসব ফিতনার জন্য দোষী করে খলিফাকে এবং যারা এসব ঘটিয়েছে তাদেরকে, কিন্তু এরা দোষী হলেও মূল দোষ আসলে আম মুসলিমদের আর এটা আল্লাহ সুবঃ এরই চিরচারিত নিয়ম যে দুনিয়াতে সুখ বেশীদিন স্থায়ি হয় না সুখের পর দুঃখ আসবেই আর কোন দেশের আম জনতা যেমন হবে সেই দেশের শাষকও তেমন হবে তাই খিলাফা রাষ্ট্রের আম জনতা যখন ইসলাম হতে একটু আধটু দূরে আসা শুরু করল ঠিক তখনই খলিফাগনও ভুল করতে থাকল এবং ক্রমান্বয়ে অযোগ্য নেতাও ক্ষমতায় আসতে শুরু করল যেমন- ইয়াজিদ এর শাষন ক্ষমতা লাভ । আর কুরাইশ যুবকের হাতে ইসলামের যে বড় ধরনের ক্ষতি হবে এই কথাটাও নবী সাঃ ভবিস্যতবানী করে গিয়েছিলেন। যাইহোক খলিফাগন যেসব ভুল করতে শুরু করল বিশেষ করে ৫খলিফার পর হতে তা হল- পরবর্তী খলিফাগন ইসলামের আধ্যাতিক বিষয় এর চেয়ে রাষ্ট্রীয় বিষয়ে বেশী মাথা ঘামাতে লাগল আর পুর্বেই বলা হয়েছে নিয়ম হল রাষ্ট্র জীবন আর ধর্ম জীবন উভয়েরই সমন্বয় ঘটানো আর এটাও পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে- সকল সমস্যার মূলে ছিল আম্ মুসলিমদের ইসলাম হতে ক্রমান্বয়ে দূরে সরে আসা আর এর ফলেই পরবর্তীতে অন্ধভক্তেরও উৎপন্ন হয়। যদিও এমন হবার মূল কারন মনে করা হয় প্রধানত ৩টি।
১) ইসলামী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সাহাবী এবং তাবেঈন গন বাদেও অনেক আম মুসলিম ছিল আর তাদের মাঝেই ১ম সমস্যাটি শুরু হয় যেমন- এক ব্যাক্তি নবী সাঃ কে খুবই সংক্ষেপে ইসলাম ধর্ম বুঝিয়ে চাইলে তিনি তাকে ইসলামের ৫টি রুকনের কথা উল্লেখ করেন আর সেই ব্যাক্তিটি তা শুনে বলেছিল এর বেশীও করব না কমও করব না, তা শুনে নবী সাঃ বলেন- লোকটি জান্নাতি(যদিও নবী সাঃ উল্লেখ করেননি সেই জান্নাতটা কি আম মুসলিমদের জান্নাত নাকি খুবই উচুমানের জান্নাত, যেহেতু জান্নাতেরও বিভিন্ন স্তর আছে)। নবী সাঃ এর এই হাদিস বর্ননা করার পর সাধারন মুসলিমদের মাঝে এমনভাবে সারা পরে গেল যে, নবী সাঃ যেন এতদিন পর জান্নাতে যাবার শর্টকাট রাস্তা প্রকাশ করছেন। অতঃপর সাধারন মুসলিমরা ইসলামের ঐ পাঁচটি রোকনকে শুধুমাত্র কিছু আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মেনে চলে ইসলামের পুরো হক্বই আদায় করে ফেলেছে ভাবতে লাগল আবার অনেকে সরাসরি ঐ ৫টি কর্ম ব্যাতীত ইসলামের অন্নান্য হুকুমের বেলাতেও উদাসীনতা দেখাতে শুরু করে যদিও আমাদের বর্তমান সমাজের তুলনায় কিন্তু তা খুবই কম ছিল। তাছারা ইসলামের ঐ ৫রোকনের মাঝেই প্রায় গোটা ইসলামকে মানার পদ্ধতি লুকিয়ে ছিল কিন্তু আম শ্রেনীর