somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অতিথি

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“পশ্চিমা দেশগুলোতে যখন প্রচন্ড শীত তখন হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে পাখিরা এদেশে আসে।তারা আমাদের অতিথি।অতিথিপরায়ন জাতি হিসেবে আমাদের খ্যাতি সবচেয়ে বেশি।তাই এসব পাখির নিরাপত্তা দেয়া আমাদের সবার কর্তব্য।অথচ নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে আমরা তাদের ধ্বংস করছি।কেউবা জাল পেতে পাখি ধরে তাদের বিক্রি করে দিচ্ছি, কেউবা শিকারের দোহাই দিয়ে এদের হত্যা করছি।এজন্যই কি তারা আমাদের দেশে আসে?দিনে দিনে অতিথি পাখি কমে যাচ্ছে।বিশ্বের দরবারে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।”

টিভি বন্ধ করে দিল কমল।স্কুল বন্ধ।শীতকালীন ছুটি চলছে।কমল ভেবেছিল এবার চুটিয়ে মজা করবে।কিন্তু কিসের কি। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।তাই সে খেলতে যেতে পারছে না।আবার টিভিতে এসব বিরক্তিকর কথাও শুনতে ইচ্ছা করছে না।সো টিভি অফ।

কমলের মন খারাপ।অবশ্য কারণও আছে।গতকাল কমল খুব রেগে ছিল।আব্বু এলেন রাগ ভাঙ্গাতে।
কমল।
কি?
কি হয়েছে?
কিছু হয়নি।
তাহলে মুখ ভার কেন?
এমনি।
এমনি কি কারও মুখ এমন হয়?
আমার হয়।
কেন মুখ ভার?
জানিনা।
বল কি চাও?
বাবার দিকে তাকাল কমল।
যা চাই দেবে?
এখন বাবা চাঁদ চাইলে তো আর আমি তোমাকে এনে দিতে পারব না।
আমি চাঁদ চাইব না।
ঠিক আছে।আমার সাধ্যের মধ্যে হলে অবশ্যই দেব।
কমল একটু চিন্তা করে।
বল কি চাও?
বন্দুক।
বাবা-মা অবাক।বলে কি এই ছেলে?
বন্দুক দেবে?
বন্দুক দিয়ে কি করবে?
পাখি শিকার করব।
কিন্তু বাবা এটা ভাল না।
কমলের প্রচন্ড রাগ লাগে।তাহলে আমি ভাত খাব না।
বাবা-মা পরস্পরের দিকে হতাশ চোখে তাকান।কমলের জেদ তাদের জানা আছে।যা চাই তা তাকে দিতেই হবে।না দেয়া পর্যন্ত সে ভাত খাবে না, কান্নাকাটি করে পুরো ঘর মাথায় তুলবে ।ভয়ানক অশান্তি হবে ঘরে।
ঠিক আছে।কিনে দেব।
কমল খুব খুশি।বাবা-মা হাফ ছেড়ে বাচলেন।

আজ এয়ারগান কিনতে যাওয়ার কথা।কিন্তু বাইরে প্রবল ব্রিষ্টি।বন্দুক কিনতে যাওয়া সম্ভব নয়।

বজ্রের গর্জন শোনা যাচ্ছে।কালো মেঘেরা ছোটাছুটি করছে।বিদ্যুতের ঝলকানি চারদিক আলোকিত করে তুলছে।বৃষ্টির ঝম ঝম শব্দ শুনতে বেশ ভালোই লাগছে।
কমল পড়ার টেবিলে বসে পড়ল।ম্যাডাম এই ছুটিতে দুটো রচনা শিখতে দিয়েছেন।“গরু” আর “বর্ষায় বাংলাদেশ” । শিখে ফেলা দরকার।

কমল প্রথমেই “বর্ষায় বাংলাদেশ” খুলল। এখানে কবিগুরুর একটা বিখ্যাত কবিতা আছে।

নীল নব ঘনে আষাঢ় গগণে তিল ঠাই আর নাহিরে
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝর ঝর
আউশের ক্ষেত জলে ভর ভর
কালিমাখা মেঘে ওপারে আঁধার
ঘনিয়েছে দেখ চাহিরে
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।

