মুসলিম বিশ্ব ধ্বংসের মাষ্টারপ্ল্যান
* মুসলিম বিশ্ব ধ্বংসের মাষ্টারপ্ল্যান
সৌদি আরব, সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের পাচঁটি দেশকে ভেঙ্গে ১৪টি দেশে পরিণত করার নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আন্তজাতিক অঙ্গনে চলছে নতুন করে হইচই। মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক নিউইয়ক টাইমস এ অক্টোবর ১৩ এর শুরুতে এক সংখ্যায় বিখ্যাত মাকিন সাংবাদিক রবিন রাইট এ ব্যাপারে বিস্তারিত বণনা তুলে ধরেন। ওই লেখা পরবতীতে মধ্যপ্রাচ্যেসহ বিভিন্ন দেশে পুনঃমুদ্রন করা হয়। আনুষ্ঠানিক পযায়ে দৃশ্যমান কোন ফোরামে আলোচনা না হলেও গোয়েন্দা পযায়ে যে এ ব্যাপারে তৎপরতা লক্ষনীয়। যার ফলশ্রুতিতে এ প্রতিবেদন। আসলেই মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে কী হচ্ছে তা যেমন অন্তহীন রহস্যের ব্যাপার, তেমনিভাবে পৃথিবীর এ স্পশকাতর অঞ্চলে যে কোন পরিবতন অন্য সকল অঞ্চলকে অনিবাযভাবে প্রভাবিত করার আশংকা থেকে যায়। কে বা কারা এ ধরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে তা সুস্পশভাবে না জানলেও রাইটের প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হওয়া যায় এ ব্যাপারে বিশ্বের আন্তজাতিক সাম্রাজ্যবাদী মহল নেপত্য কাজ করছে। এর সাথে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বের বিভিন্ন পরিকল্পনা যোগসূত্র রয়েছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, ২০০৬ সালের আমেরিকান এক যিফেন্স জানালে। আমড ফোসেস জানালে এ ‘ব্লাড বডার হাউ টু এ বেটার মিডলিস্ট ওয়াল্ড লুক’ শীষক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধটি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন অবসার প্রাপ্ত গোয়েন্দা কমকতা মি রাল্ফ পিটার। প্রবন্ধের সাথে একটি মানচিত্র দিয়েছেলেন। কিন্তু লেখার পঠভূমি এক। এর সাথে মিল রয়েছে আশির দশকের ১৯৮২ সালের ইসরাইলের সাময়িকীতে প্রকাশিত ইসরাইলের নেয়া স্টাটেজিক ইনোর এক পরিকল্পনার।এ পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, ইসরাইলের তার নিজস্ব নিরাপত্তার স্বাথে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোকে ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভাজন করে ইসরাইলের উপর নিভরশীল করে রাখা। রবিন রাইট তাৎপযপূণ বিভাজন আকাঁ হয়েছে সৌদি আবরকে কেন্দ্র করে ফলে এ নিয়ে অস্থিরতা সৌদি আরবের সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী আল ফয়সাল জাতিসংঘের সিরিয়া নীতির প্রতিবাদে সম্প্রতি সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখা থেকে বিরত থাকেন। এর কয়েকদিন আগে সৌদি আরব নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদে নিবাচিত হয়। কিন্তু দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয় সিরিয়ার ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদের উপেক্ষার নীতির প্রতিবাদে দেশটি নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী আসন গ্রহন করবে না। সৌদি আরব আসলেই নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হতে না চাইলে আগেই প্রাথীতা প্রত্যাহার করে নিতে পারত। কিন্তু তা না করে নিরাপত্তা পরষিদে না যাওয়ার ঘোষনার মধ্যে একটা চাপের কৌশল থাকতে পারে। আঞ্চলিক পযায়ে সৌদি আরবের প্রধান প্রতিপক্ষ ইরানের সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর যে সমঝোতা প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, বিয়াদ সম্ভবত এর ব্যত্যয় কামনা করছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের পরিবতিত পরিস্থিতিতে পাশ্চাত্যের কাছে ইরানের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। অন্যদিকে সৌদি আরবের সাথে পাশ্চ্যত্যের দূরুত্ব যে ক্রমেই বাড়ছে তা সাম্প্রতিক অনেক ঘটনা প্রবাহে বোঝা যায়। মিশরের পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সৌদি আরব রাশিয়ার সাথে সম্পক নিমাণের একটি উদ্যোগ নিয়েছিল। এর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ধারাবহিকতায় আমেরিকান কৌশলের অংশ হিসাবেও নিউ ইয়ক টাইমসের রাইটের লেখাটি প্রকাশ হতে পারে। রবিন রাইটের লেখায় বতমান সৌদি আরবকে চার টুকরা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার পরিকল্পনার অনুসারে সৌদি আরব চার ভাগে ভাগ করা হবে-
১. পূব আরব ঃ উত্তর পূবের দাম্মামসহ সন্নিহিত অঞ্চলটি হবে পূব আরব। পারস্য উপসাগরীয় সীমান্তবতী এ অঞ্চলে আমেরিকান সৈন্যদের অবস্থান রয়েছে।
২. উত্তর আরব ঃ ইরাক সীমান্তবতী উত্তর অঞ্চলকে উত্তর আরব দেখানো হয়েছে।
৩. পশ্চিম আরব ঃ পবিত্র মক্কা, মদিনা, জেদ্দা আর পাশের পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে দেখানো হযেছে পশ্চিম আরব।