সবাই তা বুঝতে পারেনি যেমন- নামাজের মাঝে ইসলামের প্রধান ভিত্তি আল কুরান পুরোটাই পাঠ করা যায় সুতারাং মানুষ কি করবে আর কি করবে না তার মূল বিধি বিধান ফরজ নামাজে ইমামের ক্বিরাতে মাধ্যমেই জানার সিস্টেম ছিল কিন্তু বেশীরভাগ আম মুসলিমই ক্বিরাত শুনার সময় যান্ত্রিকভাবে তা শুনত এবং এর পর পরই যে নামাজের মাঝে শ্রবনকৃত আল্লাহ সুবঃ এর বানীকে নিজেদের প্রত্যহ জীবনে বাস্তবে রুপদান করতে হবে তা তাদের অনেকেই বুঝত না আর কেউ কেউ বুঝলেও নামাজ শেষে দুনিয়ার ফান্দে পরে ভুলে যেত। জ্ঞানার্জন(কুরান সুন্নাহর) প্রত্যেক নর নারীর উপর ফরজ হলেও যেহেতু ৫টি রুকনের মাঝে তাকে উল্লেখ করা হয়নি তাই নামাজ ব্যাতীত অন্য সময় কুরান তেলায়তে অলসতা অনীহা বাড়তে থাকে আর একারনেই সাহাবী, তাবেঈনগন ব্যাতীত আম মুসলিমদের মাঝে ধীরে ধীরে দ্বীন সম্পর্কে মূর্খতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
২) এক কথায় ১ম সমস্যা ছিল কুরান তেলায়তে গুরুত্বহীনতা আর এখন যে ২য় সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে তা ছিল কুরানকে কঠিন ভেবে দূরে থাকা। সাহাবীদের জামানায় প্রায় সব সাহাবীদেরই কুরানের শানে নুযুল এবং কোন আয়াতের পরে কোন আয়াত নাজিল হয় তা সম্পর্কে ছিল পূর্নাংগ জ্ঞান এবং ধারনা কিন্তু সাহাবীদের থেকেই এই জ্ঞান হ্রাস পেতে পেতে বর্তমানে কিন্তু এমন হয়েছে যে বেশীরভাগ সুরা, আয়াতের শানে নুযুল এবং নাজিলের সময়কালের ক্রমই সঠিকভাবে জানা যায় না এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অনুমান নির্ভর, ভুল এবং পরস্পর বিরোধী তথ্য রয়েছে, অথচ এই তথ্যগুলো এতই গুরুত্বপূর্ন যে এগুলো না জানলে কুরানে আল্লাহ সুবঃ কি বলছেন আর কেন বলছেন আর সেই অনুযায়ি বর্তমানে বান্দা হিসেবে কি করনীয় তা জানা দূরহ হয়ে পরে। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে কিভাবে এই তথ্যগুলোর অনেকই হারিয়ে গেল ? এর উত্তর এক কথায় হল নবী সাঃ সাহাবীদের যা যা নির্দেশ দিয়েছিলেন তা তিনারা ইচ্ছে থাকা সত্তেও এমনকি প্রবলভাবে চেষ্টা করেও পরিপূর্ন বাস্তবায়িত করতে পারেননি যারফলে ৩য় খলিফা উসমান রাঃ এর আমলে বিভিন্ন সাহাবীদের সংকলিত কুরান নিয়ে দ্বন্দের শুরু হয় এমনকি আল্লাহ সুবঃ ৭টি আঞ্চলিক আরবী ভাষায় কুরান তেলায়তের বৈধতা দিলেও একেক জন নিজেদের ভাষার তেলায়তকে সঠিক এবং অন্যদেরটা ভুল আখ্যা দেয়া শুরু করেছিল। মোটকথা নবী সাঃ এর সময় কুরান লিখিত আকারে সংকলিত হয়নি পরে ১ম খলিফার সময় সংকলিত