somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকৃতির বিচিত্র খেয়াল গুহা

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুহা প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়ের নাম। অনেকেরই ধারণা গুহা প্রাচীন মানুষের সৃষ্টি। বসবাস অথবা গোপন কোনো কাজে খুব কৌশলে নির্মাণ করা হয়েছে এসব। কিন্তু এ ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত। সত্যিকার অর্থে গুহা প্রকৃতিরই সৃষ্টি। বরফরাজ্য, মরুভূমি কিংবা সমুদ্রের মতোই পৃথিবীর এক বিচিত্র সৃষ্টির নাম গুহা। অন্ধকারে ঢাকা গভীরতার জন্য অনেকেই গুহাকে মৃত্যুফাঁদ বলে অভিহিত করেন। আবার কোনো কোনো গুহা প্রচণ্ড রকম শীতল হয়ে থাকে। তবে অন্ধকার এবং গভীর হলেও সর্বক্ষেত্রে গুহা মৃত্যুফাঁদ নয়।

গুহার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শিলা বিন্যাস চোখে পড়ে অহরহ। এক্ষেত্রে রুক্ষ ছিন্ন ভিন্ন শিলার পাশাপাশি অনেক সুন্দরতম শিলাও দেখা যায়। অনেক গুহাই পৃথিবীর অন্যতম সুন্দরতম স্থান বলে বিবেচিত হয়। কেননা অনেক গুহাকে কেন্দ্র করেই অনেক ক্ষেত্রে গড়ে উঠেছে নদী, ঝরনা, জলপ্রপাত, হ্রদ। কোনো কোনো গুহায় আবার রয়েছে উষ্ণ প্রস্রবন, বালি ও চোরাবালির মতো মরণফাঁদ।

কেন গড়ে ওঠে গুহা? এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে গুহা গড়ে উঠতে পারে। বিজ্ঞানীদের কাছে গ্রহণযোগ্য কয়েকটি কারণের একটি হলো 'লাভা টিউব'। লাভা টিউব বা লাভা নির্গমণের ফলে সৃষ্ট নলাকার গুহা থেকেই গুহার উৎপত্তি। লাভা সাধারণত আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত হওয়ার সময় একটা ভূ-গর্ভস্থ পথ ধরে স্রোতের মতো এগোয়। সে কারণে লাভার চলার পথ ফাঁপা হয়ে যায়। আর এভাবেই গুহা তৈরি হয়। এছাড়া পানি চুঁইয়ে মাটির নিচে যায়। মাটির নিচে পাথরের ফাঁকে আগের জমাকৃত পানির সঙ্গে এই পানি জমা হয়। পানিতে বিদ্যমান ক্ষারে এসব পাথর হাজার হাজার বছর ধরে গলতে থাকে। আর এভাবে পাথরের জায়গায় তৈরি হয় বড় বড় ফাঁপা প্রকোষ্ঠ। এ প্রকোষ্ঠে পাথরের উপরের পানি নেমে যায়। ফলে উপরের ফাঁকা অংশ হয়ে পড়ে জলশূন্য। আর এভাবেই একসময় তা গুহায় রূপ নেয়। কোনো কোনো স্পেলিওলজিস্ট-এর মতে, ভূ-গর্ভস্থ পাথর অধঃক্ষেপণ, তাপ, চাপ ও রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে এর খনিজ উপাদান ও বুনট পরিবর্তিত হয়ে পলির রূপ ধারণ করে এবং ওই পাথরের স্থান ফাঁকা হয়ে তা গুহায় রূপ নেয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, যারা গুহা নিয়ে গবেষণা করেন, তাদের স্পেলিওলজিস্ট আর যারা গুহা সন্ধান করেন তাদের স্পিলাংকার্স বলা হয়।

ভূ-বিজ্ঞানীরা গুহার ভেতরের তাপ, বাতাসের চাপ ও সূর্যালোকের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে কখনো কখনো গুহাকে ভাগ করে থাকেন। শ্রেণী অনুসারে ভাগগুলো হলো_

টুইলাইট জোন: গুহার প্রবেশমুখে যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পাওয়া যায়, তাকে ঞরিষরমযঃ ুড়হব বা প্রদোষ অঞ্চল বলা হয়।

ভ্যারিয়েবল জোন : গুহার যে অংশে ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে তাপ উঠানামা করে তাকে ঠধৎরধনষব ুড়হব বা পরিবর্তনশীল তাপাঞ্চল বলে।