৪. ওহাবিস্তান ঃ দেশটির মধ্যাঞ্চলকে নিয়ে বতমান সৌদি আরবের অবস্থান দেখানো হযেছে, যার নাম দেয়া হয়েছে ওহাবিস্তান। এই বিভাজনের পক্ষে রাইট যুক্তি দেখিয়েছেন সৌদি আরবে দীঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণভাবে বিভিন্ন বিভাজন কে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। সৌদি রাজ পরিবারের যে অনৈক্য সুপ্ত রয়েছে তা আব্দুল্লাহর পর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। গোত্রগত মতভেদ শিয়া সুন্নি ব্যবধান এবং অথনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো দেশটির ভৌগোলিক বিভাজনকে অনিবায করে তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজ পরিবারের ব্যাপক দূনীতি, যার মধ্যে অস্ত্র কেনার বিপরীতে বিপুল কমিশন গ্রহণের বিষয়ও রয়েছে। বাদশাহ আব্দুল আজিজের বিভিন্ন স্থীর গভে জন্ম নেয়া প্রিন্সদের মধ্যে মতপাথক্য ও ক্ষমতার দ্বদ্ধ এবং ৩০ শতাংশ তরুনের বেকারত্ব ও সামাজিক বৈষম্যের বিষয়গুলো রয়েছে। এর বাইরে মিসরে গণতান্ত্রিক ভাবে নিবাচিত প্রেসিডেন্ট মূরসি ও ব্রাদারহুডের ওপর যে রক্তক্ষয়ী ক্র্যাকডাউন চালানো হয়েছে, তা সৌদি আরবের ধমীয় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক আলেমদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এ ক্ষোভের বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় প্রভাবশালী দেশকে বিভাজন করতে চায় তারা। সৌদি আরবের পূবাঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিয়া জনগোষ্ঠী রয়েছে। এ অঞ্চলটি হলো সবচেয়ে বেশি তৈল সম্পদে সমৃদ্ধ। কিন্তু এ সম্পদের সামান্যের ওপরই স্থানীয়দের নিয়ন্ত্রন রয়েছে।
সৌদি আরবের রাজ তন্ত্রের উত্তরাধিকার জটিলতাও একটি বড় সমস্যা। বাদশাহ আব্দুল আজিজ আল সৌদ জাজিরাতুল আরবের কতৃত্ব গ্রহনের মাধ্যমে রাজবংশীয় শাসন প্রতিষ্ঠার পর উত্তরাধিকারের যে নিয়ম তৈরি করেছিলেন, তাতে জ্যেষ্ঠতা অনুসারে তার সব সন্তান সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হওয়ার কথা বলা হয়। এভাবেই সৌদ ফয়সাল, থালেদ, ফাহাদ ও আব্দুল্লাহর বাদশাহ হয়েছেন। বতমান বাদশাহের বয়স ৯০ এর কোটায়। তিনি বাদশাহ হওয়ার পর মনোনিত দুই ক্রাউন প্রিন্স ইতিমধ্যে মারা গেছেন। তৃতীয় প্রিন্স হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন সালমান বিন আব্দুল আজিজ। তারপর কারা যুবরাজ হবেন তা নিয়ে রয়েছে বিতক। বাদশাহ আব্দুল আজিজের অনেক ছেলে রয়েছেন যারা তার নাতীদের চেয়ে বয়সে ছোট এবং তাদের কম অভিজ্ঞতা রয়েছে রাষ্ট্র চালানোর। বতমান ও অতীতের বাদশাহরা সরকারের কতৃত্ব নেয়ার পর ভাইদের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে সন্তান ও ভাতিজাদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এতে ক্ষমতার ভারসাম্যে বেশ খানিকটা পরিবত©ন এসেছে। বাদশাহ আব্দুল্রাহ ‘এলিজিয়েন্স কাউন্সিল’ করে ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করা আব্দুল আজিজ পুত্র পরিবারের একজন করে সদস্যকে তার অন্তভূক্ত করেছেন নিবাচিত প্রিন্স সাথে। ৩৫ সদস্যের এ গুরুত্বপূণ ফোরামের সাথে পরামশ করে উত্তাধিকার নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। বাদশাহ আব্দুল্লাহ তা অবশ্য অনুসরণ করেনি। এ নিয়ে বেশ মতনৈক্য রয়েছে রাজ পরিবারে। আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর এ নিয়ে সংকট দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যে প্রভাবশালী প্রিন্স মুকরিনের মা ইয়েমেনী হওয়ায় এবং আরেক প্রভাবশালী প্রিন্স ও সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান বন্দর বিন সুলতান তার বাবার রক্ষিতার সন্তান হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে তাদের উত্তরাধিকার না করার কথা বলা হচ্ছে। এসব বিষয়ে সামনে আরো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
* সিরিয়কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে উক্ত পরিকল্পনায়। রবিন রাইট গৃহযুদ্ধে বিক্ষত সিরিয়া শেষ পয©ন্ত তিন ভাগে ভাগ হবে বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, সিরিয়ায় কয়েক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা শিয়া-আলভিয়া কতৃ©ত্ব বজায় রাখতে পারবেন না।
১. আলভিস্তান ঃ শিয়া-আলভিয়া পশ্চিমের কুল ঘেঁষে একটি স্বাধীন আলভিস্তান প্রতিষ্টা করে সেখানে নিজেদের নিয়ন্ত্রন বজায় রাখবে।
২. কুদিস্তান ঃ অন্যদিকে ইতিমধ্যে কাযত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সিরীয় কুদিরা ইরাকি কুদিদের সাথে মিলে অথবা আলাদা কুদিস্তান গড়তে পারে।
৩. সুন্নিস্তান ঃ এর বাইরে বাকি অংশে সিরীয় সুন্নিস্তান হতে পারে। সিরীয় নিয়ে বতমান সাম্রাজ্যবাদী চক্রের ষড়যন্ত্র এ পরিকল্পনার বাস্তবায়নের একটি অংশ হতে পারে।
একই ভারে ইরাক বিভাজনের কথাও বলেছেন রবিন রাইট। তাদের পরিকল্পনা অনুসারে ইরাকে তিনভাগে ভাগ করা হতে পারে।
১. সুন্নি ইরাক ঃ ইরাকের উত্তর পশ্চিমাংশ হবে সুন্নি ইরাক।
২. কুদি ইরাক ঃ কুদি অংশটি অন্য কুদি এলাকার সাথে মিলতে পারে অথবা হতে পারে স্বাধীন।
তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইয়ামেনকে দুই ভাগে ভাগ করা হবে।
১. উত্তর ইয়েমেন ঃ
২. দক্ষিণ ইয়েমেন ঃ ইয়েমেনের দক্ষিনাংশ সৌদি আরবের সাথে মিলেও যেতে পারে বলে রাইটের ধারণা।
একই ভাবে লিবিয়াকেও তিনভাগে ভাগ হতে পারে বলে তার ধারণা।
লিবিয়ার ব্যাপারে তার বক্তব্য হলো দেশটি তিন ভাগে ভাগ হয়ে যেতে পারে গোত্রপ্রাধান্যের ভিত্তিতে।
১. ত্রিপোলিতানিয়া ঃ এর মধ্যে উত্তর পশ্চিম অংশ হবে ত্রিপোলোতানিয়া।