শুরু হয় কিন্তু রাষ্ট্রীয় ভাবে শুধুমাত্র ১ ধরনেরই কুরান সংকলিত ছিল এছারাও বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য সাহাবীদের কাছে তাদের নিজ পছন্দ অনুযায়ি সংকলিত কুরানও ছিল । মোটকথা বিভিন্ন ধাচের সংকলিত কুরান তখন মজুদ ছিল ৩য় খলিফার পূর্ব পর্যন্ত। ঐতিহাসিক তথ্যমতে সর্বপ্রথম আলী রাঃই নবী সাঃ ইন্তেকালের পর পরই কুরানের ছরিয়ে ছিটিয়ে থাকা আয়াতগুলোকে একত্রিত করেন এবং তা সজ্জিত করেন অহী নাজিলের ক্রম অনুসারে, তিনি ছারা কুরানের লিখিত সংকলনের সাহস কেউ করেনি ১ম দিকে, কারন কোন সাহাবীকে সরাসরি নবী সাঃ এমন করার নির্দেশও দেননি কিন্তু যখন যুদ্ধে অসংখ্য হাফেজে কুরান শহীদ হন তখন উমর রাঃ এর অনুরোধে ১ম খলিফা আবু বকর রাঃ আরো এক ধরনের কুরান সংকলন করেন আর কুরানের এই সংকলনটি আসলে কোন ধাচের ছিল তা সহী সুত্র জানা যায় না তবে মাসউদ রাঃও যে আলাদা ধাচের একটি কুরান সংকলন করেছিলেন তা জানা যায়, যেমন- তিনি নামাজে নবী সাঃ এর তেলায়তের ক্রমানুসারে কুরান সংকলিত করেন। এরকম হয়ত আরো অনেকেই নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ি কুরানের সিরিয়াল তৈরী করে তেলায়ত করতেন আর এতে কারও কোন অভিযোগও ছিল না কিন্তু ৩য় খলিফা উসমান রাঃ ফিতনা দূর করার উদ্দেশ্যে বক্তব্যের ক্রমান্বয় অনুসারে আরেক ধাচের কুরান সংকলন করেন যা আমাদের বর্তমান কুরান। কিন্তু তিনি এই কুরান ব্যাতীত অন্য সকল কুরান এবং বিচ্ছিন্ন আয়াত ব্যান্ড করে দেন এবং অন্য সব কপি পুড়ে ফেলার আদেশ দেন আর ১ম খলিফার সংকলিত কুরান যেটি মা হাফসা রাঃ এর কাছে সংরক্ষিত ছিল তা ৩য় খলিফার মন্ত্রী মারোয়ান নিয়ে নেয় এবং পুড়ে ফেলে। এসব কর্মকান্ডে আলী রাঃ মাসউদ রাঃ সহ সাধারন মুসলিমরা উসমান রাঃ এর উপর মনক্ষুন্ন হন আর উসমান রাঃ এর তত্তাবধায়নে বক্তব্যের ক্রমান্বয় অনুযায়ি যে কুরান সংকলিত হয় তাতে কুরানের কোন সুরা বা কোন আয়াত কখন নাজিল হয়েছে তা বুঝার কোন উপায় নেই, অথচ সর্বপ্রথম সংকলিত আলী রাঃ এর কুরানে তা সুন্দরভাবে বুঝা যেত। আর এর ফলে সাধারন মুসলিমের কিন্তু বর্তমান কুরান হতে মাসলা মাসায়েল বের করা পূর্বের মত সহয নয় কেননা কোন সুরা বা কোন আয়াত কখন নাজিল হয়েছে তা উল্লেখ নেই আর এগুলো না জানলে কুরানে আল্লাহ সুবঃ কি বলছেন আর কেন বলছেন আর সেই অনুযায়ি বর্তমানে বান্দা হিসেবে কি করনিয় তা বুঝতে পারা আম মুসলিমের জন্য কঠিন অথচ নবী সাঃ এর যুগে এবং ২য় খলিফার যুগেও দ্বীন ইসলাম ছিল সকলের কাছেই সহয সরল