গুহার ভেতরে বিভিন্ন ধরনের বিন্যাস রয়েছে। হালকা ক্ষারীয় পানি গুহাতে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে গঠিত হয় প্রাথমিক বিন্যাস 'স্পেলিওথেমস'। গুহার ছাদ থেকে পানি ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ার সময় কিছুটা ক্যালসিয়াম কার্বনেট গুহার ছাদে ও মেঝেতে থেকে যায়, এ জিনিস ক্রমাগত জমে গুহায় বিন্যস্ত হয়। গুহার ছাদে ঝুলন্ত এ ধরনের বিন্যাসকে বলে 'স্ট্যালাকটাইটস'। আর গুহার মেঝেতে গঠিত বিন্যাসকে 'স্ট্যালাগমাইটস' বলে, স্ট্যালাকটাইটস ও স্ট্যালাগমাইটস বিন্যাস পরস্পরের সঙ্গে মিশে নতুন এক ধরনের বিন্যাসের জন্ম দেয়। একে বলে গধরহংঃধু বা স্তম্ভ।

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গুহা আবিষ্কৃত হচ্ছে। তবে এখনো এমন অনেক অনাবিষ্কৃত গুহা রয়েছে যা আগেরগুলো থেকে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতায় বেশি। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত গুহার মধ্যে মালয়েশিয়ার বোর্নিও দ্বীপের 'সারাওয়াক চেম্বার' সবচেয়ে বড় ভূ-গর্ভস্থ প্রকোষ্ঠ। এটি দৈর্ঘ্যে ২, হাজার ৩০০ ফুট ও প্রস্থে ১ হাজার ৪৭৬ ফুট। ফ্রান্সের রিজেয় জাঁ বার্নাদ বিশ্বের সবচেয়ে গভীর গুহা। এটি ৫ হাজার ২৫০ ফুট গভীর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির বিপুল গুহাশ্রেণীই পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা গুহা পথ। এ গুহার ভেতরদিকে রয়েছে ৫৫০ কিলোমিটার লম্বা গলিপথ ও খাদ। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সমুদ্রের তলদেশে এমন আরও শ'খানেক বিখ্যাত গিরিপথ ও গুহামালা রয়েছে। সুপ্রাচীনকাল থেকেই গুহা বিভিন্ন জীব-জন্তু ও মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পুরাবিদদের ধারণা, গুহাকে মানুষ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার শুরু করে ৫ লাখ বছর আগে থেকে। তাদের মতে, ইউরোপের প্রাগৈতিহাসিক মাথা লম্বা দীঘল মানুষ 'ক্রোম্যাগননরা' খ্রিস্টপূর্ব ৪০ হাজার বছর থেকে গুহাচিত্র আঁকা শুরু করে। গুহার নিশ্ছিদ্র আঁধারের সঙ্গে বহু প্রাণী বেশ মানিয়ে নিয়েছে। গুহাবাসী প্রাণীদের মধ্যে বাদুড়, সাপ, গিরগিটি, বিছাপোকা, ছারপোকা ছাড়াও আরও অনেক প্রজাতির পোকামাকড় বাস করে। মাটির ওপরের প্রাণীদের মতো এরা চোখনির্ভর নয়। এদের গন্ধ, স্পর্শ ও শ্রবণের অনুভূতি খুব তীক্ষ্ন। এরা এসব অনুভূতি দিয়েই গুহায় জীবনধারণ করে। গুহাতে এমন কিছু প্রাণী বাস করে যেসব প্রাণী গুহার অন্ধকার ছাড়া অন্য কোথাও বাস করে না। বা বলা উচিত বাস করতে পারে না। বিজ্ঞানীদের ভাষায় এদের 'ট্রোগলোডাউট' বলা হয়। সপ্তদশ শতকে একদল বিজ্ঞানী এক গুহাবাসী গিরগিটির সন্ধান পায়। তারা সেটিকে ভুলে শিশু ড্রাগন বলে চিহ্নিত করে। এ নিয়ে ইউরোপজুড়ে তখন ভীষণ তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।

গুহা সন্ধান ও আবিষ্কার একটি অত্যন্ত কষ্টকর ও ব্যয়বহুল কাজ। এ কাজে প্রচুর সময় ও শ্রম ব্যয় হয়। সবচেয়ে কষ্টসাধ্য হলো_ গুহার অস্তিত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা। তবে বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সাফল্য ও উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কারের ফলে এখন গুহা সন্ধান অনেক সহজ হয়েছে। গুহা সন্ধানের ক্ষেত্রে ভূ-তাত্তি্বকরা মাটির নিচে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভূ-গর্ভে শব্দ প্রেরণ করেন। এ শব্দ মাটির নিচে বিভিন্ন শিলার স্তর থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। হাইড্রোফোন যন্ত্রের সাহায্যে প্রতিফলিত ধ্বনি ধারণ করে এবং কম্পিউটারের সাহায্যে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিধ্বনির লেখচিত্র অঙ্কন এবং পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন শিলার গঠন প্রকৃতি ও ফাঁপা কিনা তা বুঝা যায়। এভাবে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে গুহা সন্ধান করা হয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×