২. স্রিনানিয়া ঃ পূবাংশে স্রিনানিয়া যার মূল কেন্দ্র হবে বেনগাজি। লিবীয় তেল সম্পদের বড় অংশটির মালিক হবে এ দেশ। ইতিমধ্যে এ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে লিবিয়ার পূবাঞ্চলকে স্বায়ত্বশাসনের ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। ২০ জনের মন্ত্রিসভা নিয়ে নভেম্বর ১৩ তে তারা সাইরেনিসা নামে নতুন পতাকাযুক্ত ডায়াসে শপথও নিয়েছেন।তথ্য-আমাদের সময়)
৩. ফেজান রাষ্ট্র ঃ এর বাইরে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল হবে ফেজান রাষ্ট্র। এ এলাকাটি এখনো কাযত স্বাশাসনে পরিচালিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আরব বিশ্বে যে গণজাগরণ শুরু হয়েছে এটিকে ইসরাইলীরা প্রতিবেশিদেশগুলোকে বিভাজন করে দূবল এবং তেল আবিবের ওপর নিভরশীল করে তোলার কৌশল হিসাবে বাস্তবায়ন করছে। রবিন রাইটের লেখায় তারই সুপ্ত ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আমেরিকার বিভিন্ন থিংক ট্যাংকের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে আরব গণজাগরণ এখনো শেষ হয়নি। এর মাধ্যমে যে দ্বন্ধ সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে তাকে স্থিতিশীল দেশগুলোতেও নিয়ে যাওয়া হবে। বিশেষ করে এর শিকার হতে পারে সৌদি আরব সহ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ। এ সাবি©ক পস্থিতিতে মুসলিম উম্মাহর জন্য নিজেদের অস্তিত্বই ঠিকে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াবে।
* আমেরিকার সহযোগীতায় আরব বিশ্ব নিয়ে ইসরাইলের ভয়ংকর পরিকল্পনা ঃ
মাকিন সাম্রাজ্যবাদের সহযোগিতায় আরব বিশ্ব ছিন্ন ভিন্ন করার এক ভয়াল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে আরেক বিশ্ব সন্ত্রাসী ইসরাইল। তাদের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছে মাকিন সাম্রাজ্যবাদ। ইসরাইলকে সকল বিষয়ে অন্ধ সহযোগিতা করা আমেরিকার যেন ধমীয় কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লেবাননকে ছিন্নভিন্ন করা -দেশটিকে কয়েকটি জাতি ও ধর্মে ভাগ করা ও উলেখযোগ্য অংশের নিয়ন্ত্রণ ইসরাইলের গ্রহণ এবং ইরাক বিভক্তির পরিকল্পনা ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের অনেক আগে সম্পন্ন করা হয়। এ বিষয় সম্পর্কিত একটি প্রবন্ধ ১৯৮২ সালে একটি ইসরাইলী সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। তাতে ফিলিস্তিন দখলের পূর্বে রচিত ইয়াহুদীদের কৌশলের বিস্তারিত দিক তুলে ধরা হয়। ইসরাইল কর্তৃক পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ অর্জনের নীল নকশার কথা ১৯০৫ সালে প্রথম জানা যায়। নীল নকশাটির শিরোনাম হলো ‘প্রোটোকলস অব দি এ্যালডারস অব জায়ন’। এ নীল নকশার সূত্র ধরে যে প্রবন্ধটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়, তাতে মিশর, সুদান, সিরিয়া, লিবিয়া প্রভৃতি দেশকেও টুকরো টুকরো করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কিভাবে করা হবে তাও প্রবন্ধ থেকে জানা যায়। প্রবন্ধটি লিখেছেন অডেড ইনন। প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে জের"জালেমস্থ বিশ্ব ইয়াহুদীবাদী সংস্থার পর্যালোচনামূলক সাময়িকী কিভনিম-এ। কিভনিম শব্দের অর্থ নির্দেশনা। ১৯৮২ সালে ফ্রেরুয়ারী মাসে ১৪টি বলিউমে প্রকাশিত এই প্রবন্ধটির শিরোনাম ছিল, ‘ষ্ট্র্যাট্রেজি ফর ইসরাইল ইন দি নাইনটিন এইটিজ’ বা ইসরাইলের জন্যে আশির দশকের কৌশল। এতে এমন কৌশলের বর্ণনা দেয়া হয় যার প্রয়োগের মাধ্যমে ইসরাইল পরিকল্পিত ভাবে এবং অতীতের সব আগ্রাসনের তুলনায় সফল ভাবে পাশ্ববর্তী আরব দেশগুলোর কাঠামো তছনছ করে দিতে পারবে।
দীর্ঘ প্রবন্ধটির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো পাঠকের জন্যে নিম্নে উপস্থাপন করা হলো। এটি পড়ে ‘বৃহত্তর ইসরাইল’ গঠনের শতাব্দীর পুরনো স্বপ্নের কথা জানতে পারবেন এবং এই সাথে বর্তমান পরিস্থিতির গভীরেও যেতে পারবেন। ইসরাইল এখনো স্বপ্ন পূরণের আশা ছেড়ে দেয়নি। তাইতো শতাব্দীর পুরনো স্বপ্নের সুত্র ধরে কাজ করে যাচ্ছে ইসরাইলের বর্তমান প্রশাসন। কিভনিম-এ প্রকাশিত প্রবন্ধটির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো এরূপ ঃ
‘সিনাই উপত্যকা পুনরায় আমাদের অধিকারে নিয়ে আসতে হবে। কারণ এটি সম্পদ সমৃদ্ধ এবং এর রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। ক্যাম্পডেভিড ও শান্তি চুক্তির ফলে আমাদের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছিল... তেল ব্যতীত এবং এর আয় ব্যতীত এবং আমাদের বর্তমান বিশাল ব্যয়ের চিত্র বিবেচনায় আমাদেরকে মার্চ ১৯৭৯ সালে সাদাতের সাথে সম্পাদিত চুক্তির পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে ...।
‘মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থা , এ অঞ্চলের প্রকৃতি এবং আবর বিশ্বের নীতি এমন পরিস্থিতি জন্ম দিবে যে ... ইসরাইল সিনাই উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বাবে কাজ করবে। ... আভ্যন্-রীণ সংঘাত ও সমস্যার কারণে মিশর ইসরাইলের জন্যে সামরিক হুমকি হয়ে দেখা দিবে না এবং এটি সত্য যে এক থেকে দু‘দিনের মধ্যে মিশরকে জুন ১৯৬৭ এর যুদ্ধের পরের অবস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য করা সম্ভব। প্রচলিত ধারণা হলো মিশর আরব বিশ্বের সব থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্র ... নিশ্চিত ভাবে ১৯৬৭ এর যুদ্ধে এরা পরাস্ত হয়েছিল ... মিশরের সামরিক শক্তি ইসরাইলের একার তুলনায় যেমন অর্ধেক তেমনী ভাবে অন্য আরব দেশগুলোর সম্মিলিত শক্তির অর্ধেক । ১৯৬৭ সাল হতে এই অবস্থা চলছে ... অল্পদিন পরেই