হঠাৎ দমকা বাতাস এসে বইয়ের পাতা এলোমেলো করে দিল।মনোযোগ নষ্ট হয়ে গেল।




বাইরে তাকাল কমল। একটা পাখি একাকী গাছের ডালে বসে ভিজছে।কি পাখি এটা? কমল চিনতে পারল না।দেখে মনে হয় এক প্রজাতির হাঁস। কিন্তু হাঁস এত বড়? তাও বসে আছে গাছের ডালে। উঠল কিভাবে ওখানে?হাসতো উড়তে পারে না।
এই হাস।মজা করার জন্য ডাকল কমল।
অবাক হয়ে তাকাল পাখিটা।
চমকে উঠলে কেন?
এমনি।
বৃষ্টিতে ভিজছ যে?
মনের দুঃখে।
তোমার মনে বুঝি খুব দুঃখ?
হ্যা।
কিসের দুঃখ?
জানতে চেও না।
কেন?
বলতে আমার বুক ফেটে যাবে।
এবার কমলের অবাক হওয়ার পালা।একটা পাখি তার সাথে কথা বলছে এতে সে যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশী অবাক হয়েছে হাসের মনে দুঃখ শুনে।সামান্য একটা হাঁস, তার মনে আবার কিসের দুঃখ?
প্রসঙ্গ বদলাল কমল।তুমি আমার বন্ধু হবে? পাখিটকে জিজ্ঞেস করল কমল।
এবার পাখিটা অবাক হয়ে তাকাল কমলের দিকে।
বন্ধু হবে?
হ্যা।
গাছে উঠলে কি করে?
কেন?
আমাদের দেশে হাঁস গাছে উঠতে পারে না।
আমিতো এদেশের পাখি নই।
মানে?
আমি এসেছি হাজার মাইল দূর থেকে।
মানে তুমি অতিথি পাখি?
হ্যা।
অন্যসময় হলে কমল পাখিটা ধরার চেষ্টা করত।আজ করল না।এমনকি তার সে ইচ্ছাও হল না।তারা দুজন তো এখন বন্ধু।
তুমি উড়তে পার?
হ্যা।
তোমার পরিবার কোথায়?
প্লিজ জানতে চেও না।
কেন?
সে যে বড় দুঃখের কাহিনী।
কিরকম?
বলতে আমার বুক ফেটে যায়।
প্লিজ বল।
তোমার জাত ভাইরা ওদের মেরে ফেলেছে।
আমার জাত ভাই?
হ্যা।
কিভাবে?
আমি বলতে পারব না।
কেন?
বলতে আমার কষ্ট হয়।
প্লিজ বল।আমি না তোমার বন্ধু।
সেবার বহুদিন পর শীতে তোমাদের দেশে আসছিলাম।সাথে ছিল আমার স্ত্রী-সন্তান।কিন্তু আসার পথে শিকারীর গুলিতে মারা গেল আমাদের বাচ্চাটা।জীবন বাচাতে আমাদের সেখান থেকে পালাতে হল।বাচ্চাটার মুখ শেষবারের মত দেখতেও পারলাম না।অনেকক্ষণ উড়ে পরিশ্রান্ত হয়ে আমরা যখন গাছের ডালে বসলাম কিছু দুষ্ট ছেলে পাথর ছুড়ে ফেলে দিল আমার স্ত্রীকে।আমি ওর কাছে গেলাম।ছেলেগুলো আমাকেও পাথর মারল।কিন্তু ব্যর্থ হল।আমি উড়ে চললাম একাকী।
চুপ হয়ে গেল পাখিটা।কমল সান্ত্বনা দেয়ার জন্য কোন কথা খুঁজে পেল না।
তখনও রিমঝিম বৃষ্টি পড়ছে।কমলের মনে হল এ যেন বৃষ্টি নয়, পাখির কান্না।

ওঠ, কমল।
কমলের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
কি?
বৃষ্টি থেমে গেছে।
তো?
বন্দুক কিনবে না?
না।
কেন?
আমি কাউকে নিঃসঙ্গ করতে চাই না।
মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন কমলের দিকে।


উড়ে যায় বিষন্ন পাখি
আমি একা জেগে থাকি
অন্ধকারের গান,
ফুরায় না অভিমান,
আমরা তবু জেগে থাকি
উড়ে যায় বিষন্ন পাখি।



===========================================


আমার লেখা আরও কিছু গল্পঃ


গল্পঃ যে কারণে ভালবাসি বলা হয় না

গল্পঃ ভালবাসার বৃষ্টি

গল্পঃ প্রিয়তমা, তোমার জন্য... ...

গল্পঃ তোমার বসন্ত দিনে ... ...

গল্পঃ তামাশা

গল্পঃ অতিথি
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৪৪
১৮টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×