একটি দ্বীন কিন্তু উসমান রাঃ এর ফিতনা দূর করার স্বার্থে যে শুধুই এক ধাচের কুরান রেখে বাদ বাকীগুলো ধংস করেন এতে কিন্তু সাহাবীদের তেমন একটি সমস্যা হয়নি কারন প্রায় সব সাহাবীদেরই কুরানের শানে নুযুল এবং কোন আয়াতের পরে কোন আয়াত নাজিল হয় তা সম্পর্কে ছিল পূর্নাংগ জ্ঞান এবং ধারনা কিন্তু সাহাবীদের পর থেকেই এই জ্ঞান হ্রাস পেতে থাকে আর এই সমস্যার সমাধান স্বরুপ সাহাবীদের যুগের পর অনেক বিজ্ঞজনেরা কুরানের নির্দেশ সকলের কাছেই সহয করে তুলে ধরার স্বার্থে কুরানের বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থ প্রনয়নের প্রয়াশ পায় কিন্তু এর ফলে তো আর সাহাবীদের মতন নির্ভুল কুরানের তাফসীর বুঝা সম্ভব নয় তাই সাধারন মুসলিমের কাছে ঠিকই দ্বীন ইসলামের হুকুম আহকাম নিজে থেকে নির্নয় করা কঠিন হয়েই রইল। অনেকে মনে করে কুরানকে শুধুমাত্র দলিল হিসেবে লিপিবদ্ধ করার আদেশ ছারা তা কোন ধাচে সংকলন করতে হবে নবী সাঃ যেহেতু পরিস্কার করে কিছু বলে যাননি তাই যেকোন এক ধাচে পড়লেই চলবে, আর মা আয়েশা রাঃ মতামতও তাই। কিন্তু নবী সাঃ ওফাতের পর পরই বিশিষ্ট সাহাবী এবং আহলে বায়াতের মাঝে সর্বপ্রথম আলী রাঃ ই কুরানের বিচ্ছিন্ন আয়াতকে একত্র করে সংকলন করেন তাই আলী রাঃ এর সংকলিত ১ম যে কুরানটি ছিল তাকেই সমস্ত মুসলিমদের জন্য প্রধান সংকলন হিসেবে মর্যাদা দেয়া উচিত ছিল বাদ বাকী আল্লাহ সুবঃই ভাল জানেন অথবা উসমান রাঃ এর সময় যদি কুরান নিয়ে সবাই বাড়াবাড়ি না করত বা করলেও যদি উসমান রাঃ শুধু নিজের সংকলিত কুরান ছারা অন্যগুলো ধংস না করতেন তবে আজ মুসমিম উম্মার জ্ঞানের ভান্ডার আরো বেশী হত এবং শানে নুযুল পুরোপুরি সঠিক পাওয়া যেত ফলে সাধারন মুসলিমরাও দ্বীন ইসলামকে কাঁটায় ঘেরা কঠিন দ্বীন মনে করে দূরে থাকত পারত না বা নিজেদের কুরান এর নির্দেশ বুঝার অযোগ্য ভেবে বড় বড় আলেমদের উপর একতরফাভাবে নির্ভরশীল হত না। অনেকে আবার মনে করে যে আলী রাঃ এর সংকলিত কুরানই সার্বজনীন তা শুধু শীয়ারাই দাবী করে কিন্তু একটি ঘটনা আলী রাঃ এর প্রতি ইংগিত দেয় যেমন- নবী সাঃ ইন্তেকালের পুর্বমুহুর্তে আলী রাঃ কে কাছে ডেকে কানে কানে কিছু নির্দেশনা দিয়ে যান আর তারপরই দেখা যায় নবী সাঃ এর দাফন কার্য শেষ হলেই তিনি সকল কাজ বাদ দিয়ে কুরান সংকলনে লেগে যান তাতে মনে হয় সম্ভবত নবী সাঃ আলী রাঃ কে এই নির্দেশই দিয়ে গিয়েছিলেন আর নবী সাঃ এর পক্ষ থেকে তা সবাইকে হয়ত বলার সুযোগ হয়নি বা ইচ্ছে করেই বলেননি কারন তা অন্যদের বলার নির্দেশ হয়ত আল্লাহ সুবঃ এর কাছ থেকে পাননি যেমন- মনে ইচ্ছে থাকা সত্তেও আবু বকর রাঃ কে পরবর্তী খলিফা নির্ধারনের কথাও তিনি মুখ ফুটে বলেননি আর বাস্তবেও দেখা যেত কিছু কিছু বিষয়ে সাহাবীরা প্রশ্ন করলেও অহী না পাওয়া পর্যন্ত তিনি চুপ থাকতেন তবে সর্বশেষে এটাই বলা উচিত যে আল্লাহই তা ভাল জানেন আসল ঘটনা কি ছিল? তবে দ্বীন ইসলাম সর্ব সাধারনের নিকট কঠিন মনে হবার প্রধান কারন যে পরিপূর্ন শানে নুযুলের এবং অহীর ক্রমধারার অনুপস্থিতি তা কিন্তু নিশ্চিত। অনেকে আবার ভুল বুঝে মনে করতে পারে - বর্তমানে যে কুরান আছে তা থেকে নির্দেশনা বের করা বোধ হয় আসলেই খুব কঠিন ! আসলে কঠিন হবে শুধু তাদের কাছেই যাদের জ্ঞান কম কিন্তু যারা পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করে তাদের কাছে এখনও সহয।
৩) মুসলিম উম্মাহর ৩য় মূল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল নবী সাঃ এর এক হাদিসকে তার নিষেধ সত্তেও সাধারন মুসলিমদের মাঝে ধালাওভাবে প্রচার করে এবং হাদিসের মর্মার্থ না বুঝে যেমন- একদিন নবী সাঃ এক সাহাবীর সংগে নিরিবিলি আলাপ কালে হটাত নবী সাঃ বললেন- কেউ যদি খাস দিলে একবার কালিমা পাঠ করে তবে জাহান্নাম তার জন্য হারাম হয়ে যায়। অন্যত্র বলা হয়েছে ''আল্লাহ তা'আলা এমন ব্যক্তির উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে।' এছারাও একটি হাদিসে এসেছে যে-যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে না, তাদেরকে তিনি শাস্তি দেবেন না।’’ তখন সাহাবী এ সুসংবাদ লোকদেরকে জানিয়ে দিতে চাইলে তিনি বললেন, তুমি তাদেরকে এ সুসংবাদ দিওনা, তাহলে তারা ইবাদত ছেড়ে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে। অন্য রেয়াতে আছে- সাধারন লোকের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হবে তাই তুমি এটা প্রকাশ কর না এরপর ঐ সাহাবী যতদিন বেঁচে ছিলেন এই হাদিস কাউকে বলেননি মৃত্যুর পুর্বে শুধু বলেন একারনে যে– হাদিস গোপনের অপরাধে আবার না পাপী হয়ে মারা যায়(--বুখারি ও মুসলিম)। (অথচ এই হাদিসই আজকে যেন আমাদের মাঝে বেশীরভাগ হুজুর ও বক্তাদের মুখের বুলি হয়ে দ্বারিয়েছে, তবু এমন সব ওয়াজ মাহফিলে এই হাদিস প্রচার করে থাকে যেখানকার মুসলিমরা ওজুর ফরজ কয়টি তাও জানে না)। এখন সমস্যা হল সাহাবীদের জামানাতেই রসুলের ঐ বানীটি সুসংবাদ হিসেবে সর্বসাধারনের মাঝে প্রচার হয়ে যায় ফলে নবী সাঃ এর অনুমানই বাস্তবে পরিনত হতে শুরু করে কেননা খুলাফায়ে রাশেদার যুগেও সাহাবী