সিনাই ফিরে মিশর আমাদের কিছু জায়গায় প্রবেশ করল। কিন্তু ... এটি মিশরের শক্তিতে কোন গুণগত তারতম্য ঘটাল না।
‘মিশরের আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক চিত্র থেকে এ কথা পরিস্কার। এটি ইতিমধ্যে মৃতদেহে পরিণত, এ ক্ষেত্রে মুসলমান ও খৃষ্টানদের মধ্যে মবর্ধমান সংঘাতকে বিবেচনা করলে অবস্থা আরো খারাপ প্রতীয়মান হয়। ইসরাইলের আশির দশকের রাজনৈতিক লক্ষ্য মিশরকে ভৌগোলিক ভাবে আঞ্চলিকতায় বিভক্ত করা -এর পশ্চিম অংশে ... ‘মিশরের পতন হলে; লিবিয়া, সুদান বা আরো দূরবর্তী দেশগুলো তাদের বর্তমান অবস্থা বহাল রাখতে সক্ষম হবে না।, কিন্তু মিশরের পতন এবং বিলুপ্তিতে অংশ নিবে। মিশরীয় খৃষ্টানরা একটি আলাদা রাজ্য বানাবে, এর পাশাপাশি স্থানীয় শক্তির অনেক গুলো দূর্বল রাষ্ট্রের জন্ম ঘটবে। বর্তমানের মত কোন কেন্দ্রীয় সরকার থাকবে না এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি চুক্তি গড়ে উঠার সম্ভাবনা থাকবে না।
‘যদিও মনে হতে পারে দেশের পশ্চিম সীমান্তের সমস্যা মোকাবেলা কঠিন হয়ে উঠবে কিন্তু বাস্তবে পূর্ব সীমান্তের তুলনায় এটি মোকাবেলা সহজ হবে ... লেবাননকে পাঁচটি প্রদেশে বিভক্তিকরণ পরে আরব বিশ্বের জন্য নজীর হয়ে থাকবে। ... জাতিগত ও ধর্মীয় ভাবে সম- প্রকৃতির সিরিয়া এবং ইরাকের বিভক্তি ঘটানো সম্ভব হবে ... এটি ইসরাইলের প্রাথমিক ভাবে দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ , স্বল্পকালীন পরিকল্পনা হলো রাষ্ট্র গুলোর সামরিক শক্তিকে ধবংস করা। সিরিয়ার পতন ঘটবে এবং এটি জাতিগত ও ধর্মীয় অবয়বে কয়েকটা রাজ্যে বিভক্ত হবে . . .এর উপক্থলে শীয়াদের রাজ্যে হবে আলাউ, সুন্নীদের রাজ্য আলেপ্পো, অন্য সুন্নী রাজ্যটি হবে দামেস্ককে কেন্দ্র করে। দেশটির উত্তরের উত্তেজনা নতুন রাজ্য গঠনে সহায়ক হবে এবং দ্রুজরা সম্ভবতঃ আমাদের গোলান হাইটে রাজ্য গঠন করবে, তবে তারা নিশ্চিত ভাবে হাওরান এবং জর্দানের উত্তরাংশে আস্তানা গড়ে তুলবে। এই রাজ্যটি এলাকায় দীর্ঘ পরিকল্পনার আওতায় শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং আমাদের এই লক্ষ্য পূরণের সার্বিক ব্যবস্থা আমাদের নাগালের মধ্যে।
‘ইরাক একদিনে তেলসমৃদ্ধ দেশ হলেও অন্যদিকে আভ্যন্-রীণ সংঘাতে বিধবস্ত, ইরাকের আভ্যন্তরীণ সংঘাত ইসরাইলের পক্ষে পালা ভারী করেছে। এই দেশটির ভাঙ্গন আমাদের জন্যে সিরিয়ার পতনের চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক শক্তিতে ইরাক সিরিয়ার সিরিয়ার তুলনায় অনেক বেশী শক্তিশালী। ইসরাইলের জন্যে ইরাকের সামরিক শক্তি সর্বার্ধিক হুমকি স্বরুপ। ইরাক এবং সিরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাঁধলে ইরাকের সামরিক শক্তি খর্ব হবে এবং এর ফলে আমাদের বিরূদ্ধে সংগঠিত শক্তি গড়ে তুলতে ইরাক সক্ষম হবে না। আরবদের যে কোন ধরনের আত্ম কলহ আমাদের স্বল্পমেয়াদী পরিকল্বপনা বাস্তবায়নে সাহায্য করবে। এটি ইরাক বিভক্তিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ... ফলে তিন বা তারও অধিক রাজ্যে ইরাকের বিভক্তি ঘটবে। প্রধান তিনটি ভাগ হবে বসরা, বাগদাদ এবং মুসেল। এ সময়ে শীয়া অধ্যুষিত দক্ষিণ ইরাক সুন্নী ও কুর্দী অধ্যুষিত উত্তর ইরাক হতে পৃথক হয়ে যাবে। এটি ইরান -ইরাকের মধ্যে বিরাজমান বর্তমান সংঘাতকে আরো মজবুত করে তুলতে পারে।
‘আরব বিশ্ব এমনিতেই ঐক্যবদ্ধ নয়। এ অবস্থায় ভিতর ও বাইরের নানামুখী চাপএর ভাঙ্গনকে ত্বরান্বিত করবে। এটি বিশেষ করে সউদী আরবের বেলায় ঘটবেই। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামো আভ্যন্-রীণ সংঘাতের সৃষ্টি করবে এবং তার ফলশ্রুতিতে দেশটি বিভক্ত হবেই। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতি তেলের উপর নির্ভরশীল হউক বা না হউক তাতে ঘটনার কোন হেরফের হবে না।’
‘অদূর ভবিষ্যতে জর্দান কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে কিন্তু দীর্ঘয়োদী লক্ষ্যে
পরিণত হবে না।বাদশাহ হোসেনের দীর্ঘ শাসনের অবসানের পর জর্দানের শাসন ফিলিস্তিনীরা পেলে জর্দান আমাদের জন্য আর হুমকী থাকবে না , ... ইসরাইলের নীতি হলো শান্তি এবং যুদ্ধকে এমন ভাবে পরিচালিত করা যাতে বর্তমান অবস্থায় পরিবর্তন আসে এবং ক্ষমতায় ফিলিস্তি নীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সম্ভব হয়। জর্দান নদীর পূর্ব তীরের পরিবর্তন দেশটির আভ্যন্-রীণ সমস্যা নিরসনে ভূমিকা পালন করবে। জর্দানের আরব অধ্যুষিত এলাকা হতে আরবদের যুদ্ধের মাধ্যমে বা শান্তির শর্তের মাধ্যমে দেমের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়ে জর্দান নদীর দু’তীরে জনবসতির ভারসম্য ফিরিয়ে আনতে অদূর ভবিষ্যতেই কাজটি সম্পন্ন করে ফেলতে হবে। জর্দানের আরবদের থেকে পশ্চিম তীরের ইয়াহুদীদের আলাদা না করা পর্যন্ত স্বায়ত্তশাসনের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যাত হবে। সত্যিকারের সহ-অবস্তান এবং শান্তি এই ভূমিতে তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন আরবরা বুঝতে পারবে ইয়াহুদীদের শাসন ছাড়া তাদের অস্তিত্ব বা নিরাপত্তা কোনটিই সম্ভব নয়। ...
