somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেরা

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনে কিছু একটা করে খেতে হবে, এমন চিন্তাভাবনা নিম্নবিত্ত ঘরের ছেলেদের বেশ আগেই করে নিতে হয় । কিশোর বয়স থেকে তাই যখন যে কাজ করে পয়সাকড়ি পাওয়া গেছে সেই কাজই আমিন করেছে । হোটেলের বেয়ারাগিরি থেকে শুরু করে সিটি কর্পোরেশনের ক্লিনার হিসেবেও কাজ সে করেছে । এমনি চলছিল, কিন্তু একদিন একটু অন্যরকম ঘটা আরম্ভ করল ।
সেবার আমিন একটি মাঝারি মানের হোটেলের বেয়ারার কাজ করছিল । একদিন সে হোটেলে স্থানীয় এক প্রভাবশালী যুবনেতার আগমন ঘটল । ফুটফরমাস খাটার কাজে আমিনের চটপটে ভাব দেখে নেতা খুশি হলেন ।
“নাম কি?”
“আমিন । ”
“শুধু আমিন? পুরা নাম বল!”
“মোহাম্মদ আল-আমিন ।”
বাহ! ভাল নাম । তা ওয়েটারি করে দিন কেমন চলে?
কোনমতে চলে যায় ভাইজান ।
“বাড়তি কামাইয়ের ইচ্ছা আছে?”
“আছে ।” আস্তে করে বলল আমিন ।
“আচ্ছা এই নাম্বারটা রাখ । আগামী সোমবার ফোন দিয়া আমায়র সাথে দেখা করবি । আর সবাই আমাকে বড়ভাই ডাকে, তুইও তাই ডাকিস । ”
যথাসময়ে ফোন দিয়ে বড়ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেল আমিন । বড়ভাই তার হাতে বেশ কিছু টাকা দিয়ে একটা জায়গায় পাঠালেন । সেখান থকে একটা বক্স তাকে দেয়া হল । নির্দেশমত প্যাকেট নিয়ে বড়ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার পর তাকে কটা কড়কড়ে বড় নোট দেয়া হল-
“এই নে! পাঁচশ টাকা । বৃহস্পতিবার দিন আবার দেখা করবি । ”
আমিনের বেশ আনন্দ হচ্ছে । সামান্য আসা যাওয়া করে মাসে কয়েক হাজার টাকা আমদানি তো মন্দ না । নতুন কাজটা বেশ মনে ধরল আমিনের । এভাবে তিনদিন পরপর গিয়ে ভালই আয় হতে লাগল আমিনের । খাইখরচার পরও কিছু টাকা বেঁচে যেতে লাগল তার ।
এভাবে টানা কয়েকমাস যাওয়ার পর কেমন যেন খটকামত লাগল আমিনের । ইদানীং ডেলিভারি নিতে যাবার সময় পরিচিত অপরিচিত অনেক লোক তাকে কেমন যেন একটা বাড়তি সমীহ দেখায় । একবার তো প্যাকেট সমেত এক দশাসই চেহারার পুলিশের কাছে ধরা পড়েছিল । দু-চারটা প্রশ্ন করতেই নেতার নাম চলে আসায় আমিন নিশ্চিত হাজতবাস থেকে রক্ষা পেল ।
আমিন বোকা নয়, এতদিনে সে বুঝে গেছে তার সাধের সাইড ইনকামের কাজটা আর যাই হোক, সাধুলোকের নয় । নিজের পেট চালানোর ধান্দায় নেশাখোরের পাল্লায় পড়ে গেছে সে । নিজেকে অনেক বুঝিয়েছে আমিন, কিন্তু শক্তভাবে কাজটা ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্তটা নিতে পারছে না সে । ভাবল, কিছু জিনিস এদিক ওদিক করে একটু কামিয়ে নিলে ক্ষতি কি, আমি তো আর করছি না । এমন করেই কাটতে লাগল আমিনের দিন ।
একদিন রাতে বস্তিতে শুয়ে আমিন আকাশ পাতাল ভাবছে । সেদিন কেন জানি তার মৃত বাবার কথা মনে পড়ছে । আচমকা ছোটবেলায় বাবার বলা কিছু কথা মনে পড়ল তার ।
“তোর নাম কি ক দেহি।?”
“মোঃ আল আমিন ।”
“এই নাম অনেক ইজ্জতদার নাম । বুঝছস? জীবনে এমন কিছু করবি না যাতে এই নামের অপমান হয় । বুঝছস আমার কথা?”
“জ্বী, আব্বা ।“

এ কথা মনে হতেই চোখে পানি চলে এল আমিনের । যা হয় হোক, সে এই কাজ থেকে সে ফিরে আসবেই । হোটেলের চাকরিটাও ছেড়ে দিবে ভাবল । হয়ত এই ঝুপড়ি ঘরটাও যাবে, রাস্তায় রাস্তায় হয়ত কাটাতে হবে রাত । ভাবল সে, কিন্তু সে সিদ্ধান্ত পালটাবে না ।

দুমাস পরের কথা । একটি এটিএম বুথে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি পেয়েছে আমিন । যা কামাই হয় তা আগের প্রায় অর্ধেক, তার ওপর মায়ের কাছে টাকা পাঠিয়ে হাতে যা থাকে তা দিয়ে কোনমতে খাওয়ার খরচ হয়, বাকি যা থাকে তা দিয়ে রেললাইনের ধারের ঝুপড়িতেও থাক যাবে না । ডিউটি শেষে এখন আমিন হয় রাস্তায়, নাহলে পার্কের বেঞ্চে ঘুমিয়ে যায় । শীতের জন্য অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়ে একটা কমদামী ব্লেজার কিনেছে আমিন । নাইট ডিউটি না থাকলে রংচটা ব্লেজার পরিহিত আমিন রাস্তার পাশেই ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়তে সে যে তৃপ্তি পায় তার মূল্য টাকাতে হয় না । (বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ ব্লগার জাহাজী পোলা ভাই )
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×