আজ quora.com-এ লগইন করে শিরোনামে দেয়া প্রশ্নটা সবার আগে চোখে পড়ল। নিচে পোস্ট করা উত্তরটাই আমি সেখানে লিখেছি। ব্লগারদের উত্তরটা শেয়ার করলাম সবার অভিমত জানার জন্য। নীচে উল্লেখা করা অপশনগুলোর বাইরে তার আর কোথায় কোথায় কাজ করার সুযোগ আছে বলে আপনাদের মনে হয়। উল্লেখ্য যে, প্রশ্নকারীর পরিচয় আমার জানা নেই।
আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আরো অনেক তথ্যের প্রয়োজন। যেমন আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কোথায় থাকেন এবং সেখান থেকে আপনার কি ধরণের কাজ করার সুযোগ আছে, কিংবা আপনি নিজে কি ধরনের কাজে আগ্রহী-এই বিষয়গুলো উল্লেখ করেননি। আমি একটা সাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড চিন্তা করে আপনার প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করছি, আশা করি আপনার কাজে লাগবে।
সবার আগে আপনার বয়স। জানিয়েছেন আপনার বয়স ১৫ বছর৷ বাংলাদেশে আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী সকলকেই শিশু হিসেবে গণ্য করা হয় এবং কোন শিশুকে কাজে নিযুক্ত করাকে শিশুশ্রম হিসেবে গণ্য করা হয় যা এদেশের আইন অনুসারে অপরাধ।তাই এই বয়সে সরকারী বা বেসরকারী-কোন সেক্টরেই আপনি চাকরী পাবেন না। অর্থাৎ ফরমাল জব সেক্টরে কাজের সুযোগ আপাতত আপনার নেই। তাই গার্মেন্টস সেক্টর বা সেলস গার্ল হিসেবে কাজ পাওয়ার আশা না করাটাই আপনার জন্য ভাল হবে।
এবার আসি ইনফরমাল সেক্টরের কোথায় কোথায় আপনার কাজ করার সুযোগ আছে সেই বিষয়ে।
১.বয়স অনুসারে ধরে নেয়া যায় আপনি এখনো স্কুল ছাত্রী। সেক্ষত্রে আপনার জন্য একটা সুযোগ হতে পারে টিউশানী কিংবা প্রাইভেট পড়ানো। ছোট ছোট বাচ্চাদের আপনি পড়িয়ে দেখতে পারেন।একজন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজের ছাত্র টিউশানী করে যা করেন, আপনার আয় তারচেয়ে নিঃসন্দেহে কম হবে।
২.আমি জানি না আপনি মাদ্রাসা ছাত্রী কিনা কিংবা সহীহ কুরআন শিক্ষা করেছেন কিনা। যদি করে থাকেন, সেক্ষেত্রে নিয়মিত কুরআন শিক্ষা দিয়েও আপনি ভাল হাদিয়া পেতে পারেন। স্কুলের ছেলেমেয়েদের পড়ানোর ক্ষেত্রে আপনাকে নিজের চেয়ে ছোট ক্লাসের বাচ্চাদের পড়াতে হবে, কুরআন শেখানোর ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
৩.আপনার জন্য আরেকটা সুযোগ হতে পারে সেলাইয়ের কাজ। বাংলাদেশে আড়ং বা অন্যান্য ব্র্যান্ডের দোকানসমূহে উচ্চদামে নকশী কাথা বা নকশা করা বিভিন্ন পোশাক বিক্রি হয়। যদি এই কাজে আপনার দক্ষতা থাকে, তবে সেটাও আপনার জন্য ভাল সুযোগ হতে পারে। এছাড়া বিভিন্নরকম শো পিস তৈরী ও বিক্রির চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
৪.আপনার জন্য আরেকটা ভাল সুযোগ হতে পারে রান্না বান্না। বিভিন্ন পদের রান্না করে আপনি স্থানীয় রেস্টুরেন্ট বা দোকানে সাপ্লাই করতে পারেন বা ফুডপান্ডা জাতীয় কোন ফুড ডেলিভারী সার্ভিসের সাথে এফিলিয়েশনের মাধ্যমে খাবারদাবার হোম ডেলিভারীর ব্যবস্থাও করতে পারেন।
৫. আরেকটা ভাল অপশন হল প্রফেশনালি মেহেদী দেয়া। গায়ে হলুদ কিংবা বিয়ে উপলক্ষ্যে অনেকেই কনে আর তার পরিবার বা কাছের মানুষজন একসাথে মেহেদী দেন।এক্ষেত্রে ডিজাইন অনুযায়ী ভাল বিল চার্জ করার সুযোগ আছে। তবে এখানে নিয়মিত কাজ পাওয়ার অনিশ্চয়তা আছে।
৬. তিন,চার আর পাঁচ নম্বরে বলা পয়েন্টগুলোর সুবিধা হচ্ছে এগুলো তৈরী করে আপনি সরাসরি দোকান কিংবা ভোক্তার কাছে বিক্রি করতে পারবেন, আবার তৈরীর ভিডিওগুলো ইউটিউব আর ফেসবুকে আপলোড করে ভাল অর্থোপার্জন করতে পারবেন। অর্থাৎ এক কাজ করে একাধিক সোর্স থেকে অর্থ উপার্জন। তবে ভিডিওগুলো আকর্ষণীয় করার জন্য ভিডিও এডিটিং এর ওপর আপনার ভাল দক্ষতা থাকতে হবে। অথবা ভাল ভিডিও এডিটিং জানেন, এমন কারো সাথে কোলাবোরেশন করেও কাজ করতে পারেন।
৭. ইনফরমাল সেক্টরে অর্থোপার্জনের আরেকটা ভাল সুযোগ হল ফ্রিল্যান্সিং। আপনার যদি নিজস্ব কম্পিউটার থেকে থাকে আর যদি কোডিং, ওয়েব ডিজাইন, ফটোশপ, ভিডিও এডিটিং বা মাইক্রোসফট অফিসে(ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট) ইত্যাদিতে আপনার ভাল দক্ষতা থাকে, সেক্ষেত্রে এটা আপনার জন্য সম্ভাবনাময় সুযোগ হতে পারে। এক্ষেত্রে দক্ষতা কম হলে বা না থাকলেও ডাটা এন্ট্রি, অনুবাদ, এসে রাইটিং করেও অর্থোপার্জন সম্ভব, তবে সেটা পরিমাণে কম।
৮. কেন এই বয়সেই আপনার চাকরি করা প্রয়োজন বা আপনার একাডেমিক রেজাল্ট সম্পর্কে কোন ধারণা নেই, তাই বলছি, যদি সুযোগ থাকে, তবে চাকরি না করে সরকারী বা বেসরকারী কোন বৃত্তি পাওয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। মেয়েদের পড়াশোনায় উৎসাহী করার জন্য, স্পেশালি গ্রামের এবং দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের জন্য সরকার, বিভিন্ন এনজিও আর নামকরা বহুজাতিক কোম্পানিসমূহ তাদের সিএসআর (কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি) ফান্ড থেকে বৃত্তি দিয়ে থাকে। এ ধরণের একটা ভাল বৃত্তি পেলে আপনি নিশ্চিন্তে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবেন বলে আশা করি।
এই মুহূর্তে আপনাকে এতটুকু পরামর্শই৷ দিতে পারছি। আশা করি, একটু হলেও লাভ হবে।
ভাল থাকুন। আপনার ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইল।
quora.com -এ আরও কিছু জীবনমুখী প্রশ্নের আমার দেয়া জবাবঃ
ব্যবসায় সফলতার মূলমন্ত্র কি?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:২৮