‘অচিরেইআমরা পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করব। ঘনবসতিপূর্ণ সমুদ্র উপকুলে তিন- চতুর্থাংশ ইয়াদীর বসবাস অসম্ভব।
এ অবস্থায় আমাদের প্রধান লক্ষ্য বা কৌশল নির্ধারণ করতে হবে ইয়াহুদীদের ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে। আমরা যদি সংখ্যাগত, কৌশলগত ও অর্থনৈতিক ভাবে দেশকে দখলে ও পরিচালনায় ব্যর্থ হই তবে আমাদের অস্তিত্বের জন্যে সেটা হুমকী হয়ে দেখা দিবে। তাই আমাদের লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে আমাদের ভবিষ্যত। যুদিয়া, সামারিয়া, গ্যালিলি আমাদের দখলে রাখতে হবে তেমননি ভাবে এগুলো হতে উৎসারিত জলধারাতেও আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেখানে এখনো ইয়াহুদী বাস গড়ে উঠেনি সেখানে যেতে হবে ।’
ইয়াহুদীবাদের ঔপনিবেশিক ও ধর্মবিদ্বেষী পরিকল্পনা রচনা শেষে ফিলিস্তিনীদের উপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। এরপর মধ্যপ্রাচ্যে ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধ সহ ইসরাইলের ধারাবাহিক আগ্রাসনের শিকার হয় আরবরা। পুরো আরব বিশ্বকে ধবংসের হুমকি পর্যন্ত দেয় ইসরাইল। এভাবে মুসলিম বিশ্বের প্রতি ইসরাইল মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। যে কোন প্রকারে একে মোকাবেলা করতে হবে।
ইরান হতে শাহের উৎখাতের পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানে প্রবেশের কোন সুযোগ পায়নি, এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের পুলিশী আচারণ যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে আগের চেয়েও অপরিহার্য হয়ে প্রতিভাত হচ্ছে। ইসরাইল একা শুধুমাত্র সুয়েজের প্রতি নজর রেখে ক্ষান্ত হচ্ছে না। পাশাপাশি এ অঞ্চলের তেল উৎপাদনকারীদের প্রতিও নজর রাখছে এবং বাড়তি দায়িত্ব পালনের মত পূর্ব- ভূমধ্যসাগরে নিরাপদ ঘাঁটি গড়ে তুলছে।
এই কাজ আমেরিকানদের পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। আমেরিকানরা অতীতে ভিয়েতনাম ও লেবাননে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।পূর্বে তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে তারা এবার সরাসরি নিজেরা না জড়িয়ে তাদের প্রতিনিধি ইসরাইলকে শর্তবিহীন অনির্ধারিত অংকের সাহায্যে বরাদ্দের মাধ্যমে কাজে লাগাচ্ছে। এটি করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে অনেক সহজ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মৌখিক ভাবে ইসরাইলকে কখনো কখনো নিন্দা করলেও জাতিসংঘে ঠিকই ভেটো প্রয়োগের মাধ্যমে ইসরাইল তথা নিজদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে।যুক্তরাষ্ট্র অর্থ এবং অস্ত্র সাহায্যের মাধ্যমে ইসরাইলের উপর অর্পিত গুরু দায়িত্ব পালনে সাহায্য দিয়ে থাকে । এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব হয়েছে একক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়া ।
অদৃষ্টের পরিহাস হলো আরবরা প্রায়শঃই আরবদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয় ফলে জাতিগত ভাবে নিয়ন্ত্রিত ক্ষুদ্র রাষ্ট্র গঠনের পথ সুগম হয়। এ অঞ্চলের ভাঙ্গনের পথও এবাবে রচিত হয়। ইরাকের ধবংসে এবং ইয়াহুদীদের রচিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ইরাককে তিনটি ভাগে ভাগ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স সহ অন্যান্য ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তি যখন একত্রিত হয়েছিল তখন তাদের সাথে লেবানন, সউদী আরব, মিশর, সিরিয়া এবং অন্য আরব রাষ্ট্রগুলোও যোগ দিয়েছিল । শুধু তাই নয় অর্থ দিয়ে সাহায্যও করেছিল।
সাম্প্রতিকালের মধ্যপ্রাচ্য ‘শান্তি আলোচনা’য় সুযোগরাখা হয়েছে সিরিয়া গোলান হাইট ফিরে পাবে। কিন্তু শর্ত দেয়া আছে সেখানে দ্রুজরা বাস করবে। ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিন দখলের পর থেকে দ্র"জরা ইসরাইলীদের মিত্রের ভূমিকা পালন করেছে। গোলান হাইটের এই পরিণতি সিরিয়াকে নিয়ে ইয়াহুদীদের বাবনার বাস্তব রূপায়ণে বিশেস ভূমিকা পালন করবে ।
পরবর্তী লক্ষ্য হলো মিশর ও সুদান। ইতিমধ্যে পশ্চিমারা মিশর ও সুদানকে খৃষ্টান এবং মুসলিম এই দু’অংশে বিভক্তির প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। আমেরিকান এবং ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টরা মিশরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনার মাধ্যমে খৃষ্টানদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে, দোষ চাপাচ্ছে ইসলামী আন্দোলনের উপর। পশ্চিমা প্রচার মাধ্যম গুলো মুসলমানদের উন্মাদগ্রস্ত ও খৃষ্টান বিরোধী আখ্যায়িত করে প্রচার করছে মুসলমানদের কারণে মিশরের সংখ্যালঘু খৃষ্টানদের জীবন বিপন্ন। অতএব পশ্চিমাদের আবেদন এই অবস্থায় তাদেরকে মিশরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হউক । সেখানে যেয়ে তারা খৃষ্টানদের রক্ষা করবে যেমনটা তারা করতে চেয়েছে ইরাকের বেলায় কুর্দী এবং শীয়াদের রক্ষার নামে।
ইসরাইল এক সময়ে মোবারককে উৎখাত করবে অথচ একটা সময় পর্যন্ত তাদের সেবা করেছে। মিশর এখন সংকটের মুখোমুখি। সউদী আরব মিশরের ইসলামী মৌলবাদীদের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে আমেরিকানদের আমন্ত্রণ জানায়। আমেরিকা মিশরে অভিজান পরিচালনা করবে জাতিসংঘের ছত্র-ছায়ায় এক প্রকল্পের আওতায় এবং ইসলামী আন্দোলন নস্যাৎ করে মিশরকে বিভক্ত করবে। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করতে হয় মিশরীয় অর্থডক্স খৃষ্টান বুট্রোস ঘালিকে এমনি জাতিসংঘের সে োটারী জেনারেল করা হয়নি । তিনি সম্ভবতঃ ভবিষ্যত মিশরীয় খৃষ্টানদের দেশের প্রেসিডেন্ট হবেন।