এবং তাবেঈন গন ব্যাতীত সাধারন মুসলিমদের মাঝে অনেক লোক ছিল যাদের পরকালের চাইতে দুনিয়ার জ্ঞান আর লোভ দুটোই ছিল বেশী এবং স্বার্থপর টাইপের ছিল তাই তারা দুনিয়াটাকে একটু বেশী প্রধান্য দিত আর মনে মনে খুজত এমন তরিকা যার মাধ্যমে-দুনিয়াদারী খায়েশ মিটিয়ে করার পরও পরকালে কোনমতে মুক্তি পাওয়া যায়। তাদের এ ধরনের মন মানষিকতা অবশ্যই দুর্বল ইমানের লক্ষন হলেও তারা একেবারেই ইমানহারা ছিল না কারন তখনকার সময়ে সাহাবা এবং তাবেঈনদের একটা প্রভাব সাধারন মুসলিমদের উপর ছিল ফলে তারাও নাজাত চাইত, কিন্তু ধর্মের জন্য এত কষ্ট না করে যদি একটু শর্টকাট কোন রাস্তা থাকত তবে আরো ভাল হত এমনটাই আশা করত তারা। ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে যদি তাদের কাছে উপরে উল্লেখিত হাদিসখানা পেশ করা হয় তবে তো আর কথাই নেই, সুতারাং তারা ঠিকই ভুল বুঝে । সত্যিকারার্থে কিন্তু এই ধরনের ভুল বুঝা মুসলিমের সংখ্যাই বেশী বৃদ্ধি পাচ্ছিল। মোটকথা উপরে ১নং সমস্যায় উল্লেখিত ৫টি রুকনে কুরানের জ্ঞানার্জনের কথা না থাকায় এবং কেউ কেউ ঐচ্ছিক মনে করে কুরানের জ্ঞানার্জন করতে যেয়েও উপরে ২নং এ উল্লেখিত সমস্যার কারনে কুরান হাদিসের জ্ঞানকে কঠিন মনে হয়ে ইসলামের মৌলিক জ্ঞানার্জনটুকুও আর অর্জন সম্ভব হয়নি। এমতবস্থায় যখন তারা জানতে পারে কালেমা পড়লেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি আর শুধুমাত্র শিরক না করলেই ক্ষমা তখন থেকে তারা আরো ধর্মীয় জ্ঞানার্জনে উদাসীন হয়ে পরে(সেই যুগ হতে শুরু হয়ে আমাদের বর্তমান সমাজেও কিন্তু এই সমস্যাটা এতই প্রবল আকার ধারন করেছে যে অনেকে ভাবে কালেমা তো পড়েছিই!! এখন যদি কোন ভাবে মরার আগে আগে আরেক বার পড়া যায়, তবে আর ঠেঁকায় কে?)। সুতারাং উপরে উল্লেখিত মোট ৩টি কারনে আম মুসলিমরা নিজে নিজেই ধর্মের মৌলিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নিজেদের জীবন পরিচালনা বাদ দিয়ে অন্য কোন পাক্কা মুসলিমের কাছ থেকে ধর্মীয় মাসলা শুনে শুনে আমল করা শুরু করে কেননা ইসলামের ৫খুটি মানতে গিয়েও অনেক মাসলার দরকার পরত। আর ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন না করাতে যে সময়টুকু তারা অতিরিক্ত পেত তাকে দুনিয়াবী কাজে ব্যয় করে নিজেদের ভোগ-বিলাসের রাস্তা প্রসার করত। যেহেতু তাদেরও ইমান ছিল তাই পরকালও যাতে না হারাতে হয় সেজন্য কি করে কোনমতে জাহান্নাম হতে বাঁচা যায় শুধু সেইটুকুরই চেষ্টা চালাত। উচুমানের জান্নাতে যাবার জন্য অতিরিক্ত