আরবের সরকার প্রধানরা ইয়াহুদীদের কার্যকলাপকে নিজেদের কর্মকাণ্ড দ্বারা সহযোগীতা করছে। আরব জাতীয়তাবাদ ইসলামকে সরিয়ে দিয়ে মুসলিম উম্মাহ্র মাঝে এক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইয়াহুদীরা আরবদের মাঝে জাতিগত অনৈক্য তৈরীর চেষ্টা করছে। ইয়াহুদীদের পরিকল্পনা মোতাবেক পশ্চিমারা যেমন কাজ করছে তেমনি ভারত এবং রাশিয়াও কাজ করছে। মুসলমানদের বির"দ্ধে তারাও যুদ্ধ করছে। কাশ্মির, ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, বসনিয়া, আজারবাইজান, ফিলিপাইন, চীন প্রভৃতি দেশে মুসলমানদের সংঘাতময় জীবন যাপনে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে তারা এক নেতার নেতৃত্বে একক মুসলিম উম্মাহ্ গড়ে তুলতে পাছে না। মুসলিম বিশ্বের সমস্যা সমূহকে চিহ্ণিত করে সে গুলোকে এখন কাজে লাগানো হচ্ছে । আমেরিকা এবং ইউরোপ শুধুমাত্র এই কাজে অস্ত্রশস্ত্রের মান উন্নয়ন করছে।
মাত্র কয়েক ঘন্টার নোটিশে আধুনিক মরণাস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনী সংঘর্ষের স্থানে প্রেরণ করছে আমেরিকা ও তাদের দোসর ইউরোপ সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিমাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব ছিল তাও এতখানি মারাত্মক ছিল না। বৃহত্তর যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা ফুটিয়েছে। এক যুগেরও আগে সিদ্ধান্- গ্রহণের মাধ্যমে বৃহত্তর যুদ্ধের জন্যে প্রয়োজনীয় অস্ত্র নির্মাণ বন্ধ করা হয়েছে। যা আগে তৈরী হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পশ্চিমাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত ষ্টাট-১ ও ষ্টাট-২ চুক্তির মাধ্যমে তাও ধবংস করে ফেলা হয়েছে।
ইরানের ইসলামী বিপব ইয়াহুদীবাদের লক্ষ্যকে বেকায়দায় ফেলে দেয় । ইরান শুধু আরব বিশ্বের জন্যে নয় বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের মিলনের ক্ষেত্র হতে পারে। যার নেতৃত্বে ও মুসলমানদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইয়াহুদীবাদকে পরাস্ত করা সম্ভব। আরব জাতীয়বাদী সরকার গুলোর উৎখাত করে বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে ইয়াহুদীদের এবং তাদের ইন্ধন যোগানদানকারী আমেরিকানদের পরাস্ত করা সম্ভব । ( হংকং থেকে প্রকাশত মুসলিম হ্যারাল্ডের সৌজন্যে ) প্রবন্ধটি বাংলা ভাষায় ১৯৯৩ সালে অক্টোবর মাসে নিউজ লেটারে প্রকাশিত হয়। বর্তমান যুগের পেক্ষাপটে রচনাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে এখানে তুলে ধরা হল ।
মাকিন© সাম্রাজ্যবাদের ইন্ধনে বাক্ষ্রণ্যবাদী ভারতের পরিকল্পনা
আফগানিস্তানে মাকি©ন বাহিনীর উপস্থিতির পর হঠাৎ করে গজিয়ে উঠা বেলুচিস্তান সমস্যা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এতে ২০০৬ সালে রাল্ফ পিটার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন দিকটিই প্রমানিত হচ্ছে। আর এর প্রমাণ পাওয়া ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রকাশিত ভারতীয় সাপ্তাহিক আউটলুক পত্রিকায়।পত্রিকাটি ‘এশিয়া ২০১৫’ প্রকাশিত প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে যে চিত্র দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ২০১২ সালের মধ্যে পুরোপুরি অকেজো হয়ে যাবে এবং তার ভৌগোলিক অখন্ডটা হারাবে। এ ক্ষেত্রে ভারত সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল ও প্রদেশগুলো ধীরে ধীরে ভারতের সাথে একীভূত হয়ে যাবে। আউটলুকে প্রকাশিত এই রিপো©টে যে মানচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে বাংলাদেশকে ভারতের একটি অঞ্চল হিসাবে প্রদশ©ন করা হয়েছে। তবে এতে ভারত কতৃ©ক পাকিস্তান দখলের কথা বলা হলেও বাংলাদেশ কিভাবে ভারতের সাথে একীভূত হবে সে সম্পকে© বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি।
বিশ্বব্যাপী ইহুদীদের মুসলিম বিদ্বেষী কমকান্ড
ইহুদি জাতি পৃথিবীতে যে সকল রাষ্ট্রসমূহের উপর অসামান্য প্রভাব ও প্রভুত্ব বিস্তার করেছে - তাদের একটি “ অষ্ট্রেলিয়া ” । এই দেশটিতে বসবাসরত ইহুদিরা নির্দিষ্ট এলাকায় তাদের যে সংগঠন সৃষ্টি করে - তার সর্বনিম্ন সংগঠনকে তারা বলে ‘স্টেইট’। প্রতিটি স্টেইটে বসবাসকারী ইহদিরা তাদের মাসিক আয়ের ৫% অংশ অত্যাবশ্যকীয়ভাবে “স্টেইট” নিকট জমা রাখে। তবে সচরাচর অধিক আয় সম্পন্নরা বাধ্যতামূলক এই দানের বাইরেও অর্থায়ন করে থাকেন। এই অর্থ সরাসরি বিশ্বজোড়া জায়নবাদী প্রচার ও পরিকল্পনা চরিতার্থকরণের জন্য ব্যয় হয়। এই অর্থ ইসরাইল রাষ্ট্রের সংহতিকরণ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যয় হয়। এভাবে দীর্ঘদিনের সাধনায় আজ তারা এমন একটি অবস্থানে এসেছে যে বিশ্বের তথ্য, সম্পদ, যুদ্ধ, অর্থনীতি, ইত্যাদি সবই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। খোদ আমেরিকা একটি ক্ষুদ্র ইসরাইল রাষ্ট্রের বাধ্যতার দাস। ইহুদিরা বিপুল অর্থ ব্যয় করে ইসলাম বিষয়ক এক্সপার্ট তৈরির জন্য। ২০০২-২০০৩ সালের বাজেটে আমেরিকা “ ইসলাম বিষয়ক এক্সপার্ট ” তৈরির জন্য বরাদ্দ করেছে ৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা গণচীনের পূর্ণ সামরিক বাজেটের সমান। এই টাকায় বাংলাদেশের একুশ বছরের বাজেট সংকুলান হয়। এতোগুলো টাকা শুধু এক্সপার্ট তৈরির জন্য এবং গবেষণার জন্য। কী গবেষণা হয় এবং কী করে এক্সপার্টগণ ? তারা তৈরি করে সুইসাইড বম্বার। তাদের সুইসাইড বম্বার হিসেবে আত্মঘাতী বোমা ফাটানোর কাজটি করছে এক “ তরুণী ”! । তরুণীরা কেন ?!