কষ্ট করা আম মুসলিমদের ভাল লাগত না কারন কুরান হাদিস হতে যতটুকু জান্নাতের বর্ননা শুনেছে তাতে তারা ভাবত- একদম সর্বনিম্ন জান্নাতি একাই পাবে এই দুনিয়ার দশগুন আর সেখানে ভোগ-বিলাস মোটেও কম থাকবে না। তাই তারা বোকামী করে পরকালের অসীম জীবনের জন্য বেশী আয়োজন করতে গিয়ে ক্ষনস্থায়ী দুনিয়ার বেশী কষ্ট সইতে নারাজ বা দুনিয়ার আরাম আয়েশ কম করতে নারাজ । আর তাই ধর্ম নিয়ে বেশী মাথা ঘামানোর চাইতে দুনিয়াবী বিষয়ে বেশী মাথা ঘামানোতে বিশ্বাসি ছিল আর এভাবেই মুসলিম সমাজে ধর্মীয় ব্যাপারে সম্পূর্নই পরনির্ভরশীল একটি শ্রেনী তৈরী হয় আর এই শ্রেনীটির ধর্মীয় মাসলা মাসায়েলের চাহিদা পুরনের জন্য যারা ধর্মীয় ব্যাপারে বেশী পারদর্শী ছিল তারা ধর্মীয় বিষয়ে আরো বেশী সময় ব্যয় করতে বাধ্য হল পূর্বের তুলনায় । এভাবে ধর্ম বিষয়ে পন্ডিতগন ধর্ম বিষয়ে সময় বেশী লাগাতে গিয়ে দুনিয়াবী কর্মকান্ডের জন্য পূর্বের মত সময় পেত না কিন্তু ধর্মীয় মাসালা প্রদানই তাদের কাছে বেশী গুরুত্বপুর্ন মনে হওয়ায় তারা বেশীরভাগ সময়ই ধর্মগ্রন্থ চর্চায় ব্যাস্ত থাকত ফলে তাদের জীবনে আর্থিক অসচ্ছলতা দেখা দেয় এরপরেও ধর্মীয় পন্ডিতগন দমায় না বরং তারা ভাবতে থাকে তারাই হল ধর্মের হর্তা কর্তা সুতারাং দুনিয়াদারী একেবারে ত্যাগ করে হলেও সাধারন মানুষের ধর্মীয় চাহিদা দূর করতেই হবে তাই তারা আরো বেশী বেশী ধর্মগ্রন্থ নিয়ে পরে থাকতে লাগল। আর এভাবেই মুসলিম সমাজে আরেকটি শ্রেনীর জন্ম হল যারা দুনিয়াবী ক্ষেত্রে ছিল তুলনামুলক অকেজো কিন্তু ধর্মীয় ক্ষেত্রে ছিল বেশ পন্ডিত আর এভাবেই খোলাফায়ে রাশেদার যুগের পর পরেই ধর্মীয় পুরোহিতের মত আরেকটি শ্রেনীর উদ্ভব হয় অথচ নবী সাঃ এবং খোলাফায়ে রাশেদার যুগে উপরে উল্লেখিত দুই শ্রেনীর কোন অস্তিত্ব ছিল না আর প্রত্যেকেই ধর্ম বিষয়ে ফরজ জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি দুনিয়াদারীও করত সমান তালে। কিন্তু উপরে উল্লেখিত ৩টি কারনে দ্বীন এবং দুনিয়ার সুন্দর যে একটি ভারসম্য ইসলামে ছিল তা নষ্ট হতে শুরু হয় আর উক্ত দুটি শ্রেনীর উদ্ভব হয়। আর এই ধর্মীয় পুরোহিত শ্রেনী এবং ধর্মীয় অজ্ঞ শ্রেনীরই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভুমিকাতে পরবর্তীতে জন্ম নেয় অন্ধ অনুসরনে বিভিন্ন ব্যাক্তিকেন্দ্রিক মাজহাব ও ফিরকা।
--- (চলবে)----
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১১:১৪
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×