ইসরাইল সাহাক (Israel Shahak) - এর লেখা হতে জানা যায় ( তিনি জেরুজালেম পোষ্টে লিখে থাকেন; হিব্রু সংস্করণে; কমই তার ইংলিশ প্রতিবেদন ছাপা হয় )। এই লেখাটি ১৯৮৫ সনের। তরুণীদের ধরে নিয়ে যায় ইসরেলি সেনাবাহিনীর লোকজন। তারপর তাকে বিবস্ত্র করা হয়। ছবি তোলা হয় বিভিন্ন পোজের। তারপর তাকে গণধর্ষণ করা হয়। এ অবস্থায় তরুণীটি যখন ভগ্ন হৃদয় এবং মর্মাহত, - তখন তার পিতা, ভাই অথবা এমন কোন সম্পর্কের, যার সঙ্গে বিবাহ চলে না - এমন কোনো ব্যক্তিকে ধরে এনে কৃত্রিম উপায়ে (ইনজেকশান বা মুখে খাওয়ার ঔষুধ) প্রচন্ডভাবে যৌনাবেগ সৃষ্টি করে রাখা হয়। তারপর বাধ্য করা হয় তাকে রেপ করার জন্য। অনিচ্ছায়, অজ্ঞানতায় “ রেপ ” করার কাজটির তুলে রাখা হয় অজস্র ছবি। তারপর “ সেট করা ” নাটকের অংশ হিসেবে তাকে উদ্ধার করে নেয় ইহুদি রাবাঈদের ( Jewish Rabbi ) কেউ। নাটকের অংশ হিসেবে তৈরি হয়ে আছে এমন “ মুসলমান ” সংগঠনের কাছে করা হয় হস্তান্তর । সেই মুসলমানরূপী ইহুদিরা বুঝিয়ে দেয় - এ জীবন আর রেখে কী হবে, খোদার জন্য শত্রু ঘায়েল করে শহীদ হয়ে যাও। উপদেশটি সৎ মনে হয়। গায়ে জড়িয়ে নেয় বোমা - সেই তরুণীটি। তাকে টার্গেট দেয়া হয় কোথায় যাবে, কে সাহায্য করবে, - এইসব। টার্গেট জানানো হয় “সেনাবাহিনী ”, কারণ, তাদের প্রতিই তরুণীটির বিদ্বেষ। কিন্তু, বাসে উঠার পর কিংবা বাজার এলাকায় গমন করার পর টিপে দেয়া হয় রিমোর্ট কন্ট্রোল। কেবল সাধারণ নিরপরাধ ইহুদি জনগণই মরে সুইসাইড বোমায়, কখনও সেনাবাহিনীর একটি সদস্যেরও কিছু হয় না। দু’ঘন্টার মধ্যে “ পোট্রেট কোয়ালিটির ” ছবি চলে যায় টেলিভিশনে। পূর্বেই ছবি রাখা হয়েছিল তার; নাম, ঠিকানা সব নির্ভুল। জগৎ শুনেছে, মুসলমান তরুণীর সুইসাইড বোমায় অনেকজন ইসরেলি নিরপরাধ জনগণ মারা হয়েছে। এ-লেখাটি যখন রচিত হয়, তখন (অক্টোবর ০৩) ইসরেল সিরিয়া আক্রমন করে সুইসাইড বোমা হামলার প্রতিবাদে। ১৯ জন ইসরেলি নাগরিক মারা গেছে। সেখানেও ছিল এমনি দুর্ভাগ্যের শিকার এক তরুণী। “সুইসাইড বোমা ” ইসলামের আদর্শকে বিশ্বের সামনে অনেক নিচু করেছে। তার অর্থ এই নয় যে সব সুইসাইড বোমা বর্ণিত পদ্ধতিতে ঘটে। মুসলমানরা অনেক ক্ষেত্রেই স্বেচ্ছাপ্রণোদিত উচ্ছ্বাসে তা করে থাকে। এর পেছনে যে অদৃশ্য যোগান, উৎসাহ-উদ্দীপনা, অর্থ, সুযোগ, উপকরণ - এসবের পেছনে আছে, সেই ৩৫ বিলিয়ন ডলারের সমর্থন। ব্যবহৃত হয় নির্বোধ মুসলমান - যারা মূলতঃ কোরআন বিচ্ছিন্ন।
২০০২-২০০৩ সালে চীনের সামরিক বাজেট ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার যার পরিমাণ মাত্রাটি বড় হয়ে গেছে বলে আমেরিকা চীনের উপর আপত্তি তুলেছিল। অথচ, আগেই বলেছি , একই বছর আমেরিকা ইসলাম বিষয়ক গবেষণা ও এক্সপার্টিজ এর জন্য যে বাজেট করেছে তার পরিমাণও ৩৫ বিলিয়ন ডলার। কি হয়েছে আমেরিকার? সারা পৃথিবীতে শত ধর্ম রয়েছে, আর কারো বিষয়ে নয় - শুধু মুসলমানদের বেলায় তাদের এতটা যত্ন নেয়ার প্রয়োজন হয় কেন? যদিও এর উত্তরটি বিশাল তবু তার মূল " কিং ডেভিডের কিংডম অব ইসরাঈল " প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী জায়নবাদী ব্যবস্থার মূলে প্রোথিত। ইহুদীরা অর্থের মালিক। ইহুদীরা ইসলামের চিরশত্রু । ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ। ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসনের অন্য অর্থ হলো ইরাকে ইহুদিদের ভাড়াটে শক্তির আগ্রাসন। জন্মগতভাবেই তাদের মধ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা আর ঘৃণার প্রেষণা কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। এই প্রেষণায় তাড়িত হয়ে তারা দুনিয়াময় যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে যাবে। (৫:৬৪)। মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ঘরে বাইরে। ঘরের যুদ্ধে ইহুদীদের ভাড়াটে সৈনিক হলো আজকের শহর কেন্দিক আধ্যাত্মিক সূফী সাধকের গোষ্টি। ওরা ইহুদিদের এজেন্ট। ওরা সাধক নয়, ওরা চর (Spy) এবং চোর । ওরা সূফী নয়, ওরা অর্থলোভী ভোগসেবী, চরিত্রহীন, প্রবঞ্চনাকারী শয়তানের প্রকাশ্য পুত্র। এই " সূফী সাধকরা " ইসলামের সর্বনাশ ঘটায়। মুসলমানদের সাধারণ জ্ঞানেই বুঝবার কথা যে, সুফী সাধকগণ নির্লোভ, নির্জনতা-প্রিয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা তাদের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু বর্তমান সূফী সাধকরা ডিশ এন্টেনার যাবতীয় অনুষ্ঠান উপভোগকারী, এক্সরেটেড ভিডিও (Porn Movie) দর্শক, শহর কেন্দ্রিক প্রচার বিলাসী ও ভোগপ্রিয়। ওরা যা সৃষ্টি করেছে তা হলো ফিতনা। ফিতনা হলো ফ্যাসাদের জন্মদাতা। বিলাশবহুল গাড়ীতে চড়ে নবী (সাঃ) আচার ও আদর্শের শিক্ষা দেয়। যে নবী ৮ হাত x ১২ হাতের কুঁড়ে ঘরে জীবন ব্যয় করলেন ও রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ করলেন, সে নবীর আদর্শ কাদের দ্বারা এবং কী উপায়ে প্রচার হচ্ছে?
কাদিয়ানী মুসলিম জাতি ধ্বংসের ইহুদী হাতিয়ার
কাদিয়ানী একটি সম্প্রদায় যারা ইসলামের পরিচয় ও পোশাকে ইসলাম ধ্বংসের জন্য এক অতি শক্তিশালী ইহুদি হাতিয়ার। কাদিয়ানীরা ইহুদিদের স্বজাতিসম। ইহুদিদের মতই তারা কোরআন বিকৃতির সার্বিক প্রচেষ্টা করেছে। ইহুদিদের সাথে তাদের পার্থক্য হলো - ইহুদিরা যেখানে তৌরাত পরিবর্তন করে নিজেদের মনগড়া বক্তব্যের সংযোজন দ্বারা তৌরাতকে “ ওল্ড টেস্টামেন্টে ” পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে, সেখান কাদিয়ানীরা তা পারেনি। ইহুদি প্রভাবে আমেরিকা মুসলমান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ তৈরি ও গবেষণায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকে। ২০০২-২০০৩ সালে তাদের এই বাজেট ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার। সীমাহীন অর্থ। এই বিপুল অর্থের একটি বড় সুবিধাভোগী দলের নাম কাদিয়ানী। ইসলামের আবরণে ইসলামের ভাষায় ইসলামের সুরে ইসলামের সর্বনাশের এরা জীবন্ত প্রত্যয়। ইসলামের দেশে ইসলামের বেশে এরা মুসলমান বেশধারী ইহুদি। কাদিয়ানীরা যেভাবে তাদের মতবাদের প্রসার ঘটানোর কার্য করে বেড়ায়, খৃস্টানরা অনুরূপভাবে অর্থ, প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দিয়ে দরিদ্র মুসলমানকে খৃস্টান ধর্মে দীক্ষিত করে চলছে অতীত হতে।
মার্কিন ইদ্ধনে ইসরাইলের ইরান বিরোধী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস
বিশ্ব সন্ত্রাসের আরেক দানব আরব বিশ্বের বিষফোড়া খ্যাত ইসরাঈলকে শুরু থেকেই মাকিন সাম্রাজ্যবাদ পৃষ্টপোষকতা দিয়ে আসছিল। এ অবৈধ জারজ রাষ্ট্রটিকে প্রথম স্বীকৃতিও তারাই দিয়েছেলো। সেই থেকে তাদের সকল মানবতা বিরোধী হত্যাযজ্ঞে আমেরিকা সরাসরি জড়িত ছিলো।আরবদের সাথে প্রতিটি যুদ্ধে ইসরাঈলকে অথ© ও অস্ত্র দিয়ে সরাসরি সহযোগিতা করেছে আমেরিকা। মার্কিনীদের প্রত্যক্ষ মদদে বিশ্বের জারজ রাষ্ট্র ইসরাইল ইরান ধ্বংস করে দেওয়ার নিমি©ত্তে রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসী কর্ম কান্ড পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি তারা ইরানের পরমানু প্রকল্পে হামলার নানা অজুহাত দাড় করাচ্ছে। ইরান বিরোধী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সরল বর্ণনা উঠে এসেছে সম্প্রতি ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ প্রকাশিত একটি বইয়ে।উক্ত বইয়ে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ বিগত পাঁচ বছরে ইরানের কমপক্ষে সেরা পাঁচজন পরমানু বিজ্ঞানীকে খুন করেছে। আর ইসরাইল তা করেছে ইরানের পরমানবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করে দেওয়ার বৃহত্তম অভিযানের অংশ হিসাবে। এছাড়া ইরানে বিভিন্ন সময়ে বোমা হামলা করে বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অসংখ্য সদস্যকে খুন করা, বোমাবাজি, হত্যাকান্ড, ইরান বিরোধী শক্তিগুলোকে পৃষ্টপোষকতা দান সহ নানা অপকর্মের সরল বর্ণনা এতে উঠে এসছে। মূলত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোকে দমনের জন্য সন্ত্রাসী হিসাবে ইসরাইলকে প্রতিষ্ঠা এবং এদের সকল অপকর্মের অন্ধ সমর্থন দিয়ে চলেছে। এছাড়া ফিলিস্তিনে অব্যাহত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, জবরদখল, রাষ্ট্রীয় খুন,গুম, অত্যাচার নির্যাতন এবং অবরোধের মাধ্যমে মুসলমানদের ধ্বংস করে দেওয়ার চক্রান্ত করছে ইহুদীবাদী ইসরাইল। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতকেও বিষাক্ত ক্যমিক্যাল মিশিয়ে খুনের প্রমান পাওয়া গেছে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া দেশে বিদেশে হামাসের জনপ্রিয় নেতাকর্মীদের হত্যা ও গুম তো রয়েছেই।
বিশ্বব্যাপী পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধ করার জন্য দাবি জোরদার হওয়া সত্ত্বেও আজো আমেরিকা আরো মারাত্মক ও শক্তিশালী পরমাণু অস্ত্রসহ গণ-বিধ্বংসী নানা অস্ত্র উৎপাদন করছে। অন্যদিকে আমেরিকা স্বাধীনচেতা দেশগুলোকে শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রযুক্তিরও অধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা পরমাণু বোমা তৈরি করা ও সংরক্ষণ করাকে হারাম বলে ফতোয়া দেয়া সত্ত্বেও তেহরানের বিরুদ্ধে পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টার কাল্পনিক অভিযোগ তুলে মার্কিন সরকার ও তার সহযোগী পশ্চিমা সরকারগুলো ইরানের ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে শত শত পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হওয়ার সুযোগ দিয়েছে আমেরিকাসহ তার সাম্রাজ্যবাদী মিত্র শক্তিগুলো। এছাড়াও ইরান গত তিন দশকে আমেরিকা ও তার সহযোগিদের সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় শিকারে পরিণত হয়েছে। আমেরিকা, ইসরাইল ও সৌদি আরবের সহায়তায় ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর হাতে ইরানের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাসহ ১৫ হাজার ইরানি নাগরিক নিহত হয়েছে। আটের দশক থেকে ইরাক ও পাকিস্তানে, এবং পরে আফগানিস্তানে, ইরান বিরোধী সন্ত্রাসীদের ঘাটি স্থাপন করে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র প্রদান করেছে।